ভালবাসা শুধু ভালবাসা (২)

শ্মশানে হলো ফুলশয্যা
(ভালবাসার গল্প)
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

নুপুরের চোখদুটো জলে ভেসে যায়, পলাশের বুক ভেঙে যায়।
জীবন এত ছোট কেন? তবে কি ভালবাসা অভিনয়?
নুপুর বলে, অতীতকে আমি ভুলে গেছি পলাশ।
– “কিন্তু আমি তো আজও তোমাকে ভুলতে পারি নি নুপুর। তোমাকে নিয়ে আমার ঘর বাঁধার স্বপ্ন”
– “না পলাশ, ছিঃ পলাশ, আর তা হয় না আমি একজনের বিবাহিতা স্ত্রী।”
পলাশ জানে না কেমন করে সে মনের অজান্তে নুপুরকে ভালবেসে ফেলেছিল। নুপুরের বাবা মা তাদের এই ভালবাসাকে মেনে নিতে পারে নি। বাবা জোর করে তার পছন্দমত পাত্র খুঁজে তার সাথেই নুপুরের বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করলেন।

সেদিন বেজে উঠেছিল বিয়ের সানাই। সানাই-এর সুরে আনন্দের স্রোতে ভেসেছিল সবাই, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই। কিন্তু সবার অজান্তে কেঁদেছিল দুটি মন আর দুটি প্রাণ। দুজনের দুটি অভিন্ন হৃদয় সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। পলাশের চোখ দুটো দারুণ জলে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল।
হায়রে অবুঝ বাবা মায়ের মন। এই দুনিয়ায় বাবা-মায়ের একটুখানি ভুলের জন্য কত ছেলেমেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কে তার খবর রাখে? নুপুর আর পলাশের জীবনেও তার ব্যতিক্রম হয় নি।

তারপর সমাজের রীতি অনুসারে খুব ধুমধামেই বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর কেটে গেছে সুদীর্ঘ পাঁচটি বছর। পলাশ ও নুপুর কেউ কারো খবর রাখে নি।

শ্বশুরবাড়ির সবাইকে পেয়ে নুপুর ভুলে গিয়েছিল অতীতকে। কিন্তু বিধি হলো বাম। ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাত্ একদিন ওর স্বামী মারা গেল। নুপুরের হৃদয়টা সেদিন কেঁদে উঠেছিল। নুপুর তখন ছিল অন্তঃসত্ত্বা। আজ বিধবার সাজে দারুণ লাগছে নুপুরকে। সেদিনের বেনারসী শাড়ি তার গায়ে নেই। সমাজের প্রথা অনুযায়ী সাদা পোশাকে বিধবার বেশে তাকেও যেতে হলো শ্মশানঘাটে।

শ্মশানের চিতা জ্বলছে। চিতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছুই। ভালবাসার অকালমৃত্যু ঘটে। হারিয়ে যাওয়া স্বামীর জন্যে প্রাণটা হু হু করে উঠে নুপুরের। সমাজপতিদের বিধান অনুযায়ী তাকে স্বামীর সাথে সহমরণে মরতে হবে। এটাই ছিল তত্কালীন সমাজের প্রথা।

ঢাকঢোল পিটিয়ে আনন্দে সবাই ধরে রাখে নুপুরকে। কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসে নি। কেউ প্রতিবাদ করেনি। শুধু প্রতিবাদ করেছিল এক নির্ভীক তরুণ, পলাশ। ভিড় ঠেলে পলাশ এগিয়ে আসে। প্রতিবাদীকণ্ঠে বলে ওঠে, “এটা সমাজের বিধান নয়, একজনের সাথে অপরকে বলি দেওয়া। প্রিয়জনের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপকৌশল।”

পলাশের তীব্র প্রতিবাদে সবাই একে একে চলে যায়। জনমানবশূণ্য শ্মশানঘাট। নির্জন রাতে আকাশে তারা ফুটেছে। অদূরে শ্মশানঘাটে ফুলের গাছ। রাশি রাশি কুসুম ফুটে আছে। সেই গাছের তলায় বসে আছে দুইজনে । রাশি রাশি ফুল ঝরে পরে অঝোর ধারায়। হাতে হাত আর চোখে চোখ রেখে ভালবাসার নৌকায় কল্পনার জগতে পাড়ি দেয় দুটি মন, দুটি প্রাণ। নুপুর পলাশকে বলে, আমাদের ভাবী সন্তানের নাম রাখবো কিংশুক। পলাশ গভীর আবেগে নুপুরকে জড়িয়ে ধরে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

5 thoughts on “ভালবাসা শুধু ভালবাসা (২)

  1. ভালবাসা শুধু ভালবাসা। পড়লাম। দ্বিতীয় পর্ব হলেও বুঝতে পারলাম স্বতন্ত্র সব কাহিনী দিয়ে পর্ব গুলোন সাজানো হবে। সার্থক অণুগল্প মি. ভাণ্ডারী। অভিনন্দন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. অণুগল্পে তেমন একটা নতুনত্ব না এলেও প্রয়াশ ভালো হয়েছে কবি। শুভেচ্ছা। :)

  3. শ্মশানে হলো ফুলশয্যা। গল্পটি পড়লাম কবি দা। ভালবাসার জয় হোক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  4. গল্পটি পড়লাম। আরও নতুনত্ব থাকলে বেশী ভালো লাগতো।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।