সমকালীন

যে অবক্ষয়ের নিউজ সামনে আসে তা একাংশ মাত্র। যদি শতভাগ নিউজ সামনে আসতো তবে আঁতকে উঠতো মানুষ। এতো অন্ধকার এই সমাজ ?

সমস্যা হলো এই যে যৌনতা জনিত শিশু ধর্ষনের যে অপরাধ এতে কারা জড়িত এই বিষয়টা এনালাইসিস করলে দেখা যাবে সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষগুলোই জড়িত এতে। এদের শিক্ষা নেই, থাকার উপযুক্ত ঘর নেই,পুষ্টিকর খাবার নেই , গল্প করার বিষয় নেই ,- তবে একটা জিনিস আছে। সেটা হলো হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর অল্প বয়েসীদের হাতে আছে এভাবে সেভাবে ম্যানেজ করে ফেলা এন্ড্রয়েড ফোন। এই এন্ড্রয়েড ফোনে আছে যৌনতার অবাধ প্রবাহ। যেমন অস্ত্রের কল্যান অকল্যান দুটি দিকের মধ্যে অকল্যাণের দিকটাই বেছে নেয়ার মতো।

সমাজের এই পশ্চাদ্গামী যে শ্রেণী সে আগেও ছিলো এখনো আছে। তাদের শুদ্র শ্রেণী বলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতো। মানবিকতার চরম বিপর্যয় সেটা।

শিক্ষার অবাধ প্রবাহ প্রয়োজন। শিক্ষাই পারে এই চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে – জিপিএ ৫ পাবার সাধনাতেই এই বাচ্চাদের সময় কাটে সেখানে থেকে তুলে এনে প্রয়োজন মানবিক শিক্ষা, নিজেকে চেনার শিক্ষা। শুধু ভোগবাদই জীবনের সর্বস্ব নয় – এই বোধটা জাগানো প্রয়োজন।

আরো প্রয়োজন পাড়াতে পাড়াতে সংস্কৃতি চর্চা। যেমন প্রতি মাসে বা ছয় মাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়া যেখানে গান, নাচ অভিনয় ইত্যাদি থাকবে। সরকারের তত্বাবধানে ফ্রী কালচারাল একাডেমী হওয়া উচিত যাতে অলস সময় গুলোতে যৌনতার কথা না ভেবে তাদের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভার লালন করতে পারে চর্চা করতে পারে। তবে মস্তিষ্ক থেকে এসব যে বাজে চিন্তা সরতে পারবে।

**
ধর্ম নিয়ে মানুষের বিভেদ ভাল লাগেনা। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য যে মানুষ না এটা সবার মনে রাখা উচিত। যদি ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের ভাগাভাগিই হতো তবে আজকে সারা বিশ্বে সব ধর্মের মানুষ ছড়িয়ে পড়তে পারতো না। খ্রীষ্টানের দেশে খ্রীষ্টান, মুসলমানের দেশে মুসলমান, বৌদ্ধদের দেশে বৌদ্ধরা থাকতো। উন্নত দেশগুলোতে আমাদের দেশের মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষ যখন যাচ্ছে সেখানে যদি ধর্ম প্রথম প্রায়োরিটি হতো তবে আজকের বাংলাদেশ এতো রেমিটেন্সে সমৃদ্ধ হতে পারতো না। আমাদের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা সেখানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারতো না । দেশের বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতো । দেশে অপরাধ বাড়তো । পরিবারগুলো স্বচ্ছল হতে পারতো না । অনেক পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছে তাদের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে যাবার সুযোগ পেয়েছে , সেখানে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছে । যখন
কোন অরগেনাইজেশনে লোক নিয়োগ হয় তখন তার ধর্ম দেখা হয় না, দেখা হয় তার দক্ষতা, তার পড়াশোনা ইত্যাদি। সারা বিশ্বেও তেমনি। আমাদের দেশে যে উন্নত প্রযুক্তি চলে এসেছে সেই প্রযুক্তি সব মুসলমান তৈরী করেছে তা তো না। বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ভাষাভাষীর কাছে যেতে হবে, প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটতে হবে। সেখানে ধর্মের চাইতে টিকে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

“আজকের যুগে তাই ধর্মের ভিত্তিতে নয় – মানুষের জন্য মানুষ” এই ভাবনাতেই বিভেদ থেকে দূরে থাকা উচিত। আপনি আমি কেউ একা বাঁচতে পারবো না।

গালাগালি করে বিদ্বেষ তৈরী হয়। আর কিছু না। দুর্বলই গালি গালাজ করে। যিনি দায়িত্ববান তিনি জানেন তাকে কি করতে হবে তাকে কোথায় যেতে হবে। তিনি চুপচাপ কাজ করেন। তিনি গলাবাজী করেন না।
মানুষ মানুষের জন্য – ধর্ম নয় , মানুষই বড়।

20 thoughts on “সমকালীন

  1. সুন্দর বক্তব্য। সহমত। রেটিং:5 / 5

    সমাজে নৈতিকতার, মূল্যবোধ আর সুশাসনের বড়ই অভাব।

  2. ধর্ম নিয়ে আপনার চিন্তাগুলো খুব  ভাল লেগেছে। আর যৌনতা নিয়ে মানুষ কেন চিন্তা করবে না? অবশ্যই করবে। তবে  আমার মনে হয় যৌনতা বিষয়ক অপরাধগুলোর মূল কারণ যৌনতা বিষয়ে মানুষের Obsession ও repression,  যৌনতা নিয়ে যদি মানুষের  repression কমে যায় তাহলে অপরাধ বন্ধ না হলেও অবশ্যই অবশ্যই কমবে। 

    1. ধন্যবাদ । আপনার মতামত ও ভালো লাগলো । শভকামনা রইলো । 

  3. "বিভেদ থেকে দূরে থাকা উচিত। আপনি আমি কেউ একা বাঁচতে পারবো না। মানুষ মানুষের জন্য। ধর্ম নয় মানুষই বড়।" ___ সমকালীন আলোচনার জন্য ধন্যবাদ আপা।

  4. সামাজিক অবক্ষয় বিপর্যয় এড়াতে জাতির মধ্যে স্বকীয় শিক্ষা প্রয়োজন। যেখানে থাকবে নিজস্বতা। আমি জানি না, নিজস্বতা আমাদের মধ্যে আমাদের বিবেককে বাঁচাতে পারবে কিনা। ধর্ম নয় মানুষ বড়। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। 

  5. শিক্ষার অবাধ প্রবাহ আমাদের প্রয়োজন। শিক্ষাই পারে এই চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে। ঠিক বলেছেন।  

  6. মানুষ মানুষের জন্য। ধর্ম নয় মানুষই বড়।

  7. নৈতিক এবং সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট । এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত যে,সমাজের পশ্চাদগামী শ্রেণী অধিকাংশ অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত। আর এই শ্রেণীর মানুষগুলোই এখন সংখ্যায় বেশি । অভাব এদের নিত্যসঙ্গী বলে এরা না পায় পারিবারিক শিক্ষা, না পায় ধর্মীয় কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক  শিক্ষা  ।

    ধর্ম অবশ্যই মানুষের জন্য। ধর্মীয় বিভাজনের শিকার হওয়া মানবতার বিপর্যয়। তবে পৃথিবীর সকল ধর্মেই নৈতিক শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। 

    প্রযুক্তি আমাদের জন্য কল্যাণ এনেছে সত্য ,তার অকল্যাণগুলোকেও আমরা এড়াতে পারছি না যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায়।                               

    1. ধন্যবাদ আপা ।আপনার মতামত ও ভালো লাগলো । ভালো থাকবেন ।

  8. মানুষ ও ধর্ম একই জিনিস!

    ধর্মের যেমন কাল্পনিক রূপ আছে তেমনী

    মানুষের –

    1. বুঝলাম না কি বললেন । 

      মানুষ আর ধর্ম একই জিনিস কি করে হয় ?

      ধর্ম মানুষের চলার পথের দিক নির্দেশনা । সে কিভাবে চলবে পৃথিবীতে ধর্ম সেই নির্দেশনা দেয় । হাজার হাজার বছর ধর্ম ছিলো না তাই বলে মানুষ নিঃশেষ হয়ে যায় নি । মানুষ টিকে আছে । তাই বলেছি ধর্মকে প্রায়োরিটি দিয়ে মনুষ্যত্বকে বলিদান করলে কি ভাবে হয় !! 

      ভালো থাকবেন। 

       

  9. দারুণ বিশ্লেষণ। সেই সাথে একটা কথা। ধর্ম যাই হোক যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে সমাজ জুড়ে আরো অবক্ষয় নেমে আসতে বাধ্য। ভাল থাকবেন। 

    1.  আপনার মতামতের জন্য ও ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।