ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম পর্ব

ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম পর্ব

বাবুগো সিঁদুরের দাম অনেক
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।

বাতাসীর গা ঘেঁষে কারটা এসে দাঁড়িয়ে গেল। কার থেকে নেমে এলো এক তরুণ যুবক। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। তরুণটি বলে ওঠে- “এই বাতাসী! তুই আমাদের ঘরে আসিস না কেন?”

“শুধু শুধু কেন আসব বাবু।”

“শুধু শুধু কেন আসবি, কাজ করতে আসবি। আমার বাড়িতে অনেক কাজ। যেমন ধর- রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর মোছা সব কাজই তুই করবি। মাসের শেষে মাইনেও পাবি।”

বাতাসীর জীবনে বেঁচে থাকার জন্য টাকার দরকার। পাঁচ-পাঁচটা ছেলেমেয়ে নিয়ে বাতাসীর সংসার। তার সোয়ামী কিছুই করে না। দিনরাত মদ খায় আর বেহুঁশ হয়ে থাকে। বাতাসী ভাবে পরের বাড়িতে কাজ তাকে করতেই হবে। তা নইলে ছেলেমেয়েগুলো না খেয়ে মারা যাবে।

বাতাসী বলে, “তাহলে কবে থেকে কাজে লাগব বাবু?”

“কাল থেকেই আসবি তাহলে। কিন্তু সকাল সকাল….” বলেই বাবু গাড়িতে চেপে বসলেন। বাতাসী বাবুর দিকে চেয়ে থাকে।

রাত তখন এগারোটা। অনেক রাত করে ওর মরদটা ঘরে ঢুকলো। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাতাসীর চোখে ঘুম নেই। সে জেগে আছে। মরদটা আজ নেশা করে নি তবে কার সাথে মারপিট করে এসেছে। গায়ে রক্তের দাগ।

বাতাসী তুই আমাকে ভুল বুঝিস না। আজ থেকে আমি আর মদ ছোঁব না। আমি ভাল হব বাতাসী। এই তোর গা ছুঁয়ে বলছি।

বিড়বিড় করে আপন মনে বকতে থাকে। আর বলে- “শালা চোলাই মদের দোকানদার! বলে কিনা আমায় কিনা ধারে মাল দেবে না। শালার লাশ আমি গাছে তুলে রাখবো।”
বাতাসী চুপ করে থাকে। ওর কথা শুনে যায়।

জানিস বাতাসী, এর পর থেকে আর কোন দিন আমি মদ খাব না। কেউ আমাকে আঙুল দেখিয়ে বলতে পারবে না আমি একটা মাতাল। ওর দোকানে আর আমি কাউকে যেতে দেব না। মদ খেতে যারা আসবে তাদের সবার আমি ইঁট মেরে মাথা ফাটাবো। সবাই নিয়ে তৈরি করবো আমি একটা নেশামুক্ত সমাজ। যেখানে কেউ আর মদ খাবে না।

গভীর আবেশে বাতাসী ওকে জড়িয়ে ধরে- বলে “তুমি কত ভালো গো। আর কোনদিন তুমি মদ খাবে না?”

না বাতাসী, এরপর থেকে আমি ভালো হয়ে বাঁচবো, বনে কাঠ কাটবো, সেই কাঠ বাজারে বিক্রি করে অনেক পয়সা আসবে। আমরা সুখেই থাকবো।

– আমিও বাবুর বাড়িতে কাল থেকে কাজে লেগে যাবো। ওদের এঁটো বাসন মাজবো, কাপড় কাচবো। মাসের শেষে মাইনে পাবো।

– খবরদার বাতাসী, আমি থাকতে তুকে বাবুর বাড়িতে বাসন মাজতে দেবো না।
ওরা মানুষ লয়রে বাতাসী, ভদ্রর পোশাক ওরা পরে বঠে, কিন্তু ওদের দিলটা আছে জানোয়ারের পারা। আমাদের বউগুলোর দিকে ওরা জানোয়ারের পারা তাকায়। তুই সাফ বলে দিবি-

– কি বলবো?

– বলবি বাবু গো তুদের দেওয়া মাস-মাইনের চেয়ে সিঁদুরের দাম অনেক।
এখন অনেক রাত। বাতাসীর উঠোনে চাঁদের আলোক ঝরছে। চাঁদের আলোয় আঁধার মুছে যায়। তারপর অনেক রাতে দুইজনে একসাথে শুয়ে পড়ে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

8 thoughts on “ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম পর্ব

  1. শুভ একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু। প্রথম খণ্ড পড়লাম এবার দ্বিতীয় খণ্ডের অপেক্ষা …

    1. আপনার অকৃপন স্নেহের দাম আমি কোনদিন বোধ হয় দিতে পারবো না।
      তবুই বলি আপনার ভালোবাসার পরশ পেয়ে আমি ধন্য।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

    1. ধন্যবাদ সুপ্রিয় কবিপ্রতীম।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

  2. পড়লাম কবি। এটা ভালো লাগছে যে, একটি অণুগল্প এবং একটি কবিতা প্রতিদিন আপনার থেকে পাওয়া যায়। গল্প নায়কের পরিশ্রম হোক সাফল্যের চাবিকাঠি। ধন্যবাদ আপনাকে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

  3. – বলবি বাবু গো তুদের দেওয়া মাস-মাইনের চেয়ে সিঁদুরের দাম অনেক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।