ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড অষ্টম পর্ব

ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড অষ্টম পর্ব

অভিশপ্ত ফুলশয্যার রাতে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বিয়ের সানাই বন্ধ হয়ে গেল। এখন এক এক করে সব আলোই নিভে গেল। আজ ওদের ফুলশয্যা। নীতিনের সাথে মুকুলের বিয়ে হয়েছে। মুকুল আর নীতিন এই প্রত্যাশিত রাতটার অপেক্ষায় ছিল। আজ তাদের ফুলশয্যা।

রাত তখন দুটো। দুজনেই এখনো জেগে আছে। কারো চোখে ঘুম নেই। একজন অপরজনের কথাই চিন্তা করছিল এতক্ষণ। অকস্মাত্ সবুজ রঙের জিরো পাওয়ারের আলোটাও গেল নিভে। বোঝা গেল লোডশেডিং। ঘুটঘুটে অন্ধকারেই দুজনে এক বিছানায় শুয়ে আছে। তারপরেই দরজায় খট্ খট্ শব্দ। এত রাত্রে কে এল তাদের ঘরে। চকিতেই দরজা ভাঙার শব্দ। ওরা ভাবল – বাড়িতে ডাকাত পড়েছে।

ঠিক সেই মুহুর্তেই সর্বাঙ্গ কালো পোশাকে আবৃত আগন্তুক প্রবেশ করে। হাতে উদ্যত পিস্তল। পর পর দুটো গুলি। নীতিনের দেহটাকে ঝাঁঝরা করে বেরিয়ে গেল দুটো বুলেট। মুকুল দেখেশুনে অজ্ঞান হয়ে পড়লো।

জ্ঞান যখন ফিরলো তখন দেখলো সে সম্পূর্ণা বিবস্ত্রা। সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। চোখের সামনে একটা কালো পোশাক পড়ে থাকতে দেখে মুকুল। তাই দিয়ে সে নিজের লজ্জা নিবারণ করে। নীতিনের নিথর প্রাণহীন দেহটাকে দেখে মায়া হলো মুকুলের। পৃথিবীর সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে সে চলে গেছে । কিন্তু মুকুল কি করবে?
আত্মহত্যা? না সে প্রতিশোধ নেবে। অন্যায়ের চরম প্রতিশোধ নেবে। সে হবে জিঘাংসায় উন্মাদিনী। প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে উঠেছে তার দু’চোখে।

রাতের শেষ প্রহর সমাগত। মুকুলের ফোন বেজে ওঠে। অপরিচিত নম্বর। তবুও রিসিভ করলো সে।
ওপ্রান্ত থেকে স্বর ভেসে আসে। – “পুলিশে খবর দেওয়ার চেষ্টা করো না। তাহলে হিতে বিপরীত হবে। যদি পারো নীতিনের লাশটাকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দাও”।
মুকুলের ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর- “কে আপনি”
– “আমার পরিচয় জানার চেষ্টা করো না। আমি ভয়াল, ভয়ংকর, আঁধারের মুশাফির। কিন্তু একদিন আমার সবই ছিল। আজ আর কিছুই নেই। তোমার প্রত্যাখান আমার হৃদয়ের সাজানো বাগানকে ভেঙে চুরে খানখান করে দিয়েছে। তাই আজ আমি প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ। তোমার সাজানো বাগান আমি প্রতিশোধের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবো”।

– “আমার অপরাধ”? মুকুল কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে উঠে।
– “অপরাধ! আমাকে ভালবাসাই তোমার অপরাধ। সেদিনের ভালবাসা তুমি ভুলে গেলেও আমি যে তোমায় আজও ভুলতে পারি না মুকুল। তাই তো ফুলশয্যার রাতে তোমার জীবনটাকে আমি অভিশপ্ত করে দিয়েছি। তোমাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্রা করে….”

– “আমার জীবনটাকে তো আপনি বরবাদ করে দিলেন। আমার স্বামীকে হত্যা করেছেন আপনি। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে জোর করে… আপনার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আপনাকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আমি মহামান্য বিচারপতির কাছে বিচার চাইবো”।

– “তাহলে তোমাকেও নীতিনের মতো আমি গুলি করে মারবো। তোমার কাছে দুটো পথ খোলা। এক মৃত্যু আর অন্যটি বেঁচে থাকা। বলো তুমি কোনটা চাও”।

– বাঁচতে চাই সুজয়, আমি বাঁচতে চাই।

– কে সুজয়? সুজয় মরে গেছে। চলন্ত ট্রেনে ধাক্কা মেরে একদিন যাকে তুমি ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দিয়েছিলে, কোন এক কুক্ষণে সে মরে গিয়েছিল। তার দেহ নিয়ে আজ যে বেঁচে আছে তা সুজয়ের মৃত আত্মা।

– তুমি জীবিত না মৃত?

– আমার মৃত আত্মা আজও তোমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে। তোমার জীবনের চৌমাথায় আমি কক্ষচ্যুত উল্কার মতো তোমার পিছনে ধাওয়া করছি। আমার সন্ধান করার চেষ্টা তুমি করো না।

ফোন কেটে যায়। কিন্তু আগন্তুকের স্বর মুকুলের শিরায় উপশিরায় অনুরণিত হতে থাকে। মুকুল আবার জ্ঞান হারায়।
জ্ঞান যখন ফিরলো তখন ভোরের আকাশ লাল হয়ে উঠেছে।
সূর্য ওঠার আগেই মুকুল গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলো। মুকুল তার হ্যাণ্ড নোট লিখে রেখে গেছে।

“অপবিত্র দেহ নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। তাই আমি স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করলাম”।

আজ সূর্য ওঠে নি। আকাশ মেঘলা। হয়তো বৃষ্টি পড়বে। কিছু পরেই মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে শুরু হল। মুকুলের অকালমৃত্যুতে বোধ হয় আকাশ কাঁদছে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড অষ্টম পর্ব

    1. ধন্যবাদ স্যার! মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

  1. ভয়ংকর প্রতিশোধ। আত্মহননের পথ কেবল পরাজিতের। ঘুরে দাঁড়াবার ইচ্ছেশক্তিটাই প্রধান হওয়া উচিত আমাদের সকলের।

    1. আপনার সু-মন্তব্যের প্রশংসা করি প্রিয়কবি।
      সাথেই থাকবেন, এটা প্রত্যাশা করি।
      অন্য পর্বগুলি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
      সাথে থাকুন, মন্তব্য লিখবেন। জয়গুরু!

  2. ভালোবাসা কেন এতো দুঃখ আর বেদনা দিয়ে যায় জানি না। :(

    1. আপনার সু-মন্তব্যের প্রশংসা করি প্রিয়কবি।
      ভালবাসায় দুঃখ আছে, বেদনা আছে, তবুও
      জেনেশুনেই সবাই ভালবাসার আগুনে ঝাঁপ দেয়।
      সাথেই থাকবেন, এটা প্রত্যাশা করি।
      অন্য পর্বগুলি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
      সাথে থাকুন, মন্তব্য লিখবেন। জয়গুরু!

  3. পড়লাম কবি দা। ভালবাসার গল্পকে গল্প হিসেবেই নিতে পছন্দ করলাম। শুভেচ্ছা। 

    1. সু-মন্তব্যের প্রশংসা করি প্রিয়কবি।
      ভালবাসায় দুঃখ আছে, বেদনা আছে, তবুও
      জেনেশুনেই সবাই ভালবাসার আগুনে ঝাঁপ দেয়।
      ভালবাসার পরাজয় মানে জীবনের হতাশার বিক্ষুব্ধ অধ্যায়।
      প্রতিহিংসার নেশায় সর্বনাশা পথে পা দেয়।
      সাথেই থাকবেন, এটা প্রত্যাশা করি।
      অন্য পর্বগুলি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
      সাথে থাকুন, মন্তব্য লিখবেন। জয়গুরু!

    1. সু-মন্তব্যের প্রশংসা করি প্রিয়কবি।
      সাথেই থাকবেন, এটা প্রত্যাশা করি।
      সাথে থাকুন, মন্তব্য লিখবেন। জয়গুরু!

    1. মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।