মানব জীবনের প্রকৃত সফলতা

প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে মানুষ নিজেকে ব্যর্থ মনে করে, অপমানিত বোধ করে, হীনম্মন্যতায় আপ্লুত হয়। ব্যর্থতার গ্লানি সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নেয়।

ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান হলে মানুষ এতটাই ভেঙ্গে পড়ে যে, বেঁচে থাকাকেই নিরর্থক মনে করে। তাই এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথে পা বাড়ায়।

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী নিজেকে শুধরানোর পরিবর্তে নিজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি করে, অন্যের মুখোমুখি হতে লজ্জাবোধ করে, পৃথিবীকে ভাবতে থাকে নরককুণ্ড। বেছে নেয় নিজেকে শেষ করে দেবার ঘৃণ্য পন্থা।

দীর্ঘ সময় ধরে যারা তার পরিচিত-পরিমণ্ডলে, সাধারণ মানুষের কাছে একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি (Clean Image) তৈরি করেছে তারা যখন ইমেজ সঙ্কটে পড়ে, বিশেষ কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে যখন তাদের মুখোশ খুলে পড়ে তখন তারা নিজেদেরকে সংগোপনে ধিক্কার দিতে থাকে। ঐ ঘটনার পেছনে তাদের ত্রুটিগুলো নিয়ে সে আফসোস করতে থাকে। জনসম্মুখে আসতেও সে লজ্জাবোধ করে। জীবনটা হয়ে যায় অসহনীয়। এমতাবস্থায় কেউ কেউ নিজের জীবনের ইতি টানারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

এভাবে যখন কেউ যুদ্ধে হেরে যায়, ভোটে হেরে যায়, প্রতিযোগিতায় হেরে যায় তখনই নিজেকে চূড়ান্ত এক ব্যর্থ মানুষ হিসেবে ভাবতে থাকে। ব্যর্থতার গ্লানি থেকেই জন্ম নেয় হতাশা, বিষাদ। জীবনটা হয়ে যায় দুর্বিষহ। জীবনকে উপভোগের পরিবর্তে তখন কেবলই কষ্টের, যন্ত্রণার এ বিষাদসিন্ধু থেকে মুক্তি পেতে চায়, বেছে নেয় নিজেকে শেষ করে দেবার ঘৃণ্য এক পথ।

এই কথাগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ আমাদের মাঝে যারা সফল তারা কিন্তু প্রতিনিয়ত এমন অনেক বিফলতার বাধা টপকিয়ে, নিন্দা, কটূকথার পাহাড় মাড়িয়েই সফল হয়েছেন। কাজেই এই কথাগুলো একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির উপরই বর্তাবে।

যাইহোক, এবার মূল কথায় আসি। আমরা যারা নিজেদেরকে সফল ভাবছি একটা রেসে (পড়ালেখা, চাকরি, খেলাধুলা, ব্যবসা, নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতা, ভোট, যুদ্ধ ইত্যাদি) জিতে তারা কি সত্যিই সফল?

আর যারা নিজেদেরকে ব্যর্থ ভাবছি ঐ একই রেসে হেরে যাওয়ার কারণে তাদের ব্যর্থতার মূল জায়গাটাকি এটাই?

না, ওগুলো আসলে আমাদের সফলতা বা ব্যর্থতার আসল জায়গা নয়। আমাদের সমগ্র মানব জীবন একটা রেস। আমাদের ব্যক্তিজীবন কেবল ঐ রেসের একটা পদক্ষেপ মাত্র। এই রেসে আমরা সমগ্র মানবজাতি আজ পরাজিত। ব্যর্থতার গ্লানিতে আজ আমাদের প্রত্যেকের জীবন পূর্ণ। আমরা সে উপলব্ধিই করছি না।

প্রকৃত অর্থে আমরা সফল হব সেদিন যেদিন সমগ্র মানবজাতি হবে এক পরিবার। প্রত্যেকটা মানুষ পথ চলবে আল্লাহর হুকুম মেনে, ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড দেখে। দেশে দেশে কাঁটাতারের সীমানা থাকবে না, মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব থাকবে না, কেউ কারো উপর জবরদস্তি করবে না। কেউ না খেয়ে থাকবে না, সুচিকিৎসার অভাবে কেউ মৃত্যুবরণ করবে না, ভেজাল যুক্ত খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে না, বাতাস হবে নির্মল, পানি হবে দূষণমুক্ত। মানুষে মানুষে ঘৃণা-বিদ্বেষ থাকবে না, কেবলই মায়া-মমতা, ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহমর্মিতায় পূর্ণ থাকবে হৃদয়। মানবতা, মনুষ্যত্ব হবে বিজয়ী, আল্লাহ হবেন বিজয়ী, ইবলিস হবে পরাজিত।

13 thoughts on “মানব জীবনের প্রকৃত সফলতা

  1. আমরা সফল হব সেদিন যেদিন সমগ্র মানবজাতি হবে এক পরিবার। প্রকৃতটাই খুঁজে পেতে হবে। জীবন হোক আনন্দের। বন্ধুত্বের। ভালোবাসার। সুখ দুখের ভাগীদার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. হ্যাঁ দাদা আমারা সেই সফল হবো যেদিন সমগ্র মানবজাতি হবে এক পরিবার। ধন্যবাদ । 

  2. মানুষে মানুষে ঘৃণা-বিদ্বেষ না থাকুক, থাকুক মায়া-মমতা, ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা। পূর্ণ থাক হৃদয়। এমনতর শিক্ষা আর সমাজ ব্যবস্থাা ই তো চাই।

    ধর্ম নামের অধর্ম যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে। শুভেচ্ছা সাবু দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. এমনতর শিক্ষা আর সমাজ ব্যবস্থাা অবশ্যই তো চাই কিন্ত ‍ু শুধু চাইলেই পাবো না এরুপ সমাজ বির্নিমানে িএকদল নিবেদিত প্রাণ কর্মি লাগবো।

      ধন্যবাদ আমার প্রিয় আপা। 

  3. “মানব জীবনের প্রকৃত সফলতা” হচ্ছে ব্যাপক অর্থে। ধীরে বা ধীরলয়ে মহামলিনের মহড়া নিজেদের থেকেই শুরু হোক। কেননা পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর আর কল্যাণকর সেটা গ্রহণে কারু আপত্তি থাকার কথা নয়। ধন্যবাদ ভাই।

    1. পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর আর কল্যাণকর সেটা গ্রহণে কারু আপত্তি থাকার কথা নয়। একদম ঠিক … মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

  4. 'ব্যর্থতার গ্লানি থেকেই জন্ম নেয় হতাশা, বিষাদ। জীবনটা হয়ে যায় দুর্বিষহ।' সঠিক।

  5. জীবনের প্রকৃত সফলতা তার কর্মে। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো ভাই।

    1. ভালো লাগায় ধন্যবাদ 

  6. ছয় ৯ নয় সোজা পথে চলার বিকল্প নাই।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।