যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১

বিগত ৪০ বছর আগে নট্ট কোম্পানির হাত ধরে যাত্রামঞ্চে চলচ্চিত্র শিল্পীদের আগমন ঘটেছিল৷ একসময় পশ্চিমবঙ্গের যাত্রায় মুম্বাইয়ের ডাকসাইটে অভিনেত্রীদেরও দেখা পাওয়া গেছে৷ কয়েক বছর আগেই রবীনা ট্যান্ডন, শক্তি কাপুর বা পদ্মিনী কোলাপুরীর মতো বলিউড অভিনেতারা পশ্চিমবঙ্গের যাত্রামঞ্চে মুখ দেখিয়েছেন৷ তবে অতীতের যাত্রাশিল্পী বীণা দাশগুপ্তা, গুরুদাস ধাড়া, শান্তিগোপাল, অশোক কুমার, ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন কুমার প্রমুখদের উজ্জ্বল উপস্থিতি যাত্রায় আজ নেই৷

২০১৭ সালে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক বিষয় উঠে আসছে৷ সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, যুবশ্রী ইত্যাদি প্রকল্পও সামাজিক বিষয় হিসেবে যাত্রায় উঠে আসছে৷ দিগ্বীজয়ী অপেরা ‘কন্যাশ্রীর জোয়ারে বিশ্বজয়ী মমতা’ নামে একটি পালা মঞ্চস্থ করছে৷ সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, গ্রামীণ উন্নয়ন, ওপরে জোর দিয়েছেন পালাকার৷

টিভির সঙ্গে যুদ্ধে যাত্রা হেরে গিয়েছে, এটা মেনে নিতে দ্বিধা নেই বিগত ২২ বছর ধরে যাত্রার সঙ্গে জড়িত অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারীর৷ এ বছরও যাত্রায় অভিনয় করছেন তিনি৷
যাত্রা শিল্পের সাথে সংযুক্ত কলাকুশলীর মন্তব্য নিয়ে আজ থেকে ধারাবাহিক রিভিউ পর্ব শুরু করলাম।

সহৃদয় পাঠক-পাঠিকার মন্তব্যও এখানে প্রকাশ দেওয়ার আশা রেখে আজ থেকে শুরু হলো ধারাবাহিক কয়েকটি পর্বে “যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ” বিভাগটি।
সাথে থাকবেন- এটা প্রত্যাশা করি।
জয়গুরু!

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ
যাত্রাপালা-১

“বায়না করা বৌ” সামাজিক যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত কথা:

আশুতোষ গাঙ্গুলীর একমাত্র পুত্র অর্পণ সাবিত্রীকে বিয়ে করে। হানিমুনের উদ্দেশ্যে শহরে পাড়ি দেয়। ম্যানেজার কালী নাগের চক্রান্তে মাঝপথে অর্পণের মোটরগাড়ির ইঞ্জিন বার্ষ্ট হয়। হারিয়ে যায় গাঙ্গুলীবাড়ির কুললক্ষ্মী সাবিত্রী। অর্ধোন্মাদ অবস্থায় বাড়ি ফেরে অর্পণ। কালী নাগ নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে নতুন করে চক্রান্তের জাল বোনে।

সাবিত্রীর সঙ্গে চেহারার অদ্ভুত মিল থাকায় কালী নাগ পতিতাপল্লীর পতিতা সতীকে এক মাসের জন্য বায়না করা বউ সাজিয়ে অর্পণের কাছে আনে। অর্পণ সতীকেই সাবিত্রী ভেবে ধীরে ধীরে সুস্থ স্বাভাবিক হতে থাকে। সতীও অতীত জীবন ভুলে মনেপ্রাণে সত্যিকারের সাবিত্রী হয়ে উঠে।

ওদিকে অর্ধদগ্ধা সাবিত্রী রূপ-সৌন্দর্য হারিয়ে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় সাজে পতিতাপল্লীর সতী। এদিকে অর্পণ ও সতীর অকৃপণ ভালোবাসার চাওয়া-পাওয়া যখন কানায় কানায় পূর্ণ হতে যায়, ঠিক তখনই প্রকাশ হয়ে পড়ে সতীর আসল পরিচয়।
আর তখনই ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে আশুতোষ ঘৃণাভরে তাড়িয়ে দেয় সতীকে। নিরূপায় সতী তার ভালোবাসার মোহ ছেড়ে আবার ফিরে আসে তার পুরানো জীবিকায়। কিন্তু সতীর অকৃপণ ভালোবাসার টানে উন্মাদপ্রায় অর্পণ সতীর সন্ধানে ছুটে যায় পতিতাপল্লীতে।

সেখানে অর্পণের সামনে হাজির হয় সতী ও সাবিত্রী। বিস্ময়ে হতবাক অর্পণ কাকে মেনে নেবে? তার বিয়ে করা বউ। অর্ধদগ্ধা কুরূপা সাবিত্রীকে, না তার বায়না করা বউ সতীকে? এমনি অসংখ্য জীবন যন্ত্রণার বাস্তব দলিল এই নাটক—“বায়না করা বউ”। – নাটকটি কলকাতার শ্রীহরি নাট্য কোম্পানী যশের সঙ্গে অভিনয় করে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

6 thoughts on “যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১

  1. যাত্রার আসর বা যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি বিরাট অংশ জুড়ে এক সময় এর অবাধ বিচরণ ছিলো। দিনে দিনে সব হারিয়েছে। এক সময় আমি রেডিওতে যাত্রাপালা শুনতাম। সবই এখন বিস্মৃতি। :) আলোচনাটি ভালো এবং স্বতন্ত্র হয়েছে মি. ভাণ্ডারী। অভিনন্দন আপনাকে।

  2. আপনার কলামটি পড়ে নস্টালজিক হলাম কবি। কত কিছুই না জীবন থেকে লুপ্ত হয়।

  3. যাত্রাপালা আমার ভীষণ প্রিয়। সরাসরি দেখা এক ধরণের নেশায় পরিণত হয়ে যায়। মিস্ করি আজকাল। :(  

  4. পাড়ায় যখন যাত্রাপালা হতো কী অদ্ভুত বুঁদ হয়েই না বসে যেতাম। আজ আর নেই। হারানো দিনের মতে হারিয়ে যাচ্ছে সব। নর্তন কুর্দন যাত্রাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। :(

  5. বহুকাল পর যাত্রামঞ্চের আলোচনা পড়লাম। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।