দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও উপভোগ্য করতে Nilam এ আছে শত শত পন্য। এর মধ্যে ইলেকট্রনিক পন্য গুলো সবার জীবনকে সহজ ও সুন্দর করতে পারে। আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে নিলামের ১০ টি পন্যের ব্যপারে যেগুলো প্রতিদিন আমাদের জীবনে কাজে লাগে। কিছু পন্য ছাড়া আমরা একদিন ও চলতে পারিনা। এই আর্টিকেলে নিলামে সহজলভ্য ঐ পন্য গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আর নিলাম থেকে পন্য কিনতে পারছেন কার্ডলেস ০% ইএমআই সুবিধা সহ। আপনার ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে না, কোন সুদ দিতে হবেনা।
ফ্রীজ
রেফ্রিজারেটর বা ফ্রীজ এখন আর কোন বিলাস পন্যের মধ্যে পরেনা। আধুনিক জীবনের একটি প্রয়োজনীয় জিনিস ফ্রীজ। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যস্ততা বাড়ার পাশাপাশি আমাদের অনেক কাজ করার সময় কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিন বাজার করা একটি। উপরন্তু খাবার সতেজ রাখার জন্য ফ্রীজ একটি অনবদ্য যন্ত্র। নিলামে নামি দামী সব ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর আছে। আপনার পছন্দ মতো ব্র্যান্ডের ফ্রীজ অর্ডার করতে পারেন এখানে।
স্মার্ট টিভি
স্মার্ট টিভি কালেকশনে নিলাম এখন বাজারের সবচেয়ে এগিয়ে। এখানে সকল ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি পাচ্ছেন। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসায় ফিরে বিনোদনে সঙ্গী স্মার্ট টিভি। ইন্টারনেট ব্রাউজিং, অ্যাপ ইনস্টল করার সুবিধা, ও আরো নানাবিধ আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন স্মার্ট টিভি অর্ডার করতে ভিজিট করুন নিলাম ওয়েবসাইট। আর কার্ডলেস ইএমআই সুবিধাতো থাকছেই।
ওয়াশিং মেশিন
অনেকের জন্য বিলাস পন্য হলেও, যারা অনেক ব্যস্ত জীবন যাপন করেন তাদের জন্য খুবই দরকারি পন্য ওয়াশিং মেশিন। স্যামসাং, শার্প সহ সব বিশ্বসেরা ব্র্যান্ড এর ওয়াশিং মেশিন কিনতে এখানে ক্লিক করুন।
মাইক্রো ওয়েভ ওভেন
গৃহিনীরাই কেবল বুঝতে পারে মাঝে মাঝে একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেন কত জরুরি হয়ে পরে। নিলাম দিচ্ছে কিস্তিতে সকল ব্র্যান্ডের মাইক্রোওয়েভ ওভেন কেনার সুযোগ।
ওয়াটার পিউরিফায়ার
বিশুদ্ধ পানির নাম জীবন। কিন্তু আমাদের এই যুগে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া দুষ্কর। তাই ওয়াটার পিউরিফায়ার প্রতিটি ঘরের একটি আবশ্যিক পন্যে পরিণত হয়েছে। নিলামে সব গুলো টপ ব্র্যান্ডের ওয়াটার পিউরিফায়ার পাবেন বাজারের সবচেয়ে কম দামে।
ইস্ত্রি
ইস্ত্রি বা আইরন আরেকটি দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় বৈদ্যতিক যন্ত্র। আমাদের কাপড় গুলোকে সুন্দর ও গোছানো রাখতে ইস্ত্রি একটি অত্যাবশ্যকীয় পন্য। এখন অনেক ব্র্যান্ডের আইরন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে সব গুলো সেরা ব্র্যান্ডের আইরন এক প্ল্যাটফর্মে পেতে নিলামের ওয়েব সাইট ভিজিট করুন।
ব্লেন্ডার
ব্লেন্ডার আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। আগেকার যুগে মশলা বাটার জন্য বা গুড়া করার জন্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। এখন ব্লেন্ডার দিয়ে নিমিশেই এগুলো করে নেয়া যাচ্ছে। তাছাড়া ও অনেক ধরণের জুসার দিয়ে বানানো যায় ফলের জুস। তাই ব্লেন্ডার সব বাসাতেই দেখা যায়। নিলামে আপনারা সব ব্র্যান্ডের, ভালো কোয়ালিটির ব্লেন্ডার পাচ্ছেন। তাই জীবনকে আরেকটু সহজ করতে আজই নিলাম থেকে ব্লেন্ডার অর্ডার করুন।
ওজন মাপার মেশিন
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য নিয়মিত ওজন মাপা খুব গুরুত্বপূর্ন। প্রতিদিন ওজন মাপার জন্য বাইরে যাওয়া বা অন্য কারো মেশিন ব্যবহার করা একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। তাই নিজের জন্য নিলাম থেকে একটি ব্যাক্তিগত ওয়েট মেজারমেন্ট মেশিন কিনে নিন। এ ছাড়া আছে কিচেন ওয়েট মেশিন যা দিয়ে সহজেই ফলমুল, সবজি, মাংশ সহ অনেক কিছুর ওজন মাপা যাবে।
বিভাগের আর্কাইভঃ প্রকাশনা ও রিভিউ
নিম্নোক্ত বইগুলো মুহাম্মদ স. সম্পর্কে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা সম্পর্কে লেখা
বইগুলো রকমারিতে অনলাইনে অর্ডার করতে পারবেন।
১। হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ বেদ পুরানে আল্লাহ ও হযরত মোহাম্মদ,
লেখক: বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়।
২। পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ সমূহে হযরত মুহাম্মদ স. এর আগমনের পূর্বাভাস ও একটি পর্যালোচনা
লেখক: রুহুল আমিন।
৩। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (দ.)
লেখক: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
(এই বইতে এ সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ আছে )
৪। What the Bible Says About Muhammad
by Ahmed Didat
৫। হযরত মুহাম্মদ স. ও ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ
লেখক: এম.এ. শ্রীবাস্তব।
৬। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মোহাম্মদ স. এর বর্ণনা
লেখক: জাকির নায়েক।
The Milestone of 1,00,000+ Reads
The Milestone of 1,00,000+ Reads just One Day before the 100th Birthday of Sheikh Mujib
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ হয়েছে ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’
বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে শেখ সাদী মারজানের ৩য় কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’।
তিন ফর্মার বইটিতে ৪০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কবি নিজেই। ভুমিকা লিখেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান কবি তাজিমুর রহমান।
তারুণ্যের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি, আনন্দ-বেদনা, দেশ ও ভাষা প্রেম ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজ-সাবলীল ভাষায় ফুটে উঠেছে ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’ গ্রন্থের কবিতায়।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৬৭১ নং স্টলে। গায়ের মূল্য ৮০ টাকা। ২৫% ছাড়ে ৬০ টাকা।
আমার লেখা উপন্যাস “ভণ্ড”
♦ জলছবি প্রকাশনের ৭০০ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে আমার লেখা উপন্যাস ভণ্ড। সুপ্রিয় সহকর্মী, আপনি যে শ্রেণির পাঠকই হউন না কেন আশাকরি ভণ্ড আপনাকে ছুঁয়ে দিবেই।
ফ্ল্যাপঃ
———
#জসীম_উদ্দীন_মুহম্মদ বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক জসীম উদ্দীন মুহম্মদ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। বোদ্ধা কবি হিসাবে তিনি সমধিক পরিচিত হলেও তিনি একজন অত্যন্ত বড় মাপের লেখক। যাঁর লেখা কবিতা,গল্প ও প্রবন্ধ নিয়মিত জাতীয় পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়।
“ভণ্ড” উপন্যাসের নায়ক অচল একজন রহস্য যুবক। বিশেষ পরিস্থিতিতে মুখে যা বলেন বাস্তবেও তাই হয়ে যায়! বইটি পড়তে পড়তে আমি যেন ভিন্ন এক জগতে প্রবেশ করেছিলাম। বলা চলে ভণ্ডতে বুঁদ হয়েছিলাম। উপন্যাসের নায়ক মহামতি অচল নিজেকে দাবি করেন ২৫% মানুষ আর অবশিষ্ট ৭৫% পশু। তিনি মানুষ হতে চান। ১০০% মানুষ। কিন্তু কেন এবং কীভাবে মানুষ হবেন? সুগভীর জীবন দর্শনের এইসব প্রশ্নের জবাব লেখক দিয়েছেন অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং সাহসী উচ্চারণে।
আমরা কেউ কেউ মানুষ আর কেউ কেউ জানোয়ার! পশু প্রবৃত্তিকে খুন করে মানুষ হওয়ার এই মিশন দিয়েই সৃষ্টিকর্তা সকল মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সাকসেসফুল হলে আলোর উপর আলো আর না হলে অন্ধকারের উপর অন্ধকার।
রিকশাওয়ালাকে ভাই বলার মহাঅপরাধে নায়ক অচলের ২য় প্রেমিকা কামের দেবী আফ্রোদিতি খ্যাত শিখা যেমন তাকে চিরদিনের মতো ছেড়ে যায়; তেমনি তাকে ছেড়ে যায় আজন্মের প্রেমিকা নীলাদ্রি, ৩য় প্রেমিকা সুবর্ণা এবং নাবালিকা প্রেমিকা আঁচল। এদের কারো সাথেই অচল অন্যায়ভাবে আপোষরফা করেননি। নিজের চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব একবিন্দু বেহাত হতে দেননি। এভাবেই অচল প্রতিনিয়ত মানুষ হওয়ার রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে নিয়েছেন। তাঁর কল্পিত ১০০% মানুষ হওয়ার দৌড়ে পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অচল কি ১০০% মানুষ হতে পেরেছিলেন?
সুপ্রিয় পাঠিক, উপন্যাসটি কালজয়ী হবেই; এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।।
“ভণ্ড” পড়ুন ; নিজেও অচলের মতোন নান্দনিক ভণ্ড হউন!!
জালাল উদ্দীন মুহম্মদ
বিশিষ্ট কবি এবং কথাসাহিত্যিক।
============================
শবনম – আমার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস
একুশে বইমেলা ২০২০তে প্রকাশিত হচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস – শবনম। বিশেষ একটি ব্লগের বহুল আলোচিত এবং সর্বোচ্চ পঠিত গল্পের সিরিজ এক মলাটে পড়ার আমন্ত্রণ রেখে গেলাম।
বইয়ের নামঃ শবনম
বইয়ের ধরনঃ উপন্যাস
প্রচ্ছদ পরিকল্পনাঃ মোজাদ্দেদ আল ফেসানী জাদিদ
শবনমের ছবিঃ শায়মা হক
প্রকাশনীঃঃ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি
বইমেলা ২০২০ স্টল নংঃ ৫৮৭
শবনম ফার্সি শব্দ। সুদূর পারস্য ভাষা থেকে আগত এই শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ভোরের শিশির। এর সমার্থক শব্দগুলির অর্থ হচ্ছে ক্ষনস্থায়ী, স্বল্পস্থায়ী বা অল্পতেই নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। প্রতিটা মানুষের এই নশ্বর জীবনের সাথে এই নামের অর্থের কতই না মিল!
ছোট্ট এই জীবনে মানুষ কত কিছুর স্বপ্নই না দেখে, কত কিছুরই প্রত্যাশা করে, হৃদয়ের গহীনে নিরন্তর বানিয়ে যায় একের পর এক আশার বালুচর। হয়তো কিছু পায়, কিছু পায় না। যা পায় না সেটা পাবার জন্য মরিয়া হতেও কেউ কেউ পিছ’পা হয় না। আশা আর আশাভঙ্গের খেলা নিয়েই চলে নিরন্তর এই জীবনের পথচলা। জীবনের এই পথচলা কখন সোজা আর সহজ রাস্তায় হয় না।
শবনম হলো ভোরের শিশির যা প্রকৃতির অমোঘ বিধানে সূর্যের প্রথম আলোকচ্ছটায় হারিয়ে ফেলে তার অস্তিত্ব।
কেউ কী পারবে নিয়তি’কে পাশ কাটিয়ে ভোরের শিশির’কে জীবনের সাঁঝবেলা পর্যন্ত একান্ত করে ধরে রাখতে?
এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের জীবনই একটা করে মহাকাব্য। আর এই মহাকাব্যের সব স্তবকই কিন্তু ছন্দ মিলিয়ে লেখা হয় না। কিছু কিছু জায়গায় তাকদীরের রহস্যময় খেলায় অছন্দের কারূকাজ না চাইতেও লেখা হয়ে যায়। কল্পনাতীত অবাধ্য এই কারূকাজ ঠেকিয়ে রাখে সেই সাধ্য কার?
জীবন নামের এই মহাকাব্যের কিছু ছন্দ আর অছন্দের কারূকাজ পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা রইলো।
আজ আকাশে চাঁদ নেই ( উপন্যাস)
হাসি – কান্না, প্রেম – বিরহ নিয়ে নতুন উপন্যাস –
আজ আকাশে চাঁদ নেই।
প্রি অর্ডার চলছে –
https://www.rokomari.com/book/193411/aj-akashe-chand-nei
আজ আকাশে চাঁদ নেই
Author: মোহাম্মদ অয়েজুল হক
Publisher: সাহিত্যদেশ
Category: সমকালীন উপন্যাস
Language: বাংলা
ISBN: 9789848069196
Quality: হার্ডকভার
মূল্য – ১৫০ টাকা ( প্রি অর্ডার করলে ১১৩ টাকা )
হুমায়ূন হিমু
পেছনের গল্পঃ সর্বপ্রথম ২০১২ সালে একটি কবিতা লিখেছিলাম। প্রথম কবিতাটি খুব বেশি ভালো ছিলো বলে আমার মনে হয় না। তবুও কেন যেন সেই ভুলে ভরা কবিতাটি ‘মুসফিকা স্মৃতি পাঠাগার’ আয়োজিত মেঠোপথ ম্যাগাজিনে প্রকাশ পায়। তখন অবশ্য প্রকাশ পাওয়ার আনন্দ কেমন হয় সে বিষয়েও বোধগম্য ছিলো না।
২০১২ সালের পর থেকে উপন্যাস জগতে ঢুঁ মা-রা। তখন থেকেই উপন্যাস, গল্পের বইয়ের প্রতি আলাদা একটা টান, সম্পর্ক এসে মনের অলিগলির চিপায় চাপায় বীজ বুনতে শুরু করে।
শুরু থেকেই হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাস দেহ জগতের ভিটেমাটিতে বসবাস করতে শুরু করে। যতই পড়তে থাকি ততই প্রেমে পড়ে যায়। আসলে, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখায় আলাদা একটি আত্মা আছে। যে আত্মার পিঠে ভর করে নিমিষেই উপন্যাসের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব।
২০১৭ সালে কর্মজীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর সাথে সাথে কবিতা, অণুগল্প, গল্প লিখতে শুরু করি। দুই একটি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ম্যাগাজিনসহ পত্রিকার পাতায়ও জায়গা করে নেয়।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখায় ভক্ত এবং আমার লেখা প্রকাশ পাওয়ার আনন্দে উৎসাহ পাই। এবং বারবার মনে হতো, ইস্! আমার নামে যদি একটি বই থাকতো।
অবশেষে ২০১৯ সালের শেষের দিকে বই প্রকাশের উদ্যোগটা নিজে থেকেই নিয়েই ফেলি। যেহেতু আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের চরম ভক্ত। সেহেতু তাঁর রচিত, জনপ্রিয় চরিত্র ‘হিমু’ নামটি নিয়েই গল্প লিখতে শুরু করা।
তারপর…। অবশেষে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে “হুমায়ূন হিমু” গল্পগ্রন্থ আমার স্বনামে।
বইয়ের গল্পঃ প্রত্যেকটি মানুষের মনের চিলেকোঠায় লুকানো কিছু জানা অজানা গল্প থাকে। সে গল্পে নায়ক থাকে নায়িকা থাকে। থাকে কিছু হৃদয় পোড়া আর্তনাদ কিংবা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার গপ্পো।
আবার প্রত্যেকটি মানুষের মন পাড়ায় চলনবিলে কিছু চরিত্র থাকে। যাকে ভেবে ভেবে মিষ্টি মিষ্টি হেসে দিনরাত পার করা যায়। আবার ভেবে ভেবে ক্লান্ত পথিকের বেশে চোখ বেয়ে বেয়ে অশ্রু ভ্রমর ভিজিয়ে দিয়ে যায়। তবুও মানুষ গল্প আর চরিত্রের দীর্ঘশ্বাসে দীর্ঘকাল রাজপুত্রের মতো বাঁচতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি নিজেও ‘হিমু’ নামের সাথে যুক্ত হয়ে বাঁচতে চাই।
হুমায়ূন হিমু
ধরনঃ গল্পগ্রন্থ
লেখকঃ নৃ মাসুদ রানা
প্রচ্ছদঃ নবী হোসেন
প্রকাশনীঃ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি
স্টল নং – ৫৮৭
একুশে বইমেলা ২০২০।
আশাকরি বইটি সকলেই সংগ্রহ করবেন।
চাষার বচন ( কাব্যগ্রন্থ ) বই আলোচনা
বই আলোচনা
🔷চাষার বচন
মাসুদ পথিক
মানবতা যেখানে উকি দেয় সেখানে কবিরা বিলিয়ে দেয় জীবনের সবটুকু সুখ। কবিতা ছুঁয়ে যায় মানবতা, কবিতা ছুঁয়ে যায় প্রতিবাদ, কবিতা ছুঁয়ে যায় দেশপ্রেম, কবিতা ছুয়ে যায় ভালোবাসা।
📖 উৎসর্গ
কাঁদা খুঁড়ে খুঁড়ে —— এইএক পাখি কাদাখোঁচা
রক্তের ভেতর চলছে তাঁর —— ইতিহাস খোঁজা
দেশরত্ন শেখ হাসিনা
শ্রদ্ধাভাজনেষু
📖 দুনিয়ার প্রথম ধানচাষির নাম আমি পাইনি
শুনেছি মানুষ ও গরুর আলজিভের অন্ধ সে কাহিনী
কবির কবিতায় প্রথমত উৎসর্গ ও ভূমিকা উঠে এসেছে মানব জীবনের সংগ্রামী রূপ ও জীবনধারা। অন্য আলোকে কবিতাকে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন কবির নিজস্বতায়। জীবন থেমে থাকেনা, সংগ্রাম আর আত্মবিসর্জনেই মানব জীবনের সফলতা, যার দৃষ্টান্ত বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত বিশ্ব শান্তির রোলমডেল জননেত্রী বঙ্গোত্তম শেখ হাসিনা মহান মানবতার কন্যাকে
কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন ।
📖 জন্ম রহস্য
আমার জন্ম বিষণ্ণতার গর্ভে, তবে-তো
আমার মায়ের নাম ‘বিষণ্ণ দেবী’ কিংবা ‘বিষণ্ণ বেগম’!
গ্রামবাসী বলে, এইডা একটা জাউরার পুত
এমন-কি আমার মায়ের নাম ‘কান্না’-ও বলে লোক
কবি মানবতাকে স্পর্শ করেছেন রহস্যচ্ছলে জন্ম পরিচয় যেখানে মুখ্য বিষয় কবি প্রচলিত নিময়ের বাইরে মানবকে করেছেন মহা মানব।
📖 পংক্তিমালা (অংশ বিশেষ)
🔶ফল
তবে কি পতিত পালকের উৎস
গন্তব্যের দিকে হারিয়ে যাওয়া কোন পাখি না?
বনের ভেতর ঢোকার মুখেই বাড়িখানা;
বাতাসে উড়ছে হৃৎপিণ্ড জোড়া,
গমনপথে জলীয় কণা কত-না!
🔶হিরামন
যায় আসে যাত্রী ও ঘাটের মাঝিরা, কে আমার পিতা?
বাতাসে কিছু কানকথা…. এই অন্ধকার কি আমার ধাত্রী
🔶কফিন
প্রিয় উৎকণ্ঠা প্রদীপ হাতে দাঁড়াত এসে তুলসী তলে
একদিন কূপির পাশে প্রিয় শাদা জোছনার গলে
🔶চলচ্চিত্র অ্যান্ড স্থিরচিত্র
এবং গ্রাম মানেই এখন
কিছু স্থিরচিত্র চলন
ইমেজের ডায়াগ্রাম,
আর মধ্যেবিত্তের নস্টালজিয়া
রক্তে লুকানো হীনম্মন্য’তার
🔶বেজন্মা ধান
ফলে, খেতে খতে ঘুরে সুতানলী সাপ,
বাতাশে বেহুলা শরীরের ম্রিয়মাণ উত্তাপ
কুড়িয়ে চলে যায় গাঙুরের ছোট মেয়ে,
কিছু গিমা শাক কিছু স্মৃতির পরাভব
আর ঝরাধান থাকেই পুনর্জন্মের চেষ্টায়,
মাটিতে কখন পড়বে বৃষ্টির লিবিডো ছাঁট
নিষিক্ত হবে ধান, দেহ-নদীর পিছল ঘাট
🔶অন্ধচাষা
আমি চাষা অন্ধ ভূ-তল
একতারাতে ধরবে ফল
বাঁধছি যখন বীজের মন
গোলা ভরবে এই-না ধন
🔶বায়োলজি
নিচের তলায় দূর্বাঘাস, বুকে ডাকে জোড়াহাঁস
🔶চাষার বিজ্ঞাপন
যতই ভাবো আদিম আমি কী তার কিছুই জানি না
আমিই তো করেছি সৃজন সেই প্রথম বীজের গোপন ভাষা?
🔶চাষার বংশধর
আমরা চাষার বংশধর
বাড়ি মাইজের চর
গাঙে পাইছে ঘর
গাঙে খাইছে ঘর …
📖 কাব্যের নান্দনিকতায় কবি ফুটিয়ে তুলেছেন মানব প্রেম, কৃষক, শ্রমিক, রাখাল, মানব জীবনের প্রকারভেদ, উপলদ্ধি করেছেন মানবিক শক্তির ভাবনা সংগ্রামী জীবন, অঞ্চলিক জীবনধারা। ভিন্ন ও শৈল্পীক কবির কলমের আঁচড় মানুষের আবেগ সামাজিক চিন্তা সামাজিক উৎস থেকে সম্প্রসারিত করেছেন মানবিক পথে।
📖 জীবনের জয়গান
❇️ভালোবাসার স্টেশন
এই একহারা রেলপথ
গ্রামের পেছনে দিয়ে, বহুদূর
তোমার অতীতের দিকে বেঁকে গেছে
আমার চিঠির বুকে নিচু মেঘ, রক্তের টানা আছে;
স মা ন্ত
রাল
❇️পারসেপশন
কে-না জানে পাহাড় মানেই খুব উঁচু;
মসৃণ নয়
আমি তো জেনেছি পারসেপশন
এক মায়াবী অব্যয়
এইসব দূরত্বের গাঁয়ে কতো-না একান্ত
ক্ষত বেঁচে রয়
❇️বীজের সীমানা
প্রেম ও স্বপ্ন বুকে ঈশ্বর কেবল ওঠে নাক ডেকে, তাহার
আর আঁকে, দু’জনের মাঝে বিধি ও সীমার বাদাড়।
❇️সখা
ধানের সাথে বুনছি মনের কথা যত
আর দুই জীবনের ক্ষত ….
❇️উঁবু হয়ে মজেছি কাজে
শুধু তোমার নামে লাঙল চালাই
শুধু তোমার মনে লাঙল চালাই
দেহ তোমার মাটির ঢেলা
পথ হারালাম সন্ধ্যাবেলা
লাঙল ছোট কাদার সুখে
ফলবে বাধার মুখে
হাজার বছর মাঠের মাঝে
উঁবু হয়ে মজেছি কাজে
❇️সখী তোর গোপন শালুক
ভাবি আজ কুড়ানোর সুখে; খুব গোপনে ছুঁয়ে যাব গোপন
যেখানেই হাত রাখি কেবল দেখি; হায় লাজুল এ মন
এ-কী! সখী তোর কেমন মন; শাদা শাপলায় রাখা এক ধন
❇️একটি গ্রামীন প্রেমের গল্প
বাড়ি না-ফেরা এক রাখাল এর নাম দিয়ে গেছে ‘বৃন্দাবন’
❇️আমার স্মৃতিবালা
চল, আমরা পেরিয়ে যাই এইসব দৃশ্য তুলে সঙ্গমের ঢেউ।
📖 নিপীড়িত মানুষের মনের ভাষা কবিতা।প্রাণের আকুতি কবিতা। প্রতিবাদের হাতিয়ার কবিতা। কখনও দেশ ও জাতির অমোঘ নির্দেশ করে কবিতা।
সুন্দর ও সরলতার বীজ কবিতা। কবি মাসুদ পথিক তার কবিতায় জীবন ও বাস্তবতার শৈল্পীক কারুকাজে কবিতাকে সতন্ত্র নতুনত্বে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আধুনিক কবিতায় কবির সতন্ত্র সত্তা কবি স্থান করে নিবে পাঠক মহলের মনে।
চাষার বচন
মাসুদ পথিক
প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু
প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১৬
শ্রকাশনীঃ
শ্রাবণ প্রকাশনী
১৩২ আজিজ সুপার মার্কেট (২য় তলা)
শাহবাগ, ঢাকা-১০০০
মূল্যঃ ২৫০ টাকা ।
লেখকঃ
শান্ত চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক
গুলশান-ঢাকা
যোগাযোগঃ [email protected]
কালের নটরাজ ( কাব্যগ্রন্থ ) বই আলোচনা
বই আলোচনা
কালের নটরাজ (কাব্যগ্রন্থ)
কামরুল ইসলাম
আমি মহাকালের নটরাজ
ভূমি থেকে উত্থিত শিবের অগ্নিবাণ, দ্রোহী শুদ্র চণ্ডাল
আফ্রিকার লুমুম্বা, স্পার্টাকাস, রাশার লেনিন
আমিই শৌর্যসাধক, বীরত্ব আমার নাম
কালের মহিমায়, মহানিনাদের নৈপুন্যে
প্রেম ও শক্তির প্রদীপ জ্বালাই।
💢বাস্তবতার অনুধাবন অনুপম ভাষাশৈলী স্বতন্ত্র পঙ্ক্তিমালা কবিতায় লক্ষনীয়।
নটরাজের বার্তাঃ
হে কালজয়ী মানব ! তোমার জন্য শুভ বার্তা
বিশ্বব্যাপী নতুনেরে করে আবর্তন …..
নটরাজ মানবভূমির রূপ পরিদর্শের বিশ্বব্যাপী পরিভ্রমনে পরিব্যাপ্ত, ক্রমান্বয়ে বিশ্বরূপে আবগাহন…
বিশ্বরূপঃ
মহাসাগরের জলস্রোত ঘূর্ণিজল, উৎকণ্ঠার অবসাদে নটরাজ, শিল্পের উদ্যান ফসলি স্বপ্ন উঁকি দেয় জলের বুঁদবুদে, …… বিশ্বরূপের মঙ্গলপ্রদীপ-অফুরান নিবেদনে। (পৃষ্ঠা ১১-১৪)।
💢কবির কবিতায় চৌকষ শব্দচয়ন সতন্ত্র ধারা মনকে ভরিয়ে তোলে। রোমান্স, প্রেম, বিরহ জীবন ও জগতের বাস্তব প্রকাশ কবিতার পঙ্ক্তিমালায়।
নটরাজঃ
এ ভর আয়োজন বিমর্ষ হেমলকে নটরাজ দাহিত স্বপ্ন বাসরে চেয়ে থাকে বিশ্ব পটভূমির ওপর- এ কোন বিশ্বরূপ ! যে রূপে অবগাহিত, তা কী নটরাজের বিশ্বালয়!
গানঃ
এমন ভূবন তারে খুঁজে ফিরি, যে আছে প্রাণে প্রাণে মনের তারে প্রাণে প্রাণে খুঁজি, এ ভূবনে … ওগো দাও সেই পূণ্যভূমি, মানবের পূণ্যভূমি ওগো, খুঁজে ফিরি যে আছে প্রাণে প্রাণে ।
মর্ত্যবিহারঃ
উষসীর রূপের মর্ত্যবিহার নটরঙ্গিনী, আঁচলজুড়ে লাবন্য নুয়ে পড়ে-রৌদ্রের ভেতর মুঠো আলোয় ভরে থাকে বিস্ময়, নয়নের শোভায় প্রভাতের রূপে-সপ্তগ্রামের নগর …..
আয়োজনঃ
সন্ধ্যের খোলা আকাশ, পড়ন্ত রোদের প্রতিশ্রুতি, সজীব স্বতন্ত্র সত্তায় গভীর স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলে অনুরাগ ….. শতাব্দীর তারার মেলায়-নটরঙ্গিনীর উৎসব।
নীলসন্ধ্যাঃ
বিমর্ষ অনুভূতির মায়াশ্রমের প্রেমলীলায় মগ্ন নটরাজ ও নটনন্দিনী।
চাঁদের নটরঙ্গঃ
নীলপদ্মের ভ্রমে শূন্যরূপে নটরাজ,রূদ্ররূপে করে গ্রস …. যদি জানতে-রূদ্রের অনলে চাঁদ,অপরূপার নটরঙ্গে। (পৃষ্ঠা ১৫-২৪)।
💢বিশ্বব্যাপী অস্তির সময় নাগরিক জীবনের বাস্তব উপলদ্ধি ও পূর্ণ সারসংকলন পরিলক্ষিত হয় কবিতায়, শক্তি ও প্রেমের প্রতিক নটরাজের উত্থান মঙ্গলময় ধারার নতুন সমন্বয়ে কবিতাকে করেছে প্রাণবন্ত।
মানচিত্রঃ
চারদিকে শুকনো পাতার শিস, ভ্রমনের গুঞ্জন
গাঙশালিক ভুলেছে পথ, পথের ঠিকান
ঘাসের ওপর ফড়িং প্রজাপতি, মাঠে মাঠে ঘাস
আমি নীরব শান্ত, শতকলের ঘুমন্ত নটরাজ, দ্বারের প্রহরী
আকাশজুড়ে মেঘ আর নীলিমার ভস্ম, পড়ে থাকে ঈগলের মানচিত্র।
নবীন আলো ক্রমশঃ মেলে ধরে প্রেম
বীণার সুরে অধীর অনুরাগ
তবু ঐ রূপখানির ভেতর নোনাজল
ভেঙেছে দেয়াল…..
ধূসর স্বপ্ন অভিসারে।
কেতকীঃ
আচার্যের ধর্ম কুটির অন্তরলোকের সৌন্দর্যলোক অষ্টাঙ্গিক মার্গে
পরিশোধিত, জীবনের মোহিত আবেশে সম্যক দৃষ্টিপ্রাপ্ত…..
অশনি বাহনঃ
জলে জলে তরঙ্গ-ভঙ্গে কলধ্বনির উচ্ছ্বাসে নটিনী
নৃত্যপটিয়সী, মৃদঙ্গের তাল-বেতাল উতাল উন্মত্তে
শাদাটে নীলে নীলে নিরন্তর ভাসমান উদাস আরতি
পরম রঙের জ্বলন্ত পূর্ণিমায় হিপ্লোলিটাসের অঞ্জলি।
নির্বসিত প্রেম অলয় মৈনাক পর্বত, নটরাজের ভ্রমবশতঃঅবজ্ঞায়
নটিনী প্রলয়িনীর রূদ্ররূপে….
নটিনীর প্রেমঃ
নটরাজের স্বপ্ন অনুভূতিতে নটিনীর কালচক্র অনুভূত, কালে কালে
এই চক্র নবকালের উদ্বোধনে সহায়তার প্রতীকরূপে আবির্ভূত….
ফাগুণের রূপেঃ
ফাগুণের রূপে, শূন্য পেয়ালা, তবু শূন্য নয়
অপরূপের রূপ, নিরন্তর সব পিয়াসে মগ্ন হয়
বসন্তের নারী, ফুল উদ্যান, সরাব যত সবি
জন্ম মোর ফাগুণে, উন্মত্ত ফাগুণের কবি।
এসো ধ্বংস করিঃ
মঙ্গল প্রভাতের সেই অনন্দধ্বনিতে তুমি ওঠো
সহস্র বছরের অভিশপ্ত নোনাজল, সেবন করো
দ্রোহে দ্রোহ কর আঘাত, ওরা ধ্বংস হোক।
অনুভূতিঃ
প্রশান্তির সূর্য উড়েছিল
ও-বেলায়
স্বপ্ন দোলে
দিকভ্রান্ত নাবিকের….
প্রলয়ের বাদ্যঃ
ততক্ষণে তটে তটে বিদ্রোহ,
মরা গাঙে পড়ে থাকে শাদা বক …
যদি কিছু হতে না পারি, তবে দ্রোহী হবো
ধ্বংস প্রলয়ের বাদ্য বাজাবো নিরন্তর।
পৃথিবীর বুকে সব প্রেম
শত রূপে শত ভাবে,
তবু নিরবধি
মানবের তরে মানব হয়ে….
নটিনীর অভিলাষঃ
ওগো মহাকালের নটরাজ। শক্তির পূজারি নটরঙ্গিনী তোমারি দ্বারে
পূজার অর্ঘ্য লও, এসো শক্তির যুদ্ধাস্ত্রে, এসো ভালোবাসায়, এসো প্রেম-প্রদীপে
মহাকালের নব সূত্রপাতে এসো, ধ্বংস করো বৈষম্যের আঘাত।
আমি যে প্রেমের সারথী, মহাকালের প্রেমবীণায় এসো
জীবনের জয়গানে এসো, এসো সৃষ্টি প্রলয়ের আনন্দযজ্ঞে।
গানঃ
এমনও প্রেম দিও নাগো তুমি
এমনও ভরা দিনে
নিশিদিন ভাবি তোমারে, ওগো প্রিয়
এমনও প্রেম দিও না গো তুমি
আমিই নটরাজঃ
আমিই সর্বকালের নটরাজ
যুগ থেকে যুগান্তরে, শতক থেকে শতকে
রোদ ও ছায়ার মতো বারবার ফিরে আসি
বীরত্বের মহাযজ্ঞে, সৃষ্টি প্রলয়ের বাঁশি বাজাই
মহাধূমকেতু হয়ে প্রেয়সীর ললাটে, এঁকে দেই
শান্তির বার্তা ! মহাশান্তির বিশ্বালয়। (পৃষ্ঠা ২৪-৬৭)
💢কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক কামরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারার কবি, বিশেষ করে তার রোমান্টিক কবিতা, গান, গদ্য কবিতায় রয়েছে নতুনত্ব। আধুনিক কাব্যমালা, শব্দবিন্যাস, জীবনও বাস্তবতার অনুপম কথাচিত্র উপস্থাপন করেছেন কবিতার ক্যানভাসে, কবিতায় এঁকেছেন জীবনচিত্র। নিজস্ব শব্দচয়ন, বিষয়বস্তুর এক নিপুণ গাঁথুনিতে কবিতাকে করে তুলেছেন রঙিন। ঐক্যতান, প্রেম, বিরহের সতন্ত্র সত্তা আধুনিক কবিতার পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিবে খুব সহজেই।
কালের নটরাজ
কামরুল ইসলাম
প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রকাশকঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন
একাত্তর প্রকাশনী
৭৮ দক্ষিণ সায়েদাবাদ
ঢাকা-১০০০
মূল্য : ১৫০ টাকা।
লেখকঃ
শান্ত চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক
যোগাযোগঃ [email protected]
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১০ (প্রথম খণ্ড)
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১০
‘যাত্রা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ গমন বা গমনার্থে পদক্ষেপ গ্রহণ। অতীতে কোন স্থানে গমন উপলক্ষে যেসব উৎসব করা হত তা বুঝাতে যাত্রা শব্দটির আবির্ভাব ঘটে। প্রাচীন ভারতে কোনো দেবতার উৎসব উপলক্ষে নৃত্যগীতপূর্ণ যে শোভাযাত্রা বের করা হতো তাকেও যাত্রা বলা হতো। অষ্টাদশ শতক থেকে যাত্রা বিশেষভাবে প্রসার লাভ করতে থাকে। এসময়ের যাত্রাজগতে শিশুরাম, পরমানন্দ অধিকারী, সুবল দাস প্রভৃতি প্রসিদ্ধ নাম।বিশশতকের শুরুর দিকে বাংলার জনপ্রিয় যাত্রা লেখক ছিলেন মুকুন্দ দাস। তিনি যাত্রার ভেতর দিয়ে দেশাত্মবোধ, রাজনৈতিক মুক্তিসংগ্রাম ও সমাজ সংস্কারের কথা প্রচার করেন।
যাত্রাদলের উদ্যোক্তাকে বলা হয় ‘মালিক’ এবং এর সর্বময় কর্তাকে বলে ‘অধিকারি’। শিল্পী কলাকুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারি মিলে প্রায় ৫০-৬০জন মিলে তৈরি হয় একটি যাত্রাদল।খোলা আসরে সোচ্চার কণ্ঠে গান, বাধ্যযন্ত্র ও অভিনয় সহযোগে যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে যাত্রায় আধুনিক বাদ্যযন্ত্র যেমন হারমোনিয়াম, তবলা, অর্গান, বাঁশি, বেহালা, কঙ্গো ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। যাত্রা সাধারণত গভীর রাতে শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত চলে। যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, যাত্রার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
যাত্রা বাংলাদেশের এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় লোকনাট্য ধারা। ধর্মীয় বা অন্য কোনো উৎসবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার যে রীতি সেখান থেকেই যাত্রা শব্দের উৎপত্তি । উচ্চ শব্দ, চড়া আলো, অতি নাটকীয় ভাবভঙ্গি ও দৈত্যাকার মঞ্চে উপস্থাপন- যাত্রার মূল বৈশিষ্ট্য। বাংলার কৃষক, তাঁতি, জেলে, কামার, কুমার রাতের পর রাত জেগে যাত্রার কাহিনী, অভিনয়, গানের মাধ্যমে লোকজ নীতিবোধ, শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব নিয়ে যাত্রা দেখেছে। ষোড়শ শতকে অভিনয় কলা হিসেবে যাত্রার উদ্ভব হলেও এর বিকাশ শুরু হয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। একবিংশ শতকের গোড়ার দিকেই নানাকারণে যাত্রা শিল্পের অগ্রগতি থমকে যায়।
শ্রী চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের আগেও রাঢ় , বঙ্গ , গৌড় , সমতট , পুণ্ড্র , হারিকেল , চন্দ্রদ্বীপ , শ্রীহট্ট সহ সমগ্র ভূখণ্ডে,পালাগান এবং পালার অভিনয় প্রচলিত ছিল। তখন শিবের গাজন, রাম যাত্রা, কেষ্ট যাত্রা, সীতার বারোমাসি, রাধার বারোমাসি ইত্যাদি প্রচলিত ছিল । সে সময় মূলত পৌরাণিক কাহিনী অভিনয় করে দেখানোর মধ্য দিয়েই যাত্রা শিল্পের শুরু হয়। রক্ষিণী হরণ নামক এক কৃষ্ণ যাত্রায় চৈতন্যদেব স্বয়ং রক্ষিণী চরিত্রে অভিনয় করতেন। যাত্রার ঐতিহ্য সংরক্ষনের ক্ষেত্রে কৃষ্ণকমল গোস্বামীর নাম গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৬০ সালে তার রচিত স্বপ্নবিলাস ও দিব্যউন্মাদ পালার মাধ্যমে যাত্রা নতুন প্রান পায় । তার রচিত পালা দুটো ১৮৭২ ও ১৮৭৩ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। ১৮৭৪ এ প্রকাশিত হয় তার রচিত বিচিত্র বিলাস যাত্রা পালা । এই তিনটি পালা নিয়ে গবেষণা করে নিশিকান্ত চট্টোপধ্যায় পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
অষ্টাদশ শতকে, যাত্রা বাংলা ভূখণ্ডের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সে সময়ে শিশুরাম, পরমানন্দ অধিকারী, সুবলদাস ছিলেন যাত্রা শিল্পের নামকরা লোক। উনবিংশ শতাব্দিতে পৌরানিক কাহিনীভিত্তিক যাত্রা খ্যাতি পায়। উনবিংশ শতকের শেষে এবং বিংশ শতকের শুরুর দিকে দেশপ্রেমমূলক কাহিনীর অভিনয় শুরু হয়। এক্ষেত্রে সবচে প্রসিদ্ধ মুকুলন্দ দাস । তিনি যাত্রার মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক বক্তব্য, যেমন- পণ প্রথা,জাতিভেদ এবং ব্রিটিশ উপনিবেশ বিরোধী বক্তব্য প্রচার করেন। তার প্রচলন করা স্বদেশী যাত্রার জন্য তাকে কারাভোগও করতে হয় । সে সময় যাত্রার মূল বিষয়গুলোতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে এবং ধর্মীয় ও কল্পকাহিনী ছাড়াও যাত্রায় সামাজিক ও রাজনৈতিক কাহিনী জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। সে সময় ‘ইশা খাঁ’, ‘প্রতাপ চন্দ্র’, ‘বারো ভুঁইয়া’, ‘সোনাভান’, ‘সিরাজ উদ দৌলা’, ‘ক্ষুদিরাম’ ও অন্যান্য বিপ্লবীদের নামে কাহিনী অভিনয় হতে থাকে । এই সময়টাতেই, যাত্রা ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘রাজনৈতিক’ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
ব্রজেন্দ্র কুমার দে’কে বলা হয় ঐতিহাসিক পালার সার্থক রুপকার। ১৯৪২ সালে, তিনি রঞ্জন অপেরার জন্য লেখেন, কাল্পনিক পালা ‘রাজনন্দিনী’ । এই কাল্পনিক পালা থেকে ঐতিহাসিক পালার বিস্তার সম্পর্কে, তিনি লেখেন “আমার বর্ণিত স্বর্ণযুগে প্রথম যে পরিবর্তন এল তা হল কাল্পনিক পালার প্রবর্তন“। রঞ্জন অপেরায় অভিনীত ‘রাজনন্দিনী’র মাধ্যমে এর শুরু হয়। প্রথমদিকে, পালা পৌরাণিক ধাঁচে লেখা হত। যারা পালা রচনা করতে গিয়ে পৌরাণিক আখ্যান খুঁজে হয়রান হতেন, তাদের কাছে এক নতুন পথ খুলে গেল । যাত্রারসিকরা সঙ্গে সঙ্গে নতুন পদ্ধতিকে স্বাগত জানালেন । ক্রমে এই কাল্পনিক পালার প্রসার ঐতিহাসিক পালা রূপেও বিস্তৃত হল ।“ এছাড়াও ব্রজেন্দ্র কুমার দে’র ‘কলিঙ্গ বিজয়’ , ‘সুলতান রিজিয়া’ , ‘আধারে মুসাফির’ , ‘বর্গী এলো দেশে’ , ‘সোহরাব রুস্তম’ , ‘নবাব হোসেন শাহ্’ , ‘রাখীভাই’ , ‘হে অতীত কথা কও’ প্রভৃতি পালা সুখ্যাতি অর্জন করেছিল।
বাংলাদেশের যাত্রামঞ্চে সর্বাধিকবার মঞ্চস্থ হওয়া যাত্রাপালা, ‘নবাব সিরাজ উদ দৌলা’। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত নাটকটি লিখেছিলেন থিয়েটার মঞ্চের জন্য। এছাড়াও বাংলাদেশে যাত্রা শিল্পের অবদানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন, মহেন্দ্র নাথ গুপ্ত কানাই লাল শীল, শান্তি রঞ্জন দে, আনন্দময় বন্দোপধ্যায়, নরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত, চারুবিকাশ দত্ত, উৎপল দত্ত, ভৈরবনাথ গঙ্গপধ্যায়, জিতেন্দ্রনাথ বসাক, গৌড়চন্দ্র ভড়, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, বিপিন সরকার, কানাই লাল নাথ প্রমুখ । তারা প্রত্যেকেই তাদের রচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের যাত্রা শিল্পকে প্রসিদ্ধ করেছেন । দিগিচন্দ্র বন্দ্যোপধ্যায় রচিত দুরন্ত পদ্মা পালাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পালাটি রচিত হয় । এই পালাটি ‘সোভিয়েত দেশ নেহ্রু পুরস্কার” লাভ করে । এছাড়াও নিরাপদ মন্ডল রচিত ‘মুক্তিফৌজ’, সত্যপ্রকাশ দত্তের “ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর” যাত্রা শিল্পে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিল রুপে সংরক্ষিত ।
সত্তর দশকের শেষ দিকে এবং আশির দশকে যাত্রা শিল্পে এক নতুন ধরণের পরিবর্তন শুরু হয়। বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপালার সাথে জুয়া-হাউজি চালু হয়। ধারণা করা হয়, ১৯৭৮-৭৯ সালে এ ধরণের পরিবর্তন শুরু হয়েছে অধিক মুনাফা প্রত্যাশীদের মাধ্যমে। দেশ অপেরার মালিক মিলন কান্তি দে’র মতে, “ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে । যেখানে ৩০০ টির বেশি দল ছিল সেখানে এখন ৩০ টি দলও সংগঠিত হচ্ছে না । যাত্রা শিল্পের নেতারা জানান ১৯৭৫ সালের পর থেকেই যাত্রাপালা আয়োজনের ওপর বিধিনিষেধ আসতে থাকে –প্রশাসন এখন যাত্রার নামই শুনতে চায় না । যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িত শত লেখক , শিল্পীর জীবন , জীবিকাও এখন ধ্বংসের পথে।“
বর্তমানে টিকে থাকা কিছু যাত্রা দল হল যশোরের আনন্দ অপেরা , চ্যালেঞ্জার অপেরা , অগ্রগামী নাট্য সংস্থা , মাগুরার চৈতালী অপেরা , নারায়ণগঞ্জের ভোলানাথ যাত্রা সম্প্রদায় , কহিনূর অপেরা , খুলনার স্বদেশ অপেরা রাজমহল অপেরা , রঙমহল অপেরা , লক্ষীপুরের কেয়া যাত্রা প্রভৃতি । যাত্রা বাংলার লোকজ সংস্কৃতির মুল্যবান সম্পদ। তাই যাত্রাপালার ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পরুপ, জীবন-যাপন, কলা-কৌশল ইত্যাদি নিয়ে বিশদ গবেষণা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
‘বিশেষ কোনও যাত্রা কোম্পানি কিংবা বিশেষ কোনও হিরো-হিরোইনের সাফল্যে বিভ্রান্ত হবেন না’, বললেন মঞ্জরী অপেরার নেপাল সরকার, ‘যাত্রাশিল্পের আয়ু আর বড় জোর কয়েক বছর। তার পর একে একে ঝাঁপ বন্ধ করবেন অনেক মালিক, ম্যানেজার। ডাউনফল শুরু হয়েছে অনেক দিন। চিৎপুরে ১০ বছর আগে যাত্রা কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৩৬। গত বছরেও ছিল ৬১টা। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮-এ। আমার মনে হয়, সামনের বছর যাত্রাদলের সংখ্যা হবে ২৫।’
বাংলার জল-মাটির আপন ঐতিহ্যে গড়া যে বিনোদন শিল্প, সেই যাত্রা নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করে চলেছেন প্রভাত দাস। যাত্রা বাঁচবে? প্রশ্ন শুনে থমকে গেলেন প্রভাত। বললেন, ‘কী করে বাঁচবে বলুন? অন্ধকার রাতে বিশাল প্যান্ডেলের মধ্যে শয়ে শয়ে মানুষকে বসিয়ে রাখার মত গল্প কোথায়? মন মাতানো গল্প লেখার লোক কোথায়? একদা তেমন শক্তিশালী কলম নিয়ে ময়দানে এসেছিলেন ব্রজেন্দ্রকুমার দে। তাঁর উত্তরসূরি যদি কেউ হন, তিনি ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর? না, তেমন শক্তিশালী আর কেউ এলেন না। যাঁরা এলেন তাঁরা উপহার দিলেন কিছু নাচ-গান, হইহুল্লোড়। ব্যস, ওই দিয়েই ভাবলেন, বেশ সমসাময়িক করে তোলা গেল যাত্রাকে। ঘণ্টা! মানুষ শুনতে চায় গল্প। চরিত্র কিংবা আদর্শের সংঘাত। কেবল কিছু মানুষের স্টেজে হাঁটাচলা দিয়ে কিস্যু হবে না।’
মহাভারতে ভীষ্ম চোখের সামনে তিলে তিলে ক্ষয়ে যেতে দেখেছিলেন আস্ত এক রাজবংশ। বাঙালির যাত্রা শিল্পেও আছেন এক ভীষ্ম। ইন্ডাস্ট্রি তাঁর নাম দিয়েছে ‘বড়দা’। বড় ভাই নয়, প্রপিতামহ বলা যায় তাঁকে। বয়স ৮৩। তিনি মাখনলাল নট্ট। ঠিকানা শোভাবাজার। হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট। থাকেন যে বাড়িখানায়, তার বয়স সওয়াশো বছর, খসে পড়েছে পলস্তারা। সিঁড়িতে আলো নেই, দিনের বেলাতেই ঝুঁঝকো আঁধার। পা টিপে প্রায় হাতড়ে তিনতলায় উঠতে হল ভীষ্মের দেখা পেতে। ফোন করা ছিল। পৌঁছতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন নট্ট কোম্পানির মাখনলাল। কী জানতে চাই, তা শুনে চোখের দিকে সোজা তাকালেন।
বিড়বিড় করে বললেন, ‘যাত্রার বাঁচার আশা নেই।’ বলছেন একটা শিল্প নিয়ে। কিন্তু কণ্ঠস্বরে আবেগ শুনে মনে হল যেন নার্সিংহোমে আইসিইউ-তে শয়ান আত্মীয়ের খবর দিচ্ছেন। মাখনলাল দায়ী করলেন যাত্রা কোম্পানির মালিকদের। বললেন, ‘অব্যবসায়ীর হাতে ব্যবসা পড়লে ফল যা হয়, তা-ই হয়েছে। মালিকরা ধরে ধরে আনছেন টিভি সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের। কই, যাত্রার হিরো-হিরোইনদের তো সিরিয়ালওয়ালারা ডাকছেন না! যাত্রা-মালিকরা টিভির হ্যাংলামি ছাড়বেন না, তাই যাত্রাও আর বাঁচবে না।’
যাত্রাকে তা হলে বাঁচাবে কে? পুঁজি? একটু-আধটু হলেও, যাত্রা-পুনরুজ্জীবনে সহযোগিতার হাত কিন্তু বাড়িয়েছিল ব্যবসা সাম্রাজ্য। মাল্টিন্যাশনাল। তাঁদের প্ররোচনায় যাত্রার সংলাপে গুঁজে দেওয়া হচ্ছিল ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন। কী ভাবে? ধরা যাক, বৃদ্ধ স্বামী নিরুদ্দেশ। অনেক দিন পরে ঘরে ফিরলেন তিনি। তাঁকে দেখে ছুটে এলেন স্ত্রী। ‘ওগো কোথায় ছিলে?’ স্বামীর উত্তর, ‘সে অনেক কথা, পরে বলছি, আগে জল দাও।’ শুনে স্ত্রীর জবাব, ‘জল খাবে কেন গো, তোমার জন্য অমুক কোল্ড ড্রিংক আনছি!’ বা, বাচ্চা ছেলে অসুস্থ। তার মা স্বামীর উদ্দেশে বললেন, ‘ছেলিডারে এট্টু তমুক এনার্জি ড্রিংক খাওয়ানি লাগে। তা পাই কই?’ দরিদ্র স্বামী অনেক কষ্টে জোগাড় করে আনেন বলবর্ধক পানীয়টি এবং সারা স্টেজ ঘুরে স্ত্রীকে দেখাতে থাকেন। স্পটলাইটের আলো পড়ে বোতলের গায়ে ব্র্যান্ডের উপর। অবশ্য, বেশি দিন এগোয়নি এই ব্যবস্থা। মরা গাঙে যে আর কখনও বান আসবে না, সেটা বুঝে গিয়ে ব্র্যান্ড মালিকরা হাত গুটিয়ে নিয়েছেন যাত্রা থেকে।
এখন কোনও আশ্চর্য নতুন এনার্জি ড্রিংক যাত্রাকে আবার চনমনে করে তুলবে, সে আশা কারও নেই। বাঙালির আদরের এক শিল্প, অতএব, এখন দাঁড়িয়ে লাস্ট সিনে।
যবনিকার অপেক্ষায়।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১০
সামাজিক যাত্রাপালা
অনল চক্রবর্তী-কাকলি চৌধুরী এই মুহূর্তে যাত্রার উত্তম-সুচিত্রা। ওঁদের পালা নাকি ফ্লপ হয় না। কলকাতায় যাত্রা উৎসবেও ওঁদের শো হাউসফুল। অনল আবার আওড়ান না অন্যের লেখা সংলাপ। পালার কাহিনিকার তিনি। পরিচালকও তিনি। কেন? জবাবে অনল শোনান এক কাহিনি। বছর দশেক আগে, গাঁয়ের মাঠে বসেছে আসর। এগিয়েছে কয়েক সিন। নায়ক অনল গড়গড় করে বলে যাচ্ছেন ডায়ালগ। হঠাৎ থার্ড রো-এ বসে এক ছোকরা হাত উচিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘বেশ বেশ অনলদা। দারুণ হচ্ছে। এর পরে তো রাজা হিন্দুস্তানি? বুঝে গেছি।’ কোনও রকমে পালা শেষ করে সাজঘরে মাথা হেঁট করে বসে পড়েছিলেন অনল। ‘যুবকটি আমাকে নয়, গালে চড় মেরেছিল বাংলার যাত্রাশিল্পকেই। সে রাতে ধিক্কার দিচ্ছিলাম আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে। ভাবছিলাম, আমাদের পালার কাহিনি যা, তা তো সত্যিই বলিউডের ফিল্ম ‘রাজা হিন্দুস্থানি’র টুকলি। ছেলেটির কী দোষ? পালার কাহিনি যদি হয় চোরাই মাল, খদ্দের তা কিনবে কেন?’ সে রাতেই অনল ঠিক করেন, চিৎপুরে থাকুন যতই স্বঘোষিত সেলিম-জাভেদ, তাঁদের লেখা পালায় আর অভিনয় করবেন না তিনি। নিজেই লিখবেন কাহিনি। পরিচালনাও করবেন।
সেই ইচ্ছারই এক ফসল ‘সেদিন ঠিকানা হারিয়ে’। গল্প মিলনান্তক নয়। বরং ট্র্যাজিক। শেষ দৃশ্যে নায়ক-নায়িকা যখন বসবে বিয়ের পিঁড়িতে, তখন ফাঁস হয় এক মর্মান্তিক সত্য। ওরা ভাই-বোন। অতঃপর আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু দু’জনের। এ কেমন পালা? ইচ্ছেপূরণ নেই, ফর্মুলা স্টোরি নয়। জার্ক বলে জার্ক! সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার, এ পালা হিট। কেন? প্রশ্ন শুনে খেপে গেলেন অনল। বললেন, ‘খবর রাখেন কি, গত তিন-চার দশকে মানুষের মন কতটা বদলে গেছে? গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখন ফেসবুক করে। সস্তা কমেডি কিংবা জগঝম্পে ওরা আজ আর খুশি হতে পারে না।’
‘কাকলি-অনল’ জুটির একসঙ্গে যাত্রায় মঞ্চযাপনে কেটে গেল দু-দশক। জনমনোরঞ্জনে বিনোদনের রঙিন পশরা নিয়ে গোটা রাজ্য পরিক্রমা জুটি বেঁধে ২১টা বছর। রেকর্ড সময়। বিনোদন জগতে এই রেকর্ড নেই কোনও শিল্পীর ঝুলিতে। চিৎপুর যাত্রা ফ্যাক্টরিতে ‘কাকলি-অনল’-এর জুটি বেঁধে দৌড় শুরু হয়েছিল সত্যনারায়ণ অপেরায় ‘মেনকা মাথায় দিল ঘোমটা’ পালার সৌজন্যে। সেই দৌড় চলতি ১৪২৪ সনেও অপ্রতিরোধ্য অব্যাহত। নতুন নাট্য সৃজনে তাঁরা ক্লান্তিহীন। নানান দল ঘুরে, কাকলি চৌধুরি-অনল চক্রবর্তী জুটির সত্যনারায়ণে, নতুন ইনিংসে এটা তৃতীয় বছর।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১০
2
ময়লা টাকার লক্ষ্মী
সামাজিক যাত্রাপালা
ময়লা টাকার লক্ষ্মী সামাজিক যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত আলোচনা
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই পালা একটা জ্বলন্ত দলিল। বলছেন জনপ্রিয় পালাকার-নির্দেশক-নায়ক অনল চক্রবর্তী। পালার নাম ‘ময়লা টাকার লক্ষ্মী’। পরিবেশনায় দিলীপ দাসের সত্যনারায়ণ অপেরা। ১২টি দৃশ্যে সাজানো এই পালাগানের সময়সীমা তিন ঘণ্টা। পালার নামভূমিকায় কাকলি চৌধুরী।
পালাকার-নির্দেশক অনল চক্রবর্তী জানেন পালা জমিয়ে দেওয়ার ‘পাসওয়ার্ড’। পাশাপাশি মঞ্চযাপনে কাকলি-অনল জুটির রসায়নও প্রশংসনীয়। ময়লা টাকার লক্ষ্মী পালার ভরকেন্দ্র কাকলি। ভুবনডাঙার মাস্টারমশাই বিভূতি মুখোপাধ্যায়ের বড় মেয়ে পারো এক দুর্ঘটনার কারণে পনেরো বছর আগে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আশ্রয় খুঁজে পায় এক অবাঙালি ব্যবসায়ীর কাছে। নিজেকে সমৃদ্ধ করে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে। ‘নারীমুক্তি’ সমাজসেবী সংস্থার হয়ে আবার ফিরে আসে ভুবনডাঙায়। পারো এখন লক্ষ্মী। এলাকার জানদরদি বিধায়ক কেনারাম মণ্ডল তাঁকে আশ্রয় দেয় ধানকলে। এখান থেকেই টানাপোড়েন—কাহানিমে ট্যুইস্ট।
ওদিকে ছোট মেয়ে শতাব্দীর সঙ্গে সংঘাত, মন কষাকষি বিভূতি মাস্টারের। শতাব্দী ঋত্বিকের সঙ্গে নাটক-সিনেমায় অভিনয় করতে চায়। পালাকার- নির্দেশক অনল চক্রবর্তী এখানে বিধায়ক কেনারাম মণ্ডল। পালার খলনায়ক রোমিও চৌধুরি। ‘কানা কার্তিকের’ চরিত্রে পাল্লা দিয়ে প্যান্ডেল কাঁপাচ্ছেন সুদর্শন গায়ক-নায়ক রোমিও চৌধুরী। তিনিও এবছর দলবদল করেননি। অভিনয়ে অন্যান্যরা হলেন, অনীক বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্পা দে, প্রীতম বিশ্বাস, সপ্তমিতা প্রমুখ। কৌশিকের কথায় সুরারোপ স্বপন পাকড়াশির। আলো-ধ্বনি এস সরগম। প্রযোজনা দিলীপ দাস।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১০ (শেষ পর্ব) আজ শেষ করলাম। আগামী দুর্গাপূজার মরশুমে আবার এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ দেওয়ার আশা রাখি। সাথে থাকবেন। পাশে রাখবেন।
জয়গুরু!
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৯
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৯
তিনশো বছরেরও বেশী গ্রামীণ শৌখিন যাত্রা শিল্পকে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন বাঁকুড়ার তালডাংরার ভীমাড়া-কেশাতড়া গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম। ‘বোকা বাক্স’ যখন মানুষের প্রতিদিনকার সান্ধ্য বিনোদনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে, সেই সময়ে দাড়িয়েও এখানকার অপেশাদার গ্রামীণ শিল্পীরা প্রতি বছর বিজয়া দশমীতে নিয়ম করে যাত্রা পালা মঞ্চস্থ করেন। যার টানে এলাকা ছাড়িয়ে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন যাত্রা মোদী দর্শক সাধারণ।
মা, মাটি মানুষ, ধান কাটছে নতুন বৌ, স্বর্গের পরের স্টেশন, দু’টুকরো মা-র মতো অজস্র সামাজিক পালার পাশাপাশি বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও মীরার বধুঁয়া, জননী হন্তা পরশুরামের পাশাপাশি এবছর গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম পৌরাণিক যাত্রা পালা উপহার দিল এই গ্রামের ছেলেরা।
এই গ্রামে দুর্গা পুজোর সূচনা মাত্র আট চল্লিশ বছর আগে। কিন্তু যাত্রা পালা মঞ্চস্থের ইতিহাস তিনশো বছরেরও পুরনো। আগে গ্রামে দোল যাত্রা উপলক্ষে যাত্রা হতো। দুর্গা পুজো শুরুর পর তা বিজয়া দশমীতে এগিয়ে আনা হয়। আগে প্রতিবছর তিন থেকে চারটি পালা মঞ্চস্থ হলেও এখন সারা বছরে মাত্র একটিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
এবছর ‘গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম’ পালার ‘বেদব্যাস’ চরিত্রাভিনেতা তারা দাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনশো বছরেরও বেশী পুরনো আমাদের গ্রামীণ যাত্রার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেদের এই ব্যাপারে চরম অনীহাই হয়তো আরও অনেক জায়গার মতো এখানেও একদিন হারিয়ে যাবে এই শিল্প।
গ্রামেরই অপেশাদার শৌখিন যাত্রা শিল্পী প্রতাপ পতি, দিব্যেন্দু পতি, আশিস দাস, বিকাশ চন্দরা বলেন, এখন এক রাতের যাত্রা পালা মঞ্চস্থ করতে ন্যূনতম পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। বেশীরভাগ টাকাটাই শিল্পীদের নিজেদের বহন করতে হয়। তাছাড়া এখন দক্ষ মহিলা শিল্পীর অভাব আর যাত্রার আনুষঙ্গিক সাজ সরঞ্জামের অভাব তো রয়েছে। শুধুমাত্র গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এভাবে কতদিন পুজোয় পালা মঞ্চস্থ করা যাবে তা নিয়েও ভাবিত তাঁরা।
বাঁকুড়া শহরের যাত্রা পালার লাইট ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, আগে সারা বছরে জেলার বিভিন্ন অংশে তিনশোরও বেশী গ্রামীণ যাত্রা পালা হতো। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে কুড়িতে। ফলে আধুনিক সাজ সজ্জা আর আলোর ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা। এখন এই পেশা ছেড়া অন্য পেশায় অনেকেই চলে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
এই গ্রামীণ শৌখিন যাত্রা শিল্পীরা কেউ পেশাদার অভিনেতা নন। শুধু মাত্র অভিনয়টাকে ভালোবেসে এরা অভিনয় করেন। এঁদের কেউ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন, কেউ শিক্ষিত বেকার যুবক, আবার কেউ নিজের জমিতে চাষ করে দৈনন্দিন সংসার খরচ চালান। কিন্তু এই শিল্পটাকে শুধুমাত্র ভালোবেসে আর গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় টানা একমাসের মহড়া শেষে এঁরা মুখে রং মেখে আসরে নামেন। সরকারী উদ্যোগে যখন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার নানান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দাড়িয়েও বাঁকুড়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের শিল্পীরা রয়ে গেছেন অন্ধকারেই। সহস্র সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে সহস্র যোজন দূরে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এই গ্রামের প্রাচীন যাত্রা শিল্প ঠাঁই নেবে ইতিহাসের পাতায়।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা–৯
মুখোশ পরা মানুষ
সামাজিক যাত্রাপালা
মুখোশ পরা মানুষ সামাজিক যাত্রাপালা নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথাসার।
পূর্ব বর্ধমানে কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামে রুগ্ন যাত্রা শিল্পকে ধরে রাখতে সিঙ্গি কাশিরাম দাস নাট্য সমাজ পরিচালনায় মহা ভারত রচিত মহা কবি কাশীরাম দাস স্মরণ উৎসব মেলায় সিঙ্গি কাশীরাম দাস পাঠাগার প্রাঙ্গনে এক যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হল। ডঃ তাপস কুমার রচিত ,প্রিয়জিৎ ব্যানার্জী নির্দেশিত ও অভিনীত এক সাড়া জাগানো সামাজিক যাত্রাপালা “মুখোশ পরা মানুষ” অভিনয়ে প্রিয় জিৎ ব্যানার্জি, দেব জিৎ ব্যানার্জি, শুভ্রাংশু ব্যানার্জি ,অরুণাংশু মুখার্জী ,উত্তম সাহা, কালীচরণ ভট্টাচার্য্য, পার্থসারথি দত্ত ,সুকান্ত পাল, কৌশিক ভট্টাচার্য্য ও আরো অনেকে। জানা যায় এই যাত্রাপালায় পরিবেশিত সব অভিনেতা গুলো সিঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা ।যাত্রা শুনতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে । কাশিরাম দাস পাঠাগার প্রাঙ্গন কে জমজমাট করে রেখেছে।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালার শেষ পর্ব আগামীকাল প্রকাশ দেব। পরবর্তী বিভাগ শুরু হবে কৃষ্ণলীলা কীর্তন ও বাউলগান বিভাগ নিয়ে। খুব শীঘ্রই উক্ত বিভাগ শুরু হবে।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৮
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৮
যাত্রাশিল্পের প্রসার ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এই শিল্প আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোয় খুশি চিৎপুরের যাত্রা অপেরাগুলি। তাদের বক্তব্য, বাম আমলের শেষ দিকে এই শিল্প তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। পরবর্তীকালে মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর যাত্রাশিল্পে ফের চাকা ঘুরতে শুরু করে। লাভের মুখও দেখতে শুরু করে অপেরাগুলি। এই শিল্পকে ঘিরে উন্মাদনার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। এই প্রেক্ষাপটেই শুরু হল ২৩ তম যাত্রা উৎসব। শুক্রবার বারাসতের কাছারি ময়দানে এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্র ও শনিবার ওই মঞ্চেই দু’টি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। তার একটি হল পৌরাণিক পালা ‘রানি রাসমণি’ এবং অন্যটি সামাজিক পালা ‘আজ প্রতিমার সিঁদুর দান’। এর রেশ ধরেই আজ রবিবার থেকে উত্তর কলকাতার বাগবাজার ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চে শুরু হচ্ছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একমাসব্যাপী যাত্রা উৎসব।
প্রথম দিন ‘হিসাব কষা ভালোবাসা’ যাত্রাপালার মধ্যে দিয়ে শুরু হবে এই উৎসব। যাত্রা অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই উৎসবে চিৎপুরের যাত্রা দলগুলির সঙ্গে অংশ নেবে প্রত্যন্ত জেলার অপেরাগুলিও। প্রতিদিন যাত্রাপালা শুরু হবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। যাত্রা অ্যাকাডেমির সদস্য কনক ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটে ৪টে থেকে একঘণ্টা মুক্ত মঞ্চে হবে যাত্রানুরাগীদের আড্ডা। থাকবে যাত্রা উন্নয়নে আলোচনা, ক্যুইজ ও প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে যাত্রার একাল সেকাল নিয়ে নানা তথ্য ফুটে উঠবে। প্রবীণ যাত্রাশিল্পী রুমা দাশগুপ্তের কথায়, এই শিল্পের যে একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে, তা সকলের জানা উচিত। এই ইতিহাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক দুঃখ, অভাব, যন্ত্রণা, কষ্টের কথা। আমরা চাই স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যাত্রা দেখার পাশাপাশি ঘুরে দেখুক প্রদর্শনীও।
কলকাতা যাত্রাকর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারাধন রায় বলেন, এবার বাগবাজারের যাত্রা উৎসব মঞ্চে যে পালাগুলি মঞ্চস্থ হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—‘জীবনের জংশনে প্রেমের ফেরিওয়ালা’, ‘দানবীর রাজা হরিশচন্দ্র’, ‘ঢপবাজ স্বামীর রংবাজ বউ’, ‘চাঁপাডাঙার বউ’, ‘দুই সতীনের ঘর’, ‘রাঙা মেয়ের ভাঙা জীবন’, ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়’, ‘নীল আকাশে নীলাঞ্জনা’, ‘ও প্রেম যমুনার মাঝি’, ‘ বাপেরও বাপ আছে’, ‘গোধুলি লগ্নে শুভ দৃষ্টি’, ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ প্রভৃতি। যাত্রাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের বক্তব্য, এই উৎসব আয়োজনের ফলে প্রতি বছরই গ্রামবাংলার নতুন নতুন মুখ সুযোগ পেয়ে থাকেন।
মুখ্যমন্ত্রী যাত্রা শিল্পকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন যাত্রা অ্যাকাডেমির সভাপতি অরূপ বিশ্বাস। ‘মা সারদা’ এবং ‘আজ প্রতিমার সিঁদুর দান’ পালার মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন পূবালি বসু। তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথা হল নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফি বছর নতুন নতুন শিল্পীদের সরকারি তরফে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের যাত্রা অ্যাকাডেমির তরফ থেকে শংসাপত্রও দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই নবাগতরা যাত্রাপালায় অভিনয়ের সুযোগও পান। পালাকার মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপল রায়, অনল চক্রবর্তী প্রমুখ বলেন, এই শিল্প বাঁচলে, এর সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষের জীবনও বাঁচবে। তাই মাসব্যাপী যাত্রা উৎসবের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
‘ময়লা টাকার লক্ষ্মী’ যাত্রাপালার নায়িকা কাকলি চক্রবর্তী বলেন, ধানবাদ, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর প্রভৃতি জায়গায় পুজোর মরশুমে আমাদের যাত্রা ভালোভাবেই হয়েছে। আমাদের আশা, চলতি মরশুমে আমাদের পালা মানুষের মন জয় করবেই। ব্রহ্মময় চট্টোপাধ্যায়ের রচিত ও রাহুল গোস্বামী সম্পাদিত এবং নির্দেশিত ‘ধুলোমাটির ধন্যি মেয়ে’-তে অভিনয় করছেন শিল্পী দেবপ্রিয়া চক্রবর্তী। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে এবার পুজোয় তাঁদের দু’-একটি পালা বন্ধ হয়েছে। তবে যাত্রার ভরা মরশুমে বুকিং ভালোই হয়েছে। আশা করছি, আগামীদিনে এই সামাজিক যাত্রাপালা সাফল্যের মুখ দেখবে। সেই আশাতেই রয়েছেন আমাদের অপেরার সমস্ত শিল্পীরা। একই আশার কথা শুনিয়েছেন নটশিল্পী শ্যামল চক্রবর্তী। তাঁরই রচিত এবং নির্দেশিত ‘অ-এ অজগর আসছে তেড়ে’ যাত্রাপালা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় সাড়া ফেলেছে। শ্যামলবাবু বলেন, পুজোর ক’দিনও ভালো সাড়া পেয়েছি। এই পালার অন্যান্য শিল্পীরা হলেন হাসি সরকার, মিস কোয়েল, কস্তুরী, সবিতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁদের দাবি, এবার এই পালা গ্রামবাংলায় ঝড় তুলবে।
চিৎপুর যাত্রা সমিতির অন্যতম কর্তা হারাধন রায় বলেন, এবারের মরশুমে চিৎপুরের অধিকাংশ অপেরাই ভালো বায়না পেয়েছে। আশা করছি, তারা কিছুটা হলেও এবার লাভের মুখ দেখবে। পুজোর ক’দিন বিভিন্ন জেলায় অপেরাগুলি সুনামের সঙ্গে যাত্রা করেছে। মানুষ যে ফের এই লোকশিল্পকে বরণ করে নিচ্ছে, এটা ভেবে আমাদের ভালো লাগছে। এবার চিৎপুরের কয়েকটি যাত্রা ইতিমধ্যেই জনমানসে ভালো সাড়া ফেলেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘জীবন একটা আয়না’। রচনা এবং নির্দেশনা মঞ্জিল বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও রয়েছে ‘রাতপরীর রূপকথা’, ‘সিঁথির সিঁদুরে হায়নার থাবা’, অপর্ণা ঘোষ প্রযোজিত এবং বাপি ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মফুলে কেউটের বাসা’, ‘প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে ভালোবাসা’, ‘জনম দুঃখিনী বিষ্ণুপ্রিয়া’, ‘শুধু স্মৃতিটুকুই থাক’, ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির’, ‘ইতি তোমার প্রিয়তমা’, ‘শুধু তুমি আর আমি’, ‘কলকাতার নাগিনী গ্রামের বাঘিনী’।
যাত্রাশিল্পীদের অনেকেরই বক্তব্য, একটা সময় এই পুজোর মরশুমেও খুব একটা বুকিং হত না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে এ রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতির কিছুটা বদল এসেছে। বদল ঘটেছে চিৎপুরে যাত্রাপাড়ারও। যাত্রাপাড়ার কর্তাদের বক্তব্য, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যাত্রাকে যাতে ফের স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার জন্য এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকার পাশে দাঁড়ানোয় যাত্রার জমি আগের থেকে অনেকটাই ‘উর্বর’ হয়েছে।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৮
‘মা তুমি কার’
সামাজিক যাত্রাপালা
‘মা তুমি কার’ সামাজিক যাত্রাপালা সহ মমতাময়ী বাংলার বিভিন্ন যাত্রাপালা।
আনন্দবীণার পাশাপাশি শ্রীচৈতন্য অপেরার এ বছরের পালাতেও উঠে আসছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। পালার নাম ‘মা তুমি কার’। লিখেছেন অশোক দে ও ব্রহ্মতোষ চট্টোপাধ্যায়। পালার পরিচালনা ও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন রুমা দাশগুপ্ত। সাম্প্রতিক অতীতে এই রুমা দাশগুপ্তও অভিনয় করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূমিকায়।
তাঁর অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল দর্শকদের। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি পালায় উঠে আসতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর এই জনপ্রিয় ও বিশ্বজয়ী প্রকল্প। কোথাও পালার বিষয় কন্যাশ্রী, কোথাও আবার সামাজিক পালার ভেতরে আসছে কন্যাশ্রীর কথা। চিৎপুরের যাত্রাপাড়ায় এখন তোড়জোড় চলছে কন্যাশ্রীকে ঘিরে।
এবার বাংলার যাত্রাপালায় উঠে আসতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরিকল্পিত ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। জানা গেছে, চিৎপুরের একাধিক দলের পালার বিষয় এবার হয়ে উঠতে চলেছে এই জনপ্রিয় প্রকল্প। সম্প্রতি বিশ্ব জয় করেছে বাংলার নিজস্ব এই প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ–এ রাষ্ট্রপুঞ্জের জনপরিষেবা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরিকল্পিত এই কন্যাশ্রী প্রকল্পকে। ৬৩টি দেশের ৫৫২টি জনহিতকর প্রকল্পকে নিয়ে যে প্রতিযোগিতা হয় তাতে প্রথম হয় বাংলার গর্বের ‘কন্যাশ্রী’।
একটা সময় ছিল, যখন মনে করা হত কন্যাসন্তান মানেই পরিবারের বোঝা। প্রায়ই মেয়েদের লেখাপড়া থামিয়ে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। সেই অকাল বিয়ে বন্ধ করে এই রাজ্যের কন্যাসন্তানদের জীবনে এক নতুন দিশা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুরু করেন এই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। বর্তমানে ৪০ লক্ষ ৩১ হাজার ছাত্রী এসেছে এই প্রকল্পের আওতায়। শুধু তাই নয়, মাত্র পাঁচ বছরেই উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মুখ দেখেছে এই প্রকল্প। শুধুই আন্তর্জাতিক আসর থেকে বিশ্বজয়ের শিরোপা আদায় করে নেওয়াই নয়, দেখা গেছে এই প্রকল্প রূপায়ণের ফলে ছাত্রীদের স্কুলছুটের সংখ্যা কমেছে ৫৫ শতাংশ, নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার সংখ্যা কমেছে ৩৩ শতাংশ। যে–সব পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম, সেই সব পরিবারের কন্যারা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীদের এই প্রকল্পে নথিভুক্ত করা হয়। তারা পায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বৃত্তি ও নানান সাহায্য।
এই যুগান্তকারী প্রকল্প এ বছর হয়ে উঠেছে বাংলার যাত্রার বিষয়ও। প্রাচীনকাল থেকেই সমসাময়িক নানা সামাজিক ইস্যু বা উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে যাত্রাপালা বাঁধা হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে এই যাত্রার আসরে উঠে এসেছে এই রাজ্যের রাজনৈতিক ‘পরিবর্তন’–এর বিষয়ও। সেবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রিত্বে মমতা ব্যানার্জির আগমন নিয়ে সারা বাংলা জুড়ে বাঁধা হয়েছিল অন্তত সাতটি যাত্রাপালা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যাত্রা জগতের খ্যাতিমান অভিনেত্রীরা। এঁদের মধ্যে একদিকে যেমন ছিলেন রুমা দাশগুপ্ত, অন্যদিকে ছিলেন রুমা চক্রবর্তী।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কনক ভট্টাচার্যের ‘আনন্দবীণা’ অপেরার ‘বাংলার ক্ষমতায় এবার মমতা’। মমতার ভূমিকায় রুমা চক্রবর্তীর অনবদ্য অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। তার পরেও এই ‘আনন্দবীণা’ অপেরার প্রযোজনাতেই রুমা চক্রবর্তী আবার অভিনয় করেছিলেন ‘দিদি তোমার জবাব নেই’ পালায়। প্রথমবারের পালায় ছিল মমতা ব্যানার্জির সংগ্রামের কাহিনী এবং দ্বিতীয় পালায় ছিল মমতা ব্যানার্জির এক বছরের নানা সাফল্য। এবারও কনক ভট্টাচার্যের ‘আনন্দবীণা’ অপেরার যাত্রাপালার বিষয় হয়ে উঠছে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা সম্মেলনের সম্পাদক ও ‘আনন্দবীণা’ অপেরার কর্ণধার কনক ভট্টাচার্য বললেন, যেদিন দ্য হেগ–এ আন্তর্জাতিক আসরে বিশ্বজয় করল আমাদের গর্বের কন্যাশ্রী, সেদিন থেকেই পরিকল্পনায় ছিল যাত্রায় এই প্রকল্পকে আনা। এই প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। যাতে আরও বেশি কন্যা আসতে পারে এই প্রকল্পের আওতায়। যাতে স্কুলছুট বা নাবালিকার বিয়ে রোধ করে রাজ্যের মেয়েদের আরও বেশি করে জীবনের মূল স্রোতে নিয়ে আসা যায়। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রীর নানা জনহিতকর কাজকে আমরা আমাদের পালায় নিয়ে এসেছি।
এবারও যাত্রার মধ্যে দিয়েই চলবে জনস্বার্থে আমাদের এই লড়াই। বললেন, নতুন এই পালা লিখছেন যাত্রার জনপ্রিয় পালাকার মঞ্জিল ব্যানার্জি। তবে পালার নাম কী হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। ঠিক হয়নি এই পালার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কারা অভিনয় করবেন তাঁদের নামও। তবে কনক ভট্টাচার্য আভাস দিলেন, এই পালায় ফের মমতা ব্যানার্জির ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন রুমা চক্রবর্তী। জানালেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের পাশাপাশি এই পালায় উঠে আসবে রাজ্য সরকারের অন্যান্য জনহিতকর প্রকল্পের কথাও। জানালেন, ১৫ আগস্টের মধ্যেই মাঠে নামবে এই নতুন যাত্রাপালা।
আনন্দবীণার পাশাপাশি শ্রীচৈতন্য অপেরার এ বছরের পালাতেও উঠে আসছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। পালার নাম ‘মা তুমি কার’। লিখেছেন অশোক দে ও ব্রহ্মতোষ চট্টোপাধ্যায়। পালার পরিচালনা ও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন রুমা দাশগুপ্ত। সাম্প্রতিক অতীতে এই রুমা দাশগুপ্তও অভিনয় করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূমিকায়।
তাঁর অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল দর্শকদের। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি পালায় উঠে আসতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর এই জনপ্রিয় ও বিশ্বজয়ী প্রকল্প। কোথাও পালার বিষয় কন্যাশ্রী, কোথাও আবার সামাজিক পালার ভেতরে আসছে কন্যাশ্রীর কথা। চিৎপুরের যাত্রাপাড়ায় এখন তোড়জোড় চলছে কন্যাশ্রীকে ঘিরে।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৭
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৭
শীততাপনিয়ন্ত্রিত শপিং মলগুলির ভেতরের বায়োস্কোপ আর কার্নিভালের চাপে অনেক বছর ধরেই যাত্রাপালার আসর আর বসে না শহর ও পাড়াগাঁয়ে। আর মন্দার বাজারে যাত্রার শিকেয় উঠেছে বুকিং। পুজো কেটে গেছে। আগে পুজোর সময় যাত্রার একটা চলন ছিল। যাত্রা দেখার জন্য মানুষ অপেক্ষায় থাকতেন। পুজোর সঙ্গে যাত্রাপালা নিয়ে আলাদা একটা উন্মাদনা ছিল গ্রামগঞ্জে। মুখে মুখে ফিরত পালার কথা। বহু দূর থেকে যাত্রাপ্রিয় মানুষে ছুটে আসতেন। আগে পুজো কমিটির বাজেটেও যাত্রার জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকত। এখন তা উঠেই গেছে। পুজো কমিটি সেই অর্থ খরচ করছে এখন অন্যখাতে।
দুর্গাপুর শিল্প শহর আধুনিক হচ্ছে। আগে গ্রামের রাস্তা দিয়ে শীতের মরশুমে রিকশার পেছনে ঝুলত রঙিন যাত্রাপালার পোস্টার। পেছনে ছুটত গাঁয়ের আদুল গায়ের কচিকাঁচারা। রিকশা প্রচার করতে করতে ক্রমে গ্রামের ভেতরে ঢুকে যেতে। রাস্তায় উড়ে বেড়াত লিফলেট। ঘোমটা টেনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতেন নববধূরাও। এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। অশ্রুসজল সামাজিক যাত্রাপালা নিয়ে মাইকে ঘোষণা আর শোনা যায় না।
পাঁচ, ছয় বছর আগেও দুর্গাপুর, অন্ডাল, রানীগঞ্জ, আসানসোল শহর লাগোয়া গ্রামগুলিতে পুজোর সময় যাত্রা হত টানা ৭ দিন ধরে। বিভিন্ন পালা চলত। এখন তা উঠেই গেছে। এখন বাড়ির টেলিভিশনের পেছনেই গোটা পরিবার। পুজোর পরেই খোলা মাঠে টিন ঘিরে যাত্রার মঞ্চ তৈরি হত। বিকেল থেকে রাস্তায় লোকের ভিড় বাড়তে থাকত। সন্ধে নামতেই টিকিট কাউন্টারে ভিড়। সামনে বসার তাগিদে আগেভাগে যাত্রার আসরে ঢুকে পড়তেন দর্শকরা। বসে জমিয়ে গল্প, খাওয়াদাওয়া চলত। ধীরে ধীরে যাত্রা আসার ভরে উঠত। লোকের কোলাহল, বাদামভাজা নিয়ে হকারে হাঁক। এক সময় এক একে করে নিভে আসত আসরের আলো। থেমে যেত কোলাহল। শুরু হত যাত্রাপালা।
বীণা দাশগুপ্ত, শান্তিগোপাল ও স্বপন কুমার আর নেই। তাই শহর আর সব গ্রামাঞ্চল থেকে যাত্রা উধাও হয়ে গেছে। এখন চলছে ডিজে, অর্কেস্ট্রা বা ‘বুগিবুগি’ নাচ।
রানীগঞ্জের রানীসায়ের মোড়ে জেলার একমাত্র যাত্রাপালার বুকিং কাউন্টার খোলা রাখা হয়। রথের দিন থেকেই যাত্রা বুকিং শুরু হয়ে যেত। রঙচঙে পোস্টার ঘেরা থাকত বুকিং কেন্দ্রগুলি। এখন যাত্রাশিল্প প্রায় ধুঁকছে। কত আকর্ষণীয়, চোখধাঁধানো পালা রয়েছে। নামীদামী শিল্পীর, বুকিং নেই। একসময় জামুড়িয়া, বারাবনি, পান্ডবেশ্বর ব্লকে যাত্রা দেখা মানুষের নেশা ছিল।
বছরে এক দু-দিন যাত্রা দেখতেই হবে। সেইরকম দর্শকদের এখন ভীষণ অভাব। ক্লাবগুলি থেকেও আর সেরকম ডাক পায় না। টিকিট কেটে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ত। এখন বুকিং সংস্থার মালিকরা এই কারবার গুটিয়ে ফেলতে চাইছেন। চটকদারি বিজ্ঞাপন দিয়েও দর্শক টানা যাচ্ছে না। নতুন প্রজন্ম আধুনিক গান, নাচের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। বুকিং কেন্দ্রের মালিক অবিনাশ সাই বলেন, বছরের মধ্যে দু-তিনটে যাত্রার বুকিং হচ্ছে না। সংসারে অভাব চলে। কেউ দেখতে চায় না অভিনয়। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে যাত্রাশিল্পের জৌলুস। সিনেমায় ভিড় বেশি।
সামাজিক যাত্রাপালা ‘মেয়েরা কবে স্বাধীন হবে?’ শেষ হয়েছে। তবু দর্শকেরা কেউ যাত্রার আসর থেকে নড়ছেন না। কারণ তাঁরা জানেন, তাঁদের সবার প্রিয় অভিনেত্রী যাত্রালক্ষ্মী বীণা দাশগুপ্তা এবার তাঁর অভিনীত পুরনো যাত্রাপালাগুলির অন্তত দুটো গান পরিবেশন করবেন। কিন্তু বীণাদেবী আসছেন কই? দর্শকদের কেউ কেউ অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। যাত্রাদলের একে ওকে তাকে বলার পর অবশেষে মঞ্চে এলেন তিনি। সমস্বরে দর্শক-আসন থেকে দাবি—
দিদি নটী বিনোদিনীর ‘যেন ঠাঁই পাই তব চরণে…’ গানটা। কেউ কেউ বলছেন, দিদি, মীরার বঁধুয়ার ‘জাত সঁপেছে কৃষ্ণপায়ে’ গানটা শোনাতেই হবে।
দিদি দুটি গানই গাইলেন। গান থামার পর আরও একই আবেদন। এবার দিদি বললেন, ‘আজ থাক, পরের বার আবার!’
অনেক বছর আগে আসানসোলের রামসায়ের ময়দানে যাত্রার আসরে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনাটি প্রমাণ করে বীণাদেবীর প্রতি হাজার হাজার মানুষের প্রত্যাশা কতটা ছিল। শুধু আসানসোলের এই একটি আসরেই নয়, গ্রাম-বাংলার সর্বত্র যেখানেই বীণা দাশগুপ্তা অভিনয় করতে গেছেন সাধারণ দর্শকদের মধ্যে এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যেত। গান শেষ হতেই এক বয়স্কা প্রশ্ন করলেন, ‘এমন সুরেলা হৃদয়স্পর্শী গলা আপনার বছর বছর একইরকম থাকে কীভাবে?’ কেউ বা বলছেন, ‘সুরসম্রাজ্ঞী লতা বা বাংলা গানের সন্ধ্যার মতো আপনিও কণ্ঠের মেজাজটা একইরকম রেখেছেন কোন জাদুতে?’
সামাজিক পালায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় এবং পরে ওই দুটি ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেও দিব্যি তরতাজা বীণাদির অকপট উত্তর, ‘এ সবই সম্ভব করুণাময় ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং আপনাদের সবার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার জন্য।’ মুহূর্তে করতালির ধ্বনিতে ভরে গেল আশপাশ।
‘যাত্রালক্ষ্মী’কে ঘিরে মানুষের এমনই প্রবল আকর্ষণ ছিল। তিনি নিজেও বলেছেন, ‘অভিনয়ই আমার জীবনের সর্বস্ব, তাই দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমার চেষ্টা সর্বক্ষণ থাকে একইরকম।’ অভিনয় চলাকালীন মাঝে মাঝে দর্শকদের মাঝে মিলেমিশে একাত্ম হবার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। ‘ওগো বিষ্ণুপ্রিয়া’ যাত্রাপালায় যিনি বিষ্ণুপ্রিয়া চরিত্রে সাবলীল অভিনয় ও গানে মাতিয়ে দিয়েছিলেন আসানসোলের একটি মঞ্চে, কয়েক বছর পর তিনিই আবার ওই মঞ্চেই ‘আমি নিমাই-এর মা’ পালার শচীমাতার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন। এই পালার একেবারে শেষ দৃশ্যে শচীমাতার চরিত্রে বীণাদেবী ‘নিমাই, নিমাই….’ বলতে বলতে মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকদের ভিড়ের মধ্যে মিশে যান আবেগে আত্মহারা হয়ে। এভাবে মঞ্চ ছেড়ে একেবারে মাটির সাধারণ দর্শকদের সামনে চলে আসার ঘটনাটি সেদিন অনেককেই অবাক করেছিল।
পরবর্তীকালে আসানসোলের এক যাত্রা আসরের গ্রিন-রুমে বসে আমায় বলেছিলেন, ‘শচীমাতার ওই আবেগকে আমি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। নিমাইয়ের খোঁজে যাত্রার আসরের আনাচে-কানাচে আমি তখন পাগলিনীর মতো ওইভাবে ছুটে যাই। আসলে আমি দর্শকদের সঙ্গে ওভাবেই একাত্ম হতে চাই…।’
এই শিল্পীর যাত্রার আসরের নিজস্ব গ্রিনরুমটি সর্বত্রই প্রায় একইরকম থাকত। আসানসোলের পর এই শিল্পীর সঙ্গে কথা হয় পুরুলিয়ার পুনচা থানার বাগদা গ্রামের এক যাত্রার আসরে। সেখানকার হাইস্কুল সংলগ্ন মাঠে সেবার গ্রিনরুমে ঢুকেই আমার মনে হল, আসানসোলের গ্রিনরুমটাই বোধহয় বীণাদেবীর সঙ্গে সঙ্গে এখানে চলে এসেছে। সেভাবেই পর্দা টাঙানো। সাজ-সজ্জার বিভিন্ন উপাদান একইরকমভাবে ছড়ানো আছে। সেই চেয়ার-টেবিল এমনকী পানের পিক ফেলার পাত্রটিও।
রীতিমতো বিস্ময়ের ঘোরে দিদিকে প্রশ্ন করলাম, দিদি, আপনার পানের পিক ফেলার সেই পাত্রটাই, যেটা আসানসোলে দেখেছিলাম!
হাসতে হাসতে দিদি বলেছিলেন, ‘বাঃ তুই দারুণ লক্ষ্য করিস তো! হ্যাঁ, আমার গ্রিনরুমকে ঘিরে সর্বত্রই একইরকম ব্যবস্থা থাকে। তা না হলে অভিনয়ের মেজাজটা ঠিক আসে না।’
তাঁর অভিনয়ের মেজাজটি গড়ে তুলতে সবথেকে সক্রিয় ভূমিকা ছিল বীণাদির গুরু তথা অভিনেতা স্বামী অরুণ দাশগুপ্তের। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে দীর্ঘ কয়েক বছর বিভিন্ন যাত্রা দলে অভিনয় করেছেন ‘নটী বিনোদিনী’, ‘মীরার বঁধুয়া’, ‘মা-মাটি-মানুষ’, ‘অচল পয়সা’, ‘তালপাতার সেপাই’, ‘হরেকৃষ্ণ হরেরাম’ সহ একাধিক পালায়। বাংলা যাত্রা জগতে অরুণ দাশগুপ্ত অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য নাম। অভিনয় এবং পরিচালনা দুটো ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। গিরিশ ঘোষের কাছে বিনোদিনী এসে করজোড়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে আপনি তৈরি করে নেবেন…’, এমন কী তাঁর উদ্দেশে গেয়েছিলেন সেই বিখ্যাত গানটি ‘যেন ঠাঁই পাই তব চরণে…।’ মঞ্চে যাত্রাপালায় বলা গিরিশরূপী অরুণ দাশগুপ্তকে বিনোদিনীরূপী বীণা দাশগুপ্তা বাস্তবে সেই কথা যেন বারবার বলতেন। এই প্রসঙ্গটি দিদির কাছে তোলায় হাসতে হাসতে মাথা নেড়ে সম্মতি জানান। তাঁর কথায়, ‘উনিই আমাকে ঠিকমতো তৈরি করেছেন, অভিনয়ের যেটুকু শিখেছি তাঁর কৃতিত্ব পুরোটাই ওনার (অরুণ দাশগুপ্তের)।’
শোক-সংবাদ
অরুণ দাশগুপ্ত ও বীনা দাশগুপ্তা র অমর আত্মার শান্তি কামনা করি।
তাঁদের মহাপ্রয়াণে যাত্রাজগতের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো বর্তমান যাত্রামোদী দর্শক ও যাত্রা-অভিনেতাগণ ও অভিনেত্রীবৃন্দ তার সঠিক মূল্যায়ণ করতে সম্পূর্ণ অক্ষম।
……………….
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৭
নটী বিনোদিনী
সামাজিক যাত্রাপালা
নটী বিনোদিনী সামাজিক যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত কথাসার:
১৮৮৩ সালের দিকে গিরিশ ঘোষ স্টার থিয়েটার গড়ে তুলেছিলেন। কারণ গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের মালিক ছিলেন একজন অবাঙ্গালী ব্যবসায়ী প্রতাপচাঁদ জহুরী, যিনি থিয়েটারকে ব্যবসা হিসেবেই দেখতেন। তাই তাঁর অধীনে কাজ করা গিরিশ ঘোষ এবং বিনোদিনী কারও পক্ষেই সহজ ছিল না। থিয়েটার গড়ে তোলার জন্য যে রকম টাকা পয়সা দরকার ছিল , তা গিরিশ ঘোষের ছিল না। একজন ২০-২১ বছরের ব্যবসায়ী গুরমুখ রায় অর্থ সাহায্য প্রদান করেন।
থিয়েটারের চেয়ে তার বিনোদিনীর প্রতিই বেশি আকর্ষণ ছিল। গুরমুখ রায় বিনোদিনীকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে নিতে চেয়েছিল যাতে সে অভিনয় ছেড়ে দেয়।বিনোদিনী আংশিক রাজী হন সে প্রস্তাবে কারণ তিনি অভিনয় ছাড়তে রাজী ছিলেন না। গুরমুখ রায়ের রক্ষিতা হন বিনোদিনী।
এই ঘটনায় তাঁর পূর্ববর্তী মালিক ধনী জমিদার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তিনি লাঠিয়াল দিয়ে নতুন থিয়েটার ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করেন।সেই ধনী জমিদার তলোয়ার হাতে বিনোদিনীর শোবার ঘরে প্রবেশ করে তাকে খুন করতে উদ্যত হন। কিন্তু বিনোদিনী উপস্থিত বুদ্ধির জোরে সে যাত্রা বেঁচে যান।
সমাজের সকল স্তরের মানুষই তাঁর অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন । তাঁর প্রশংসক দের তালিকায় ছিলেন , ফাদার লাঁফো, এডুইন আরনল্ড, কর্ণেল অলকট প্রমুখ । রামকৃষ্ণদেব তাঁর চৈতন্যলীলার অভিনয় দেখে তাঁকে গ্রীনরুমে গিয়ে চৈতন্য হোক বলে আশীর্বাদ করেছিলেন । বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে বিনোদিনীর মধ্যে দিয়ে সফলভাবে গড়ে উঠতে দেখেছিলেন । তাঁর অভিনয়ের গুরু তাঁর বহু প্রশংসা করেছিলেন । গিরিশচন্দ্রের ‘কি করিয়া বড় অভিনেত্রী হইতে হয়’ শীর্ষক প্রবন্ধের আলোচনায় বিনোদিনীর জীবনচর্চাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন । তৎকালীন সংবাদপত্রগুলি বিনোদিনীকে ফ্লাওয়ার অফ দি নেটিভ স্টেজ, মুন অফ স্টার কোম্পানী, প্রাইমাডোনা অফ দি বেঙ্গলী স্টেজ আখ্যা দিয়েছিল।
বিনোদিনী ধনী যুবক ৫০০০০ টাকার প্রলোভন ত্যাগ করেন । বরং বাংলা থিয়েটারের উন্নতির জন্য তিনি নতুন থিয়েটার খুলতে রাজি হন এবং গুর্মুখ রায়ের বক্ষিতা হতেও রাজি হন । বিনোদিনীর ইচ্ছা ছিল যে নতুন থিয়েটার তৈরি হবে তা বিনোদিনীর নামে বি-থিয়েটার হবে । কিন্তু কিছু মানুষের প্রতারনার শিকার তিনি হন । যাঁদের মধ্যে তাঁর নিজের অভিনয় গুরু গিরীশ ঘোষ ছিলেন । বিনোদিনীর ত্যাগ স্বীকারে যে নতুন থিয়েটার তৈরি হয় বিনোদিনীর নাম তাতে থাকেনি । এই নতুন থিয়েটারের নাম হয় স্টার থিয়েটার । এই বিশ্বাসঘাতকতায় যখন বিনোদিনী দুঃখে বেদনায় কাতর তখনই রামকৃষ্ণদেব তাঁর চৈতন্যলীলা নাটক দেখতে এসে তাঁকে আশীর্বাদ করেন । এর দুবছর পরেই 1886 খ্রীষ্টাব্দে মাত্র ২২-২৩ বছর বয়েসে তিনি রঙ্গমঞ্চ ত্যাগ করে যান । তারপর দীর্ঘদিন জীবিত থাকলেও কখনও অভিনয়ে ফিরে আসেননি । ফলে বাংলা থিয়েটার বঞ্চিত হয় এক অসামান্য অভিনেত্রীর প্রতিভা এবং অভিনয় থেকে ।
নটী বিনোদিনী যাত্রা পালায় বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন যাত্রালক্ষ্মী বীনা দাশগুপ্তা। গিরীশ ঘোষের ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন অরুণ দাশগুপ্ত। যাত্রাপালাটি পরিবেশনা করেছিলেন নট্ট কোম্পানি।
স্মৃতি যখন বিস্মৃতির আয়নায়, তখন আবার নটী বিনোদিনী পালাটিকে পুনরায় দর্শকের দরবারে আনা হলো। এবার দু’বছর পর ভৈরব অপেরায় পালাটি মঞ্চস্থ হবে। নাম ভূমিকায় থাকছেন রেশমা ঘোষ। মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় যাত্রাপালাটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আশা রাখি।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৬
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৬
বিশ শতকের প্রথম থেকেই যাত্রাগান বা যাত্রাপালা পুরুলিয়ায় তার পাকা আসন তৈরি করে নেয়। এক কালে প্রায় প্রতিটি বর্ধিষ্ণু গ্রামে ও শহরের পাড়ায়-পাড়ায় উৎসাহী যাত্রামোদীদের যাত্রাদল (পার্টি) ছিল, ছেলেরা গোঁফ কামিয়ে মেয়ের অভিনয় করত। পৌরাণিক নাটক করার জন্য তাদের ঝলমলে পোশাক ছিল (বলা হত কাটা পোশাক— কেন এমন নামকরণ জানা যায়নি), ছিল মাথায় পরার নানা আকারের ছেলেদের ও মেয়েদের চুল, ছিল মুকুট ও তরবারি। মেক-আপ নিজেরাই বা গ্রামের কেউ করতেন, গোঁফ আঁকা হত ভুষো কালি দিয়ে। কোনও কোনও গ্রামে আবার পালায় সুর করার জন্য সারা বছর সবেতন সুরকার থাকতেন।
এক সময় বছরে নানা উৎসবে (পরবে) যাত্রাগান অনুষ্ঠিত হত। কোনও উঁচু মঞ্চ ছিল না। শ্রোতা-অভিনেতারা একই স্তরে থাকতেন। আলো বলতে, হ্যাজ়াকের আলো। অভিনয় চলাকালীন শ্রোতাদের বিরক্তি উৎপাদন করে সেগুলিতে পাম্প দেওয়া হত। তবুও শ্রোতারা সেই যাত্রা প্রাণভরে উপভোগ করতেন। অশেষ তাঁদের ধৈর্য, যাত্রার প্রতি অসীম তাঁদের ভালবাসা। শোনা যায় ‘মান্ধাতা’ নামে এক যাত্রাপালা সারারাত ধরে অভিনীত হয়ে সকালের সূর্যোদয়ে শেষ হত।
যাত্রাপালার প্রস্তুতিপর্বটাও ছিল অদ্ভুত। মহড়া শুরু হত রাতের খাওয়ার পরে। চলত রাত ২টো পর্যন্ত। সকাল থেকে যে-যার নিজের কাজে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা অবশ্য পাল্টে গিয়েছে। প্রথম দিকে রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কথা নিয়ে রচিত হত যাত্রাপালাগুলি। অর্থাৎ, পৌরাণিক যাত্রাপালা অভিনীত হত। স্থানীয় ভাবে পালাগান লিখিত হত বলে জানা নেই। হয়ে থাকলেও তা খুব সীমিত পরিসরে ও একান্ত নিজেদের প্রয়োজনে। এ রকম কোন পাণ্ডুলিপির সন্ধান এখনও পর্যন্ত অমিল। কলকাতা থেকে প্রকাশিত যাত্রাপালা দিয়েই কাজ চলত।
সেই অঙ্গনটিতে একচেটিয়া রাজত্ব করতেন শ্রীকৃষ্ণ, কংস, রাম, রাবণ ও কৌরব-পাণ্ডবদের দল-সহ হনুমান। শেষোক্ত জনের ‘হুপহাপ’ শব্দে আসর মাতানোর কথা মুখেমুখে প্রচারিত হত। এই অবস্থাটা চালু ছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
পঞ্চাশের দশকে এল ‘সোনাই দিঘি’ ও ‘হিটলার’। বলা যায়, যাত্রাপালায় এক রকম বিপ্লব নিয়ে এল নট্ট কোম্পানির ‘সোনাই দিঘি’ ও তরুণ অপেরার ‘হিটলার’। যাত্রাপালার ভোল পাল্টে দিল ওই দু’টি প্রযোজনা। পুরুলিয়ার যাত্রাদলগুলিও পিছিয়ে থাকল না। ইতিহাসভিত্তিক যাত্রাপালা শুরু হল। যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে ও সমসময়কে বুঝে নিতে এক সময় সামাজিক যাত্রাপালা আসন পেতে বসল। বহিরাগত মহিলা শিল্পী নিয়ে আসা হল, উঁচু পাটাতনের মঞ্চ তৈরি হল, দু’দিক দিয়ে মঞ্চে আসা-যাওয়ার দু’টি ঢালু পথ তৈরি হল, ‘স্পটলাইট’, ‘স্ট্রোব লাইট’-এর ব্যবহার শুরু হল। কিন্তু এতে আয়ের থেকে ব্যয় বেড়ে গেল।
বহিরঙ্গে পরিবর্তন আনার চড়া মাসুল দলগুলিকে গুণতে হল। অধিকাংশ গ্রামের নিজস্ব গৌরবসূর্য অস্তমিত হল। পেশাদার দলের যাত্রাও আর পুরুলিয়াতে তেমন ভাবে আয়োজিত হয় না।
এখন কিছু জায়গায় জেলার যাত্রাদলগুলি অনেক লড়াই করে টিঁকে রয়েছে। বছরে বড়জোর এক বার তারা যাত্রা করতে পারে। দুর্গাপুজোর সময় বা তার এদিক-ওদিকে। কিন্তু তাতেও নিজেদের যাত্রাপ্রীতিকে টিকিয়ে রাখতে তাদের যে কী হারে অনুদানের নামে চাঁদা দিতে হয়, পুজোর কেনাকাটা কম করতে হয়, পুরনো জুতো তাপ্পি মেরে আর একটা বছর পার করে দিতে হয়, তা আমরা জানতে পারি না।
তবে আশার কথা এই, তাদের এই সুবিন্যস্ত প্রযোজনাগুলি শ্রোতাঠাসা আঙিনায় অভিনীত হয় এই যুগের সর্বব্যাপী দূরদর্শন এবং ইন্টারনেট, ‘ইউটিউব’-এর প্রচণ্ড অভিঘাত সত্ত্বেও। পুরুলিয়ার নিজস্ব যাত্রা এখনও বেঁচে রয়েছে।
আশার কথা, জেলার সাঁওতাল সম্প্রদায় তাঁদের নিজের ভাষায় চিরাচরিত আঙ্গিকে যাত্রাপালা করা শুরু করেছেন। নিজেদের সম্প্রদায়ে এঁদের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। হয়তো এদের হাতেই হয়ত যাত্রার ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে।
যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- ৬
অচল পয়সা
সামাজিক যাত্রাপালা
অচল পয়সার যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
অচল পয়সার কেয়া (বেলা সরকার)ও দিব্যেন্দু (দেবগোপাল ব্যানার্জী)কে যাত্রা পালায় নাটকীয় ভঙ্গিমায় দেখি –
(অচল পয়সা যাত্রাপালার সংলাপ)
দিব্যেন্দু : এসো কেয়া, ধর আমার হাত।
কেয়া : উপায় নেই ডাক্তার। তুমি আলোর হাত বাড়ালে কি হবে আমি যে এখন কালো রাত।
দিব্যেন্দু : রাত্রি শেষে আমি সূর্য এনে দেব।
কেয়া : আকাশ যে অন্ধকারে ঢাকা।
দিব্যেন্দু (দেবগোপাল) যাবার সময় বলে যায় – সে সারাজীবন কেয়ার পথ চেয়ে অপেক্ষা করে থাকবে।
কেয়া ডুকরে কেঁদে ওঠেন, বলেন দিব্যেন্দুকে তিনি ভালোবাসতেন। নরপিশাচ বাবা তাঁকে জের করে চাঁদু মাস্টারের ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায় – আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয়না কেয়ার ভেতর মহলের দ্বন্দ্ব। তাঁর বেদনা-আর্তি-আর্তধিক্কারপ্রকাশে তখন আর কেয়া একা আক্রান্ত হয় না সমাজের এরকম অনেক কেয়ারা এর অংশীদার হয়ে ওঠে। বেলার উদ্ধৃতি দিয়ে বলছি – ‘অচল পয়সা-র কেয়ার সাফল্যই আমাকে যাত্রাজগতে বেলা সরকার গড়ে তুলেছে।’
তাঁর এই প্রতিষ্ঠার মূলে মাখনলাল নট্ট, পালাকার – নির্দেশক ভৈরব গাঙ্গুলী, সত্যপ্রকাশ দত্তের ভূমিকা অনেকখানি জুড়ে আছে। অভিনয়ের সুবাদে তরুন রায় (ধনঞ্জয় বৈরাগী), মহেন্দ্র গুপ্ত, অরুন দাশগুপ্ত, শেখর গাঙ্গুলীকে নির্দেশক ও অভিনেতা হিসেবে যেমন পেয়েছেন তেমন উপলব্ধি করেছেন এঁরা কী অনায়াসে একজন অভিনয় শিল্পীর ওপর সঠিক গুরুত্ব আরোপ করেন। মহড়া চলাকালীন এঁদের কাজের নানা অভিজ্ঞতার সঞ্চয় আর নিরলস চর্চা তাঁকে সমসাময়িক অনেক অভিনেত্রীদের পেছনে ফেলে সাফল্যের শীর্ষে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
প্রায় এক দশক কাজ করার পর নট্ট কোম্পানি ছেড়ে ১৯৮৪ তে বেলা সরকার ও দেবগোপাল ব্যানার্জী জনতা অপেরায় যুক্ত হন। এখানে অভিনীত পালাগুলি ‘এক পয়সার মা’ চরিত্র – কাজল, (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য [বড়], ‘কান্না আমার জীবন সাথী’ অভিনয়ে ও নির্দেশনায় – বেলা সরকার, (মনোতোষ চক্রবর্তী, সুরকার – স্বপন পাকাড়াশী) ১৯৭৫ ‘সম্রাট নন্দিনী (পালাকার/নির্দেশক – সমীর মজুমদার), ১৯৮৬ ‘মেয়ে নয় মনসা (পালাকার /নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য[বড়]), ‘রাজবাড়ীর রাধা’ চরিত্র – রাধা (পালাকার/নির্দেশক – অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য[বড়])। আবার দল পালটে এলেন অগ্রগামীতে।
২৭ মে ১৯৭৮ তারিখে আজকাল -এ প্রকাশ – “চলচ্চিত্রের মতো যাত্রার জগতে স্মরণীয় জুটি খুব কম। তবু এর মধ্যেই যে কটি জুটি দর্শকের হৃদয়াসনে স্থায়ী আসন পেতে নিয়েছে তাদের মধ্যে বেলা সরকার – দেবগোপাল জুটি উল্লেখযোগ্য। প্রায় দশ বছর ধরে বেলা সরকার – দেবগোপাল জুটির অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তা হাজার হাজার দর্শককে টেনে এনেছে পালা দেখতে। যে কোন পালায় যে কোন ধরণের অভিনয়ে এই জুটি তুলনাহীন – তা সে রোমান্টিক অভিনয়ই হোক আর ঐতিহাসিক বা সামাজিক চরিত্রই হোক। এই জুটির উপস্থিতি মানেই জনপ্রিয়তা, লক্ষ লক্ষ মানুষের পদধূলিতে জমজমাটি পালার আসর।… উজ্জ্বল এই দুই অভিনেতা অভিনেত্রী জুটি এবার দল বদল করে জনতা অপেরা থেকে অগ্রগামী দলে এসেছেন।” এখানে ১৯৮৭-‘৮৮ -তে ‘দু টুকরো মা’ চরিত্র – শান্তি, (পালাকার – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য [বড় ]), ‘পূজীরিণী প্রমিলা’ -র নাম ভূমিকায়, (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী,সুরকার – রামকুমার চট্টোপাধ্যায়) এবং ১৯৮৯ -তে ‘ঘরে ঘরে দুর্গা’ চরিত্র – শ্যামা, (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য [বড় ]), ঘরেঘরে দুর্গায়(শ্যামা) -য় বেলা সরকারের অসাধারণ অভিনয় নতুন মাত্রা তো দিয়েইছে এবং টিমওয়ার্ক প্রশংসার দাবি রাখে। ‘দু টুকরো মা’ পালায় পুরুষশাসিত সমাজে নারীর বঞ্চনার কথাই উঠে এসেছে। পালার নায়িকা শান্তি (বেলা সরকার) এ কাহিনীর প্রাণপ্রতিমা। অভিনয়ে নাচে গানে অভিব্যক্তিতে একাই বেলা সরকার চরিত্রকে অনবদ্য ভঙ্গিমায় মঞ্চায়িত করেছেন।
১৯৯০ -তে দল বদল করে নিউ অপ্সরা অপেরাতে বেলা একাই এলেন। এই দলে চিত্রাভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী অভিনয় করার জন্য প্রথম যোগ দেন। তাই শুরু থেকে নিউ অপ্সরা বিখ্যাত বলা যায়। এই দলে ‘স্বামী হত্যার দায়ে’ অসহায়া গৃহবধূ হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার (পালাকার/নির্দেশক – ভৈরব গাঙ্গুলী, সুরকার – রামকুমার চট্টোপাধ্যায়)। ‘পাপিনী প্রিয়তমা’ -র পালাকার – সত্যপ্রকাশ দত্ত, দুটি পাবার মুখ্য ভূমিকায় – বেলা সরকার। ১৯৯১ -তে এলেন লোকশিল্পতে। এখানে ‘বাবুরা সিন্দুরের দাম অনেক’ চরিত্র – গোলাপ সুন্দরী (পালাকার – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, নির্দেশক – অমিতাভ ঘোষ, সুরকার – জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়)। পালার বিষয়, এক সময়ের পেশাদার মঞ্চ কাঁপানো গোলাপ সুন্দরী নামে এক বিখ্যাত অভিনেত্রীর করুন পরিণতি এবং তার জন্য যে বা যারা দায়ী তাদের মুখোশ খুলে দেওয়ার কাহিনী। এই অভিনেত্রীর ভূমিকা তাঁর স্মরণীয় অভিনয় ভোলবার নয়। অন্য পালাটি ‘ওগো মাটির ঘরে মা আসছে’ (পালাকার – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, নির্দেশক – অমিতাভ ঘোষ, সুরকার – চন্দন ধর), ১৯৯২ ‘সে দুলে পাড়ার দুর্গা বটে’ মুখ্য চরিত্রে বেলা, (পালাকার/নির্দেশক – শৈলেশ গুহ নিয়োগী, সুরকার – রঘুনাথ দাস)। ১৯৯৩- ‘শাঁখা দিয়ে কিনলাম’ চরিত্র – দুর্গা, ও ‘দেবী সুলতানা’র মুখ্য চরিত্রে, (পালাকার/নির্দেশক – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, সুরকার – পঞ্চানন মিত্র)। ১৯৪৪ – যোগ দিলেন দি নিউ অগ্রগামীতে। এখানে ‘আজ প্রতিমার চক্ষুদান’ পালায় অভিনয় করেন(পালাকার/নির্দেশক – জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাস, সুরকার – পঞ্চানন মিত্র)। বেলা ‘আজ প্রতিমার চক্ষুদান’ পালায় অভিনয় করেন এক দুঃখী মেয়ের চরিত্রে। মেয়েটি এক কথায় জীবনে কিছুই পেল না। স্বামীর ভালোবাসা, স্বামীর সঙ্গে ঘর করা থেকে বঞ্চিত যে নারী, সে মৃত্যুর আগে নিজের চোখ জোড়া স্বামীকে দান করার মহান অঙ্গীকার করে যায়। প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর বিস্ময় সৃষ্টিকারী অভিনয় চমৎকৃত দরে দর্শকদের।
১৯৮৫ -তে মুক্তধারা-র পালা ‘জবাব চাই জজ সাহেব’, (পালাকার/নির্দেশক – লমীর মজুমদার, সুরকার – প্রশান্ত ভট্টাচার্য); ১৯৯৬ তে শিল্পী বন্দনায় ‘লক্ষীর আজ অগ্নিপরীক্ষা’ (পালাকার/নির্দেশক – সুনীল চৌধুরী), ১৯৯৭ -এ আনন্দ বাসরে ‘বাংলার বাঘিনী’ এই পালার বিষয়বস্তু হল অত্যাচারিতা এক গ্রাম্যবধূর অন্যায়ের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কাহিনি (পালাকার – মনোতোষ চক্রবর্তী, নির্দেশক – সলিল চট্টোপাধ্যায়, সুরকার – স্বপন পাকড়াশী)। এরপর নবরঞ্জন অপেরায় ‘সিংহগড়ের রাজবাবু’র প্রদান ভূমিকায় বেলা, (সম্পাদনা ও নির্দেশনা – তপনকুমার) রাজদূত অপেরার সেলাই করা ভারত মা ও লুঠেরা সুলতানা (পালাকার – রঞ্জিত চ্যাটার্জি, সুরকার – রঞ্জন ভট্টাচার্য) পালাদুটির অভিনয় ও নির্দেশনা – বেলা সরকার।
২০০৭ -এ দি চন্দ্রলোক অপেরায় – আমি কোলকাতার রসগোল্লা, ২০০৮-এ আর্য অপেরার – মা নেই যার কেউ নেই তার প্রভৃতি পালায় সঙ্গে পেয়েছেন দেবগোপাল ব্যানার্জী, অসীমকুমার, তরুনকুমার(যাত্রা), দীপেন চ্যাটার্জি, উজ্জ্বল সেনগুপ্ত, চাঁদু চক্রবর্তী, অনাদি চক্রবর্তী, বীণা দাশগুপ্ত, ললিতা চৌধুরী অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। এইসব পালায় তাঁর নানা বৈচিত্রময় চরিত্রের সাবলীল অহিনয় এবং বলিষ্ঠ প্রকাশভঙ্গি দর্শক মহলে বিশেষভাবে আজও সমাদৃত। দৃশ্যে নাট্যঘটনার আনন্দে তাঁকে বিশিষ্ট করে রাখবে আমাদের যাত্রাভিনয়ের ইতিহাস। ওর মতো লড়াকু, হার না মানা অভিনেত্রী খুব কমই দেখা যায়। যাত্রাভিনয়ে অন্যমাত্রা যোগ করলেন। বলা যায় তাঁর গোটা জীবন এক বৈচিত্রের সম্ভার, গবেষণা নেই, যোগ্য মূল্যায়ন নেই, নেই প্রামাণ্য তথ্য ভান্ডার।
যাত্রার পাশাপাশি অন্যান্য মাধ্যমেও তিনি অভিনয় করেছেন। অমিতাভ দাশগুপ্তের অপরাজিতা ছাড়াও যদুবংশ ও পুত্রবধূ ছবিতে কাজ করেছেন। কলকাতা দূরদর্শন সম্প্রচারিত প্রথম নাটক ‘পাখির চোখ’ -এ অভিনয় করেন। রয়েছে ‘জয়তী ও পনপ্রথা’ বেতার নাটকের অভিনয়।
সরকারি বেসরকারি শতাধিক পুরস্কারে সম্মানিত। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এবং ভারতের অন্যান্য প্রদেশে অভিনয় করেছেন। দিল্লীর আইফ্লেক্স হলে ১৮টি ভাষার নাট্য উৎসবে ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। তাঁর সমৃদ্ধ কন্ঠের অভিনয়শৈলী ধরা আছে বেশ কিছু যাত্রাপালার লং প্লেয়িং রেকর্ডে ক্যাসেটে। যাত্রার অভিনয় করবেন কখনও ভাবেবনি। ভয়ও পেতেন, কারণ যাত্রার আসরে দশ বারো হাজার দর্শকের সামনে অভিনয়, নাচ, গান, আসরের শেষ দর্শকটিকে শোনাতে ও দেখাতে হবে – এ এক ভীষণ কঠিন ব্যাপার যাত্রার শিল্পীদের ক্ষেত্রে। আসলে তিনি টোটালই থিয়েটারের মানুষ। তাই যাত্রার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা – এই সংকোচ, ভয় তাঁকে উৎকন্ঠার মধ্যে ফেলেছিল। কারণ থিয়েটার আর যাত্রা আলাদা মাধ্যম। পরে যাত্রায় নিজেকে মানিয়ে নিতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। বেলা দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন অকৃপণভাবে। নিজস্ব অভিনয় স্টাইলে হযে উঠলেন পালা অভিনেত্রী বেলা সরকার।