যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৯

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৯

তিনশো বছরেরও বেশী গ্রামীণ শৌখিন যাত্রা শিল্পকে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন বাঁকুড়ার তালডাংরার ভীমাড়া-কেশাতড়া গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম। ‘বোকা বাক্স’ যখন মানুষের প্রতিদিনকার সান্ধ্য বিনোদনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে, সেই সময়ে দাড়িয়েও এখানকার অপেশাদার গ্রামীণ শিল্পীরা প্রতি বছর বিজয়া দশমীতে নিয়ম করে যাত্রা পালা মঞ্চস্থ করেন। যার টানে এলাকা ছাড়িয়ে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন যাত্রা মোদী দর্শক সাধারণ।

মা, মাটি মানুষ, ধান কাটছে নতুন বৌ, স্বর্গের পরের স্টেশন, দু’টুকরো মা-র মতো অজস্র সামাজিক পালার পাশাপাশি বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও মীরার বধুঁয়া, জননী হন্তা পরশুরামের পাশাপাশি এবছর গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম পৌরাণিক যাত্রা পালা উপহার দিল এই গ্রামের ছেলেরা।

এই গ্রামে দুর্গা পুজোর সূচনা মাত্র আট চল্লিশ বছর আগে। কিন্তু যাত্রা পালা মঞ্চস্থের ইতিহাস তিনশো বছরেরও পুরনো। আগে গ্রামে দোল যাত্রা উপলক্ষে যাত্রা হতো। দুর্গা পুজো শুরুর পর তা বিজয়া দশমীতে এগিয়ে আনা হয়। আগে প্রতিবছর তিন থেকে চারটি পালা মঞ্চস্থ হলেও এখন সারা বছরে মাত্র একটিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
এবছর ‘গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম’ পালার ‘বেদব্যাস’ চরিত্রাভিনেতা তারা দাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনশো বছরেরও বেশী পুরনো আমাদের গ্রামীণ যাত্রার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেদের এই ব্যাপারে চরম অনীহাই হয়তো আরও অনেক জায়গার মতো এখানেও একদিন হারিয়ে যাবে এই শিল্প।

গ্রামেরই অপেশাদার শৌখিন যাত্রা শিল্পী প্রতাপ পতি, দিব্যেন্দু পতি, আশিস দাস, বিকাশ চন্দরা বলেন, এখন এক রাতের যাত্রা পালা মঞ্চস্থ করতে ন্যূনতম পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। বেশীরভাগ টাকাটাই শিল্পীদের নিজেদের বহন করতে হয়। তাছাড়া এখন দক্ষ মহিলা শিল্পীর অভাব আর যাত্রার আনুষঙ্গিক সাজ সরঞ্জামের অভাব তো রয়েছে। শুধুমাত্র গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এভাবে কতদিন পুজোয় পালা মঞ্চস্থ করা যাবে তা নিয়েও ভাবিত তাঁরা।

বাঁকুড়া শহরের যাত্রা পালার লাইট ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, আগে সারা বছরে জেলার বিভিন্ন অংশে তিনশোরও বেশী গ্রামীণ যাত্রা পালা হতো। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে কুড়িতে। ফলে আধুনিক সাজ সজ্জা আর আলোর ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা। এখন এই পেশা ছেড়া অন্য পেশায় অনেকেই চলে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

এই গ্রামীণ শৌখিন যাত্রা শিল্পীরা কেউ পেশাদার অভিনেতা নন। শুধু মাত্র অভিনয়টাকে ভালোবেসে এরা অভিনয় করেন। এঁদের কেউ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন, কেউ শিক্ষিত বেকার যুবক, আবার কেউ নিজের জমিতে চাষ করে দৈনন্দিন সংসার খরচ চালান। কিন্তু এই শিল্পটাকে শুধুমাত্র ভালোবেসে আর গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় টানা একমাসের মহড়া শেষে এঁরা মুখে রং মেখে আসরে নামেন। সরকারী উদ্যোগে যখন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার নানান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দাড়িয়েও বাঁকুড়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের শিল্পীরা রয়ে গেছেন অন্ধকারেই। সহস্র সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে সহস্র যোজন দূরে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এই গ্রামের প্রাচীন যাত্রা শিল্প ঠাঁই নেবে ইতিহাসের পাতায়।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা–৯

মুখোশ পরা মানুষ
সামাজিক যাত্রাপালা

মুখোশ পরা মানুষ সামাজিক যাত্রাপালা নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথাসার।

পূর্ব বর্ধমানে কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামে রুগ্ন যাত্রা শিল্পকে ধরে রাখতে সিঙ্গি কাশিরাম দাস নাট্য সমাজ পরিচালনায় মহা ভারত রচিত মহা কবি কাশীরাম দাস স্মরণ উৎসব মেলায় সিঙ্গি কাশীরাম দাস পাঠাগার প্রাঙ্গনে এক যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হল। ডঃ তাপস কুমার রচিত ,প্রিয়জিৎ ব্যানার্জী নির্দেশিত ও অভিনীত এক সাড়া জাগানো সামাজিক যাত্রাপালা “মুখোশ পরা মানুষ” অভিনয়ে প্রিয় জিৎ ব্যানার্জি, দেব জিৎ ব্যানার্জি, শুভ্রাংশু ব্যানার্জি ,অরুণাংশু মুখার্জী ,উত্তম সাহা, কালীচরণ ভট্টাচার্য্য, পার্থসারথি দত্ত ,সুকান্ত পাল, কৌশিক ভট্টাচার্য্য ও আরো অনেকে। জানা যায় এই যাত্রাপালায় পরিবেশিত সব অভিনেতা গুলো সিঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা ।যাত্রা শুনতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে । কাশিরাম দাস পাঠাগার প্রাঙ্গন কে জমজমাট করে রেখেছে।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালার শেষ পর্ব আগামীকাল প্রকাশ দেব। পরবর্তী বিভাগ শুরু হবে কৃষ্ণলীলা কীর্তন ও বাউলগান বিভাগ নিয়ে। খুব শীঘ্রই উক্ত বিভাগ শুরু হবে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৯

  1. যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা- নবম পর্বে শেষ হলো তাহলে। অতীত থেকে সমকাল … প্রসঙ্গটি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ মি. ভাণ্ডারী। নতুন পর্বের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম । সতত সাথে থাকবেন প্রিয়।
      নতুন পর্বের শুভাকাঙ্খায় মন উচ্ছল হয়ে উঠল।
      অনুপ্রেরণা দিয়ে উত্সাহিত করবেন।
      এটা প্রত্যাশা করি।
      জয়গুরু!

  2. বাংলাদেশেরও প্রত্যন্ত গ্রামের শিল্পীরা এখনও রয়ে গেছেন অন্ধকারেই। কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা নেই। এভাবে চলতে থাকলে গ্রামের প্রাচীন যাত্রা শিল্প ঠাঁই নেবে ইতিহাসের পাতায়। নেবে নয়, আমি তো মনে করি নিয়েছে। :( 

    1. যাত্রাজগতে সুদিন ফিরে আসছে।

      দেশের সরকার যেভাবে সহায়তা করছেন
      তাতে যাত্রাশিল্পের মানোন্নয়ন হবেই।

      আমরা সেইটাই আশা করি।

      সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ কবিবর।

      জয়গুরু!

  3. অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif আসুক নতুন কিছু।

    1. যাত্রাজগতে সুদিন ফিরে আসছে। দিন আগত। সেদিন আসছে।

      দেশের সরকার যেভাবে সহায়তা করছেন
      তাতে যাত্রাশিল্পের মানোন্নয়ন হবেই।

      আমরা সেইটাই আশা করি।

       

      সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ কবিবোন।

      জয়গুরু!

  4. শেষ পর্বের ভালোবাসা আর আগামী পর্বের আশাবাদ জানিয়ে গেলাম কবি ভাণ্ডারী দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম । সতত সাথে থাকবেন প্রিয়।

      নতুন পর্বের শুভাকাঙ্খায় মন উচ্ছল হয়ে উঠল।

      অনুপ্রেরণা দিয়ে উত্সাহিত করবেন।

       

      সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ কবিবর।

      জয়গুরু!

    1. আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা রইল।

      যাত্রাজগতে সুদিন ফিরে আসছে। দিন আগত। সেদিন আসছে।

      দেশের সরকার যেভাবে সহায়তা করছেন
      তাতে যাত্রাশিল্পের মানোন্নয়ন হবেই।

      আমরা সেইটাই আশা করি।

       

      সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ কবিবোন।

      জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে বিমুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি দিদিভাই। সাথে থাকুন।

      আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।