যা দেবী সর্বভূতেষু… মহিষাসুরমর্দিনী শ্রী শ্রী চণ্ডীস্তোত্রম্ – দশম পর্ব শ্রী শ্রী মহা-নবমী

যা দেবী সর্বভূতেষু… মহিষাসুরমর্দিনী
শ্রী শ্রী চণ্ডীস্তোত্রম্ – দশম পর্ব। শ্রী শ্রী মহা-নবমী

সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।

আজ শ্রী শ্রী মহা নবমী। আশ্বিনের শারদ প্রাতে আগত মহানবমী। চন্দ্রের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হবে মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দেবীর মহানবমী পূজা হবে। নবমী সন্ধিক্ষণেই মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচণ্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এই আচারের সময় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পূজা করা হয়েছে, অর্থাৎ যিনি চণ্ড ও মুণ্ডের বিনাশিনী। পূজার এই মুহূর্তটি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। দেবী দুর্গার আশির্বাদ নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র এই মুহূর্তেই রাবণকে বধ করেছিলেন।

নবমীর বিশেষত্ব যদি কিছু থাকে তা হল এই হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্যে। নবমীতেই মূলত হোম হয়ে থাকে, ব্যতিক্রমী নিয়মও থাকতে পারে। মূলত আঠাশটা বা একশো আটটা নিখুঁত বেলপাতা লাগে। বালি দিয়ে যজ্ঞের মঞ্চ বানিয়ে বেলকাঠ ঠিকভাবে নিয়মমতো সাজিয়ে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘি’তে চুবিয়ে বেলপাতাগুলো নিবেদন করা হয়। তারপর সবার শেষে একটি কলা চেলীতে বেধে পান নিয়ে সেটা ঘি’তে চুবিয়ে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। তারপর তার মধ্যে দই দেওয়া হয় ও দুধ দিয়ে আগুন নেভানো হয়। পূণাহুতির পর পুরোহিত সবার কপালে যজ্ঞ তিলক দেন।
মহা নবমীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

(1) কালি কালি মহাকালি কালিকে কালরাত্রিকে।
ধম্মকামপ্রদে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে ||

(2) লক্ষ্মি লজ্জে মহাবিদ্যে শ্রদ্ধে পুষ্টি স্বধে ধ্রুবে।
মহারাত্রি মহামায়ে নারায়ণি নমোস্তু তে ||

(3) কলাকাষ্ঠাদিরূপেণ পরিণামপ্রদায়িনি।
বিশ্বস্যোপরতৌ শক্তে নারায়ণি নমোস্তু তে ||

এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||

* প্রনাম মন্ত্র :- সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে। ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোহস্তু তে ||

যজ্ঞশেষে দেবীর উদ্দেশ্যে ছাগ ও মহিষ বলিদান দেওয়া হয়। বলিশেষে সবাই কপালে রক্ত তিলক ধারণ করে। কোথাও কোথাও এই দিনে চাল কুমড়ো ও ইক্ষু বলিদান হয়।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় পশুরক্তে কেন দেবীপূজা। আসুন, প্রচলিত শাস্ত্রবিধির বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াই। মন্দিরে পশুবধ নয়, প্রতিটি গ্রাম, নগর, শহর, যে যেখানে দেবীর মন্দির আছে সেখানেই সর্বত্র আমরা প্রচার করি-

মা ম্রিয়স্ব, মা জহি। শক্যতে চেত্ মৃত্যুম অবলোপয়।
মরো না, মেরো না, যদি পার মৃত্যুকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করো।

শ্রী শ্রী দুর্গাত্সব-১৪২৬ শারদীয়া পূজা-সংকলন
শ্রী শ্রী মহা নবমী – দুর্গাপূজার কবিতা- ৫

কবি- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

মহা নবমীর পূজা বিদিত জগতে,
হোমযজ্ঞ পূজাপাঠ হয় বিধিমতে।
ঢাকীরা বাজায় ঢাক শঙ্খধ্বনি হয়,
পূজার আনন্দে মাতে সবার হৃদয়।

পশুরক্তে দেবীপূজা শাস্ত্রের বিধান,
যূপকাষ্ঠে শত ছাগ হয় বলিদান।
হত্যায় রঞ্জিত হয় দেবীর মন্দির,
পশুবধে জননীর চক্ষে বহে নীর।

শুনহ জীবের জীব আমার কথন,
পশুরক্তে দেবীপূজা না হয় কখন।
ভক্তিঅর্ঘপুষ্প দিয়ে কর দেবীপূজা,
গঙ্গাজলে তুষ্টা হন দেবী দশভূজা।

বলিহীন হোক পূজা কহিলাম সার,
লিখেন লক্ষ্মণকবি কাব্যের মাঝার।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

9 thoughts on “যা দেবী সর্বভূতেষু… মহিষাসুরমর্দিনী শ্রী শ্রী চণ্ডীস্তোত্রম্ – দশম পর্ব শ্রী শ্রী মহা-নবমী

  1. ভক্তিঅর্ঘপুষ্প দিয়ে কর দেবীপূজা,
    গঙ্গাজলে তুষ্টা হন দেবী দশভূজা।
    অভিনন্দন কবি মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. শুভ মহা নবমীর শুভেচ্ছা রইল।

      জয়গুরু। আন্তরিক অভিনন্দন।

    1. শুভ মহা নবমীর শুভেচ্ছা রইল। জয়গুরু। আন্তরিক অভিনন্দন।

  2. মহা নবমীর শুভেচ্ছা রইল, শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।      

    1. শুভ মহা নবমীর শুভেচ্ছা রইল। জয়গুরু। আন্তরিক অভিনন্দন।

  3. দেরিতে হলেও মহা নবমীর শুভেচ্ছা জানালাম কবি। :)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।