গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি ও মা লক্ষ্মীর পূজা ও পাঁচালি পাঠ আদিপর্ব

গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি ও মা লক্ষ্মীর পূজা ও পাঁচালি পাঠ
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – মা লক্ষ্মীর আগমনী – আদি পর্ব

তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা, পাঁচালি রচনা ও পাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বৈদিক লক্ষ্মী কিন্তু শস্য-সম্পদের দেবী ছিলেন না। বরং নদীরূপিনী সরস্বতী শস্যদাত্রী হিসেবে গণ্য হতেন। কেন? কেন আবার, নদী পলি মাটি ভরাট করে উর্বর করত ভূতট। এর পরে তো বৈদিক আর্যরা চাষাবাদ শিখল ‘নিম্নবর্গ’-এর কাছে। সম্পদ এল আর্যদের হাতে। শাসক বা শোষক হলেন তাঁরা।

আবার লক্ষ্মীর স্বামী একটা কাঁচা কাজ করে ফেললেন। কেমন কাঁচা? বেদম কাঁচা।
দুর্বাসা মুনির গোঁসার কথা ত্রিভূবনবাসী জানে। তিনি ভালবেসে ইন্দ্রকে দিলেন পারিজাত ফুলের মালা।
এরপর ইন্দ্র রম্ভা-সম্ভোগে যখন মত্ত, ওই মালা নিজের বাহন ঐরাবতের গলায় ছুঁড়ে দেন। হাতি বুঝবে ফুলের কদর?
সে মালা ছিঁড়ে ফেলল ঐরাবত। দুর্বাসা গেল ক্ষেপে। অভিশাপ দিল। অভিশাপে ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরী হল শ্রীহীন, লক্ষ্মীছাড়া দশা।

স্ত্রী লক্ষ্মী, ইন্দ্রের অনুমতি নিয়ে পাতালে, মানে সমুদ্রে প্রবেশ করলেন। পরে সমুদ্র-কন্যা হয়ে জন্মাচ্ছেন। সেই লক্ষ্মী আরও পরে সমুদ্র মন্থনে উঠে আসছেন অমৃত পূর্ণ কুম্ভ বা কলস নিয়ে। তবে উপপুরাণের অর্বাচীন পৃষ্ঠায় লক্ষ্মী একবার তুলসী, একবার ঘোটকী হয়েও জন্মান। জ্যোৎস্না প্লাবিত এই পৃথিবীর হেমন্তে আসেন শুধু একটি রাতের অতিথি হয়ে। এসো মা লক্ষ্মী, বসো ঘরে। বাংলার ঘরে ঘরে তার আকুল আহ্বান।

বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে কোজাগরী লক্ষীপূজার আয়োজন ।

কোজাগরী শব্দটি এসেছে `কো জাগর্তী` থেকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে দেবী লক্ষ্মী ধন-ধান্যে ভরিয়ে দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আসেন। আর ধন-ধান্যের আশায় এই পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়।

শাস্ত্রমতে, দেবী লক্ষ্মী ধন-সম্পদ তথা ঐশ্বর্যের প্রতীক। এ ছাড়া আধ্যাত্মিক ও পার্থিক উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দর্যের দেবীও তিনি। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে এই পূজা করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, লক্ষ্মী দেবী সন্তুষ্ট থাকলে সংসারে অর্থকষ্ট থাকবে না। ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে এদিন লক্ষ্মী মর্ত্যে নেমে আসেন। বাঙালি বিশ্বাসে লক্ষ্মীদেবী দ্বিভূজা ও তার বাহন পেঁচা এবং হাতে থাকে শস্যের ভাণ্ডার। প্রায় প্রতিটি বাঙালি হিন্দুর ঘরে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। এ উপলক্ষে হিন্দু নারীরা উপবাস ব্রত পালন করেন।

এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – লক্ষ্মীদেবীর আগমনী
আদি পর্ব – মা লক্ষ্মীর পাঁচালি কবিতা-১

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

প্রণমামি লক্ষ্মীদেবী বসো মাগো ঘরে,
ভক্তিপুষ্প অর্ঘ দিয়ে পুজিব তোমারে।
তুমি মাতা লক্ষ্মীদেবী ঐশ্বর্ষ্যদায়িনী,
অপার মহিমা তব কি বর্ণিব আমি।

এসো মাগো লক্ষ্মীমাতা তুমি মা কমলা,
মম গৃহে থাকো মাগো না হয়ো চঞ্চলা।
লক্ষ্মীর পাঁচালী কাব্য পড়ে যেইজন,
ধন বৃদ্ধি হয় ভবে সুখী সেইজন।

প্রতি গুরুবারে যেবা লক্ষ্মীপূজা করে,
সুখ, শান্তি, ধন, বৃদ্ধি হয় তার ঘরে।
লক্ষ্মী করুণায় ঘরে ভরে রত্নধন,
তব শ্রীচরণ মাগে ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ।

লক্ষ্মীর পাঁচালি কাব্য যুগের পুরাণ।
পাঁচালির কাব্য লিখে লক্ষ্মণ শ্রীমান।

আগামীকাল লক্ষ্মীপূজার বর্ণনা সহ মন্ত্রপাঠ ও স্তোত্রপাঠ এই বিভাগে প্রকাশিত হবে।
সকলের অকুণ্ঠ সহযোগিতা কামনা করি।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

14 thoughts on “গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি ও মা লক্ষ্মীর পূজা ও পাঁচালি পাঠ আদিপর্ব

  1. শুভ শ্রীশ্রীলক্ষ্মীপূজার আগাম প্রীতি শুভেচ্ছা অভিনন্দন রইল। জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

  2. কত কিছুই না অজানা। পড়লাম ঠিকই তবে বুঝেছি কম। সময় কাল এবং চরিত্র আমার মতো মুসলিম ঘরের মানুষের একটু কম আয়ত্বেই আসার কথা। ধন্যবাদ মি. ভাণ্ডারী। :)

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

  3. শুভ শ্রীশ্রীলক্ষ্মীপূজার আগাম প্রীতি শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

  4. লক্ষ্মী করুণায় ঘরে ভরে রত্নধন,
    তব শ্রীচরণ মাগে ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ।

    অভিনন্দন কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয় কবিবর। শুভ লক্ষ্মীপূজার শুভেচ্ছা জানাই। স্বর্গের লক্ষ্মী ও মর্ত্যের লক্ষ্মী প্রকাশিত হয়েছে। পাঠের আমন্ত্রণ রইল। সাথে থাকুন, জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।