শুভ ভাইফোঁটা দিবসের কবিতা দীপাবলী সংকলন-১৪২৬

ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি চিরন্তন সম্প্রীতির উৎসব। এই উৎসবের নাম ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’। ভাই-বোনের ভালবাসার বন্ধন অনন্তকাল অটুট রাখার জন্য বংশপরম্পরায় এই বিশেষ উৎসব পালিত হয়। ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ও স্বর্গীয় ভালবাসার প্রতীক এই ভাইফোঁটা আমাদের মনে শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের এক চমকপ্রদ আবেশ সৃষ্টি করে।

পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ‘ভাইদুজ’ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষ দিন। আবার মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্নাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই বিজ’। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ‘ভাই টিকা’ নামে। সেখানে বিজয়া দশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল ‘যমদ্বিতীয়া’।
বোন চন্দন কাঠ জল দিয়ে ঘষে (কেউ কেউ দইও মিশ্রিত করেন চন্দন কাঠের সাথে), নিজের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে নিচের মন্ত্রটি পড়তে পড়তে তিনবার ফোঁটা দিয়ে দেয়। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে-

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর

এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়।

অনেক সময় এই ছড়াটি বিভিন্ন পরিবারের রীতিনীতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। অতঃপর, বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে (যদি বোন তার ভাইয়ের তুলনায় বড় হয় অন্যথায় বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে)। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে। ভাইও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে ভাইফোঁটা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। পশ্চিম ভারতের ভাইবিজ একটি বর্ণময় অনুষ্ঠান। সেখানে এই উপলক্ষে পারিবারিক সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়। মহারাষ্ট্রে মেয়েদের ভাইবিজ পালন অবশ্যকর্তব্য। এমনকি, যেসব মেয়েদের ভাই নেই, তাঁদেরও চন্দ্র দেবতাকে ভাই মনে করে ভাইবিজ পালন করতে হয়। এই রাজ্যে বাসুন্দি পুরী বা শ্রীখণ্ড পুরী নামে একটি বিশেষ খাবার ভাইবিজ অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করার রেওয়াজ আছে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিন (কালীপুজোর দু’দিন পরে) উদযাপিত হয়। মাঝে মধ্যে এটি শুক্লপক্ষের প্রথম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে। জেনে নেওয়া যাক ১৪২৬ সনের ভাইফোঁটার দিনক্ষণ (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে):
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
বাংলা তারিখ: ১১ কার্তিক ১৪২৬, মঙ্গলবার।
ইং তারিখ: ২৯/১০/২০১৯।
সময়: প্রতিপদ সকাল ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত, পরে দ্বিতীয়া রাত্রি ৩টে ৪৮ মিনিট পর্যন্ত।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
বাংলা তারিখ: ১১ কার্তিক ১৪২৬, মঙ্গলবার।
ইং তারিখ: ২৯/১০/২০১৯।
সময়: প্রতিপদ ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত, পরে দ্বিতীয়া (৩০/১০/২০১৯) সকাল ৬টা ১২ মিনিট পর্যন্ত।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা ও ই-বার্তা পত্রিকা
সংগ্রহ, সংযোজনা ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শুভ ভাইফোঁটা দিবসের কবিতা
দীপাবলী সংকলন-১৪২৬

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভাইফোঁটা আজি তাই মহাধূম পড়ে,
বর্ষেবর্ষে ভাইফোঁটা প্রতি ঘরে ঘরে।
নববস্ত্র অলঙ্কার নানা উপহার,
সুমিষ্টান্ন ফলমূল বিবিধ প্রকার।

জ্বলে দীপ শঙ্খ বাজে পূণ্য শুভক্ষণে,
ভায়ের কপালে ফোঁটা দেয় সযতনে।
চন্দনের ফোঁটা দেয় ভ্রাতার ললাটে,
সারাদিন ভাইফোঁটা হর্ষে দিন কাটে।

ভ্রাতা করে ভগিনীরে নব বস্ত্র দান,
দিনেদিনে ভ্রাতা পায় অর্থ যশ মান।
আয়ুবৃদ্ধি হয় শুভক্ষণে ফোঁটা দিলে,
গ্রহদোষ নষ্ট হয়, চিত্তে শান্তি মিলে।

ভাইবোনে গড়ে ওঠে স্নেহের বাঁধন,
ভাইফোঁটা কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।

=================================
ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার পবিত্রতম দিবসে সারা বিশ্বের পরমপূজ্যা সব দিদিদের জানাই ভক্তিপূর্ণ প্রণাম আর স্নেহের বোনেদের জন্য রইল আমার শুভাশীর্বাদ। সবাই ভালো থেকো। জয়গুরু!

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

18 thoughts on “শুভ ভাইফোঁটা দিবসের কবিতা দীপাবলী সংকলন-১৪২৬

  1. জ্বলে দীপ শঙ্খ বাজে পূণ্য শুভক্ষণে, ভায়ের কপালে ফোঁটা দেয় সযতনে।
    চন্দনের ফোঁটা দেয় ভ্রাতার ললাটে, সারাদিন ভাইফোঁটা হর্ষে দিন কাটে।

    অভিনন্দন মি. লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। ভাইফোঁটা দিবস আনন্দে কাটুক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      বিগত ভাইফোঁটা দিবসের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  2. ভাইফোঁটার রীতি এবং কৌশল আমার কাছে অসাধারণ লাগে। ভাইবোনে অদ্ভুত এক পবিত্র রিস্তা বন্ধন। মন্ত্রপাঠের সময় যে অন্তরের স্নিগ্ধতা হদয়ে জাগে কথায় বর্ণণা অসম্ভব।  

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      বিগত ভাইফোঁটা দিবসের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  3. বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়। আমার খুব ভালো লাগে কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      বিগত ভাইফোঁটা দিবসের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  4. ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
    যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
    যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
    আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      বিগত ভাইফোঁটা দিবসের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  5. ভ্রাতা করে ভগিনীরে নব বস্ত্র দান,
    দিনেদিনে ভ্রাতা পায় অর্থ যশ মান।
    আয়ুবৃদ্ধি হয় শুভক্ষণে ফোঁটা দিলে,
    গ্রহদোষ নষ্ট হয়, চিত্তে শান্তি মিলে।

    প্রণাম কবি দাদা ভাই। ভাইফোঁটা দিলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    1. আপনার দেওয়া ভাইফোঁটা গ্রহণ করলাম বোন। শুভাশীর্বাদ রইলো সবসময়।
      ডিজিটাল ভাইফোঁটাকে সমাজের কেউ স্বীকৃতি না দিলেও ডিজিটাল যুগে
      সুদৃঢ় হোক ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক। রক্তের সম্পর্ক না হলেও এই
      নিবিড় বন্ধন চির অটুট থাকুক এই শুভকামনা রইল।

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  6. নববস্ত্র অলঙ্কার নানা উপহার,
    সুমিষ্টান্ন ফলমূল বিবিধ প্রকার।

    জ্বলে দীপ শঙ্খ বাজে পূণ্য শুভক্ষণে,
    ভায়ের কপালে ফোঁটা দেয় সযতনে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও আবেশিত হলাম।
      নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  7. ভাইফোঁটা আমাদের মনে শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের এক চমকপ্রদ আবেশ।

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও আবেশিত হলাম।
      নতুন করে কবিতা লেখার প্রেরণা পেলাম।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  8. আয়ুবৃদ্ধি হয় শুভক্ষণে ফোঁটা দিলে,
    গ্রহদোষ নষ্ট হয়, চিত্তে শান্তি মিলে। 

     

    বেদ কিংবা পুরাণে এমন কোন কোথা কি উল্লেখ আছে যে কপালে ফোঁটা দিলে আয়ু বৃদ্ধি পায়? 

    1. ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ও স্বর্গীয় ভালবাসার প্রতীক এই ভাইফোঁটা আমাদের মনে শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের এক চমকপ্রদ আবেশ সৃষ্টি করে। ফলে মনের শান্তি পাওয়া যায়। সকলেই বিশ্বাস করেন এর দ্বারা আয়ুবৃদ্ধি হয়। গ্রহের প্রকোপ কম হয়।  আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও আবেশিত হলাম।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

  9. ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
    যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
    যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
    আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।

  10. ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ও স্বর্গীয় ভালবাসার প্রতীক এই ভাইফোঁটা আমাদের মনে শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের এক চমকপ্রদ আবেশ সৃষ্টি করে। ফলে মনের শান্তি পাওয়া যায়। সকলেই বিশ্বাস করেন এর দ্বারা আয়ুবৃদ্ধি হয়।
    গ্রহের প্রকোপ কম হয়।  আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও আবেশিত হলাম।
    সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।