বিশ্বত্রাস করোনা পৃথিবী জেলখানা যাত্রাদলের অবক্ষয় (ষষ্ঠ পর্ব)

বিশ্বত্রাস করোনা! পৃথিবী জেলখানা।
যাত্রাদলের অবক্ষয় (ষষ্ঠ পর্ব)

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দিকে দিকে চলছে লক ডাউন। বেশ ভালো বুকিং ছিল এই বছরের পালার। কিন্তু হঠাৎ করেই সব স্তব্ধ হয়ে গেছে। ভয়াল থাবা এসে সারা বিশ্বের উপর চেপে ধরেছে। করোনা, কি অসম্ভব তার সর্বগ্রাসী ছোবল মানুষের শরীরের উপর। যেটা নাকি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ও দুরত্ব তৈরি করে দিচ্ছে। কথাগুলো যেন একদমে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে গেলেন চিৎপুরের বিখ্যাত শিল্পী ও নির্দেশক অমিত কান্তি ঘোষ।

তিনি আরও বললেন যে, “কলকাতা ও মেদিনীপুর নিয়ে দেড় লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। আজ আমার মতো তাঁরাও এক নিগূঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত।“ এই প্রসঙ্গে জানাই তিনি যাত্রা শিল্পীদের সংগঠন যাত্রা প্রহরীর চেয়ারপারসনও বটে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, “লকডাউন উঠে গেলে যাত্রা প্রহরী একটা ফান্ড গঠনের ব্যাপারে চিন্তা করেছেন। যেটা নাকি তাঁদের অন্যান্য শিল্পী ও কলাকুশলীদের কিছু অংশেরও যদি সাহায্যে আসে।“

সুমহান এর ইতিহাস যেখানে নট্ট কোম্পানির মত শতাব্দী প্রাচীন দল ছিল শ্রদ্ধেয় মাখন লাল নট্টের মত প্রযোজক ছিলেন। আবার সেই সময় লোকনাট্য, শিল্পী তীর্থ,ভারতী অপেরা এদের মতো আরও ঐতিহ্যবাহী যাত্রা দল ছিল। আরও যেসব শিল্পের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা যায় অরুণ দাশগুপ্ত,বীনা দাশগুপ্ত, গুরুদাস নাড়া জ্যোৎস্না দত্ত, শান্তি গোপল, শিবদাস মুখার্জির মতন অসংখ্য গুণী শিল্পী যাদের নাম করতে গেলে তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাবে। আজকে সেই যাত্রা শিল্পে আচমকা অমানিশার অন্ধকার।

সুপরিচিত অভিনেতা খলনায়ক ও নির্দেশক রাজু বড়ুয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, “জানিনা এর শেষ কোথায়? পরপর শো এর বুকিং ছিল। কিন্তু সব শেষ করে দিল এই মারন রোগ। শেষ শো ছিল সুন্দরবন এর কাছে তার পরেই সব বন্ধ। জানিনা আবার কবে যাত্রার মঞ্চে পা দিতে পারব।“

গ্রাম শহরে দর্শকদের মনে ঝড় তোলা নায়িকা শ্রাবনী সরকারের গলায় ঝরে পড়ল বিষাদের সুর। বললেন, “গাছ থেকে একটা একটা করে ফুল মাটিতে ঝরে যাচ্ছে। এই অন্ধকার ময় সময় দাঁড়িয়ে দূর থেকে আরো দূরে চোখ রেখে দেখছি ক্ষীণ আলো চোখে পড়ে কিনা।“ জনপ্রিয় নায়ক দীপঙ্করের সেই একই আক্ষেপ। “অনেকগুলো অভিনয় বাতিল হয়ে গেছে জানিনা আবার কবে শো শুরু হবে।“

যাত্রা লক্ষী রুমা দাশগুপ্ত বললেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের যাত্রা শিল্পে একটা জোয়ার এসেছে। কিন্তু করোনার এই করাল ছায়া সব স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু আমরা আবার জয়ী হয়ে এগিয়ে যাব এই প্রত্যাশা করি।“

রুমাদি গভীর বেদনার সঙ্গে বলেন,”আমরা যাত্রা শিল্পীরা সব সময়ই প্রযোজকদের কথা চিন্তা করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি শিল্পী ও প্রযোজক একে অপরের পরিপূরক, সেই হিসেবে আজ আমাদের সঙ্গে তাঁরাও বড়ো একটা আর্থিক ধাক্কার সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। কথা বলতে বলতে তাঁর কন্ঠ যেন জড়িয়ে আসছে। সেই সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের কথা বলতে গিয়ে যারা তুলনামূলক ভাবে অত্যন্ত কম পারিশ্রমিকে কাজ করে।

তিনি আশাবাদী এই লকডাউন উঠে গেলে ঐ সব শিল্পীদের জন্য তহবিল গঠনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা। যাত্রা প্রহরী থেকে এবং তিনি তাঁর নিজস্ব স্বল্প ক্ষমতার মধ্যে ব্যাক্তিগত ভাবে যদি কিছু করতে পারেন। গভীর চিন্তায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো দুটো কথা ” বড়ই অন্ধকার সময়”।

শিল্পীর থেকে আমিও দুটো লাইন ধার নিয়ে বলি – “অন্ধকারের প্রতিদ্বন্দ্বী, আকাশের ও আছে দুরভীসন্ধী মাঝ রাত্তিরে চাঁদের কাস্তে ধারালো হচ্ছে আস্তে আস্ত আস্তে আস্তে”।
তথ্যসূত্র: খাস খবর: জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

4 thoughts on “বিশ্বত্রাস করোনা পৃথিবী জেলখানা যাত্রাদলের অবক্ষয় (ষষ্ঠ পর্ব)

    1. মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভেচ্ছা রইলো।
      জয়গুরু!

  1. বাঙ্গালী সংস্কৃতির একদা যে সুসময় ছিলো বিশেষ করে লোকজ যাত্রা শিল্প এবং এর ভবিষ্যত হালহকিকত …. মোটামুটি একটি ভালো একটি ধারণা নিতে পারছি আপনার পোস্টে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।