বিশ্বত্রাস করোনা পৃথিবী জেলখানা যাত্রাদলের অবক্ষয় (সপ্তম পর্ব)

বিশ্বত্রাস করোনা! পৃথিবী জেলখানা।
যাত্রাদলের অবক্ষয় (সপ্তম পর্ব)

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সাজ ঘরে কাজ করে। সারা মাস কাজ করে ঘরে আসে ৬-৭ হাজার। তাও শুধু সিজনেই। বাকি সময়টা কারও ক্ষেতে খেসারি শাক তুলে রোজগার করে। বাড়িতে ৬ টা পেট চলে ওই রোজগারে। কী করে চলছে ওর কে জানে!’ বলছিলেন কলকাতার যাত্রা পাড়ার অন্যতম পরিচিত মুখ, টেলি-শিল্পী পিয়ালি বসু।

ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ, এই সময়টাই যাত্রাপাড়ার সোনার সময়। গ্রাম বাংলা জুড়ে প্রচুর শো। কিন্তু ২১ মার্চের পর থেকে লকডাউনের জেরে সেই পাড়া এক্কেবারে শুনশান। ১০০-র শো বাতিল হয়ে গেছে এক-একটি দলের। করোনা পরিস্থিতিতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর শর্তে আগামী দিনেও অন্ধকার কাটার আশা দেখছে না বাংলার এই সনাতন লোকশিল্প গোষ্ঠী। সামনেই রথযাত্রা। ওইদিনই ধুমধাম করে চিৎপুরে শুরু হয় আগামী সিজনের বুকিং। খবরের কাগজে পাতায় পাতায় থাকে নতুন পালার বিজ্ঞাপন। এবার সে-সব কষ্টকল্পনা।

”এ বছর এখনও দল গঠনই হয়নি অনেকের। আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন প্রযোজকরাও। ফলে বড় শিল্পীদের সঙ্গ চুক্তি হয়নি এখনও। সেই সঙ্গে আশঙ্কা, অগ্রিম দিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলে, তারপর যদি যাত্রার বুকিং না হয়? সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রেখে কি পালা করা সম্ভব, রিহার্সাল সম্ভব? নাকি দর্শক সমাবেশ সম্ভব? খুব চিন্তায় আছি জানেন!”, বলছিলেন যাত্রা অ্যাকাডেমির গভর্নিং বডির সদস্য কনক ভট্টাচার্য।

শুধুমাত্র তাঁর দলেরই সবমিলিয়ে ২৫-৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে লকডাউনের ফলে। ধুঁকছেন যাত্রার দৈনিক রোজগার করা শিল্পীরা। তাঁদের যৎসামান্ন রোজগারের উপর ভরসা করে থাকেন পরিবারের অনেকে। মাঝে মাঝে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে নাচ করার ডাক মেলে। করোনা পরিস্থিতিতে বিয়েবাড়ির জমায়েতও বন্ধ। যাত্রাশিল্পী থেকে ম্যানেজার, সাজঘরের লোক থেকে ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি, এদের চলবে কী করে, চিন্তায় যাত্রাসমাজ।

যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেন। তাঁদের রোজগারও বন্ধ লকডাউন শুরুর পর থেকে।
যাত্রার প্রয়োজক কনক ভট্টাচার্য জানালেন, ‘লকডাউন পরবর্তী অধ্যায়ে ভাবছি, যাত্রা ওয়েলফেয়ার বডি কমিটি তৈরি করে আমরা নিজেরাই একটা ফান্ড তৈরি করব। সেখান থেকে দুস্থ যাত্রাশিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আশা রাখছি রাজ্য সরকার আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। ৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বাঁচাতে সবসময়ের মতোই পাশে থাকবে বর্তমান সরকার, আশা রাখছি। আবেদন জানাব যাত্রা অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের কাছে।’

‘এক-একটি দলে ৪০-৫০ জন যুক্ত থাকেন, তার সঙ্গে তাদের পরিবারের লোক। এতগুলো পেট চলে যাত্রা করে। তাই আশা রাখব, যদি আগামী সিজনে যাত্রার জন্য আরও বড় জায়গা নেওয়া হয়! তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজটা অন্তত হবে।’ আশা রাখছেন যাত্রা পাড়ার স্বনামধন্য শিল্পী অনল চক্রবর্তী।

‘যাত্রাপাড়ায় বহু দরিদ্র শিল্পী আছেন, কর্মী আছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তবে সেটা তো কোনও সমাধান নয়, শুধু পাশে থাকা মাত্র। তাই সরকারের দিকেই তাকিয়ে আমরা।’, আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন যাত্রা শিল্পী কাকলি চৌধুরি।

করোনা নিয়েই এখন চলতে হবে আগামী বেশ কিছুদিন, মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু কী হবে এই পেশার শ্রমিকদের, শিল্পীদের, তাদের পরিবারের, উত্তর দেবে সময়।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

1 thought on “বিশ্বত্রাস করোনা পৃথিবী জেলখানা যাত্রাদলের অবক্ষয় (সপ্তম পর্ব)

  1. খণ্ড খণ্ড করে এই নিবন্ধের প্রতিটি পর্ব পড়ে চলেছি। শুভেচ্ছা কবি মি. ভাণ্ডারী।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।