ভাদু গানের আসর আমার গীতিকবিতা (পঞ্চম পর্ব)

ভাদু পরবের ও মূল সম্পদ এই ভাদু গানগুলো। এই ভাদুর গানগুলো বেশিরভাগই প্রচলিত। একসময় এক মাসব্যাপী ভাদু গানের আসর বসত কাশীপুর রাজবাড়িতে। এই গানগুলোর মধ্যে বাড়ির মেয়েদের সাংসারিক, সামাজিক, গার্হস্থ্য জীবনের না সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-নিরাশার কথা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।

ভাদু গানের আসর আমার গীতিকবিতা (পঞ্চম পর্ব)
কথা – আঞ্চলিক সুর – অপ্রচলিত
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভাদর মাসে আনব্য ভাদু, রাখব্য কুলির মাঝে বড়তলাতে,
চিড়া গুড় আর ফুল বাতাসা দিব মাটির মালসা ও হলাতে।

দোমাহানির ধানখ্যাতে
তিন পাংখা জাহাজ নেম্যেছ্যা………
আমার ভাদু দ্যাশে যাবেক, তাই তো ভাদু সেজেছ্যা।

ও ভাদু মা ও ভাদু মা তুমি অ্যাত্তো দিন ছিলে কুথায়,
বিদ্যাশে যেয়ে ক্যামন ছিলে শুন্যা জীবন যায় জুড়ায়।

দোমাহানির ধানখ্যাতে
তিন পাংখা জাহাজ নেম্যেছ্যা………
আমার ভাদু দ্যাশে যাবেক, তাই তো ভাদু সেজেছ্যা।

বাড়ির নামু লারকেল গাছটি কত লারকেল ধরেছ্যা,
বিদ্যাশ থিকা আসছ্যা ভাদু, লারকেল লাড়ু রাখিছ্যা।

দোমাহানির ধানখ্যাতে
তিন পাংখা জাহাজ নেম্যেছ্যা………
আমার ভাদু দ্যাশে যাবেক, তাই তো ভাদু সেজেছ্যা।

জল খেতে দে ভাদুকে লারকেল লাড়ু ও বাতাসা,
রাখা আছে কুলুঙ্গিতে মুড়ি -মুড়কি আর খই ভাজা।

দোমাহানির ধানখ্যাতে
তিন পাংখা জাহাজ নেম্যেছ্যা………
আমার ভাদু দ্যাশে যাবেক, তাই তো ভাদু সেজেছ্যা।

বিদ্যাশ থিকা অ্যালে ভাদু কি আনিছ্য আমার লেগে,
তুমার তরে ঘুম আসে না তাই থাকি রাইত জেগে।

দোমাহানির ধানখ্যাতে
তিন পাংখা জাহাজ নেম্যেছ্যা………
আমার ভাদু দ্যাশে যাবেক, তাই তো ভাদু সেজেছ্যা।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

6 thoughts on “ভাদু গানের আসর আমার গীতিকবিতা (পঞ্চম পর্ব)

  1. 'ভাদর মাসে আনব্য ভাদু, রাখব্য কুলির মাঝে বড়তলাতে,
    চিড়া গুড় আর ফুল বাতাসা দিব মাটির মালসা ও হলাতে।'

    অজানা বিষয় গুলো আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারছি। বেশ। :)

  2. শব্দ নীড়ে ভাদু গানের আসর আমার গীতিকবিতা ভালোই জমেছে।যতই পড়ছি, ততই ভালো লাগছে। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।        

    1. ত্রিশ দিন ধরে ভাদুকে পুজো করার পর সংক্রান্তিতে ভাদুকে বিদায়ের দিন। তাই পাড়ায় পাড়ায় চলে নিশি জাগরণ। ভাদুর উপাসক মেয়েদের কাছে ভাদু হয়ে ওঠে কখনও মা, কখনও মেয়ে আবার কখনও দেবী। তাই গানের মাধ্যমে তাদের আদরের ভাদুর কাছে নিবেদন করে তাদের সুখ-দুঃখ,অভাব-অভিযোগ।

      অবিচ্ছিন্ন ভাবে সারারাত ধরে চলতে থাকে ভাদু গানের ফোয়ারা।রাত কেটে হয় ভোর,ভোর থেকে সকাল এগিয়ে আসে ভাদুকে বিদায়ের মুহূর্ত।

       

      মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। সাথে থাকবেন।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।