ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ও ভাইফোঁটা (প্রচলিত গল্প ও লোককথা)

ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ও ভাইফোঁটা উত্সব
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

2

ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি উৎসব। এই উৎসবের আর এক নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া । কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব।

4

হিন্দুদের সামাজিক উৎসব হল ভাইফোঁটা। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের ভ্রাতৃদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। গোটা দেশ জুড়েই পালিত হয় এই উৎসব। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব বিভিন্ন নামে পরিচিত। হিন্দিভাষীদের কাছে ‘ভাইদুজ’, বাঙালিদের ‘ভাইফোঁটা’, মহারাষ্ট্রে ‘ভৌ বিজ’ , দক্ষিণ ভারতে ‘যমদ্বিতীয়া’ আবার নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব ‘ভাইটিকা’ নামে পরিচিত।

এটি ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের উৎসব। সারাবছর ধরে এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ভাই-বোনেরা। পুরো বছরে হয়ে আসা রাগ-অভিমান, দুঃখ-কষ্ট, ঝগড়া, খুনসুটি, সেই ভাইয়ের মঙ্গল কামনার জন্য কপালে ফোঁটা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে বোনেরা। পশ্চিমবঙ্গে ভাইফোঁটা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এই উত্সব পালিত হয়।

1

ভাইফোঁটা উদযাপন করার পদ্ধতি ভাইফোঁটার দিন বোন বা দিদিরা তাদের দাদা বা ভাইদের কপালে কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে দই বা চন্দনের ফোঁটা দেয় এবং ছড়া কেটে বলে – “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দিল যমকে ফোঁটা, আমি দিলাম আমার ভাইকে ফোঁটা।” এই শ্লোক বাক্যের মাধ্যমে বোনেরা তার ভাইদের কপালে তিনবার ফোঁটা দেয়। এরপর বোন তার ভাইয়ের মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ বাজানো এবং উলুধ্বনি দেওয়া হয়। এরপর দিদি তার ভাইকে আশীর্বাদ করে এবং বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে। এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাই-বোনের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান হয়। তবে ভাইফোঁটার নিয়ম পরিবারের রীতিনীতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

3

ভাইফোঁটার পৌরাণিক কাহিনী এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। আশীর্বাদ স্বরূপ যম তার বোনকে বরদান করে বলেছিলেন, বোনের কাছ থেকে যারাই ফোঁটা নেবে তাদের নরক যাত্রা থেকে মুক্তি লাভ হবে। ভাইফোঁটার আরেকটি কাহিনী হল, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

1 thought on “ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ও ভাইফোঁটা (প্রচলিত গল্প ও লোককথা)

  1. জানার পরিধি অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিল আপনার এই লিখাটি।
    অভিনন্দন কবি মি. ভাণ্ডারী। ভালো থাকুন প্রতিটি উৎসবে। শুভেচ্ছা রইলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।