হৃদয় পোড়া দগদগে ক্ষত

টিউশনিটা ছেড়েই দিতে হলো। নইলে যে ও কথার ভীড়ের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে সুর প্রতীকীর সাঁজে নিজেকে সাজিয়ে ফেলতাম। আর নিজের তৃপ্ত কিছু অশোভন ইচ্ছেগুলো মনের নেশায় মাখিয়ে ছোবল দিতেও কুণ্ঠিত বোধ করতাম না। কারণ, অল্প বয়সী মেয়েদের সম্মতি পেতে কাঠখড় পোহাতে হয়না। তারা নিজে নিজেই জ্বলে অন্যকে উত্তপ্ত করে।

সে প্রায়শই আমার বাঁশির সুরের প্রলোভনে লোভী লোভী প্রসংশা করতো। কখনো কখনো সে বাঁশির সুর রেকর্ড করে আমাকে শোনাতো। আবার কখনো কখনো গুনগুন করে ঠোঁটের ডগায় কিলবিল করে ভাসিয়ে নিতো। যাতে করে তার ঠোঁটের রসের রসাতলে রসায়নে রসায়িত হই। আবার কখনো কখনো হালকা বেগুনি রঙের টিশার্ট পরে, চুলগুলো এলোমেলো অগোছালো করে গালে হাত দিয়ে একপলকে চেয়ে থাকতো। কিছু বলতে গেলেই স্যার শব্দটি মাথার মগজে পেরেক ঠোকাতো।

সে প্রায়শই কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দিতো। চোখে চোখে চোখাচোখি আঁকিবুঁকি হতেই ওড়নার কোণা ধরে কামড়াতে কামড়াতে মুচকি হাসি হেসে চলে যেতো। যাবার সময় বলতো আপনি খুবই স্বচ্ছ ও সুন্দর দেখতে। সত্যি! রোজরোজ এই কয়েক ফোঁটা অক্ষরের মিলনে, কিছু অনুনয় বিনয় নম্রতায় আমি নিজেও প্রেম-পথের পৃষ্ঠার পাদদেশে প্রিয়তমেষুর সন্ধানে পথিক হয়েছিলাম।

শেষবার বিদায় নেওয়ার সময়। দুচোখ বেঁয়ে বেঁয়ে অশ্রু ফোঁটা পড়লো। বুকের হাড্ডি-গুড্ডির খাঁচার অন্তরালে সারবস্তু আবিষ্কার নামক কলিজা যন্ত্রটি ধুকধুক করতে লাগলো। তখন বুঝেছিলাম, আমিও প্রেমে পড়েছি। প্রেমে পড়ার আতরের আত্মারা সুগন্ধি মেখে আমাকেও সুভাষিত করেছিলো।
শেষবার সবেমাত্র দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে চলে আসবো ঠিক তখনই পিছন থেকে প্রিয়মুখের প্রিয়জন সাপটে ধরে ফেলে। আমি বৈদ্যুতিক খুঁটির মতো দাঁড়িয়েছিলাম। এটাই যেন আমার আজন্ম পাপ। এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত কিংবা দায়ভার আমার শরীরের নয়, হৃৎপিণ্ডের।

বেশ কয়েকমাস ধরে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল আসে, দুঃখী দুঃখী হৃদয় কাঁপানো মেসেজ আসে। যে মেসেজে আমি কান্নার আওয়াজ পাই, হাহাকার রোগের গন্ধ পাই। ফিরে যাওয়ার আকুতি অনুমতি মিনতি খুঁজে পাই। শুধু আমার কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর মেলে না। হিমুরা কয়বার প্রেমে পড়ে। একবার, দুবার নাকি…।

ছবিঃ সংগৃহীত

মুহাম্মাদ মাসুদ সম্পর্কে

মুহাম্মাদ মাসুদ (মোঃ মাসুদ রানা)। ১৯৯৫ সালের ১৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার চৌবাড়ীয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মোঃ লাল মিয়া, মাতা মোছাঃ জাহানারা খাতুন। শিক্ষা জীবনঃ চৌবাড়ীয়া টোকের পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে স্থল পাকড়াশী ইন্সটিটিউশনে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে ৮ম শ্রেণীতে সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হয় খামারগ্রাম মহাবিদ্যালয়ে। ২০১২ সালে ব্যাবসায় শিক্ষা শাখা থেকে পাশ এইচএসসি করেন এবং ২০১৬ সালে মানবিক শাখায় বেলকুচি সরকারি কলেজ থেকে বিএ (ডিগ্রী পাশ কোর্সে) করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ যৌথভাবে মুক্তচিন্তা (২০১৮) ও নীলপদ্ম (২০১৯ বইমেলা) দন্ত্য 'স' প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায়। গল্পগ্রন্থঃ হুমায়ূন হিমু (বইমেলা - ২০২০)।

16 thoughts on “হৃদয় পোড়া দগদগে ক্ষত

  1. আজকের পরিবেশনাটি বেশ স্বতন্ত্র ঘরানার বলে মনে হলো। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন লিখা নিশ্চয়ই আপনার পাঠকদের হৃদয় মন জয় করবে ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ মি. নৃ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. ধন্যবাদ প্রিয় কবিবর। আমিও চাই পাঠক তৈরি হোক।         

  2. হিমু ভাবাবেগ পড়লাম। বেশ গোছানো আপনার লেখা। আপনাকে ধন্যবাদ। :)

  3. ধীরে ধীরে আপনার লেখা ভালো লেগে যাচ্ছে ভাই। এগিয়ে চলুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ প্রিয়, ভালো লাগলেই সার্থকতা। উৎসাহ পেলাম।        

  4. শুধু আমার কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর মেলে না। হিমুরা কয়বার প্রেমে পড়ে।

     

    * শুভ কামনা সবসময়…. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. সেরকম না, সবেমাত্র লিখতে শুরু করেছি। দোয়া করবেন।         

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।