মুহাম্মাদ মাসুদ এর সকল পোস্ট

মুহাম্মাদ মাসুদ সম্পর্কে

মুহাম্মাদ মাসুদ (মোঃ মাসুদ রানা)। ১৯৯৫ সালের ১৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার চৌবাড়ীয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মোঃ লাল মিয়া, মাতা মোছাঃ জাহানারা খাতুন। শিক্ষা জীবনঃ চৌবাড়ীয়া টোকের পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে স্থল পাকড়াশী ইন্সটিটিউশনে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে ৮ম শ্রেণীতে সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হয় খামারগ্রাম মহাবিদ্যালয়ে। ২০১২ সালে ব্যাবসায় শিক্ষা শাখা থেকে পাশ এইচএসসি করেন এবং ২০১৬ সালে মানবিক শাখায় বেলকুচি সরকারি কলেজ থেকে বিএ (ডিগ্রী পাশ কোর্সে) করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ যৌথভাবে মুক্তচিন্তা (২০১৮) ও নীলপদ্ম (২০১৯ বইমেলা) দন্ত্য 'স' প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায়। গল্পগ্রন্থঃ হুমায়ূন হিমু (বইমেলা - ২০২০)।

গল্পের পার্থক্য নেই

রাত গাছে হরেক রকমের চাঁন
হরেক রকমের তাঁরা
একটার পর একটা দাঁড়িয়ে
চেকপোস্টের সামনে ঝোপঝাড়ের কাছে!

অন্ধকার দড়িতে হাঁটে ঘেউঘেউ কুকুর
দাম কষাকষি হয় চাঁনের
কুকুর খাবার পায়
কচমচ করে চিবিয়ে খায়!

দুটি কুকুর মজা পায়
একজন শরীরের অন্যজন অর্থ-দেহের
পাপীদের পাপ ছুয়ে দেখে না
পাপীরা মরে না জীবিত থাকে!

অভাব

আলোর ঘর নেই-
উঠোনের নেই বারান্দার ছাউনি
বৃষ্টির নিজস্ব শিহরণের অভাব!
বালিশের মুখোশ উন্মুক্ত
নিমগাছ নিজে থেকেই ঔষধ
আর আমি! পরিত্যক্ত প্রেমিক।

জোৎস্নার ছায়া মুকুট নেই-
চাঁদের নিবুনিবু আলোর সংকট
ঝিঁঝিঁপোকা সুরে ডাকে না
নৌকার পালে বাতাসের আঁচড় নেই
পাতিহাঁসের সংসার পানিতে ভাসমান
আর আমার! ঘরে গৃহবধূর প্রতিকৃতি নেই।

পথ ও পাপী

মেঘেদের বাড়ি নেই
অন্যের উঠানে বসবাস।
ছায়াদেহের মৃত্যু নেই
অন্যের মৃত্যুতে হাসফাস।

প্রেমে দুটি অক্ষর আছে
শরীরে মাংস নেই।
প্রেমিকার রেঁধে খাওয়ার দেহ আছে
বিবাহ বাসনা নেই।

রূপমাধুরী

প্রিয় প্রিয়তমেষু
চাঁদমুখ চাহনি
এমন রূপের আস্ফালে জ্বলেপুড়ে দেহকোষ।
প্রিয় সুজনেষু
এলোকেশ আবরণী
এমন কেশবহুল আলাপে নেই দোষ।

প্রিয় পাখি
আকাশস্পর্শী আঁখি
এমন আকাশে উড়াই নাটাই ঘুড়ি।
প্রিয় সুখী
জোৎস্না মাখি
রূপের হাসিতে ঘুড়ি হয়ে উড়ি।

প্রিয় রূপবতী
কাজলের দীঘি
এমন কাজলের টিপে কৃষ্ণবর্ণ সাজি।
প্রিয় মায়াবতী
ঠোঁটের সঙ্গী
এমন ঠোঁটের নীলাভ উষ্ণতা পুঁজি।

প্রিয় স্নেহার্থী
ঢেঁকিঘরের পাত্রী
এমন নাকের ঘোমটা স্ব-চোখে দেখি।
প্রিয় সারথি
স্বপক্ষীয় যাত্রী
এমন শিশির সৌন্দর্য কুলোয় রাখি।

আত্মার মাগফেরাত

আত্মার মাগফেরাত

মামা দুইডা ট্যাকা দেন। মামা দুইডা ট্যাকা দেন। এভাবেই বারবার বলে বলে পিছু পিছু ঘুরছে ছেলেটি। তখন আমি ওভারব্রিজ সিঁড়ির এক কোণে কোণঠাসা হয়ে বসে আছি। আর কান্ডকারখানাগ দেখছি। শেষ পর্যন্ত…।
লোকটি (যাকে মামা বলে সম্মোধন করলো) পাশের দোকান থেকে একটি স্পীড ড্রিংকস, দুটো পটেটো ক্র্যাকার্স, একটি মিঃ টুইস্ট ও একটি পানির বোতল কিনে ব্যাগের ভিতর রাখলো। তবে হাতে রাখা স্পীড ড্রিংক্সের বোতলটি খুলে পরক্ষণেই পান করতে শুরু করলেন। ততক্ষণ অবধি ছেলেটি লোকটির পিছনে পিছনে রয়েছে। আর বলছে – মামা দুইডা ট্যাকা দেন। মামা দুইডা ট্যাকা দেন।
হাত বাড়িয়ে চাইলেও কোন ফায়দা হচ্ছিল না। লোকটি বারবার ছেলেটিকে বলছিলো – টাকা হবে না। চলে যা। তবুও ছেলেটি কিছুতেই লোকটির পিছু ছাড়ছিলো না। লোকটি যেখানেই যাচ্ছিলো সেখানেই…।
আমি নিজেও ততক্ষণে উঠে তাদের পিছনে পিছনে হাঁটছি। আর দেখতে চেষ্টা করছি কি ঘটনা ঘটে?
স্পীডের বোতলটি ফেলে দিতেই ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে বোতলটি বারবার ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে খেতে চেষ্টা করছিলো। কিন্তু ফাঁকা বোতল থেকে কি আর…।
তারপর আবার ছেলেটি হাত বাড়িয়ে সামনে ঘুরাঘুরি করছিলো। কিন্তু তখনও লোকটির মন গলেনি দুটাকা দিতে। লোকটি ছেলেটিকে বললো, যাবি। নাকি মাইর খাবি।
ছেলেটির মুখভার। ফিরে আসতেই মুচকি হাসি হেসে আমার দিকে হাত বাড়ালো। পকেটে একটি পাঁচ টাকার কয়েন ছিলো। ছেলেটির হাতে দিতেই মুচকি হেসে দৌড়ে চলে গেল।
আমি তখনও লোকটির পিছনে। দেখলাম লোকটি ১২ টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে হাঁকিয়ে টানছে।
হতভম্ব হয়ে গেলাম। গাড়ি এক্সিডেন্টে জীবন যেমন থমকে যায় তেমনি। রেলস্টেশন/এয়ারপোর্টের দোকানগুলো থেকে অনেকেই নিদিষ্ট মূল্যের চেয়ে তিন টাকা বেশি দিয়ে ড্রিংকস, দুই টাকা বেশি দিয়ে চিপস আর চার টাকা বেশি দিয়ে সিগারেট কিনে টানতে পারে। কিন্তু পকেট থেকে দুই টাকা দিয়ে অবুঝ ছেলের চোখ ভরাতে পারে না। বৃদ্ধ বয়সী দাদি – ঠাকুমার মুখে হাসি ফুটাতে পারে না।

তৃপ্তি অতৃপ্তির গল্প

‘ভাই শুধু টাকা জমিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকে রাখে, ইন্সুইরেন্স করছে, ডিপিএস আরও কতকিছু।’
‘না রেখে উপায় নেই। ছেলে সন্তান হয়েছে। কিছু না রেখে পিতাকে গালি দিয়ে বলবে আমাদের কি করেছো?’
‘আমি ভাই কিছুই রাখবো না। আল্লাহ যা রাখে কপালে।’
‘শুনুন, আমাদের বাপমায়ের সামর্থ্য ছিলো কিছু দেওয়ার। এমনকি আমাদের সময়ে আমরা স্কুলে গিয়েছি কিনা তারও কোন খোঁজখবর নিতো না। আর এখন…।’
‘হুম, এটা একদম ঠিক কথা বলেছেন। এখনকার ছেলেমেয়েরা বলে তোমার বাবার কিছু ছিলো না বলে তোমাকে কিছু দেয়নি। কিন্তু আমার বাবা! আমার বাবা সরকারি চাকরি করে।’
‘তাহলে ভেবে দেখুন। টাকা না জমিয়ে কি করবো? দিনশেষে সন্ধ্যা ঠিকই নামে।’
‘হুম ভাই। এখন থেকে আপনার মতো…!’
‘আরে! উঠে যাচ্ছেন কোথায়? বসুন। একটা গল্প বলি।’
‘আচ্ছা, বলুন।’
আমেরিকার কোন এক বিখ্যাত হোটেলে বিল গেটসের মেয়ে খাবার খেতে গিয়েছে। অবশ্য সে হোটেলের ওয়েটার থেকে শুরু করে অনেকেই তাকে চেনেন। এবং তাকে নিয়ে বলাবলি শুরু করলো যে এই মেয়েটিই হলো পৃথিবীর একমাত্র ধনীর মেয়ে।
খাবার দেওয়া হলো। খাবার খেয়ে খাবারের মূল্যসহ ৫০০ ডলার ওয়েটারকে বকসিস দিয়ে বের হয়ে গেলো।
ঠিকই একই হোটেলে বেশকিছু দিন পর বিল গেটস নিজেও খাবার খেতে হাজির হলো। এবং যথারীতি সবাই বলাবলি শুরু করলো এই ব্যক্তিই পৃথিবীর এক নাম্বার ধনী। যার কোন কিছুর অভাব নেই।
খাবার দেওয়া হলো। খাবার খেয়ে খাবারের মূল্যসহ… ডলার ওয়েটারকে বকসিস দিয়ে বসে মোবাইল টিপতে শুরু করলো।
ওয়েটার খাম থেকে মূল্যসহ বকসিস বের করে অবাক /তাজ্জব হয়ে গেলো। এবং কিছু প্রশ্ন এসে তার মনের মন্দিরে ভিড় করলো।
অবশেষে বুক অবধি সাহস নিয়ে বিল গেটসের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে রইলো। বিল গেটস জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু বলবেন কি?’
ওয়েটার বলল, ‘জ্বি স্যার। একটা প্রশ্ন ছিলো।’
বিল গেটস, ‘ঠিক আছে। বলুন।’
ওয়েটার, ‘স্যার, কিছুদিন আগে আপনার মেয়ে এসেছিলো এখানে। এবং খাবার খেয়ে খুশি হয়ে আমাকে ৫০০ ডলার বকসিস দিয়ে গেছেন। অথচ, আপনি পৃথিবীর ১ নাম্বার ধনী হয়েও আমাকে মাত্র ৫ ডলার বকসিস দিলেন।’
বিল গেটস, ‘আপনার এখানে যে এসেছিলো তার বাবাকে চেনেন? তার বাবা হলো পৃথিবীর ১ নাম্বার ধনাঢ্য ব্যক্তি। এজন্যই সে আপনাকে ৫০০ ডলার দিয়েছে। আর আজকে যে এসেছে তাকে চেনেন? তার বাবা ছিলো দিনমজুর। সে আপনাকে ৫ ডলার বকসিস দিয়েছে এটা আপনার সৌভাগ্য।’

হুমায়ূন হিমু

পেছনের গল্পঃ সর্বপ্রথম ২০১২ সালে একটি কবিতা লিখেছিলাম। প্রথম কবিতাটি খুব বেশি ভালো ছিলো বলে আমার মনে হয় না। তবুও কেন যেন সেই ভুলে ভরা কবিতাটি ‘মুসফিকা স্মৃতি পাঠাগার’ আয়োজিত মেঠোপথ ম্যাগাজিনে প্রকাশ পায়। তখন অবশ্য প্রকাশ পাওয়ার আনন্দ কেমন হয় সে বিষয়েও বোধগম্য ছিলো না।
২০১২ সালের পর থেকে উপন্যাস জগতে ঢুঁ মা-রা। তখন থেকেই উপন্যাস, গল্পের বইয়ের প্রতি আলাদা একটা টান, সম্পর্ক এসে মনের অলিগলির চিপায় চাপায় বীজ বুনতে শুরু করে।
শুরু থেকেই হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাস দেহ জগতের ভিটেমাটিতে বসবাস করতে শুরু করে। যতই পড়তে থাকি ততই প্রেমে পড়ে যায়। আসলে, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখায় আলাদা একটি আত্মা আছে। যে আত্মার পিঠে ভর করে নিমিষেই উপন্যাসের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব।
২০১৭ সালে কর্মজীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর সাথে সাথে কবিতা, অণুগল্প, গল্প লিখতে শুরু করি। দুই একটি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ম্যাগাজিনসহ পত্রিকার পাতায়ও জায়গা করে নেয়।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখায় ভক্ত এবং আমার লেখা প্রকাশ পাওয়ার আনন্দে উৎসাহ পাই। এবং বারবার মনে হতো, ইস্! আমার নামে যদি একটি বই থাকতো।
অবশেষে ২০১৯ সালের শেষের দিকে বই প্রকাশের উদ্যোগটা নিজে থেকেই নিয়েই ফেলি। যেহেতু আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের চরম ভক্ত। সেহেতু তাঁর রচিত, জনপ্রিয় চরিত্র ‘হিমু’ নামটি নিয়েই গল্প লিখতে শুরু করা।
তারপর…। অবশেষে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে “হুমায়ূন হিমু” গল্পগ্রন্থ আমার স্বনামে।

বইয়ের গল্পঃ প্রত্যেকটি মানুষের মনের চিলেকোঠায় লুকানো কিছু জানা অজানা গল্প থাকে। সে গল্পে নায়ক থাকে নায়িকা থাকে। থাকে কিছু হৃদয় পোড়া আর্তনাদ কিংবা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার গপ্পো।
আবার প্রত্যেকটি মানুষের মন পাড়ায় চলনবিলে কিছু চরিত্র থাকে। যাকে ভেবে ভেবে মিষ্টি মিষ্টি হেসে দিনরাত পার করা যায়। আবার ভেবে ভেবে ক্লান্ত পথিকের বেশে চোখ বেয়ে বেয়ে অশ্রু ভ্রমর ভিজিয়ে দিয়ে যায়। তবুও মানুষ গল্প আর চরিত্রের দীর্ঘশ্বাসে দীর্ঘকাল রাজপুত্রের মতো বাঁচতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি নিজেও ‘হিমু’ নামের সাথে যুক্ত হয়ে বাঁচতে চাই।

হুমায়ূন হিমু
ধরনঃ গল্পগ্রন্থ
লেখকঃ নৃ মাসুদ রানা
প্রচ্ছদঃ নবী হোসেন
প্রকাশনীঃ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি
স্টল নং – ৫৮৭
একুশে বইমেলা ২০২০।

আশাকরি বইটি সকলেই সংগ্রহ করবেন।

নুপুরের বিছানা

হাউমাউ করে কান্নার শব্দ কানে এসে ভিড় করলো। ততক্ষণে কলিজা শুকিয়ে তেঁতুল পাতা হয়ে গেছে। যার চির চির শব্দ বুকের মধ্যিখানে ধুকপুক ধুকপুক ঢোলের কম্বিনেশনে আহাজারি পায়চারি করছে।

বেশকিছু দূরে কেউ একজন কথা বলছে। মুখটা মিষ্টিমুখ, মিষ্টি হাসিতে ভরা। যেন নিয়ন আলোর বাতির ঝলকানি চোখেমুখে লেগে রঙিন হয়ে গেছে। আকাশে ফানুস উৎসব আয়োজনের মতো। যেখানে কোন ভেদাভেদ নেই।

– হাসপাতালের একই গেইট দিয়ে মানুষ মরে লাশ হয়ে বের হচ্ছে; আবার অন্যদিকে মিষ্টির প্যাকেটও ঢুকছে।
– কেউ গোরস্তানের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে; আবার কেউ পৃথিবীর আমন্ত্রণে দাওয়াত পাচ্ছে।

– কি অদ্ভুত! তাই না?

ছবিঃ সংগৃহীত

কমলা রঙের রোদ

লম্বা চাদর মুড়িয়ে ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন বাতির আলোয় সিগারেটের বিবর্ণ ধোঁয়ার জালে ফেঁসে উশখুশ রূপে বসে আছে। উসকোখুসকো চুল দাঁড়ি, হাতে রংবেরঙের ব্রেসলেট, ময়লা জরাজীর্ণ জীর্ণশীর্ণ জিন্স প্যান্ট ফতুয়ায় চেনার উপায় নেই। বিদঘুটে অবস্থা।
কি রে! কি হয়েছে তোর? বিকেল থেকে কোন খোঁজখবর নেই। হাঁড়িতেও দেখলাম ভাত রয়েছে।
– আর খোঁজখবর। খোঁজখবর দিয়ে কি হবে?
আবার ব্রেকআপ হলো নাকি?
– সে তো রোজ সন্ধ্যায় সিগারেটের সাথে হচ্ছে। প্রতি সন্ধ্যায় ভাবি আজ থেকেই…।
হুমম, বুঝেছি। ঝগড়া হয়েছে। আমি দেহুড়ীর সাথে কথা বলবো।
– কথা বলে কোন লাভ হবে না। একটা বেকার ছেলে…। তাও আবার কবি হতে চাই। তার সাথে কি…?
বুঝেছি। গাঁজাও…। চল, রুমে চল। রুমে বসে…।
– প্রেমে তো পড়েছিস। তোকে একটা ফ্রি-তে উপদেশ দেই। মনে রাখবি- প্রিয়তমা ভালো হলে প্রতিদিন প্রতি রাতই ১৪ই ফেব্রুয়ারি। আর না হলে প্রতিদিন প্রতি রাতই ২৫শে মার্চ।

প্রিয়তমার পিছুপিছু প্রেম

প্রেমের রশ্মি ধরে বেয়ে বেয়ে উঠতে গিয়ে কাঠগোলাপের কাঁটায় বুকের বাঁ পাশের কুঁড়েঘরের ছাউনি ভিটায় ক্ষত-বিক্ষত কিছু আঘাতের চিহ্নে এখনো প্রিয়তমার স্মৃতি ভেসে ওঠে। আর স্মৃতির খামখেয়ালি পদচারণে প্রায়শই অজ্ঞান অবচেতনে সূর্য স্নানের স্নিগ্ধতায়ও নিজেকে লুকিয়ে লুকিয়ে মগ্ন নেশায় ছোবল দিতেও কুণ্ঠিত বোধ হয় না।

ব্রেকআপের বেতের আঘাতে ব্যথিত হৃদয়াকৃতি ডিম্বাকৃতির রূপে পথভ্রষ্ট হলেও নির্দিষ্ট যাত্রী ছাউনির ছায়াতলে ওতপেতে থাকে প্রিয়তমার মুখদর্শনে স্ব শরীরে হাজিরা দিতে। কিন্তু ২২ বছরের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রিয়তমার ছায়াতো তো বটে পায়ের ধুলোর কুচকাওয়াজও মেলেনি। তবে বিষন্ন ভগ্নদেহ ভগ্নহৃদয় শরীরের মাংসপেশি কিংবা হাড্ডি-গুড্ডির আড়ালে কলিজা টুকুও এখনো অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। না হলো মুখোমুখি মুখপানে তাকিয়ে দৃষ্টি আদান-প্রদান।
ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে কিংবা রংবেরঙের রঙিন নিয়ন বাতির আলোর ছায়াতলে প্রেমিক প্রেমিকার অট্ট হাসির ঢোল পেটানো শব্দে কতো সন্ধ্যে যে সকালের সূর্য দেখে দুমড়ে মুচড়ে গেলো তার হিসেব নেই। হিসেবের অপবিত্র অপব্যবহারে দর কষাকষি করেও যখন হা-হুতাশে রোজরোজ ভুগে ভুগে শুকিয়ে ঠোঁটেঠোঁটে নড়বড়ে তখন অবধিও এপথে প্রিয়জনের অপেক্ষায় বসে।

হলুদ গোলাপ, লাল গোলাপ তার ভীষণ পছন্দ ছিলো। সে এতো আদরে গোলাপের সুগন্ধি শুঁকে শুঁকে বিমুগ্ধ হতো সে দৃশ্য চোখের পর্দায় ভেসে উঠতেই মুচকি মুচকি হাসিতে টোল পরে। আর আমি ডুবে ডুবে ভেসে উঠি তার প্রেম জোয়ারের নিমন্ত্রণে।

গতকাল সন্ধ্যায় সে এসেছিলো। নীল রঙের শাড়ি, ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি লিপস্টিক, হাতে রংবেরঙের কাচের চুড়ি আর খোলা চুলে। যে চুলের ডগায় ডগায় আমার আঙুলের ছোঁয়াচে ছোবল এখনো কিলবিল করতে দেখলাম। তার সাথে টেঁকো মাথার একজন মধ্যবয়সী পুরুষও ছিলো।
“আমি বলেছিলাম – তুমি যদি অপেক্ষা করতে পারো তবে দুই যুগ পরে হলেও দেখা হবে ”
“হুমম, আমিও তো অপেক্ষা করছি “।
সে কয়েকটি গোলাপ নিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে দাম দিতে চেয়েছে।
আমি বললাম – গোলাপের টাকা বুক পকেট থেকে কখনো ফুরাবে না। জানো… আমার প্রথম মেয়ের নাম কি?
কি?
গোলাপি।
বিয়ের দাওয়াতে যেতে পারিনি সেদিন। তবে উপহার কিনতে ভুল করিনি। এখনো রোজ সকালে পকেটে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি আর রোজ সন্ধ্যায়…।
“তোমাকে পড়িয়ে দেই”
“হুমম, তবে সাবধান। বুড়োটা যেন না দেখে “।
শেষমেশ তবে সাধ মিটলো। ২২ বছরের অপেক্ষার সাধ। আবার কবে আসবে?
“এখন থেকে রোজরোজ”

হিমু এবার সিনেমাহলে

ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে, আমার নামটি…। গান বাজছে। বারবার বাজছে। ক্রমাগত বাজছে। গানটি শুনতেও বেশ ভালো লাগছে। শুধুমাত্র এই একটি গান শুনলেই বারবার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে প্রিয়তমার হাতে দুহাত রেখে মুখপানে চেয়ে থাকি অজস্র বছর। অজস্র বছরের সময়গুলো যেন তখন থেকেই ফ্রেমে বন্দী হয়ে স্তব্ধ নামক খাঁচায় বসবাস করে। আর আমরা দুজনে…।
প্রেম ক্রিকেটের মাঠে হিমু সদ্য ফোঁটা ফুলের টবে ফুলের পাপড়ি। যার শিরা-উপশিরায় প্রেমের অনুভূতিরা আত্মগোপনে খেলা করে। আর মিটমিট করে হেসে হাসির জালে ফেঁসে ফেঁসে চাঁদমুখের ছবি হয়ে আয়নায় ভাসে। এজন্য হয়তো রবিঠাকুরের এই গানটি রোজরোজই বাজে।
হিমুকে বললাম – লেখা শেষ হলো?
হিমু – হুমম, শেষ হলো।
– তাহলে আমাকে দে। পড়বো। দেখি আজ কেমন রসের যৌবন ভরা গল্প লিখেছিস?
হিমু – ঐ, প্রতিদিনই যেরকম লিখি। সেরকমই।
– ঠিক আছে। সমস্যা নেই। তোর সর্বপ্রথম পাঠকতো আমি নিজেই।
হিমু একটু ইতস্তত বোধ করছিলো। আমি জোড়াজুড়ি করাতে অবশ্য ডায়েরিটি শেষমেশ দিতেই হলো। অবশ্য হিমু জানতো আমাকে ডায়েরিটা না দিয়ে রেহাই নেই। কেননা…।
অনিচ্ছা থাকা সত্বেও প্রিয়জনের কথা রাখতে বাধ্য হতেই হলো। এরকম নিয়মনীতি অনুসরণ ঘাড়ে ভর করলে অসহ্য অহর্নিশেও ভাঙা-গড়া রূপ-প্রতিরূপের সম্মুখীন হতে হয়। তখন বুকের ভেতরে ভালোবাসা নামক শব্দটিও কিছু সময়ের জন্যও ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
বাস থেকে নেমে সিনেমাহলের সামনে দাঁড়াতেই লজ্জায় বুক ফেটে রক্তক্ষরণ হওয়ার উপক্রম। বারবার মনে হচ্ছিল ভিনদেশী বোমায় আহত দেহের হাড্ডি-গুড্ডির তলে লুকিয়ে থাকা হৃৎপিণ্ডটুকুও আজ বেশরম, চক্ষুলজ্জায় কাবু। আর দু-চোখ মাথানিচু করা স্বভাবের জ্বালায় জর্জরিত হয়ে অন্ধ ঘরে বন্ধ হওয়া বিদ্যুৎ বাতি। যেন কোনকিছুই স্বচক্ষে দেখিনি।
টিকেটটিও আমাকে কাটতে হলো। এই ধস্তাধস্তি জাবরদস্তির জীবনে অর্থসংকটের অসংকোচেও নিজেকে মানিয়েও নিতে হলো। নইলে যে ব্যক্তি সম্মানের বাকিটুকুও বিলীন হতে শুরু করে। আর হাসাহাসির পাত্র হতে কারোই শৈথিল্য প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে ইচ্ছে করে।
উমা! সিনেমাহলের বক্সের সিট কিংবা ডিসি সিটের সবগুলোই প্রেমিক প্রেমিকাদের দখলে থাকে। বিশেষ করে একদম পিছনের সিটে বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকারা বুঝি কাতুকুতুর চেয়েও কাছাকাছি থাকে। আর তাদের ফিসফিস করে কথাবলা আর অঙ্গভঙ্গির দৃশ্যগুলো দৃষ্টিতে এসে ভিড় করে শরীরের অবস্থা কোষ্ঠকাঠিন্যের দুরারোগ্য ব্যাধির মতো পিছুপিছু ঘুরঘুর করে। রুপা অবশ্য কাঁদে মাথা রেখেছিলো।
রুপাকে বাসে তুলে দিয়ে বাসায় আসতে অন্য বাসের সিটে বসতেই কিছু প্রশ্ন এসে মনের পাড়ে জমাট বেঁধে লাফালাফি করতে শুরু করলো। প্রশ্ন… – হিমুরা কি সিনেমা দেখে?
শেষমেশ তবে সিনেমাহলের সিটের চিপায় হিমু পৌঁছালো। কথাটা শুনে হিমু বললো – সত্যি বলছি, আমি রুপাকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আসলে পৃথিবীর সকল প্রেমিকারাই জেদি।
আচ্ছা, তুই নিজেই ভেবে দ্যাখ সবাই যদি জানে হিমু সিনেমাহলে….। তাহলে কি ভাববে?

প্রিয় প্রিয়তমেষু প্রিয়তমার নাম

ঝরঝর করে কাঁদতে লাগলো হিমু। কান্নার শব্দে রান্নাঘর থেকে বুয়া বেরিয়ে এসে বললো – মামা, কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?
কিন্তু কিছুতেই হিমুর কান্না থামছে না। আবার কোন কথাও বলছে না। শুধু খাবারের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে রয়েছে।
বুয়া গিয়ে অতনুকে ব্যাপারটা খুলে বললো। অতনু সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো – কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? খাবার না খেয়ে সামনে রেখে কাঁদছিস যে।
তারপরও হিমু কেঁদেই যাচ্ছিলো। কোনক্রমেই থামানো যাচ্ছিলো না।
কিছুক্ষণ পরে হিমু একটু শান্ত হয়ে বুয়াকে ডেকে বললো – খালা, খাবার নিয়ে রেখে দেন। আমি খাব না।
অতনু বললো – কেন রে? খাবি না কেন?
হিমু বললো – ডিম দিয়ে খাবনা।
অতনু বললো – ডিম আবার তোর কি ক্ষতি করলো?
হিমু বললো – কেন তুই জানিস না? আমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম তার নাম ছিলো কুসুম। যে আমাকে ছ্যাঁকা দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে।
কিছুদিন পর আবার সেই কান্না। হিমু কাঁদছে…।
অতনু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো – ছেলেটি ডিম দেখলে আজও কাঁদে। কারণ মেয়েটির নাম ছিলো কুসুম।

ছবিঃ সংগৃহীত

হিমুর হাতে নীল রঙের মাফলার

বাড়ি থেকে ফিরছি। বেশ কয়েকদিন খোলা আকাশের ক্যানভাসের কাপড় পরে, শান্ত গাঙের অথৈজলের শিহরণে শিহরিত হয়ে, খেজুর রসের পায়েসে ভেসে ভেসে ঢেউ খেলেছি। এ যেন মাতৃত্বের টান, শিকড়ের টানে নীড়ে ফেরার তাগিদ। মেঠোপথের দুপাশে রশি বেঁধে পিছুপিছু হেঁটে হেঁটে কাশফুল, কচুরিপানায় দুচোখ বন্ধ করে সুদীর্ঘ নিশ্বাস নেওয়া।

হিমু বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিল। কবে আসছি, কবে আসছি ঘ্যানঘ্যান শব্দের অন্তরালে সময়গুলো কিছুটা বিষন্ন ভগ্নহৃদয়ে ভুগলেও যখন নৌকার পাল তোলা মেঘ উড়ে উড়ে অচেনা অতিথি হয়ে আমার কাছে থেমে যেতো তখন এই ভগ্নদশা ভগ্নদেহটুকুও কিঞ্চিৎ ফটোসেশানে ফুরফুরে নিয়ন বাতির আলোয় জ্বলে জ্বলে পুলকিত করে তুলতো। আর তখন শহরের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা কিংবা ল্যাম্পপোস্টের ঘোলটে আলো অথবা রিক্সার ছাউনি তুলে প্রিয়তমার সাথে ঘুরাঘুরিও বিবর্ণ হয়ে যেতো।

সাদা কালো ডায়েরির পৃষ্ঠার প্রতিটি লাইনে কথাগুলো লিখতে লিখতে কখন যে ঘুমের শহরে নেতিয়ে পরেছিলাম সে সমন্ধে সন্ধিক্ষণের সন্ধানে ভুগে ভুগে সময়ক্ষেপণ না করাটাই শ্রেয়। কিন্তু এই অল্পস্বল্প ঘুমের বাড়ির উঠানে অবস্থানে সবেমাত্র প্রিয়তমার হাত ধরে প্রিয় কিছু শব্দের অণুগল্প রচনা করেছি, প্রিয়তমার মুখোমুখি, চোখে চোখ রেখে সবেমাত্র ঠোঁটের উষ্ণ আবরণের ছোঁয়াচে রোগে শীতল হবো ঠিকই বাসের হর্ণ এবং হঠাৎ করে থেমে যাওয়া স্বপ্নটাকে বিনষ্ট করে দিলো। চোখ খুলে দেখি গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।

হিমুকে দেখেই একঘেয়েমি অনুভূতির জীবন শুরু হলো। ঢাকা শহরে এরথেকে বেশি কিছু আশা করা বৈধ নয়। শুধুমাত্র প্রেমিকার প্রাক্তনের বেলায় অন্যরকম। এ-শহরে কে কয়টা রমনীর টিকেট হাতে নিয়ে ঘুরতে পারে সেটাই হয়তো মূখ্য।
হিমু বললো – তারাতাড়ি চল।
– কেন? হঠাৎ এতো তারাতাড়ি কেন?
হিমু – না, তেমন কিছু না। ওই আরকি।
– ওই আরকি? কোন কাজ আছে নাকি?
হিমু – হুমম, সেরকমই।
– তাহলে খুলে বললেই হয়।
হিমু – কি আর খুলে বলবো? রুপার সাথে…।
– হুমম, বুঝতে পেড়েছি। আর বলতে হবে না।

হিমুকে একটু অন্যরকম লাগছে। অনেকটা ফর্সা আর উজ্জ্বল চাহনি। পুরোদমে ফুরফুরে মেজাজ আর ফ্যাশন-সচেতনে। হিমু দাঁড়িয়ে আছে। কাছাকাছি যেতেই বলে উঠলো চায়ে চুমুক দে। এ শীতে চায়ের গরম ঘামে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলে কোন ক্ষতি নেই। বরং প্রিয়তমা নরম ঠোঁটের সৌন্দর্য দেখে খুশিই হবে।
হিমু চা খাচ্ছে আর মাফলার দিয়ে ঠোঁট মুছে মুছে কথা বলছে। ব্যাপারটা আমার কাছে একটু অস্বস্তিকর লাগছে। এই অস্বস্তি নিয়ে হিমুকে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক মন পাড়ায় উঁকি দিলো – কি ব্যাপার! হিমু কাঁধে মাফলার? হিমুর তো এটা খুবই অপছন্দের। তারপরও আবার নীল রঙের মাফলার।
হিমু বলে উঠলো – কি এতো বিড়বিড় করছিস? নিশ্চয়ই আমার নীল রঙের মাফলার নিয়ে। তাই নয় কি?
– হুম, একদম ঠিক।
হিমু – রুপা আজকে দিলো।
– তোর না এটা অপছন্দের ছিলো।
হিমু – সবসময় নিজের পছন্দের দাম দিতে নেই। কিছু কিছু সময় প্রিয় প্রিয়তমেষু প্রিয়তমার ছায়াতলে নির্বাচিত কাকপক্ষী গল্পের নায়ক হওয়ায় ভালো।
– আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি।

হৃদয় পোড়া দগদগে ক্ষত

টিউশনিটা ছেড়েই দিতে হলো। নইলে যে ও কথার ভীড়ের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে সুর প্রতীকীর সাঁজে নিজেকে সাজিয়ে ফেলতাম। আর নিজের তৃপ্ত কিছু অশোভন ইচ্ছেগুলো মনের নেশায় মাখিয়ে ছোবল দিতেও কুণ্ঠিত বোধ করতাম না। কারণ, অল্প বয়সী মেয়েদের সম্মতি পেতে কাঠখড় পোহাতে হয়না। তারা নিজে নিজেই জ্বলে অন্যকে উত্তপ্ত করে।

সে প্রায়শই আমার বাঁশির সুরের প্রলোভনে লোভী লোভী প্রসংশা করতো। কখনো কখনো সে বাঁশির সুর রেকর্ড করে আমাকে শোনাতো। আবার কখনো কখনো গুনগুন করে ঠোঁটের ডগায় কিলবিল করে ভাসিয়ে নিতো। যাতে করে তার ঠোঁটের রসের রসাতলে রসায়নে রসায়িত হই। আবার কখনো কখনো হালকা বেগুনি রঙের টিশার্ট পরে, চুলগুলো এলোমেলো অগোছালো করে গালে হাত দিয়ে একপলকে চেয়ে থাকতো। কিছু বলতে গেলেই স্যার শব্দটি মাথার মগজে পেরেক ঠোকাতো।

সে প্রায়শই কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দিতো। চোখে চোখে চোখাচোখি আঁকিবুঁকি হতেই ওড়নার কোণা ধরে কামড়াতে কামড়াতে মুচকি হাসি হেসে চলে যেতো। যাবার সময় বলতো আপনি খুবই স্বচ্ছ ও সুন্দর দেখতে। সত্যি! রোজরোজ এই কয়েক ফোঁটা অক্ষরের মিলনে, কিছু অনুনয় বিনয় নম্রতায় আমি নিজেও প্রেম-পথের পৃষ্ঠার পাদদেশে প্রিয়তমেষুর সন্ধানে পথিক হয়েছিলাম।

শেষবার বিদায় নেওয়ার সময়। দুচোখ বেঁয়ে বেঁয়ে অশ্রু ফোঁটা পড়লো। বুকের হাড্ডি-গুড্ডির খাঁচার অন্তরালে সারবস্তু আবিষ্কার নামক কলিজা যন্ত্রটি ধুকধুক করতে লাগলো। তখন বুঝেছিলাম, আমিও প্রেমে পড়েছি। প্রেমে পড়ার আতরের আত্মারা সুগন্ধি মেখে আমাকেও সুভাষিত করেছিলো।
শেষবার সবেমাত্র দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে চলে আসবো ঠিক তখনই পিছন থেকে প্রিয়মুখের প্রিয়জন সাপটে ধরে ফেলে। আমি বৈদ্যুতিক খুঁটির মতো দাঁড়িয়েছিলাম। এটাই যেন আমার আজন্ম পাপ। এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত কিংবা দায়ভার আমার শরীরের নয়, হৃৎপিণ্ডের।

বেশ কয়েকমাস ধরে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল আসে, দুঃখী দুঃখী হৃদয় কাঁপানো মেসেজ আসে। যে মেসেজে আমি কান্নার আওয়াজ পাই, হাহাকার রোগের গন্ধ পাই। ফিরে যাওয়ার আকুতি অনুমতি মিনতি খুঁজে পাই। শুধু আমার কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর মেলে না। হিমুরা কয়বার প্রেমে পড়ে। একবার, দুবার নাকি…।

ছবিঃ সংগৃহীত

প্রিয় প্রিয়তমেষু পাখির বিয়ে

সিগারেটের আগুনে ঠোঁটের নীলাভ উষ্ণ আবরণে ছোঁয়াচে সুপ্ত মাংসপেশিগুলো কালচে বর্ণ ধারণ করছে। যার কালি দিয়েও হতো প্রিয়তমেষু পাখির কয়েকটি ছবির স্কেচ তৈরি করা যাবে নিমিষেই। নতুবা মাথার চারপাশের সাদা চুলগুলোয় কালো কালির প্রলেপ দেওয়া যাবে হরহামেশাই। হয়তো তখন পৃথিবীর অগুনিত পর্বতের মানুষেরা বলবে – হিমু পাগল হয়ে গেছে। আসলেই তো হিমু পাগল হয়ে গেছে।

গত কয়েকমাসে হিমুকে হন্যে হয়ে চাকরি খোঁজার লোভ লালসায় ক্ষুধার্ত ছিন্নমূল মানুষের মতো লেগেছে। মনে হচ্ছিল – সামনে যা পাবে কোনরূপ সাড়াশব্দ না করে সোজাসুজি ঝাপিয়ে পড়বে। কিন্তু, তবুও কি কোন নিস্তার আছে। ছিন্নমূল এ জীবন সস্তার ভিড়ে আরও অনেক পথভ্রষ্ট কিংবা পথিকের সাড়াশব্দ দেখে পায়ের তালু থেকে কলিজা অবধি শুকিয়ে যায়। যেখানে চাকরি পাওয়াটা আর কঠিন।

শেষমেশ হিমুকে শুধু শুনতে হলো বকুনিঝকুনি। ওর লেখার বিষয়বস্তুকে নিয়েও কটাক্ষ করে ডাস্টবিনের স্তুপে সুস্পষ্টভাবে সংস্পর্শে ফেলে দেওয়া হলো।
প্রিয় প্রিয়তমেষু পাখির আঘাতটা চাবুক হয়ে দেহের কাহিনিতে তখনই লেগেছিল হিমুর। সহ্যশক্তির অপার সৌন্দর্যে রক্তবমি হলেও, চোখের ভীড়ে ভীড়ে অশ্রুসজল গড়াগড়ি করলেও কোনকিছু বলার সাহস জোটেনি।

বাসস্ট্যান্ডে ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোর বাতির ছায়াতলে রোজ সন্ধ্যায় সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে ধস্তাধস্তি জাবরদস্তি হয় হিমুর। আবার কখনো সন্ধ্যে বুড়োর সাথে সন্ধ্যে তারার হিসেব কষতে কষতে রাত অবধি জেগে থাকার বাহানা খুঁজে পাওয়া অবচেতন হিমুকে প্রায়শই অজ্ঞান রূপে ছাঁদের উঠানে পরে থাকতে দেখা যায়।
হিমু হাসপাতাল থেকে ফিরেছে দিন তিনেক হলো। ডাক্তার বলেছিল সিগারেট ছাড়তে কিন্তু সিগারেটের তীব্র নিন্দার নেশার ছোবলে পরে পরে আরও বেশি ঋণাত্মক সূচকে নেমে এসেছে।
মাস তিনেক পরে রপার সাথে হিমুর কথা হলো –
– হ্যালো, হ্যালো।
– হিমু চুপ করে শুনছে (কোন সাড়াশব্দ নেই)।
– হ্যালো, কি হলো কথা বলবে না?
– হুমম, বলো।
– কেমন আছো?
– জ্বি, ভালো আছি।
– আমি কিন্তু তোমার খবরাখবর রাখি।
– ও আচ্ছা। খুশি হলাম। আর কিছু…।
– জ্বি, আরও অনেক কিছু। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
– হুম, অবশ্যই।
– আচ্ছা, এখনো কি সিগারেট…?
– না।
– খুশি হলাম জেনে। অবশেষে আমার একটি কথা রাখলে।
– না, তোমার ধারণা ভুল।
– মানে?
– তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন গাঁজা খাই।

ছবিঃ সংগৃহীত