প্রিয়তমার পিছুপিছু প্রেম

প্রেমের রশ্মি ধরে বেয়ে বেয়ে উঠতে গিয়ে কাঠগোলাপের কাঁটায় বুকের বাঁ পাশের কুঁড়েঘরের ছাউনি ভিটায় ক্ষত-বিক্ষত কিছু আঘাতের চিহ্নে এখনো প্রিয়তমার স্মৃতি ভেসে ওঠে। আর স্মৃতির খামখেয়ালি পদচারণে প্রায়শই অজ্ঞান অবচেতনে সূর্য স্নানের স্নিগ্ধতায়ও নিজেকে লুকিয়ে লুকিয়ে মগ্ন নেশায় ছোবল দিতেও কুণ্ঠিত বোধ হয় না।

ব্রেকআপের বেতের আঘাতে ব্যথিত হৃদয়াকৃতি ডিম্বাকৃতির রূপে পথভ্রষ্ট হলেও নির্দিষ্ট যাত্রী ছাউনির ছায়াতলে ওতপেতে থাকে প্রিয়তমার মুখদর্শনে স্ব শরীরে হাজিরা দিতে। কিন্তু ২২ বছরের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রিয়তমার ছায়াতো তো বটে পায়ের ধুলোর কুচকাওয়াজও মেলেনি। তবে বিষন্ন ভগ্নদেহ ভগ্নহৃদয় শরীরের মাংসপেশি কিংবা হাড্ডি-গুড্ডির আড়ালে কলিজা টুকুও এখনো অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। না হলো মুখোমুখি মুখপানে তাকিয়ে দৃষ্টি আদান-প্রদান।
ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে কিংবা রংবেরঙের রঙিন নিয়ন বাতির আলোর ছায়াতলে প্রেমিক প্রেমিকার অট্ট হাসির ঢোল পেটানো শব্দে কতো সন্ধ্যে যে সকালের সূর্য দেখে দুমড়ে মুচড়ে গেলো তার হিসেব নেই। হিসেবের অপবিত্র অপব্যবহারে দর কষাকষি করেও যখন হা-হুতাশে রোজরোজ ভুগে ভুগে শুকিয়ে ঠোঁটেঠোঁটে নড়বড়ে তখন অবধিও এপথে প্রিয়জনের অপেক্ষায় বসে।

হলুদ গোলাপ, লাল গোলাপ তার ভীষণ পছন্দ ছিলো। সে এতো আদরে গোলাপের সুগন্ধি শুঁকে শুঁকে বিমুগ্ধ হতো সে দৃশ্য চোখের পর্দায় ভেসে উঠতেই মুচকি মুচকি হাসিতে টোল পরে। আর আমি ডুবে ডুবে ভেসে উঠি তার প্রেম জোয়ারের নিমন্ত্রণে।

গতকাল সন্ধ্যায় সে এসেছিলো। নীল রঙের শাড়ি, ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি লিপস্টিক, হাতে রংবেরঙের কাচের চুড়ি আর খোলা চুলে। যে চুলের ডগায় ডগায় আমার আঙুলের ছোঁয়াচে ছোবল এখনো কিলবিল করতে দেখলাম। তার সাথে টেঁকো মাথার একজন মধ্যবয়সী পুরুষও ছিলো।
“আমি বলেছিলাম – তুমি যদি অপেক্ষা করতে পারো তবে দুই যুগ পরে হলেও দেখা হবে ”
“হুমম, আমিও তো অপেক্ষা করছি “।
সে কয়েকটি গোলাপ নিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে দাম দিতে চেয়েছে।
আমি বললাম – গোলাপের টাকা বুক পকেট থেকে কখনো ফুরাবে না। জানো… আমার প্রথম মেয়ের নাম কি?
কি?
গোলাপি।
বিয়ের দাওয়াতে যেতে পারিনি সেদিন। তবে উপহার কিনতে ভুল করিনি। এখনো রোজ সকালে পকেটে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি আর রোজ সন্ধ্যায়…।
“তোমাকে পড়িয়ে দেই”
“হুমম, তবে সাবধান। বুড়োটা যেন না দেখে “।
শেষমেশ তবে সাধ মিটলো। ২২ বছরের অপেক্ষার সাধ। আবার কবে আসবে?
“এখন থেকে রোজরোজ”

মুহাম্মাদ মাসুদ সম্পর্কে

মুহাম্মাদ মাসুদ (মোঃ মাসুদ রানা)। ১৯৯৫ সালের ১৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার চৌবাড়ীয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মোঃ লাল মিয়া, মাতা মোছাঃ জাহানারা খাতুন। শিক্ষা জীবনঃ চৌবাড়ীয়া টোকের পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে স্থল পাকড়াশী ইন্সটিটিউশনে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে ৮ম শ্রেণীতে সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হয় খামারগ্রাম মহাবিদ্যালয়ে। ২০১২ সালে ব্যাবসায় শিক্ষা শাখা থেকে পাশ এইচএসসি করেন এবং ২০১৬ সালে মানবিক শাখায় বেলকুচি সরকারি কলেজ থেকে বিএ (ডিগ্রী পাশ কোর্সে) করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ যৌথভাবে মুক্তচিন্তা (২০১৮) ও নীলপদ্ম (২০১৯ বইমেলা) দন্ত্য 'স' প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায়। গল্পগ্রন্থঃ হুমায়ূন হিমু (বইমেলা - ২০২০)।

9 thoughts on “প্রিয়তমার পিছুপিছু প্রেম

  1. অণুগল্পটি পড়লাম মি. নৃ মাসুদ রানা। আজকের লিখাটি একটু ভিন্ন ঘরানার। বেশ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. প্রিয়তমার পিছুপিছু প্রেম পড়লাম। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।