বঙ্গবাসীর পুস্তক প্রীতি

 photo Cartoon Writer_zpsoewn716k.jpg
সকল বঙ্গবাসী কবি বলিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত নিজেদের পরিচিত করিয়াছেন এমনকি তাহাদের কেও কেও কবিদের কাকের সহিত গণনা করিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন নাই। তবে একথা সত্য যে এই বঙ্গ কবিই একদিন বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কার আয়ত্ত করিয়া সকল বঙ্গবাসীকে কবির আসনে বসাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে সকলের মনে কবি হইবার বাসনা অত্যন্ত প্রকট রূপে দেখা দিয়াছে এমন করিয়া ভাবিলে দোষের কিছু দেখা যায় না।
একজন কবি বা লেখক কিংবা ঔপন্যাসিক যাহাই বলেন না কেন তিনি লিখতে বসিবার পূর্বে বহুকাল ধরিয়া ভাবিতে থাকেন। ভাবনার বৃক্ষ যখন কিছুটা বিস্তৃত হয় তখন তিনি হাতে কলম ধরিয়া কাগজ পত্র লইয়া বসেন। আজকাল অবশ্য কাওকে কালি কলম বা কাগজের বোঝা বহন করিতে হয় না কেবল একখানা কম্পিউটার হইলেই কর্ম সম্পাদন করা অতি সহজ। ইহা যশবান বৈজ্ঞানিক বৃন্দের কর্মফল বলিয়া তাহাদের অন্তত এক কুড়ি ধন্যবাদ জানান উচিত।

আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ ইত্যাদি পরে দিলেও তেমন ক্ষতি হইবে না এই সময় যাহা বলিতেছিলাম, লেখক মহাশয় লিখিতে বসিলেন। ঘণ্টা, দিন মাস, বছর ব্যাপিয়া লিখিয়া এবং অন্তত দুই কুড়ি দফায় পাঠ করিয়া (এডিট) অবশেষে একখানা গ্রন্থ রচনা করিলেন এবং যেহেতু আজকালের পুস্তক প্রকাশক অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলিয়া নিজের টাকা খরচ করিয়া লেখকের হাবিজাবি লেখা প্রকাশ করিতে চাহেন না বলিয়া শতেক পুস্তক প্রকাশকের দুয়ারে ঘুরিয়া ঘর্মাক্ত হইয়া নিজ গাঁইটের টাকা খরচ করিয়া সত্যি সত্যি এক খানা গ্রন্থ ছাপাইয়া ফেলিলেন। নিজের লেখা গ্রন্থখানা সুন্দর ছবিওলা মলাটের ভিতরে ছাপার অক্ষরে দেখিয়া যারপরনাই পুলকিত হইলেন।
লেখক মহাশয় পুলকিত হইলে কি হইবে তাহার পুস্তকের প্রতি কাহারো কোন আগ্রহ নাই কারণ সকলেই জানে এই গদাধর মিয়া বা মশাই আবার কি লিখিতে জানে? ইহার লেখা মূল্য দিয়া ক্রয় করা মানেই হইল স্বেচ্ছায় নিজ পকেটের টাকা গঙ্গায় ফেলিয়া দেওয়া। আচ্ছা বলুন তো আজকাল কি আর এইরূপ আহাম্মক দেখা যায়?
লেখক মিয়া একে বলে ওকে বলে জান আমার লেখা একটি বই ছাপা হইয়াছে, দেখ কি সুন্দর তাই না?

বাহ! বেশ সুন্দরতো আমাকে একটা সৌজন্য কপি দিয়ে দাও তাহলে! তুমি একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুজন তাই একটা সৌজন্য কপি আমার অধিকার!
ইহা শুনিয়া লেখকের লেখার ইচ্ছা কর্পূরের মত সপ্ত আকাশে উড়িয়া গেল কিন্তু বন্ধু জনের সৌজন্য কপি না দেয়ার মত ক্ষমতা অবশিষ্ট রহিল না। ওদিকে বন্ধু জন উক্ত সৌজন্য কপি বগলদাবা করিয়া বাড়িতে লইয়া গেল এবং যথারীতি বসার ঘরের তাকে সাজাইয়া রাখিল। কিছুদিন পর লেখক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিল
ওহে বন্ধু আমার পুস্তক খানা পাঠ করিয়া তোমার অনুভূতি কেমন হইল?
হা হা আমি অত্যন্ত মনযোগী দিয়াই পাঠ করিয়াছি কিন্তু বন্ধু তোমার হাত এখনও ঠাকুর মশাইর মত পাকিয়া উঠেনি!

18 thoughts on “বঙ্গবাসীর পুস্তক প্রীতি

  1. অত্যন্ত সুন্দুর করিয়া হাস্য রসে রসিত হইয়া করুন বাস্তব ফুটাইয়া তুলিয়াছেন হে মান্য।আপনাকে কি দেই? আচ্ছা এই নিনhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_dance.gif

  2. বাস্তব কথন উঠিয়া আসিয়াছে জনাব। আপনার আলোচনার তারিফ করিতে হয়।
    আশপাশের চারিদিকে না হইলেও তিনদিকে এমন সব ঘটনাই ঘটিতেছে।
    সাধুগন সাবধান। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_mail.gif

    1. সকলের ন্যায় আপনিও অতি সহজেই হৃদঙ্গম করিএ পারিয়াছেন জানিয়া অতিশয় পুলকিত হইলাম জনাব, সালাম গ্রহন করুন।

  3. তাহলে বুলডেজারটা আপনার উপর দিয়াও গেছে খালিদ ভাই। লজ্জাজনক হলেও এটাই সত্য যে অনুপ্রেরনা দেয়ার মত সময় /টাকাপয়সা/ইচ্ছা কোনটাই আমাদের নাই।

    1. সত্যিকারেই বিষয়টা অত্যন্ত লজ্জার কিন্তু ভুক্তভোগি ব্যাতিত ইহা আর কে বুঝিবে? লেখকতো আর ঘরে ঘরে জন্মায় না! আর যারা বই প্রকাশ করে তাদের সকলেই লেখক নয় ইহা সকলের বুঝিতে বেশ কিছু সময়ের প্রয়োজন তবে এতদিন আমরা বাচিয়া থাকিব কি না জানা নাই।

    1. সম্মানিত মুরুব্বীর ন্যয় বলিতে হয় ইহাই চতুর্দিকের না হইলেও তিন দিকের বাস্তব ছবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  4. কি বলিব! নিজেকে যে লেখক/কবি বলিয়া নিজের গরবে আকাশে ভাসে তাহার মতো আহাম্মক নাই।…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cry.gif

    1. উড়াল জাহাজের টিকেট না করিয়া যদি আকাশে উড়িয়া যাওয়া যায় তাহাতে ক্ষেতি কি ভাই?
      যে কেও ইচ্ছা করিলে এমন উড়াল দিয়া আসুক, নিষেধ নাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_wacko.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।