ট্যাগ আর্কাইভঃ রম্য

লেখকের বিড়ম্বনা

আমি কোন লেখক বা সাহিত্যিক হবার জন্য হাতে কলম ধরিনি বা এই বিজ্ঞানের যুগে যেহেতু কলম দিয়ে লেখার প্রচলন উঠেই গেছে তাই বলা যায় কম্পিউটারের কি বোর্ডে হাত দেইনি। তবে মনের গোপন কোণে যে এমন একটা সাধ সুপ্ত নেই সে কথাও জোর দিয়ে বলতে চাই না। নিতান্তই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সময় কাটাবার জন্য বিশেষ করে কারো মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার চেষ্টা বা দলিল, নোট জাল করা বা কাউকে গুম করে মুক্তিপণ আদায় করা বা ডাহা মিথ্যে সাক্ষী দেয়া কিংবা কারো মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবার চিন্তা কিংবা কি করে মানুষের খাবারের সাথে ইট পাথরের গুড়ি কিংবা কাপড়ে দেয়ার রঙ কিংবা নর্দমার পানি বা নিদেনপক্ষে মানুষের খাবার অযোগ্য পদার্থ মেশানোর চিন্তা গুলি মাথায় এসে ভর না করে আমাকে রাতারাতি কোন বিখ্যাত আধুনিক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী না করে ফেলতে পারে সেই চেষ্টা করতে চাই।

ফরমালিন এবং কার্বাইড দিয়ে পচা খাবার তাজা রাখা এবং ফলমূল পাকিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরার মহান চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্যেই এই কাজে হাত দিয়েছি। আটা ময়দা দিয়ে এন্টিবায়োটিক বানানো, খড়ি মাটি দিয়ে স্যালাইন বানাবার প্রক্রিয়া শেখার আগ্রহ যাতে আমার মাথায় চেপে বসতে না পারে সেই অপ চেষ্টা করার জন্যেই এই কাজে রত থাকার চেষ্টা করি। এগুলি নাকি আধুনিকতা। তা ভাই আমি কিন্তু এত আধুনিক হতে চাই না সে কালের মানুষ সেকেলে থাকতে পারলেই ভাল। আমার যুগে আমার চাচাত ভাইকে দেখেছি ঝিটকার হাটে পাঁচ টাকায় একটা আধ মনি খাসি বিক্রি করে আট আনার রসগোল্লা কিনে এনেছিল তখন একশ টাকায় গরু পাওয়া যেত। আমি নিজেও আট আনা কেজি গরুর মাংস কিনেছি। যাক সেসব কথা, ওগুলি বললেতো বিশ্বাস করবেনই না উলটা আমাকে পা কিংবা মাথা গোল মনে করে সন্দেহের চোখে তাকাবেন তাই কি দরকার সেকালের কাহিনী গাইবার? নিজেই লিখি নিজেই পড়ি এসব কিছু করি আর সময় গুলা বেশ তর তর করে চলে যায়। ব্যাস আর কি?

আগে আমরা কলম দিয়েই লিখতাম কিন্তু মেয়েদের দেখতাম ওরা কি সুন্দর করে কি বোর্ড চেপে চেপে নানা কিছু লিখে ফেলছে। তাই দেখে দেখে ভীষণ লোভ হচ্ছিল ইশ আমিও যদি এমনি করে লিখতে পারতাম! ওদিকে লজ্জায় কাওকে বলতেও পারছিলাম না আবার শেখার ইচ্ছেটাকেও দমিয়ে রাখতে পারছিলাম না তাই একদিন নিজের ছোট মেয়েটাকেই বললাম আমাকে একটু এই কি বোর্ড চালানো শিখিয়ে দিতে পার মা? মেয়ে তার মনের মত ছাত্র পেয়ে মহা খুশি।

এসো বাবা আমি তিন দিনেই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি সবই পারবে। তোমাকে প্রথমে কম্পিউটার অন অফ করা থেকে শুরু করব পরে ওয়ার্ডে কাজ করা শেখাব তারপরে ইন্টারনেট ব্যবহার করা, নানা কিছু সার্চ করে ইন্টারনেট থেকে দেখে নেয়া, ই মেইল করা এগুলি আস্তে আস্তে সব শিখিয়ে দেব।
বাহ! মনের আনন্দ চেপে রাখা কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না তাই চুপচাপই রইলাম। মেয়ে তার কাজ শুরু করে দিল। অনেক কিছুই শেখাল আমিও শিখলাম। ফল যা হল তা একেবারে মন্দ বলার উপায় নেই।
কি বোর্ড চেপে চেপে, ছড়া, পদ্য, গল্প এমনকি উপন্যাস পর্যন্ত লিখতে পারছি। আমার শিক্ষা গুরুও খুশি আমিও মহা খুশি। ক্রমে ক্রমে আমার নিজের ওয়েব সাইট, ব্লগ বানানো শিখে ফেললাম।

এই যে এতক্ষণ ভরে সাতকাহন গীত গাইলাম সে যে কেন গাইলাম তা কি কিছু বুঝতে পেরেছেন? এটা হল মাত্র ভূমিকা এবার শোনেন আসল ঘটনা। একটা কথা কানে কানে বলে যাই, দেখবেন কাওকে বলবেন না, আমি কিন্তু আমার প্রিয়তমা পত্নী দেবীকে মোটেই ভয় পাই না। (সত্য না মিথ্যা জানি না)।

সেদিন এমনি করে কি বোর্ডের বোতাম চেপে চেপে একটা গল্প লিখছি আর প্রিয়তমা এসে বললেন
এই, দোকান থেকে নুডলস নিয়ে এসো বিকেলে রান্না করব। লেখা ছেড়ে উঠে গিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে দিলাম। ফিরে আবার বসেছি তখন
এই, যাওতো দেখ রান্না ঘরের জানালাটা খোলা আছে কিনা দেখে এসো খোলা থাকলে বন্ধ করে দিও মাছ ভেজে রেখেছি বিড়াল ঢুকলে সব খেয়ে ফেলবে যাও এক্ষণই যাও।
আমি গল্পের নায়িকাকে নৌকা ডুবি থেকে বাচাতে গিয়ে জানালা বন্ধ করার কথা ভুলে গেলাম আর অমনি একটু পরেই আবার তাড়া
কি হল জানালা বন্ধ করে এসেছ?
না ভুলে গেছিলাম
যাও এক্ষণই যাও। সারাদিন বসে বসে কি কর? তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না। তোমার কম্পিউটার বন্ধ করবে নাকি আমাকে উঠতে হবে?
ভয়ে আমার প্রাণ পাখি প্রায় খাঁচা ছেড়ে যাবার উপক্রম হল কিন্তু অনেক সাহস করে বললাম
আহা রাগ করছ কেন অন্তত কিছু অন্ন ধ্বংস তো হচ্ছে
হ্যাঁ শুধু তাই হচ্ছে , যাও কথা না বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে এসো
অগত্যা উঠে গেলাম। জানালা বন্ধ করে দেখি পানির ফিল্টার থেকে পানি লিক করে ডাইনিং স্পেসের মেঝে ভেসে যাচ্ছে। গিন্নিকে বলার সাহস না পেয়ে (বললেও সে আমাকেই মুছতে বলবে) ঘর মোছার ন্যাকরা আর বালতি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম আর অমনি তিনি রেগে এক ঝারি দিয়ে বললেন ঘুমটা মাত্র লেগে আসছিল দিলেতো ভেঙ্গে! কি হয়েছে?
কাঁচুমাচু করে ওগুলির ঠিকানা জানতে চাইলাম
এগুলি দিয়ে এখন কি করবে?
কাহিনী শোনালাম।

যাও দেখ রান্না ঘরের সিংকের নিচে ন্যাকরা আর বাথ রুমে কাল বালতি আছে, দেখবে লাল বালতি কিন্তু নিও না।
আমার মনে কিন্তু তখন গল্পের নায়ক নায়িকা এখন কি করবে কোথায় যাবে তাই নিয়ে একটু ভাবনা কাজ করছে আর আমি ভুলে গিয়ে বাথরুম থেকে বিপদ জনক রঙ লাল মনে করে লাল বালতি আর ন্যাকরা নিয়ে ফ্লোর মুছে ওখানেই রেখে চলে এসে আবার মাত্রই কি বোর্ডের সামনে বসেছি আর গিন্নি তখন বাথরুমে যাবার জন্য উঠেছেন। তিনি রুম থেকে বের হয়ে লাল বালতিতে ঘর মোছার ন্যাকড়া দেখে তেলে বেগুনে ঝাঁজ করে উঠলেন
করেছ কি এটা, এই কাপড় ধোয়ার বালতি এখানে কেন?
নিজে ভুল করেছি এখন স্বীকার না করে উপায় নেই। সাহস করে অকপটে (সত্যের নাকি জয় হয়) বললাম ওটায় ফ্লোর মুছে রেখেছি!
সারা দিন কি কর? একটু চোখেও দেখ না যে কাল বালতিতে ঘর মুছে? কর কি? (ঘর মোছার বালতির দিকেও আমাকে নজর দারি করতে হবে কখনও কি ভেবেছিলাম?)
হ্যাঁ তাইতো ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা আবার হলে এমন হবে না এবার একটু থাম। ওদিকে নায়কের যাবার কথা ছিল পার্কে কিন্তু এই হাঙ্গামায় তাকে নিয়ে গেলাম নদীর পাড়ে। যা হবার তাই হল। কাহিনীর বিভ্রাট। আবার সেখান থেকে নতুন করে লিখতে হল।

সন্ধ্যার পর লিখতে বসেছি আর তিনি টিভি দেখছেন। আমি বললাম কি দেখ আমি তোমার এক মাত্র সোয়ামী, আমি একটু আধটু লিখালিখি করে মনের সুখ পাবার চেষ্টা করি, আমি যখন লিখতে বসি তখন দয়া করে আমাকে কিছু বল না। লিখতে লিখতে গল্পের ক্লাইমেক্সে এসে পড়েছি একটু পরেই শেষ হবে এমন সময় খোঁচা দিয়ে বলল
কি হয়েছে চশমাটা চাইছি না?
আচ্ছা চশমাটা এগিয়ে দিলাম। আবার লেখা শুরু করেছি লেখার গভীরে চলে গেছি আবার এক ধমক
কি হল সাউন্ড কমিয়ে দিতে বলছি শুনছ না।
সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে এবার মধুর সুরে বললাম ওগো প্রিয়তমা, তুমি হলে আমার ঘরের সু গৃহিণী আমার প্রিয়তমা রমণী, জানত সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে
হুম, বুঝলাম কিন্তু এত মধুর কথা কিসের জন্যে?
দেখ তোমার একমাত্র সোয়ামী একজন লেখক, কত কি লিখছে তুমিতো আর এগুলি পড়ে দেখ না কাজেই বুঝতে পার না কত কি অমূল্য লিখা লিখছি, কাজেই বলছিলাম কি লেখার সময় অন্তত আমাকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকলে ভাল বৈ মন্দ হবে না। জান না, মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন লিখতেন তখন তার স্ত্রী ডরোথি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমার মাইকেলের কাগজ বা কলমের কালি ফুরিয়ে যায় তাহলে কে এনে দিবে? ও যে সারা রাত ধরে সাদা কাগজে লিখে যাবে! ভয়ে বসত না যদি ঘুমিয়ে পড়ে!
হুমায়ুন আহমেদের কুসুম কুমারি শাওন বলেছিল “একজন লেখক লিখছেন, তার থেকে পবিত্র দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না।”

তাই বলছিলাম কি একজন লেখককে একটু সাহায্য কর! বলা যায় না দেখবে আমি হয়ত একদিন হুমায়ুন আহমেদ হয়ে যাব তখন কি হবে? ভেবে দেখেছো? ভাবতো একবার, সবাই যখন আমার প্রশংসা করবে, অটোগ্রাফ নেয়ার জন্যে বাড়িতে লাইন পড়ে যাবে, টিভিতে আমার ইন্টারভিউ নিবে তখন গর্বে অহংকারে তোমার পা মাটিতেই পড়তে চাইবে না!
তোমাকে কত কি কিনে দিব তার কি কোন হিসেব আছে? হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে সেন্ট মার্টিনে বাড়ি করে দিয়েছিল আর আমি তোমাকে কাশমীরে বাড়ি করে দিব, তুমি মনের সুখে পায়ের উপরে পা রেখে সামনের ঝুর ঝুর করে ঝরা তুষার দেখবে আর কফি খাবে!
হ্যাঁ বুঝেছি, এখন যাওতো আধা কেজি কাঁচামরিচ নিয়ে এসো।
হাত থেকে চিনামাটির পেয়ালা পাকা মেঝেতে পড়ে যেমন খান খান হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায় আমার লেখক হবার সাধ বাসনাও তেমনি করে ভেঙ্গে গেলো।
লেখকের এমন বিড়ম্বনা সইবার কোন উপায় আছে কি না তার কোন সন্ধান দিতে পারেন কেও?
এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় বলতে পারেন? অন্তত সবাই মিলে একটু চেষ্টা করেই দেখুন না!

আধুনিক রোজার সাড়া জাগানো কিছু সহীহ তরিকা

রোজার ইতিহাস গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে মওলানা সাহেবদের দিনরাত সবক শুনতে শুনতে যারা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন অথবা বিরক্ত হওয়ার মত শোনার সময় যাদের নাই তাদের জন্য আমার সাড়া এই কিছু তরিকা আছে যাতে করে আপনি আধুনিক কায়দায় সহি রোজা রাখতে পারবেন।

সেহরির কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে উঠবেন। উঠেই ফেসবুকে লগইন করুন। সেহরি বিষয়ক স্ট্যাটাস দিন। বিশেষ কোন বান্ধবী/ বান্ধব যদি থাকে তাকে জাগিয়ে দিন। জাগিয়ে দিয়ে ঘন্টা খানেক কথা বলুন। রোজা রেখে খালি পেটে দিনের বেলা কথা বলে আরাম নেই। তাই এই সময়টি কাজে লাগান। ফজরের আগে রোজা শুরু হয় না। সুতরাং এই সময় মনের দুয়ার, মুখের লাগাম সব খুলে কথা বলুন। সব থেকে ভাল হয় সারারাত না ঘুমালে। রাতের খাবার খেয়ি ফোনালাপ শুরু করুন। নতুন নতুন বান্ধবী খুঁজে বের করুন। তাদের ইফতারির দাওয়াত দিন। সেহরির দাওয়াতও দিতে পারেন। আধুনিক রোজা সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ সেহরি পার্টি। তাই সেহরি পার্টী আয়োজনে ভুলবেন না। ঘুমিয়ে পড়লে পার্টি মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই রাতে ফেসবুক, সিনেমা, পার্টি এসবে ব্যস্ত থাকলে সেহরি পার্টীতে অংশগ্রহন সুনিশ্চিত। আধুনিক সহীহ রোজার তরিকায় সেহরি পার্টির স্থান অনেক উঁচুতে। সেহরিতে চিকেন ফ্রাই, লবস্টার, ম্যাগি নুডলস, হরলিক্স মিশ্রিত দুধ, বিফকারি রাখতে পারেন। সেহরি পার্টিতে সেলফি তুলতে কোন ভাবেই ভুলবেন না। পার্টির ফাঁকে ফাঁকে সেহরি পার্টির সেলফি ফেসবুকে আফডেট করুন। খাবার কতটুকু ইয়াম্মি ছিল সে স্ট্যাটাস দিতে ভুলবেন না। সিগারেটের অভ্যাস থাকলে শেষবারের মত সিগারেট খেয়ে নিন।

সেহরি পার্টি শেষে ঘুমিয়ে নিন। রোজার অজুহাতে বেশ একটু দেরিতে অফিসে যেতে পারেন। অফিস না থাকলে বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠার দরকার নেই। বারোটায় ঘুম ভাঙলে সাথে উঠে পড়বেন না যেন, নিদেন পক্ষে একটা পর্যন্ত গড়াগড়ি দিন। উঠে গোসল সারুন। গোসল করে পাঞ্জাবি পরে মুখে রোজাদার রোজাদার ভাব নিয়ে বের হম। পকেটে একটা টুপি রাখতে ভুলবেন না। ইফতারির সময় কাজে লাগবে। বিভিন্ন মার্কেটে যান। বন্ধু বান্ধবিদের ফোন দিয়ে তাদেরকে আসতে বলুন। বিভিন্ন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে ক্ষুধা লেগে গেলে, কোন একটা ফুডকোর্টে বসে খেয়ে নিতে পারেন। আর সহ্য করতে পারলে ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

সেহরি পার্টি না থাকলে বাসায় জেগে থাকাই উত্তম। ছোট রাত, না ঘুমিয়ে একেবারে সেহরি খেয়ে ঘুমদিন। সেহরির সময় টিভি চ্যানেল গুলো একবার ঘুরে আসতে পারেন। বিরক্ত লাগলে দরকার নাই। ঘুমানোর আগে অবশ্যই বান্ধবী/ বান্ধবীদের সাথে ফোনালাপ সেরে নিবেন। এই সময় আলাপ না হলে বান্ধবী রাগ হতে পারে না। রোজা অবস্থায় কাউকে রাগানো বুদ্ধিমানের কাজ না। যাদের একাধিক বান্ধবী আছে তারা এই রাতকে কাজে লাগান। ইফতারের পরে, মাঝরাতে, সেহরির আগে-পরে এভাবে শিডিউল করে সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখুন। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মত সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নিয়ম মেনে চলুন। তবে আপনার বান্ধবীর তালিকায় ভারতের মত কেউ থাকলে আপনাকে বিশেষ সাবধানে থাকতে হবে। এই ঈদে কাকে কি গিফট দিবেন সেটা ভেবে রাখুন। আপনি যদি বিশেষ চালাক প্রকৃতির হোন তাহলে কোন কোন গার্ল ফ্রেন্ডের কাছ থেকে গিফট আদায় করতে পারবেন। এমনকি আপনার গার্লফ্রেন্ড অন্য বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পাওয়া উপহার আপনার হাতে তুলে দিয়ে বলবে, এটা আমি শুধু তোমার জন্য নিজের হাতে কিনেছি (নিজের হাতে বানিয়েছিও বলে ফেলতে পারেন)। সবই নির্ভর করে আপনি তাদের কিভাবে ম্যানেজ করতে পারেন তার উপর।

আধুনিক রোজায় ফেসবুকের গুরুত্ব অপরিসীম। সেহরি পার্টি ইফতার পার্টি এসবের খবরা-খবর, সেলফি তো আছেই তাছেড়া এই মুমিন বান্দার জন্য কয়টা লাইক? আমীন না বলে যাবেন না কেউ, মুমীন বান্দারা শেয়ার করুন মার্কা প্রচুর স্ট্যাটাস, ছবি আসে। এইগুলোতে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে পারেন। নিজেও এসব পোস্ট দিতে পারেন। না হলে আপনি প্রকৃত রোজাদার ফেসবুকার না।
বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ইফতারিতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। চেষ্টা করুন এর প্রত্যেকটি অফার গ্রহন করতে। ইফতারি বিষয়ক স্ট্যাটাসে অবশ্যই ইফতারির দাম লিখতে ভুলবেন না। কত দামী ইফতারি খেলেন তা জাতিকে জানানোর দরকার আছে। আর যেদিন ইফতার পার্টি থাকবেনা বাসায় জম্পেশ ইফতারির ব্যাবস্থা করুন। বিভিন্ন টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে দেখে ইফতারির আইটেম তৈরি করুন। ইফতারিতে গাজরের হালুয়া, ম্যাগি নুডলস, পুডিং, স্টার হালিম/মামা হালিম, ট্যাং/রুহ আফজা থাকা বাঞ্চনীয়। টিভি’র আজান শুনে ইফতার শুরু করুন। ইফতার এশার নামাজের আগে শেষ হওয়া সমীচীন নয়। ইফতারির সময় মাথায় টুপি থাকলে ভাল দেখাবে। মেয়েরা সারাদিন বেপর্দা ঘুরাঘুরি করলেও ইফতারির সময় মাথায় কাপড় দিন।

সারাদিনে শরীরে অনেক ধকল গেছে এবারে বিশ্রাম নিন, ফেসবুকে লগইন করুন।

ফরিদ সাহেবের রোজনামচা

ফরিদ সাহেব এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। এতদিন সরকারি চাকরি করে ক্লান্ত হয়ে হাত পায়ে যখন নানা উপসর্গ যেমন গিরায় গিরায় ব্যথা, মাজায় ব্যথা দেখা দিচ্ছিল তখন একেবারে সময় মত এলপিআরের অফিস অর্ডার পেল। বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণে সাগর উপকূল ছাড়িয়ে সুন্দরবনের ধারে মংলায় সুন্দর মনোরম পরিবেশে জীবনের অনেকগুলি বছর কাটিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দোতলার বারান্দায় বসে বাসার বাম দিকে মংলা নালা আর পশ্চিমে একটু দূরে পশুর নদী এবং সামনে একটু ডানে সুন্দরবনের অবারিত সবুজ সেই সাথে পাখপাখালির কিচিরমিচির শুনে শুনে সুখেই কাটিয়ে দিয়েছে দিনগুলি। অবসর পেয়ে পৈত্রিক বাড়ি ঢাকায় এসে ঢাকা শহরের অন্ধ গলির পাশে বন্ধ অন্ধকার বাড়িতে হাঁপিয়ে উঠছিল। এতদিন যখন ঊর্ধ্বতন কর্তার নানা রকমের হুকুম তামিল করা, সরকারি নানা ধরনের কাজকর্ম দেখাশুনা করা এবং অধস্তনদের নানা রকম সমস্যা নিয়ে তা নিরসনের জন্য জটিল ভাবনায় ব্যস্ত থাকত সেখানে এখন সারাদিন শুয়ে বসে শুধু শুধু গায়ে গতরের ওজন আর সর্বাঙ্গের ব্যথা বাড়ান ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এমনি এক সময় মেঝ মেয়ে একদিন মা বাবা আর বোনদের ডেকে বেশ আনন্দের সাথে জানাল তার একটা চাকরি হয়েছে। ভাল পদ, ভাল বেতন তবে থাকতে হবে একেবারে প্রত্যন্ত এক উপজেলায়।

বাহ! বেশ ভাল কথা!
হ্যাঁ আব্বু আমিও এমনি একটা চাকরি খুজছিলাম। এখানে বছর দুয়েকের অভিজ্ঞতা নিয়ে এলে আমার পরের ডিগ্রিটা নেয়া হবে। ওতে প্র্যাকটিকাল এক্সপেরিয়ান্সের দরকার।
বেশ ভাল হয়েছে, তাহলে জয়েন করে ফেল। জয়েন করার লাস্ট ডেট কবে?
এইতো সামনের ১৭ তারিখ কিন্তু তোমরা আমার সাথে যাবে না?
তোমরা কারা?
মা আর তুমি!
হ্যাঁ যাব। আমরা গিয়ে তোমার থাকা রান্না খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে আসবইতো
না শুধু দিয়ে আসলেই হবে না, আমার সাথে ওখানে থাকতে হবে
থাকতে হবে? বল কি! এই দুই বছর ওখানে থাকতে হবে?
এখানেই বা কি করবে? এখানে তোমার কি কাজ?
ফরিদ সাহেব ভেবে দেখল মন্দ কি? এখানে বসে বসে হাড়ে ঘাস গজাবার সময় হয়ে গেছে
কিন্তু বাবা তোমার মা না হয় তোমার রান্না বান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকবে কিন্তু আমি কি করব? আমার সময় কি করে কাটবে ওই অজ গ্রামে?
তুমি চিন্তা করোনা আব্বু আমি তোমার জন্য একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দিব
কি ব্যবস্থা করবে, কোথায়?
আহা আগে চলইনা তখন দেখব কি করা যায়!
বেশ চল।

সুনামগঞ্জের আগাম টিকেট করা হলো। সুনামগঞ্জে নেমে আবার পাশের এক উপজেলায় যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যা যা সাথে নেয়া দরকার বা কোচে যেতে যা যা নেয়া যায় সেগুলি বাঁধাছাঁদা করে শুভক্ষণে শুভ লগ্নে রওয়ানা হলো। বিকেলে সুনামগঞ্জ পৌঁছে আবার একটা সিএনজি নিয়ে চাকরীস্থলে পৌঁছল। প্রথমেই থাকার জন্য একটা হোটেলে আশ্রয় নিয়ে বের হলো খাবার সন্ধানে। আশেপাশে বেশ কয়েকটা রেস্টুরেন্ট দেখে একটায় ঢুকে পরল। খাবার পাট সেরে এলাকাটা ঘুরে ফিরে দেখার জন্য রিকশায় উঠে বসল। চারদিকে হাওরে থৈ থৈ পানি, দূরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় ছায়া ছায়া দেখা যায়। বেশ সুন্দর এলাকা। ছোট্ট উপজেলা শহর ঘুরে আসতে বেশিক্ষণ লাগল না।
পরদিন কাগজপত্র নিয়ে জয়েন করার জন্য মাঝু অফিসে চলে গেল। জয়েন করে অফিসের বস আর কলিগদের সাথে আলাপ পরিচয় হলো। সবাই জানতে চাইল কোথায় উঠেছেন?
হোটেলের নাম বলতে সবাই চিনতে পারল। সাথে মা বাবা এসেছে জেনে সবাই অবাক হলো।
বলেন কি আপনি কি একই মেয়ে?
না না আমার বড় আর ছোট দুই বোন আছে ঢাকার বাড়িতে।
ও তাহলে আপনি বুঝি বাবা মার খুব প্রিয় মেয়ে?
তা একেবারে অস্বীকার করা যাবে না তবে বাবা রিটায়ার্ড মানুষ তাই মা বাবাকে নিয়েই এসেছি তাছাড়া বাবা মা আমাদের তিন বোনকেই খুব স্নেহ করেন। কখনও কোথাও একা থাকিনি তাই একা আসতে দিতে রাজি হয়নি। ওনারা না এলে আমার এখানে জয়েন করা হতো না।
বেশ ভাল কথা। তাহলে এখন আপনার জন্য একটা ভাল বাসা খুঁজতে হয়।
বস সবাইকে ডেকে মেয়ের জন্য একটা বাসা দেখতে বলে দিল। একজন বলল
আপা কাছেই একটা সুন্দর বাসা আছে চলেন বিকেলে যেয়ে দেখবেন। কাছেই, আপনি হেটে অফিসে আসতে পারবেন।
হ্যাঁ যাব, সাথে আব্বু আম্মুকেও নিয়ে যাব।
বিকেলে অফিস সেরে মেয়ে তার এক কলিগকে সাথে নিয়ে হোটেলে উপস্থিত। পরিচয়ের পালা শেষ করে বলল
চল, আব্বু আম্মু দুইজনেই চল মনির ভাই একটা বাসা দেখাতে নিয়ে যাবে। কাছেই, হেটেই যেতে পারব।
চল।

বাসা দেখে খুবই ভাল লাগল। এত তাড়াতাড়ি এমন জায়গায় মেয়ের অফিসের এত কাছে এত সুন্দর বাসা পাবে ভাবতেই পারেনি। তিন রুম, বারান্দা, দুই টয়লেট তাতে আবার টাইলস বসান। উপজেলা শহরে এমন বাসা! চমৎকার! ঢাকার তুলনায় ভাড়া এত কম যে ভাবাই যায় না! তবে সমস্যা হলো এখানে রান্নার গ্যাস নেই। অবশ্য লাকড়ি দিয়ে রান্নার জন্য খুবই সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। বেশ বড়সড় রান্না ঘর আর তার এক পাশে টেবিল সমান উঁচুতে দুইটা লাকড়ির চুলা, উপরে এক্সাস্ট ফ্যান আর লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে, চুলার নিচে আবার বেশ কিছু লাকড়ি রাখা যায়। ওরা সবাই এমন ব্যবস্থা দেখে অবাক হলো। এর আগে কোথাও এমন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। বাসায় ঢুকতে রাস্তার মুখে পাশেই আবার এলপি গ্যাসের বোতলের দোকানও দেখেছে একটা। মনির সাহেব জানাল এখানে রান্নার লাকড়ির দাম বেশ সস্তা। লাকড়িতেই রান্না বান্না হবে তবে জরুরী কাজের জন্য একটা সিলিন্ডার রাখলেই হবে। ব্যাস আর কি! বাড়িওয়ালার সাথে ভাড়া ইত্যাদি নিয়ে আলাপ সেরে পাকা কথা হয়ে গেল। ঢাকার মত কোন অগ্রিম দেয়ার ঝামেলা নেই। আগামী কাল ধোয়া মুছা করে তার পরেরদিন বাসায় উঠবে এমন কথা হলো। যথা সময়ে হোটেল ছেড়ে বাসায় এসে উঠল। এবারে ছুটল হাড়ি পাতিল, রান্নার আয়োজন, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেনাকাটা করতে। বাল্ব, ফ্যান, বাসন পেয়ালা, চামচ খুন্তি, রুটি বানাবার বেলন পিড়ি, দাও বটি, তোষক জাজিম বালিশ মশারি কম কিছুতো লাগে না! ছোট শহর বলে হাতের কাছেই সব পাওয়া যায়। একটা নিয়ে এসেই শুনে আর একটা আনতে হবে। আবার ছুটল। আবার ছুটল। আবার ছুটল। এবারে মোটামুটি থাকার মত একটু ব্যবস্থা হলো। মাঝুর মা ডাল, আলু ভর্তা ভাত রান্না করল। আস্তে আস্তে খাট, ডাইনিং টেবিল চেয়ার ফ্রিজ সহ আরও অনেক টুকি টাকি কেনা হচ্ছে একে একে। প্রায় প্রতিদিনই তিন চারবার করে মাঝুর বাবাকে বাজারে যেতে হচ্ছে। কাছে বলে হেঁটেই যায় আবার হেঁটেই আসে। তবে মাঝুর বাবা ফরিদ সাহেব মাছ কিনতে পারেননা বলে দেখে শুনে মাছ কেনার জন্য মাঝুর মা তার সাথে যায়। এখানে এসে এত সব কিছু সুবিধা হলে কি হবে হাউজ এসিস্ট্যান্ট বা কাজের মানুষ সখিনা কিংবা আবদুল কাওকে পাওয়া যাচ্ছে না মোটেই।

এদিকে ফরিদ সাহেব এখানে আসার আগে যেমন করে ভেবেছিলেন ওখানে যেয়ে আমার সময় কাটাব কি করে! আসলে দেখা যাচ্ছে কোথা দিয়ে যে তার দিনগুলি কেটে যাচ্ছে তা টেরই পাচ্ছেন না। যেমন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই মাঝুর মা মধুর কণ্ঠে আবদার করেন: শোন আমিতো আটা মাখাচ্ছি তুমি একটু সিংকের বাসন পেয়ালা গুলি ধুয়ে দাও না!
বেশ ধুয়ে দিচ্ছি। এই নাও তোমার সিংক খালি করে দিলাম।
বাহ! বেশ কাজ করেছ এবার এক কাজ করতে পারবে?
কি কাজ?
যা গরম পরেছে রান্না ঘরে মোটেই টিকতে পারছি না ওদিকে মাঝুর অফিসে যাবার সময় হয়ে এলো তুমি রুটি গুলি বেলে দাও আমি সেঁকে নিচ্ছি।
আচ্ছা দাও আমিই বেলে দিচ্ছি
এই ভাবে কেউ রুটি বেলে! এ তো বাংলাদেশের মানচিত্র বানিয়েছ! সারা জীবন ভরে কি শিখেছ? কিচ্ছু শিখলে না! রুটিও বেলতে পার না!
বাংলাদেশের মানচিত্র রুটি বেলা এবং সেঁকা হয়ে গেল। ফরিদ সাহেব এসে একটু বারান্দায় দাঁড়াল। বাইরে ডোবার পরে রাস্তা। রাস্তা দিয়ে বাস, লেগুনা সিলেট সুনামগঞ্জে যাচ্ছে আসছে তাই দেখছে। এর মধ্য এবার আর এক আবদার রেডি। রান্না ঘর থেকে মধুর ডাক ভেসে এলো, তুমি কোথায়? শুনছ এদিকে একটু আস না!
ওমনিই ফরিদ সাহেব এসে হাজির।
বল কি জন্য ডেকেছ
পেঁপে ভাজি করেছি এবার ডিম ভাজতে হবে, মাঝুতো পোচ খায় না ওর জন্যে একটা ডিম ভেজে দিই কি বল!
দাও, এজন্যে আবার আমাকে ডাকছ কেন?
একটু মিষ্টি হেসে, দুইটা পিয়াজ মরিচ কেটে দাওনা!
বেশ দিচ্ছি।
আহা করছ কি? এই এত মোটা করে কেউ মরিচ কুচি করে? আরও পাতলা করে কাট।
ডিমের পোচ এবং অমলেট হয়ে গেল, রুটিতো আগেই হয়ে গেছে। এবার মাঝু রেডি হয়ে টেবিলে এসে বসল। সবাই এক সাথে নাস্তা করছে।
শুনছ চা টা একটু ঢেলে আনতে পারবে? ওখানে দেখ চায়ের কাপ রেডি আছে
কথাটা শুনে মাঝু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মার মুখের দিকে তাকাল, আব্বুকে বলছ কেন, আমি আনতে পারি না?
থাক না তোমার আব্বু খুব ভাল চা বানাতে পারে।
সবার নাশতা এবং চা পর্ব শেষ হলো। মাঝু অফিসে চলে গেল।

তুমি আবার এগুলি ধোয়ার চেষ্টা করবে না সেই আজানের সময় উঠেছি আমি একটু গড়িয়ে নিয়ে আসছি।
মাঝুর মা বললে কি হবে মাঝুর বাবা রান্না ঘরে গিয়ে নাশতার বাসন পেয়ালা চায়ের কাপ সব কিছু ধুয়ে রেখে আসল। একটু পরে মাঝুর মা বলল বাজারে যেতে হবে। দেশী মুরগি পেলে আনবে আর সবজি, কাঁচামরিচ টমেটো আনবে আর চিংড়ি মাছ পেলে নিয়ে আসবে একটু ভর্তা বানাব।
মাঝুর বাবা আবার দুইটার বেশি সদাই হলে কোনোদিনই মনে রাখতে পারে না তাই স্লিপ প্যাড আর কলম নিয়ে লিখে নেয়ার জন্য আবার ডাইনিং টেবিলে বসল।
কি কি যেন বললে আবার বল না!
আচ্ছা তুমি কি কাজের মানুষ নাকি যে তোমাকে লিখে নিতে হবে? যা যা পাবে যা ভাল লাগবে নিয়ে আসবে।
না মানে ভুলে গেলেতো আবার যেতে হবে তাই লিখে নিয়েই যাই না কেন। তাছাড়া লিখতে পারি আর তা কাজে লাগাব না?
বাজারে থাকতেই মাঝুর বাবার পকেটে মোবাইল ফোন বেজে উঠল।
হ্যালো, কি ব্যাপার? আর কি লাগবে?
শোন, দেখতো লাউ আছে নাকি বাজারে!
না লাউতো দেখলাম না
চিংড়ি মাছ পেয়েছ?
হ্যাঁ নিয়েছি
আচ্ছা চলে আস তাহলে, রিকশায় এসো হেটে আসবে না কিন্তু
আচ্ছা দেখি।
বাজার থেকে ফিরে এসে দেখে মাঝুর মা রান্না ঘরে রান্নার আয়োজন করছে।
এই যে দেখ তোমাকে তখন নিষেধ করলাম বাসন পেয়ালা ধুবে না কিন্তু দেখ কি করেছ!
কি করেছি?
এই যে দেখ ডিমের প্লেটে যেমন তেল ছিল ওমনিই রয়ে গেছে
ও তাই নাকি?

তোমার ধোয়া এমনই হয় মনে হয় সখিনারা ধুয়েছে, তোমাকে দিয়ে কোন কাজই হবে না কি করে যে চলেছ এতদিন!
আরে ঠিক আছে কেউতো আর দেখছে না! চালিয়ে দাও না! এত এমন করছ কেন? আমিতো তোমার একটু আয়েশের জন্যেই চেষ্টা করেছি!
থাক এমন আয়েশের দরকার নেই, এগুলি আমাকে আবার ধুতে হবে, বুঝেছ?
তখনকার ঝর মোটামুটি ওখানেই থেমে গেল। আবার দুপুরে বাথরুম থেকে ডাকাডাকি।
কি হলো?
শোন এই কাপর গুলি ভাল করে ঝেরে বারান্দায় শুকাতে দাও
আচ্ছা দিচ্ছি।
গোসল সেরে এসে মাঝুর মায়ের আর এক দফা সুবচন প্রক্ষেপণ শুরু হলো
তোমাকে বললাম ভাল করে ঝেরে শুকাতে দিতে আর একি করেছ? কাপড়গুলা ঝাড়তে পার না?
আহা ইস্ত্রি করে নিলেই হবে এতে এত অস্থির হবার কি আছে?

থাক আর সাফাই গাইতে হবে না এখন যাও মেয়ের লাঞ্চে আসার সময় হয়েছে রান্নাঘর থেকে ভাত তরকারি পেয়ালায় বেরে টেবিলে নিয়ে আস আমি নামাজ পড়ে আসছি।
আবার বিকেল বেলা। শুনছ! বারান্দা থেকে শুকানো কাপড়গুলা নিয়ে এসে খাটে রাখ ভাজ করতে যেও না আবার। আমি ভাজ করব। কাপড় আনা হলে জানালা গুলি বন্ধ করে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ওঘর থেকে কয়েকটা ছোট শুকনা লাকড়ি রান্না ঘরে এনে রাখ দেখি রাতের জন্য ভাত রান্না করতে হবে।
রাতের খাবার হয়ে গেল।
শোন, তরকারি গুলি বাটিতে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারবে?
হ্যাঁ তা আর পারব না? দাড়াও রাখছি।
বেশ রেখে আস।
ফরিদ সাহেবের অবস্থা এমনিই চলছে।
একদিন ফরিদ সাহেব মেয়েকে বলল বাবা তুমি না বলেছিলে আমাকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দিবে, মনে আছে?
থাকবেনা কেন?
তাহলে ব্যবস্থা করছ না কেন?
এ আবার নতুন করে কি করব! তুমি একটা জব করছ না?
সে আবার কি করছি?
কেন আম্মুর আবদুলের কাজটা করছ না?

মজার রেসিপি কাচ্চি বিরিয়ানি

অনেককেই দেখছি নানান রকমারি রেসিপি লিখছেন। শাপলা (ইদানিং তাকে দেখাই যাচ্ছে না), আমার প্রিয়তমা এবং একমাত্র প্রেমিকা ইজি রেসিপি এদের এই সব মজার মজার রেসিপি দেখে আমা্রও একটু সাধ হল দেশের পাবলিক, জনগন এবং জাতির উদ্দেশ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার। যেমন কথা তেমন কাজ, সাথে সাথে কলম কেঁচি হাতে বসে পড়লাম এমন একটা মজার রেসিপি লেখার জন্য। আমাকে দেখতে শান্ত সুবোধ বালকের মত মনে হলে কি হবে আমি কিন্তু আসলে অতিমাত্রায় অস্থির প্রকৃতির মানুষ। যখন যা ভাবি তা না করা পর্যন্ত স্থির হতে পারি না।
যাক, এমন কথা বললে সারা দিন ধরেই বলা যায় কিন্তু তাতে কি এমন আসে যায়? কাজে চলে আসি?
তাহলে আজ আমি একটা বিরিয়ানির রেসিপি দেই? ভয়ের কিছু নেই, নিতান্ত খারাপ কিছু হবে বলে আমি মনেই করি না। তা হলে শুরু করছি:

উপকরণঃ
১। কাচ্চি বিরিয়ানি- এক প্লেট।
২। শামি কাবাব- দুইটা কিংবা চিকেন কাটলেট হলেও চালিয়ে নেয়া যাবে।
৩। চিকেন ফ্রাই- দুই টুকরা, এর সাথে অল্প কিছু ফ্রেঞ্চ চিপস নিতে পারেন।
৪। টমাটো, শশা, কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ, লেটুস পাতা ও ধনে পাতার সালাদ- এক কোয়ার্টার প্লেট।
৫। মাটন রেজালা- এক পেয়ালা।
৬। এক গ্লাস বোরহানি, বোরহানি না পেলে কোক বা স্প্রাইট দিয়ে আজকের মত চালিয়ে দিন।
৭। রাইস পুডিং/আইসক্রিম/ফ্রুট কাস্টার্ড- এক বাটি।
৮। পানি- এক গ্লাস।

কি ভাবে সদ্ব্যবহার করবেনঃ
(যদি আপনি হাত দিয়ে খেতে পারেন তাহলে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন আর যদি ছুড়ি কাটা দিয়ে খাবার অভ্যাস থাকে তাহলে ডান হাতে কাটা নিয়ে শুরু করুন)
১। হাত মুখ ভাল করে ধুয়ে টেবিলে বসুন।
২। সালাদের প্লেট থেকে দুই এক টুকরা শশা কিংবা লেটুস নিয়ে চিবিয়ে খেতে থাকুন। এতে মুখে এনজাইম নিঃসৃত হবে এবং খাবার খুব সহজেই হজম হবে।
৩। একটু বোরহানি চুমুক দিন। রুচি বৃদ্ধি পাবে।
৪। প্লেট থেকে কাবাব কিংবা চিকেন ফ্রাই আপনার পছন্দ মত তুলে খেতে থাকুন।
৫। এবার একটু একটু করে বিরিয়ানি মুখে দিন। সাথে একটু সালাদ/বোরহানি নিতে পারেন।
৬। এই ভাবে কার কথায় কান না দিয়ে কিংবা অন্য কোন দিকে মনযোগ না দিয়ে আপনার সম্পূর্ণ ইচ্ছে মত খেয়ে শেষ করুন।
৭। গ্লাসের তলানি বোরহানি বা কোক এক চুমুকে শেষ করে নিন।
৮। এবার ডেজার্ট এর পেয়ালা থেকে আপনার রুচি মত যা সম্ভব খেয়ে নিন।
৯। কিছুক্ষণ পরে পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে পান করে নিন।

আর কিছু মনে হয় বাকি নেই তাই এবার পাশের দোকানে গিয়ে এক খিলি পান কিনে চিবুতে থাকুন। সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন কিন্তু…………। যদি কেহ এর চেয়ে কোন উন্নত কিছু করতে চান তাহলে অনাদরে গৃহিত হবে, এব্যাপারে কোন ভাবনা করবেননা।
বিঃদ্রঃ রেসিপিটা কেমন লাগল জানাবেন, না জানালে এই পোস্ট দেখা নিষেধ।

লেডিস ফার্স্ট

টোনা এবং টুনির মাঝে গভীর প্রেম। কেও কাওকে ছাড়া থাকতে পারে না। এমনকি তারা এক সাথে থাকবে বলে একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে যাতে করে অন্তত কাজের সময় দুইজনকে খুব একটা বেশী সময় ধরে দূরে থাকতে না হয়।
একদিন তারা উভয়ে কাজ শেষ করে একটা পাব এ গিয়ে বসল। অনেকদিন পরে দুই জনে এক সাথে একটু সুরা পান করবে।

টোনা জিজ্ঞেস করল তুমি কি খাবে?
একটু সাদা ওয়াইন হলেই হবে।
টোনা টুনির ইচ্ছা জেনে বার কাউন্টারে গিয়ে টুনির জন্য একটা সাদা ওয়াইন আর নিজের জন্য এক পাইন্ট লাগার নিয়ে এসে টুনির পাশে বসে ওয়াইনের গ্লাসটা টুনির দিকে এগিয়ে দিল।
চিয়ার্স করে একটু একটু চুমুক দিচ্ছে আর অতীত, ভবিষ্যৎ বর্তমান নিয়ে নানা রকম গল্প করছে আর গ্লাস ফুরিয়ে গেলে আবার বার এ গিয়ে নতুন করে গ্লাস ভরে আনছে। এভাবে অনেকক্ষণ ধরে অনেক পান করে সবারই মাথা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল।
টোনার সামান্য এক কথায় টুনি এমন রেগে গেল যে আত্মবিসর্জন দিবে বলে টোনাকে জানিয়ে দিল।
এতদিন ধরে আমরা একসাথে রয়েছি আর আজ তুমি আমাকে এই কথা বললে? আমি আর বেচে থাকতে চাই না। বলেই পাব ছেড়ে ঝরের মত বের হয়ে গেল।
তার পিছনে টোনা অসমাপ্ত গ্লাস ফেলে দৌড় দিল।
টুনি দৌড়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে তাতে উঠতে যাবে এমন সময় টোনাও টুনির সাথে ট্যাক্সিতে উঠেই বলল টুনি প্লিজ তুমি একা যেয়ো না দরকার হলে আমরা একসাথেই মরব।
এর মধ্যে টুনি ড্রাইভারকে বলল কাছের পাহারের নিচে যেতে, গন্তব্য শুনেই ড্রাইভার পাহারের দিকে ফার্স্ট গিয়ার, সেকেন্ড গিয়ার, থার্ড গিয়ার এবং অবশেষে ফোর্থ গিয়ারে দিয়ে ফুল স্পীডে ছুটে চলল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পাহারের নিচে এসে উপস্থিত।
টুনি পার্স খুলে মিটার দেখে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দুর্বার গতিতে পাহার বেয়ে উপরে উঠছে আর তার পিছু পিছু টোনাও।
পাহারের চূড়ায় উঠে টোনা বলল চল আমরা একসাথে লাফ দেই!
না, পাব থেকে যেমন আমি আগে বের হয়েছি তেমনি আমি আগে লাফ দিব।
না না তা কি করে হয়? তার চেয়ে আমিই আগে লাফ দেই।
না, আমি আগে লাফ দেব।
না, তা হতেই পারে না, আমি বলছি চল আমরা এক সাথে হাত ধরে লাফ দেই।
অসম্ভব, আমার পক্ষে তোমার হাত ধরা আর সম্ভব নয়।
তাহলে ঠিক আছে, দেখ আমিই আগে লাফ দিচ্ছি কারণ আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালবাসি।
বলেই টোনা লাফ দিল আর অবধারিত ভাবে নিচে পরে গিয়ে মৃত্যুর সাথেই আলিঙ্গন করল। টুনি যেমন পাহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল তেমনি দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে টোনার মৃত্যুর দৃশ্য দেখে নিশ্চিত হয়ে আস্তে আস্তে পাহার থেকে নেমে বাসায় ফিরে গেল।

ঘটনাক্রমে ওই পাহার চূড়ায় এক দাঁড়কাক বিকেল বেলা হাওয়া খেতে এসেছিল এবং টোনা টুনির এই কথোপকথন এবং তাদের কার্যকলাপ সবই দেখছিল শুনছিল। তবে সে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি যে, টোনাই আগে লাফ দিবে। দাঁড়কাক ভাবল এভাবে যদি টুনি টোনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তাহলে একটা কথা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে যে, “লেডিস ফার্স্ট” তাহলে মহিলারা অত্যন্ত পুলকিত হবে এবং অন্তত তারা আর এভাবে কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার সুযোগ পাবে না।

তৈল

তৈল যে কি পদার্থ, তাহা সংস্কৃত কবিরা কতক বুঝিয়াছিলেন। তাঁহাদের মতে তৈলের অপর নাম স্নেহ। বাস্তবিকও স্নেহ ও তৈল একই পদার্থ। আমি তোমায় স্নেহ করি, তুমি আমায় স্নেহ কর অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে তৈল দিয়া থাকি। স্নেহ কি? যাহা স্নিগ্ধ বা ঠান্ডা করে, তাহার নাম স্নেহ। তৈলের ন্যায় ঠাণ্ডা করিতে আর কিসে পারে ?

সংস্কৃত কবিরা ঠিকই বুঝিয়াছিলেন। যেহেতু তাহারা সকল মনুষ্যকেই সমানরূপে স্নেহ করিতে বা তৈল প্রদান করিতে উপদেশ দিয়াছেন।

বাস্তবিকই তৈল সর্বশক্তিমান; যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য,তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে।

যে সর্বশক্তিময় তৈল ব্যবহার করিতে জানে, সে সর্বশক্তিমান। তাহার কাছে জগতের সকল কাজই সোজা। তাহার চাকরির জন্য ভাবিতে হয় না — উকীলিতে পসার করিবার জন্য সময় নষ্ট করিতে হয় না, বিনা কাজে বসিয়া থাকিতে হয় না, কোন কাজেই শিক্ষানবিশ থাকিতে হয় না। যে তৈল দিতে পারিবে, তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসার হইতে পারে। আহাম্মুক হইলেও ম্যাজিষ্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে এবং দুর্লভরাম হইয়াও উড়িষ্যার গভর্ণর হইতে পারে।

তৈলের মহিমা অতি অপরূপ। তৈল নহিলে জগতের কোন কাজ সিদ্ধ হয় না। তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না,ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না, চেহেরা খোলে না, হাজার গুন থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না, তৈল থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।

সর্বশক্তিময় তৈল নানারূপে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তৈলের যে মূর্তিতে আমরা গুরুজনকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম ভক্তি, যাহাতে গৃহিণীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম প্রণয়; যাহাতে প্রতিবেশীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম মৈত্রী; যাহা দ্বারা সমস্ত জগৎকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম শিষ্টাচার ও সৌজন্য “ফিলনথপি।” যাহা দ্বারা সাহেবকে স্নিগ্ধ করি তাহার নাম লয়েলটি ; যাহা দ্বারা বড়লোককে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম নম্রতা বা মডেষ্টি। চাকর বাকর প্রভৃতিকেও আমরা তৈল দিয়া থাকি, তাহার পরিবর্তে ভক্তি বা যত্ন পাই। অনেকের নিকট তৈল দিয়া তৈল বাহির করি।

পরস্পর ঘর্ষিত হইলে সকল সকল বস্তুতেই অগ্ন্যুদ্গম হয়। অগ্ন্যুদ্গম নিবারণের একমাত্র উপায় তৈল। এইজন্যই রেলের চাকায় তৈলের অনুকল্প চর্বি দিয়া থাকে। এইজন্যই যখন দুজনে ঘোরতর বিবাদে লঙ্কাকাণ্ড উপস্থিত হয়, তখন রফা নামক তৈল আসিয়া উভয় ঠাণ্ডা করিয়া দেয়। তৈলের যদি অগ্নিনিবারণী শক্তি না থাকিত, তবে গৃহে গৃহে গ্রামে গ্রামে পিতাপুত্রে স্বামী-স্ত্রীতে রাজায়-প্রজায় বিবাগ বিসম্বাদে নিরন্তর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইত।

পূর্বেই বলা গিয়াছে, যে তৈল দিতে পারে, সে সর্বশক্তিমান, কিন্তু তৈল দিলেই হয় না। দিবার পাত্র আছে,সময় আছে, কৌশল আছে।

তৈল দ্বারা অগ্নি পর্যন্ত বশতাপন্ন হয়। অগ্নিতে অল্প তৈল দিয়া সমস্ত রাত্রি ঘরে আবদ্ধ রাখা যায়। কিন্তু সে তৈল মূর্তিমান।

কে যে তৈল দিবার পাত্র নয়, তাহা বলা যায় না। পুঁটে তেলি হইতে লাটসাহেব পর্যন্ত তৈল দিবার পাত্র। তৈল এমন জিনিষ নয় যে, নষ্ট হয়। একবার দিয়া রাখিলে নিশ্চয়ই কোন না কোন ফল ফলিবে। কিন্তু তথাপি যাহার নিকট উপস্থিত কাজ আদায় করিতে হইবে, সেই তৈলনিষেধের প্রধান পাত্র। সময় — যে সময়েই হউক, তৈল দিয়া রাখিলেই কাজ হইবে। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে অল্প তৈলে অধিক কাজ হয়।

কৌশল — পূর্বেই উল্লেখ করা গিয়েছে, যেরূপেই হউক, তৈল দিলে কিছু না কিছু উপকার হইবে। যেহেতু তৈল নষ্ট হয় না, তথাপি দিবার কৌশল আছে। তাহার প্রমাণ ভট্টাচার্যেরা সমস্ত দিন বকিয়াও যাহার নিকট পাঁচ সিকা বৈ আদায় করিতে পারিল না, একজন ইংরেজিওয়ালা তাহার নিকট অনায়াসে ৫০ টাকা বাহির করিয়া লইয়া গেল। কৌশল করিয়া এক বিন্দু দিলে যত কাজ হয়, বিনা কৌশলে কলস কলস ঢালিলেও তত হয় না।

ব্যক্তিবিশেষে তৈলের গুনতারতাম্য অনেক আছে। নিষ্কৃত্রিম তৈল পাওয়া অতি দুর্লভ। কিন্তু তৈলের এমনি একটি আশ্চর্য সম্মিলনীশক্তি আছে যে, তাহাতে যে উহা অন্য সকল পদার্থের গুনই আত্নসাৎ করিতে পারে। যাহার বিদ্যা আছে, তাহার তৈল আমার তৈল হইতে মূল্যবান। বিদ্যার উপর যাহার বুদ্ধি আছে, তাহার আরও মূল্যবান। তাহার উপর যদি ধন থাকে, তবে তাহার প্রতি বিন্দুর মূল্য লক্ষ টাকা। কিন্তু তৈল না থাকিলে তাহার বুদ্ধি থাকুক, হাজার বিদ্যা থাকুক, হাজার ধন থাকুক, কেহই টের পায় না।

তৈল দিবার প্রবৃত্তি স্বাভাবিক। এ প্রবৃত্তি সকলেরই আছে এবং সুবিধামত আপন গৃহে ও আপন দলে সকলেই ইহা প্রয়োগ করিয়া থাকে, কিন্তু অনেকে এত অধিক স্বার্থপর, বাহিরের লোককে তৈল দিতে পারে না। তৈলদান প্রবৃত্তি স্বাভাবিক হইলেও উহাতে কৃতকার্য হওয়া অদৃষ্টসাপেক্ষ।

আজকাল বিজ্ঞান, শিল্প প্রভৃতি শিখাইবার জন্য নানাবিধ চেষ্টা চলিতেছে। যাহাতে বঙ্গের লোক প্রাকটিক্যাল অর্থাৎ কাজের লোকের হইতে পারে; তজ্জন্য সকলেই সচেষ্ট, কিন্তু কাজের লোক হইতে হইলে তৈলদান সকলের আগে দরকার। অতএব তৈলদানের একটি স্কুলের নিতান্ত প্রয়োজন। অতএব আমরা প্রস্তাব করি, বাছিয়া বাছিয়া কোন রায়বাহাদুর অথবা খাঁ বাহাদুরকে প্রিন্সিপাল করিয়া শীঘ্র একটি স্নেহ-নিষেধের কালেজ খোলা হয়। অন্ততঃ উকীলি শিক্ষার নিমিত্ত ল’ কালেজে একজন তৈল অধ্যাপক নিযুক্ত করা আবশ্যক। কালেজ খুলিতে পারিলে ভালই হয়।

কিন্তু এরূপ কালেজ খুলিতে হইলে প্রথমতই গোলযোগ উপস্থিত হয়। তৈল সবাই দিয়া থাকেন — কিন্তু কেহই স্বীকার করেন না যে, আমি দেই। সুতরাং এ বিদ্যার অধ্যাপক জোটা ভার। এ বিদ্যা শিখিতে হইলে দেখিয়া শুনিয়া শিখিতে হয়। রীতিমত লেকচার পাওয়া যায় না। যদিও কোন রীতিমত কালেজ নাই, তথাপি যাঁহার নিকট চাকরীর বা প্রমোশনের সুপারিস মিলে, তাদৃশ লোকের বাড়ী সদাসর্বদা গেলে উত্তমরূপ শিক্ষালাভ করা যাইতে পারে। বাঙালীর বল নাই, বিক্রম নাই, বিদ্যাও নাই, বুদ্ধিও নাই। সুতরাং বাঙালীর একমাত্র ভরসা তৈল — বাঙালীর যে কেহ কিছু করিয়াছেন, সকলই তৈলের জোরে, বাঙালীদিগের তৈলের মূল্য অধিক নয়; এবং কি কৌশলে সেই তৈল বিধাতৃপুরুষদিগের সুখসেব্য হয়, তাহাও অতি অল্পলোক জানেন। যাঁহারা জানেন, তাঁহাদিগকে আমরা ধন্যবাদ দিই। তাঁহারাই আমাদের দেশের বড় লোক, তাঁহারাই আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করিয়া আছেন।

তৈল বিধাতৃপুরুষদিগের সুখসেব্য হইবে, ইচ্ছা করিলে সে শিক্ষা এদেশে হওয়া হওয়া কঠিন। তজ্জন্য বিলাত যাওয়া আবশ্যক। তত্রত্য রমণীরা এ বিষয়ের প্রধান অধ্যাপক, তাহাদের থ্রু হইলে তৈল শীঘ্র কাজে আইসে।

শেষে মনে রাখা উচিত, এক তৈলে চাকাও ঘোরে আর তৈলে মনও ফেরে।

** এতক্ষণ আপনারা যাহা পড়িলেন ইহা আমার লিখা নয়। এই লেখা তৈয়ার করিয়াছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়। আমি কেবলমাত্র সংগ্রহ করিয়া আপনাদের পড়িবার নিমিত্তে প্রকাশ করিলাম। তিনি ছিলেন সংস্কৃত ভাষার গুরু। কলিকাতায় সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। ১৯২১-১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত পড়াইয়াছেন। তাঁহার জীবনকাল ছিল ১৮৫৩ হইতে ১৯৩১ পর্যন্ত।

বঙ্গবাসীর পুস্তক প্রীতি

 photo Cartoon Writer_zpsoewn716k.jpg
সকল বঙ্গবাসী কবি বলিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত নিজেদের পরিচিত করিয়াছেন এমনকি তাহাদের কেও কেও কবিদের কাকের সহিত গণনা করিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন নাই। তবে একথা সত্য যে এই বঙ্গ কবিই একদিন বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কার আয়ত্ত করিয়া সকল বঙ্গবাসীকে কবির আসনে বসাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে সকলের মনে কবি হইবার বাসনা অত্যন্ত প্রকট রূপে দেখা দিয়াছে এমন করিয়া ভাবিলে দোষের কিছু দেখা যায় না।
একজন কবি বা লেখক কিংবা ঔপন্যাসিক যাহাই বলেন না কেন তিনি লিখতে বসিবার পূর্বে বহুকাল ধরিয়া ভাবিতে থাকেন। ভাবনার বৃক্ষ যখন কিছুটা বিস্তৃত হয় তখন তিনি হাতে কলম ধরিয়া কাগজ পত্র লইয়া বসেন। আজকাল অবশ্য কাওকে কালি কলম বা কাগজের বোঝা বহন করিতে হয় না কেবল একখানা কম্পিউটার হইলেই কর্ম সম্পাদন করা অতি সহজ। ইহা যশবান বৈজ্ঞানিক বৃন্দের কর্মফল বলিয়া তাহাদের অন্তত এক কুড়ি ধন্যবাদ জানান উচিত।

আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ ইত্যাদি পরে দিলেও তেমন ক্ষতি হইবে না এই সময় যাহা বলিতেছিলাম, লেখক মহাশয় লিখিতে বসিলেন। ঘণ্টা, দিন মাস, বছর ব্যাপিয়া লিখিয়া এবং অন্তত দুই কুড়ি দফায় পাঠ করিয়া (এডিট) অবশেষে একখানা গ্রন্থ রচনা করিলেন এবং যেহেতু আজকালের পুস্তক প্রকাশক অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলিয়া নিজের টাকা খরচ করিয়া লেখকের হাবিজাবি লেখা প্রকাশ করিতে চাহেন না বলিয়া শতেক পুস্তক প্রকাশকের দুয়ারে ঘুরিয়া ঘর্মাক্ত হইয়া নিজ গাঁইটের টাকা খরচ করিয়া সত্যি সত্যি এক খানা গ্রন্থ ছাপাইয়া ফেলিলেন। নিজের লেখা গ্রন্থখানা সুন্দর ছবিওলা মলাটের ভিতরে ছাপার অক্ষরে দেখিয়া যারপরনাই পুলকিত হইলেন।
লেখক মহাশয় পুলকিত হইলে কি হইবে তাহার পুস্তকের প্রতি কাহারো কোন আগ্রহ নাই কারণ সকলেই জানে এই গদাধর মিয়া বা মশাই আবার কি লিখিতে জানে? ইহার লেখা মূল্য দিয়া ক্রয় করা মানেই হইল স্বেচ্ছায় নিজ পকেটের টাকা গঙ্গায় ফেলিয়া দেওয়া। আচ্ছা বলুন তো আজকাল কি আর এইরূপ আহাম্মক দেখা যায়?
লেখক মিয়া একে বলে ওকে বলে জান আমার লেখা একটি বই ছাপা হইয়াছে, দেখ কি সুন্দর তাই না?

বাহ! বেশ সুন্দরতো আমাকে একটা সৌজন্য কপি দিয়ে দাও তাহলে! তুমি একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুজন তাই একটা সৌজন্য কপি আমার অধিকার!
ইহা শুনিয়া লেখকের লেখার ইচ্ছা কর্পূরের মত সপ্ত আকাশে উড়িয়া গেল কিন্তু বন্ধু জনের সৌজন্য কপি না দেয়ার মত ক্ষমতা অবশিষ্ট রহিল না। ওদিকে বন্ধু জন উক্ত সৌজন্য কপি বগলদাবা করিয়া বাড়িতে লইয়া গেল এবং যথারীতি বসার ঘরের তাকে সাজাইয়া রাখিল। কিছুদিন পর লেখক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিল
ওহে বন্ধু আমার পুস্তক খানা পাঠ করিয়া তোমার অনুভূতি কেমন হইল?
হা হা আমি অত্যন্ত মনযোগী দিয়াই পাঠ করিয়াছি কিন্তু বন্ধু তোমার হাত এখনও ঠাকুর মশাইর মত পাকিয়া উঠেনি!