৩।
সন্ধ্যার পরেই মালাইকার বাবা বুজিবা বাড়িতে এসে আবেলকে দেখতে পেয়ে অভ্যাস মত কোমরে বেল্টের সাথে গোজা ছুরির বাটে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল
তুমি?
আমি আরযো থেকে এসেছি।
আচ্ছা, বাইরের ওই গাধাটা কি তোমার?
হ্যাঁ
ওকে কিছু খেতে দিয়েছ? কত দূর থেকে এসেছে!
না, আমি তুলা বীজ নিতে এসেছি তাই ভাবলাম বীজ নিয়েই চলে যাব
ও,
তোমাদের লিয়ের ওবি না?
হ্যাঁ, আমার বাবা ওবি।
কি বললে, ওবি তোমার বাবা!
হ্যাঁ
আরে! বল কি? তুমি ওবির ছেলে? ওবিতো আমার বন্ধু! সেই যে গতবার এসেছিল তারপরে আর কোন খোজ খবর নেই
তাই নাকি? হ্যাঁ তাই হবে কারণ আমি এখানে আসতে চাইছিলাম না বলে বাবা বলেছিল তুমি যাও দেখবে বুজিরা যখন তোমাকে দেখবে তখন তোমার কোন অসুবিধা হবে না।
ও! তাই নাকি!
হ্যাঁ
আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক কথাই বলেছে তোমার বাবা। তুমি যখন আমার বাড়িতে এসেছ তাহলে বাপু আজ আর তোমার যাওয়া হবে না। রাতটা থাক। এত দূরের পাহাড়ি পথ একা একা যাবে কি করে? রাতে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করব আর কাটি কালা (বিয়ার) খাব আমাদের বাড়িতে তৈরি কাটি কালা। আমি একটু দেখি তোমার গাধাকে কিছু খাবার দেয়া আর বিশ্রামের ব্যবস্থা করছি।
সহস্র মাইল বেগে মালাইকার নিমন্ত্রণের কথা ভেবে মনে ভীষণ আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল কিন্তু মুখের ভাবে প্রকাশ হতে দিল না। মনে মনে বলল এই নিমন্ত্রণ আমি আগেই পেয়েছি বুজিবা!
মালাইকা বুন্না দিয়েছে? বুন্না খেয়েছ?
হ্যাঁ বুন্না খেয়েছি।
বুজিবা ওকে বসতে বলে উঠে বাড়ির বাইরে চলে গেল।
রাতে বেগুন মরিচের ঝোল, বুনো মহিষ বা সিগুই এর ঝলসান মাংস আর অতিথির জন্যে বানান কাসাভা এবং ভুট্টার মেশান আটা দিয়ে প্যান কেকের মত পুরু রুটি বা ইঙ্গেরা দিয়ে সবাই মিলে বাড়ির উঠানে আগুন জ্বেলে গোল হয়ে বসে দারুণ খাবার হলো। সাথে ছিল মালাইকার মায়ের বানান কাটি কালা। আখের রস দিয়ে বানায়। এই জিনিস আবেলের মাও বানায় তবে আজকারটাই বেশি মজার বলে মনে হলো। খাবার ফাকে ফাকে টুকি টাকি কথাবার্তা। মালাইকা মাংস ঝলসিয়েছে বলে বারবার জিজ্ঞেস করছিল কেমন হয়েছে? আবেলও বলছিল বেশ ভাল হয়েছে। অনেক খেয়েছি। আবেল কাটি কালার কথাও বলে ফেলল। আমার মায়ের চেয়ে খুব ভাল হয়েছে এটা। মালাইকার মা তার স্বামীর বন্ধুর ছেলে জেনে সেও বেশ আদর আপ্যায়ন করল। খাবার শেষ হলে উঠানে বসে নল দিয়ে পোড়ান তামাকের ধুয়া সেবন হলো। এবার শোবার পালা। বুজিবা মালাইকাকে বলে দিল ওকে ওই ঘরটায় শোবার ব্যবস্থা করে দিও।
আমার সাথে এসো বলে মালাইকা আগে আগে গেল। আবেল মালাইকাকে অনুসরণ করে একটা ঘরে ঢুকল। চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখল সুন্দর ছিমছাম সাজান ঘর। ভাল্লুকের চর্বি দিয়ে জ্বালান প্রদীপ জ্বলছে। নানা ধরনের নানা ডিজাইনের তির ধনুক, মহিষের শিং দিয়ে বানান নানা কারুকাজ করা বর্শা, সিংহ, ভাল্লুকের চামড়াসহ বিভিন্ন জিনিসে সাজান। মাচায় বিছানা পাতা।
দেখ আতো তোমার আর কি লাগবে!
না না আর কি লাগবে? আচ্ছা তুমি আমাকে শুধু আতো বলে ডাকছ কেন?
তাহলে কি বলে ডাকব?
কেন আমার কি কোন নাম নেই?
আচ্ছা আবেল তুমি আরও একটু কাটি কালা খাবে?
না অনেক খেয়েছি,
একটু তামাক?
না না আর কিছুই লাগবে না, তুমি কি আমার পাশে এখানে একটু বসবে?
মালাইকা দরজা দিয়ে উকি দিয়ে একটু দেখে এসে আবেলের পাশে বসল।
বল কি বলবে
না কিছু বলব না শুধু তোমাকে একটু পাশে পাবার জন্য বসতে বলেছি।
আস্তে আস্তে মালাইকার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল
তুমি আমার জন্য একটু অপেক্ষা কর দেখবে আমার বাবাকে দিয়ে আমি ঠিক প্রস্তাব পাঠাব।
তাড়াতাড়ি করবে। আমাদের এখানকার চিমাকে দেখছি আমার দিকে কেমন করে যেন তাকায়। ওকে আমি দুই চক্ষে দেখতে পারি না, শুধু কাটি কালা আর তেলা খায় আর তামাক টানে। আজ পর্যন্ত কোন মর্দামি দেখাতে পারেনি, একটা বিড়ালও মারতে পারেনি।
হাত আরও জোরে চেপে ধরে, না না মালাইকা এ আমি কিছুতেই হতে দিব না, আমি চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্তাব পাঠাতে।
তাহলে আমি যাই তুমি ঘুমিয়ে পর, সকালে আবার দেখা হবে।
আচ্ছা।
৪।
সকালে ঘুম ভাঙল ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই। ঘরের বাইরে এসে দেখে রান্নার জায়গায় মালাইকা কি যেন রাঁধছে। আবেল একটু এগিয়ে গেল।
কি রাঁধছ?
কাসাভার জাউ, আর কি খাবে তুমি বল
যা আছে তাই হলেই চলবে তোমাকে এত ব্যস্ত হতে হবে না।
বলেই বাইরে এসে খোয়ারে যেখানে এ বাড়ির গরু গাধা থাকে সেখানে গিয়ে ওর গাধা বের করে বাইরে এনে বেধে রেখে পাশের চাই থেকে একটু পানি এনে খেতে দিয়ে আবার বাড়িতে ফিরে আসল।
একে একে সবাই উঠে পরল। বুজিবা সকালে উঠে কোথায় যেন গিয়েছিল সেও ফিরে আসল।
কি খবর আবেল কি করছ।
না কিছু করছি না, আমাকে বীজগুলা দিয়ে দিলে আমি এখনই রওয়ানা হতে পারি।
যাবে যাবে অত তারা কিসের? কিছু খেয়ে যাবে না? সারা দিনের পথ! কিছু খেয়ে না গেলে তোমার বাবা আমাকে কি বলবে জান?
কাসাভার জাউ, তিতির পাখির ডিম সেদ্ধ, বন মোরগ আর রাতের মহিষের মাংস দিয়ে নাশতা খেয়ে বীজ নিয়ে আবেল তার গাধা নিয়ে আরযোর পথে রওয়ানা হলো। যাবার আগে এক ফাকে মালাইকাকে বলল, তুমি ভেবো না আমি খুব শিগগীরই আবার আসছি। এখন তোমাকে না দেখে আমি খুব কষ্টে থাকব। মালাইকা বলেছিল থাক এত কষ্ট করে এত দূরে আসতে হবে না। মালাইকার মাও বলল আবার এসো। আবেল গাধার রশি ধরে আগে আগে হাঁটছে আর পিছনে মালাইকা তার পথের দিকে তাকিয়ে আছে। যতক্ষণ সামনের পাহাড়ের আড়াল না হলো ততক্ষণ তাকিয়েই রইল। ফিরে এসো আতো তুমি আবার এসো।
৫।
বাড়ি এসে পৌঁছল সেদিনের মত সন্ধ্যা হবার একটু আগে। পথে বাবা ওবির সাথে দেখা। বাবা ওকে দেখেই মিট মিট করে হাসছিল।
তুমি আমাকে বলনি কেন যে বুজিবা তোমার বন্ধু?
আমি তোর সাথে একটু মজা করেছিলাম। ওখানে কেমন কাটালি? বুজিবা আমার কথা জিজ্ঞেস করেনি? বুজিবার মেয়েকে দেখেছিস?
বাবার সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ি এসে পরল। মা দেখে তাড়াতাড়ি দৌড়ে কাছে এসে গাধার পিঠ থেকে বীজের থলে নামিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরল।
আমার মানিক তুই কতদিন পরে এসেছিস! আমি অস্থির হয়ে গেছি মানিক।
না মা অস্থির হবার মত কিছু হয়নি ওরা আমাকে অনেক খাতির যত্ন করেছ মালাইকা খুব ভাল মেয়ে।
মা জিজ্ঞেস করল, মালাইকা আবার কে?
পথের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে মা বাবাকে এক সাথে নিয়ে উঠানে বসে বুজিবার বাড়ির সমস্ত গল্প করল। পরীক্ষামুলক চাষের জন্যে বুজিবা কিছু বুন্না বীজ উপহার দিয়েছে সেগুলি বের করে দেখাল। মালাইকার সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে ভাল লাগা এবং কথা দেয়া পর্যন্ত সবই বলল। মালাইকার কথা শুনে বাবা খুব খুশি হলো মনে হলো। গতবার যখন বাবা ওখানে গিয়েছিল তখন মালাইকাকে দেখে তার মনেও এই ধারনা হয়েছিল বলেই এবার সে নিজে না গিয়ে ছেলেকে পাঠিয়েছে। সে নিজের চোখেই দেখে আসুক।
ও, বুজিবা বুন্না বীজ দিয়েছে! তাহলে এক কাজ করি এবার আমাদের ওই নদীর পারে যে জমিগুলা আছে ওখানে বুন্না বুনে দেখি কেমন হয়। কি বলিস?
আমি আর কি বলব মাকে জিজ্ঞেস করে দেখ কি বলে
হ্যাঁ ঠিক বলেছিস, আচ্ছা রামলা তুমিই বল এই বীজগুলা কোথায় চাষ করা যায়?
কেমন জমির প্রয়োজন সে কি আর আমি জানি আমাদের এই অঞ্চলে বুন্নার চাষ কখনও দেখিনি কাজেই তুমি এক কাজ কর বুজিবাকে নেমন্তন্ন কর, সে এসে আমাদের জমিগুলা দেখে বলে দিবে কোন জমিতে এর চাষ করবে
বাহ! বেশ ভাল কথা বলেছ
বাবা, তুমি যদি বল তাহলে আমি আবার গিয়ে বুজিবাকে নেমন্তন্ন করে আসতে পারি
তুই যাবি?
তুমি বললে যেতে পারি
আচ্ছা, ভেবে দেখি। [চলবে]
এত গ্যাপ দিয়ে দিয়ে পোস্ট করছেন কেন?
বাকি পর্বগুলোও তাড়াতাড়ি পড়তে চাই আবার।
ধন্যবাদ! আকদিন গ্যাপ হয়ে গেছে তারিখের ভুলে। এগুলি সব সিডিউল্ক করা পোস্ট দিন সময় সেট করে দিলে অটো পোস্ট হয়। এখন থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় পাবেন।
সেই ভাল। অফিস থেকে ফেরার পথে পড়া যাবে।
রাতে বেগুন মরিচের ঝোল






বুনো মহিষ
সিগুই এর ঝলসান মাংস
কাসাভা
ভুট্টার মেশান আটা দিয়ে প্যান কেকের মত পুরু রুটি
ইঙ্গেরা
মালাইকার মায়ের বানান কাটি কালা
মাগো মা কত কি খাওন রে…
এইগুলি আবেল এর জন্যে আপনের জন্যে না জনাব। এত খুশি হইয়েন না!
আমি আছি স্যার। দেরি হলে গল্পের সূত্র ধরতেও কষ্ট হয় পাঠকের।
সিরিজ লিখাটি নিয়মিত করুন। তাহলে পরী রাণী’কে মনে রাখতে সুবিধা দিন।
No চিন্তা do ফুর্তি!
এখন থেকে নিয়মিত হবে, প্রতিদিন বেলা ৪ ঘটিকায় সিডিউল করা আছে।
আমিও অনেক দিন পুরোটাই ছিলাম না। এখন থেকে ইনশাআল্লাহ থাকব এবং পোষ্টগুলি পড়ব।
দাদু ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।
ধন্যবাদ দাদাভাই!
পৃথিবীর আরেক প্রান্তের আরেক জীবনকে এত সুন্দর করে আমাদের সামনে তুলে ধরা খুব সহজ কথা নয়। সেই কঠিক কাজকেই আপনি করে নিলেন কত সহজে। আপনার সহজাত শিল্পীর প্রতিভাই প্রকাশ এই গল্পের বুনন।
অজস্র ভালবাসা ও শুভেচ্ছা রইল জনাব।
আপনার জন্যেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
চলুক তবে! পাশে আছি দাদা।
শুভেচ্ছা
শুভেচ্ছা ভাইয়া!