অভিনব বিয়ে বাড়ি

একটু বড় লেখা প্রথম প্রয়াস।
ভুলত্রুটি অনেক আছে তবুও দিলাম বন্ধুদের জন্য।
_______________________________

ক্লাসের মাঝেই ফোন বেজে উঠলো .. বিরক্ত হয়েই ফোন রিসিভ করতে হল। পড়ানোর সময়ে ফোন এলে সাধারণত কেটেই দেয় কেয়া। একটা অচেনা নম্বর। বাবার অভ্যেস অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে চমকে দেওয়ার, রিসিভ করতেই হল ফোন।
— হ্যালো কে বলছেন?
— আমি আমি মিস্টার সেন বলছি, আপনি কেয়া মিত্র বলছেন তো?
— বলছি। বলুন কি প্রয়োজনে ফোন করেছেন?
— আগামী মাসের তিন তারিখে আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে, দয়া করে যদি আসেন ভীষণ খুশি হব। আপনার ঠিকানায় নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছি।
— ভীষণ অবাক হল কেয়া, ফোন নম্বর পেলো কি ভাবে? আমার নম্বর কিভাবে পেলেন? আর ঠিকানা?
— আমি আসলে সুদিপ্ত বাবুর কাছ থেকেই আপনার নম্বর আর ঠিকানা পেয়েছি।
— এইবার সব মনে পড়লো। ও আচ্ছা বুঝেছি এইবার।
— তাহলে আসছেন তো? আসার আগে ফোন করবেন আমি আসার পথ ঠিকঠাক বলে দেবো।
— অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো যাওয়ার। যদি না যেতে পারি প্লিজ কিছু মনে করবেন না, কারণ আমার মেয়ের মক টেস্ট চলবে তখন।
–অনেক ধন্যবাদ, আশায় থাকবো।

ফোন রেখে আবার পড়ায় মন দিতে চায় কেয়া। কিন্তু ছাত্র ছাত্রীরা তার বন্ধুর মতোই। ম্যাম কার বিয়ে? নানান কথায় ক্লাসের সময় শেষ হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার পথে রোজই টুকিটাকি জিনিস কিনে বাড়ি ফেরে কেয়া। দৈনন্দিন কাজকর্ম সেরে উঠতেই অনেক বেলা হয়ে যায়। মেয়েকেও আনতে হবে স্কুল থেকে। যথারীতি সময়মতো মেয়েকে আনতে স্কুলে যায়। সেখানেও কিছু বন্ধু আছে, তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে মেয়েকে নিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে। আবার বিকেলে পড়ানো থাকে, ফ্রী হতে হতে প্রায় নটা বেজে যায়।
এইভাবেই চলে কেয়ার রোজকার জীবন।

বিয়েবাড়ি যাবেনা ভেবেইছিলো। কিন্তু সুদিপ্তবাবুর সম্মানের কথা ভেবেই কেয়া যাবে স্থির করলো। যদিও জানে অনেকেই যাচ্ছেনা। তবুও মানুষটার সম্মানের ব্যপার তিনি দ্বায়িত্ব নিয়ে নামগুলো বলেছেন। বিয়ের দিন ফোন করলো অর্পিতা কে, সে জানালো যাচ্ছে। যাইহোক সন্ধ্যে বেলায় তৈরি হয়ে নিল। কিন্তু সেইদিন ড্রাইভার আসতে পারবেনা, তাকে ছুটি দিয়েছে কেয়ার স্বামী। অবশেষে ড্রাইভার সেন্টার থেকে ড্রাইভার ভাড়া নেওয়া হল। শুরু হল যাত্রা। চলছে তো চলছেই। “হাম লোগ কাহা আয়ে অভি?” কেয়া ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো। “ম্যাডাম, অভি বহুত দূর হ্যায়। যিতনা তক আয়ে হ্যায় আভি উতনা তক জানা হ্যায়.. বহতা রাস্তা বাকি হ্যায়।” বিরক্ত লাগছিল কেয়ার, একা সে চলতেই পারেনা। তাও আবার চুপচাপ।

অবশেষে এক জায়গায় পৌছলো। ড্রাইভার রাস্তা গুলিয়ে ফেললো। কেয়া একা সাথে অচেনা ড্রাইভার, অচেনা জায়গা, এইবার ভয় পেলো কেয়া। “কিসিসে পুঁছ লেতে !!

হ্যায় আপকো মালুম নেহি তো? গাড়ি রোকিয়ে” কেয়া একজনকে ডেকে exact address জিজ্ঞেস করলো। এবং জানতে পারলো ভুল রাস্তায় এসেছে। “গাড়ি ঘুমা লিজিয়ে, হামলোগোকো দুসরি তরফ জানা হ্যায়।” সেইমতো ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলল নির্দিষ্ট গন্তব্যে। অনেক্ষণ যাওয়ার পরে পৌঁছোলো পৃথিবীর শেষ প্রান্তের বিয়ে বাড়িতে।

এ কেমন বিয়েবাড়ি! রিসেপশনে কেউ নেই, সামনে বর কনের নাম লেখা গেট নেই। অদ্ভুত! সামনে অবশ্য দুইদিকে দুজন মেয়ে হাতে অনেক গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে পড়ে গেলো অনেক বছর আগে, সানন্দা পত্রিকা থেকে টলি ক্লাবে একটা আড্ডার আয়োজন করেছিল, সেখানে দেখেছিল এইরকম ফুল হাতে, কিন্তু বিয়ে বাড়িতে আপ্যায়নে কেউ থাকবেনা! অবাক কাণ্ড। গাড়িতে বসেই ফোন করে মিস্টার সেন কে।

— হ্যালো, মিস্টার সেন বলছেন?
— বলছি, আপনি কি এসেছেন?
— আমি একটা কমিউনিটি হলের সামনে আছি, আপনার কিনা বুঝতে পারছিনা।
— দাঁড়ান আমি আসছি।

মিস্টার সেন এসে কেয়াকে নিয়ে গেলেন ভেতরে। উপহার হিসেবে বুদ্ধদেব গুহর দশটি উপন্যাস সমগ্র কিনেছিল কেয়া। অচেনা অজানা জায়গায় বইয়ের থেকে ভালো কিছু উপহার কেয়ার জানা নেই। মিস্টার সেন নিয়ে গেলেন স্টেজের উপরে। কেয়া বুঝতে পারছিলো না উপহার কার হাতে দেবে? দুজনেই একইরকমভাবে সেজে দাঁড়িয়ে আছেন। পরে যখন জানলেন একজন মা,একজন মেয়ে। তখন মেয়েকেই দিলো। স্টেজ থেকে নেমে এদিক ওদিক একাই ঘুরছে। অর্পিতা এখনো আসেনি। ফোন করে জানতে পারলো প্রায় এসে গেছে।

অর্পিতা এলো কিন্তু ওকে আপ্যায়নের কেউ নেই দেখে কেয়াই এগিয়ে গেলো দরজা খুলে ভেতরে নিয়ে এলো ওদের। এসে একা একা প্রায় চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে অথচ মিস্টার মিত্র দেখেছেন কিন্তু এগিয়ে আসছেন না। একটু রেগেই গেলো কেয়া। “excuse me Mr. Sen, আপনি ওকে নিমন্ত্রণ করেছেন বলেই ও এসেছে।” ওহ, আসুন আসুন বলে অর্পিতাকে নিয়ে গেলেন স্টেজে। অর্পিতা flower bouquet দিলো কন্যার হাতে, নেমে এলো নীচে।

চল অর্পিতা আমরা গিয়ে ওই সোফাতে বসি বলল কেয়া। দুজনে বসে আড্ডা দিতে দিতে সেলফি তুলছে, এমন সময় একজন হঠাৎই জিজ্ঞেস করলো –
— শাঁখ বাজাতে পারেন
— কেয়া, শাঁখ বাজাতে হয়?
— অর্পিতা, আমি শাঁখ বাজাতে পারি
— বরযাত্রী এসেছে, বাজাতে হবে।শাঁখ কোথায় আমি জানি, আপনারা শুধু বাজাবেন।
— কেয়া, না আমি শাঁখ বাজাতে পারিনা, আর অর্পিতাও পারেনা।

কেয়া, আচ্ছা অর্পিতা এখানে কোন ভালো রেস্টুরেন্ট নেই? কিছু পাকোড়া, কাবাব খেতে ইচ্ছে করছে।

অর্পিতা, আছে তো। যাবে?
কেয়া চল।
ওদের বলে যাই যে আমরা চলে যাচ্ছি, অর্পিতা বলল।
কেয়া, না তার দরকার নেই, চল এখুনি।
যদিও কেয়া বাড়িতে রান্না করেই এসেছে, ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন মালাইকারি। মেয়ে অপেক্ষা করবে, না খেয়ে। একটা ছোট্ট অথচ সুন্দর রেস্টুরেন্টে নিয়ে এলো অর্পিতা। চিকেন পাকোড়া অর্ডার করলো ওরা। অর্পিতার সাথে ছিলো মিঠুদি। সে হঠাৎই বলে উঠলো একটা বিয়ে বাড়িতে এলে কত্তো খরচ তোমাদের! একটা দামী শাড়ি, গয়না, গাড়ি তোমার আবার ‘উটকো’ ড্রাইভার।কেয়াকে বলল।যেহেতু ভাড়া করা ড্রাইভার তাই ‘উটকো ‘।

কেয়া বলল, মিঠুদি আমাদের বিয়ে বাড়িই এমন। আবার যখন আসবো তখন আবার অন্য এক উটকো ড্রাইভার দেখতে পাবে। হৈচৈ করে খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় দশটা।

13 thoughts on “অভিনব বিয়ে বাড়ি

  1. লেখাটা কি চলবে না এখানেই শেষ?
    শুরুটা যত আগ্রহ নিয়ে শুরু করেছিলাম শেষে তার খেই হারিয়ে ফেলেছি।

    1. নিশ্চয়ই চলবে .. এটা প্রথম ভাগ. কিছুদিনের মধ্যেই দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশ পাবে .. সাথে থাকবেন ..

  2. অভিনব বিয়ে বাড়ি (বাংলা – হিন্দি আলাপটা বেশ উপভোগ্য)
    লিখাটির সমাপ্তি কি এখানেই নাকি আরও খানিকটা উহ্য রয়ে গেছে !! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gif

    1. সমাপ্তি আবার কিছুদিন পরেই প্রকাশ করছি বন্ধু

      1. ঠিক আছে। আমরা অপেক্ষা নিয়ে রইবো। ধন্যবাদ বন্ধু। :)

  3. বেশ আগ্রহ নিয়ে লেখাটি পড়েছি। মনে হল অনেক কিছু বুঝতে পারিনি।

    শুভেচ্ছা জানাই আপু।

    1. কি বুঝতে পারেন নি যদি জানান, তাহলে আমি চেষ্টা করতে পারি বুঝিয়ে দেবার ..

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।