নক্ষত্রের গোধূলি-১১

২২।
বাড়ির কাউকে কিছু না বলে বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় রাশেদ সাহেব মনিরাকে নিয়ে বারিধারা ব্রিটিশ হাই কমিশনে গিয়ে অপেক্ষা করছিলো। অফিস খুলতেই গেটের সাথে ভিসা এক্সপ্রেসে রাশেদ সাহেবের পাসপোর্টের সাথে মনির পাসপোর্ট, আবেদন ফি সহ ফর্ম জমা দেয়ার পর রাশেদ সাহেবের পাসপোর্ট একটু উল্টেপাল্টে দেখে হাতে একটা টোকেন দিয়ে বলে দিল আগামী কাল সারে এগারোটায় এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। রাশেদ সাহেবের বিশ্বাস হচ্ছিল না। কোন রকম ইন্টার্ভিউ ছাড়াই মনির ভিসা! বিশ্বাস করবে কি করবে না এমন দুরুদুরু ভাব নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলো।
পরদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় আবার এসে ভিসা এক্সপ্রেসে ওদের টোকেন দেখানর পর খুঁজে ওদের পাসপোর্ট দিয়ে দিল। বাইরে এসে খুলে দেখে মনিরার এবং রাশেদ সাহেবের ভিসা দিয়ে দিয়েছে। আনন্দে রাশেদ সাহেব হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কেঁদে ফেললেন। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই ভাবে কোন ইন্টার্ভিউ ছাড়া, উৎকণ্ঠা নিয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে থাকা ছাড়া মনির ভিসা এত সহজে পাবে, এতো স্বপ্নাতীত। মনিও কেঁদে ফেললো। মনিরা কাঁদতে কাঁদতে বললো-
-তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্যই আমি যাচ্ছি। আমি জানি অনেক আলোচনা সমালোচনা হবে, অনেক ঝড় উঠবে, অনেক গঞ্জনা যন্ত্রণা পোহাতে হবে তবুও শুধু তোমার জন্য আমি সব মেনে নিতে প্রস্তুত।

মনে মনে খোদাকে ডেকে বললেন ‘হে খোদা তোমার দরবারে শোকর জানাবার ভাষা আমার মনে আসছে না, তুমি তো সবই জান, তোমার মনিকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না, নিশ্চয়ই তুমি এটা জান বলেই আমার প্রতি এই রহমত করেছ।
একটু শান্ত হয়ে মামাকে ফোন করে জানিয়ে বাড়িতে মেয়েদের জানালেন।
-মামা বললেন তাহলে তোরা দেরি করবি না।
একটা ঠিকানা দিয়ে বলে দিলেন এই ঠিকানায় যেয়ে আমার কথা বলে টিকেট ফাইনাল করে এক বারে বাসায় যাবি, আমি ওদেরকে বলে দিচ্ছি।
মামার কথা মত ওরা একটা স্কুটার নিয়ে মতিঝিলের একটা ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে এসে টিকেট কনফার্ম করে পাসপোর্ট দিয়ে চলে এলো। আগামী বুধ বারে রাত এগারোটায় ফ্লাইট। ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে লন্ডন। পরশু এসে পাসপোর্ট টিকেট নিয়ে যেতে বলে দিল। বাড়িতে ফেরার পথে স্কুটারে বসে মনির মুখের দিকে চেয়ে দেখে মনির ঠোট নীল হয়ে গেছে, চেহারা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।
-কি ব্যাপার মনি তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন, কি হয়েছে?
-সাধে কি আর তোমাকে আমি নাদু গোপাল বলি?
-কেন কি হয়েছে?
আমাকে তো নিচ্ছ কিন্তু যেয়ে থাকবো কোথায়? তুমি একা পুরুষ মানুষ যেখানে সেখানে থাকতে পারতে।
-আরে বোকা এ হচ্ছে লন্ডন এখানে কি ভেবেছ মানুষ ফুটপাথে বা রেল স্টেশনে থাকতে পারে? ওটা শীতের দেশ না? ওখানে কেও ফুটপাথে থাকে না। আমার ভাই তার ওখানে যেতে নিষেধ করেছে বলে কি ভেবেছ আমার কোন জায়গা নেই? তুমি জান না, সারা পৃথিবীতে আমার সব বন্ধুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে? আর আমার বন্ধুদের তো জানই তারা কেমন।
-ওখানে কে আছে?
-আছে, আছে। ভেবো না
-বল না কে আছে।
ওখানে ফিরোজ আছে, শাহিনের বোন আছে। ফিরোজকে আজই মেইল পাঠাবো।
-কোন ফিরোজ?
-তুমি চিনবে না।
-আমার ভয় করছে!
-আরে পাগল নাকি? কি যে বল, আমি আছি না? সারা জীবন দেশের বাইরে কাটান স্বামীর স্ত্রী তুমি, আর তুমি আমার উপর এটুকু আস্থা রাখতে পারছ না?
কথা বলতে বলতে বাড়িতে এসে পৌঁছে গেলো। বাড়িতে এসে সবাইকে জানিয়ে দিল, মনিও যাচ্ছে আমার সাথে। বৌ যাচ্ছে, ভাবী যাচ্ছে শুনে সবাই অবাক!
-এতো টাকা পেলেন কোথায়?
-টাকা কি আর পাওয়া যায়, ম্যানেজ করেছি।
এই শুরু হলো সন্দেহের আর এক স্তর যা রাশেদ সাহেবের সরল মস্তিষ্কে কিছুই ঢুকল না।
ঘনিষ্ঠ দুই এক জন আত্মীয় স্বজনকে জানিয়ে দিল। মনের ভিতর একটা করুণ বেহাগের সুর বাজিয়ে আস্তে আস্তে বাঁধা ছাঁদার কাজ করছে। মনিরার মন থেকে অজানা আতংক কোন ভাবেই দূর হচ্ছে না। সব সময় তার মনে হচ্ছে কি জানি কখন কোথা থেকে কি হতে কি হয়ে যায়। রাশেদ সাহেব তাকে অভয় দিয়ে বুঝিয়ে যাচ্ছেন আর যা যা নিয়ে যেতে হবে তা সংগ্রহ করছেন। দু এক জন আত্মীয় এসে দেখা করে তাদের মত করে কিছু পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এক দিন বিকেলে মনিরার বড় বোন আর দুলাভাই এলেন। তারাও মনিরাকে বোঝালেন।
-এ তো ভালোর জন্যই হয়েছে। তুমি ওকে হতাশ করে দিও না। ও যা বলে সেই ভাবে চলো। মনে সাহস সঞ্চয় কর। যে যাই বলে বলুক এখন তোমার সেদিকে মন দিলে চলবে না। তুমি শুধু রাশেদের কথা ভাব। বাসায় মেয়েদের জন্য চিন্তা করো না। ওদের চাচী থাকছে তাছাড়া ফুফু, নানী, খালা যে যখন পারে এসে থাকবে। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার। তুমি তো আবার চলেই আসবে।
[চলবে]

16 thoughts on “নক্ষত্রের গোধূলি-১১

  1. নক্ষত্রের গোধূলি এবং নক্ষত্রের গোধূলি পড়লাম খালিদ উমর ভাই। সালাম। 

  2. সব পর্ব পাবলিশ হোক। তারপর দিবো একটা টানা পৃন্ট। ব্যাস বইও রইলো একনাগাড়ে পড়ার সুযোগও তৈরী হলো। কি বলেন আইডিয়াটা কেমন খালিদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Confused.gif.gif

    1. আহা! এত কষ্টের কি দরকার? কোলকাতা কলেজ স্ট্রিটে রীতা পাবলিকেশন বা বর্তমানে কলকাতায় বাংলাদেশের বই মেলায় নওরোজ সাহিত্য সম্ভারের স্টলে রেডিমেড পাবন।

      আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।

  3. পড়লাম খালিদ উমর ভাই। প্রোফাইলের ছবি বদল হয়েছে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. অফিসের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার কলিগদের অনুরোধে প্রোফাল পিক বদল হয়েছে এতে আমার কোন ইচ্ছা কাজ করেনি। শুধুমাত্র ছোটদের আবদার।

  4. * সাথেই আছি সবসময়…

    চলুক মেগা সিরিয়াল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।