৪৯।
দুর্বলের উপর যখন সবলের অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যখন দুর্বলের কিছু করার থাকে না, দুর্বলের মনের যে হাহাকার তা শোনার মতো কেও থাকে না, সে যে কত মর্মান্তিক কত হৃদয় বিদারক ব্যাপার তা একমাত্র দুর্বলেই বুঝতে পারে। এই আঘাত শুধু মনের, আর মনের তো রক্ত নেই তাই তা দেখা যায়না কতটা আঘাত সে পেয়েছে। রক্ত থাকে শরীরের মাংসে, হাড়ে মজ্জায়। মনের যদি রক্ত থাকত তাহলে যে কত মনরক্ত ক্ষরণ দেখতে পেতাম সে হিসাব করতে পারব কি আমরা? নাকি মনরক্তের কোন মূল্য আমরা জানি? আমরা শুধু জানি আহা মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান। কিন্তু যে বলিদান হলো সে তো চলেই গেলো যে বলিদান হতে পারল না তার মন যে চুরমার হলো সে কথা কি কখন জানতে পেরেছি না জানতে চেয়েছি? নাকি কারো দিকে তাকিয়ে দেখেছি কত মনরক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। শরীরের আঘাতে রক্ত ঝরে নয়ত হাড় মাংস থেঁতলে বা ভেঙ্গে যায়। যা চিকিৎসা করা যায়, জোড়া তালি দেয়া যায়, সেলাই করা যায়। দরকার হলে ভিন্ন শরীর থেকে রক্ত হাড় মাংস এনে পূরণ করা যায়। যার মন ভেঙ্গে গেছে তার কি চিকিৎসা? ভিন্ন মন এনে কি তার মন জোড়া যায়? মন কি সেলাই করা যায়? কেন যায়না তা হলে সে কি করে ভাঙ্গা ক্ষত বিক্ষত মন নিয়ে বেঁচে থাকবে?
বাসের সিটে বসে ভাবছিলেন। দুপাশের কোন দৃশ্য তার চোখে পরেনি। কতক্ষণ সময় গেছে তাও চোখে পরেনি। মনি কিভাবে পৌঁছবে, মেয়েরা কি ভাবে মানুষ হবে আমি কত দূর কি করতে পারব, কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে ভাগ্য, ফেলে আসা জীবন। আমার ভুল কোথায় ছিলো আদৌ কোন ভুল ছিলো কি? হ্যাঁ ভুল তো অবশ্যই ছিলো। অন্ধ বিশ্বাস আর সরলতা। কামরুল তো বলেছিল তুমি যা করতে যাচ্ছ তার মূল্য কি পাবে? তোমার যে মানসিকতা তুমি কি পারবে মানিয়ে নিতে? কিছু মনে করনা বাবা মা যাই বল কেও কিন্তু স্বার্থের বাইরে নয় তুমি যতক্ষণ দিতে পারবে ততক্ষণ তুমি ভাল। যখনই দেয়া বন্ধ হবে তখনি শুরু হবে দ্বন্দ্ব? ভেবে দেখ তোমার ফ্যামিলি চাইবে এক রকম আর তোমার বাস্তব হবে অন্য রকম। মাঝ থেকে তোমার বউ ভুগবে তোমার মেয়েরা ভুগবে তাদের মনে কিন্তু ভীষণ প্রভাব পরবে। অফিসের কলিগরা সবাই বলেছিলো রাশেদ সাহেব ভালো করে চিন্তা করে চাকরি ছাড়বেন। বস ক্যাপ্টেন মাযহার তো ছাড়তেই চাননি। বলেছিলেন দেখুন এসব ক্ষেত্রে যা হয়, আপনি কিন্তু পারিবারিক সমর্থন পাবেন না আর তখন কিন্তু আপনার দুই দিক সামাল দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আপনার কিন্তু অত টাকা নেই।
মেয়েরা ভুগছে ঠিকই কিন্তু তারা অনেক কষ্টে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে আর মনি! সে তো তার পক্ষে যা সম্ভব তা তো করেছেই যা সম্ভব নয় তাও করার চেষ্টা করেছে এই সব ভাবছিলেন। এলো মেলো ভাবে কত কি আসছিলো মনে। আজ স্ত্রী সন্তান ছাড়তে হলো, সংসার ছাড়তে হলো, দেশ ছাড়তে হলো।
কিছুক্ষণ পর কোচ লন্ডনের ভিক্টোরিয়া কোচ স্টেশনে এসে দাঁড়াল। সেখানে দশ বারো জন যাত্রী উঠে যার যার সীটে বসার মিনিট চার পাঁচের মধ্যেই কোচ আবার ছেড়ে দিলো।
লন্ডন শহর পেরিয়ে মটর ওয়েতে যখন বেরিয়ে এলো তখন গাড়ির গতি দেখেই বোঝা যায় নির্বিঘ্নে কোন রকম বাঁধা হীন ভাবে এক গতিতে চলছিলো। সমস্ত গড়িতে কোন সাড়া শব্দ নেই। চুপ চাপ, শুধু গাড়ি চলার শব্দ। দুই ঘণ্টা পরে কোচ এসে অক্সফোর্ড গ্লস্টার গ্রিন কোচ স্টেশনে দাঁড়াল। কোচ থেকে নেমে মালামাল নিয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে তার পথের সন্ধান পেতে চেষ্টা করলেন কিন্তু ডান বাম সামনে পিছনে সবই তো তার কাছে সমান। কোন দিকে যাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। এখানে বেশ লোক জন যাচ্ছে আসছে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। পাশেই কফি শপ সেখানে চা কফির সাথে নানান কিছু খাচ্ছে। তাদেরই এক জনকে জিজ্ঞেস করলো আমি আবিংডন যাবার বাস কোথায় পাব? কিন্তু সে যা বললো তা রাশেদ সাহেব কিছুই বুঝতে পারল না। হা না বলে মাথা ঝেঁকে কোন রকম তার হাত থেকে রেহাই নিয়ে মোটামুটি ওই দিকে এগিয়ে যাবার ভান করে অন্য একজনকে আবার ওই একই প্রশ্ন। এবারের লোকটা বয়স্ক। সে রাশেদ সাহেবের পা থেকে মাথা পর্যন্ত আর সাথের মালামাল গুলি দেখে বললো আস আমার সাথে।
ভারি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সুটকেসটা হ্যান্ডেল ধরে টেনে তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে পিছন দিকে টার্মিনালের বাইরে এসে দাঁড়াল। লোকটা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল এই রাস্তাটা পার হয়ে ওই যে রাস্তা দেখা যাচ্ছে ওই খানে বাম পাশে যে গাছটা দেখছ ওখানেই বাস স্ট্যান্ড। বেশি দূরে নয়, কাছেই ৩/৪ মিনিটের পথ মাত্র। ওখানে তুমি আবিংডনের বাস পাবে। এক হাত বারিয়ে দিয়ে হ্যান্ড সেক করে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আবার হেঁটে গাছের নিচে এসে দাঁড়াল।
পড়লাম বন্ধু।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধু।
পড়ছি।
পড়ে জানাবার জন্য এবং সংে থাকার জন্য ধন্যবাদ প্রিয়।
আমিও পড়লাম খালিদ ভাই।
খুবই ভাল কথা, বেশ করেছেন এবার অনুগ্রহ করে ধন্যবাদ গ্রহন করুন প্রিয়।
শুভেচ্ছা কবি খালিদ ভাই।
কিয়া তাজ্জব কি বাত হ্যায়!
পড়তেছে উপন্যাস আর লেখকরে কয় কবি। লোকটার কি হইল?