নক্ষত্রের গোধূলি-৪১

৫৬।
এই হলো অবস্থা। এর পর আর কিছু বলার প্রবৃত্তি হয়নি। দেখা যাক ধীরে ধীরে যদি কিছু বোঝা যায়, যাবেই এক সময়। কাজের যে চাপ, যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশ হলে অন্তত আরও চার জন লোক প্রয়োজন হতো। তাছাড়া আজ একেবারে ভিড়ের মধ্যে এসে পরেছে। কেও কিছু দেখিয়ে দিতেও পারছেনা আর তার নিজেরও হঠাৎ পরিশ্রম হয়ে যাওয়ায় কুলিয়ে উঠতে পারেনি। কয়েক দিন গেলে সব কিছু দেখা চেনা রপ্ত হয়ে গেলে মনে হয় ঠিক হয়ে যেতে পারে। দেখা যাক কি হয় কবির তো বলেছে সব কিছু চেনা জানা হলে কষ্ট কম হবে। দেখা যাক। আর কিই বা আছে দেখার, যেভাবেই হোক এর মধ্যেই সব গুছিয়ে নিতে হবে। আর তো কোন বিকল্প নেই। রাশেদ সাহেবের ধৈর্য এবং সহ্য একেবারে খারাপ নয়।
কি খাচ্ছে কেমন হয়েছে সেদিকে মন দেবার মত সময় এটা নয়। পেট ভরছে কিনা এইই যথেষ্ট। আর সবাই চলে গেছে শুধু আসাদ খাওয়া শেষ করে ওর সাথে বসে আছে।
-ভাত তরকারি নেন, সারা দিন তো খুব ধকল গেছে ভাল করে খান কালকে কিন্তু আরও বিজি হবে।
-হ্যাঁ আর একটু ভাত লাগবে এইতো নিচ্ছি।
বিশাল ডেকচির মধ্যে একটা পিরিচ রাখা যেটা দিয়ে প্রথম ভাত নিয়েছিলো ওটা দিয়েই আবার আরও একটু ভাত নিয়ে একটু ভেড়ার মাংসের তরকারি নিয়ে খেতে খেতে কথা বলছিলো।
-আমি তো মনে করেছিলাম এসব খাবার হয়তো এখানে পাওয়া যাবেনা হয়তো ব্রেড বাটার খেয়ে কাটাতে হবে।
-না তা কেন, এই তো রাতে এক দিন ভেড়া এক দিন মুরগি আর দুপুরে প্রতিদিনই মাছ।
-সকালে?
-না সকালের জন্য এমনি কিছু নেই তবে দেখে নিবেন যা আছে এর মধ্যে আপনার যা ভাল লাগে তাই খেয়ে নিবেন।
-না মানে আপনি বা সবাই কি খায়?
-কেও ব্রেড খায় কেও কর্ণ ফ্ল্যাকস আর দুধ যার যা ইচ্ছা।
-ও আচ্ছা। এখন তো রোজা কাজেই সকালের চিন্তা নেই তাই না?
-না রোজা আর কয় দিন এই তো আর মাত্র তিন বা চারটা আছে হয়তো।
-ঈদে কি এখানেই থাকবেন?
-হ্যাঁ, তাছাড়া আর কোথায় যাব?
-ও ভালো কথা, সেহরির কি ব্যাবস্থা?
-আমরা সাধারণত, এই যে এখন সবাই উপরে উঠে গেছে যেয়ে দেখেন সবাই তাস খেলছে। রাত দুইটা বা আড়াইটার দিকে সবাই এসে সেহেরি খাবে। দেখি সেহরির জন্য আজ কি রান্না করেছে, বলেই নিচু হয়ে রাশেদ সাহেব যে টেবিলের উপর বসে খাচ্ছিলেন ওটার নীচে ডেকচি আছে তাই খুঁজে পেয়ে বললো-
-মাছ আর আলু।
-কি মাছ?
-মনে হয় রুই।
-কি শেষ? ও হ্যাঁ প্লেটটা ওই যে ওই সেলফের মত ওই ব্রাকেটের মধ্যে রেখে দেন। বেশ চলেন এবার।
-আপনার বেড কোনটা দিয়েছে?
-ওইতো তিন তলায়, আর আপনার?
-আমার এই যে গোয়াল ঘরে ওই দরজার বাম পাশে যেটা ওটা।

কথা বলতে বলতে সদ্য শোনা গোয়াল ঘরে ঢুকল। আগে আসাদ পিছনে রাশেদ সাহেব।
-এই যে নয়া ভাইছাব আসেন আসেন তাস খেলতে খেলতে মারুফ বলে উঠল আপনার সাথে তো আজ কথাই বলা হয়নি আসলে আপনেও এমন বিজির মধ্যে আসলেন। তা বলেন কেমন লাগলো? এইতো কালকের দিন গেলেই দেখবেন সব ঠাণ্ডা। শুধু শুক্র আর শনি বারেই যা একটু ঝামেলা তারপর এরকম থাকে না। ঠিক হয়ে যাবে।
কবির বললো-
-না আপনে যান গোসল করলে করে নেন এখন একটা বাজে দুইটায় আমরা পতা খাই আপনে ওই সময় চলে আসবেন আর যদি বসতে চান বসেন।
-না আমি না হয় যাই টায়ার্ড লাগছে পরে অবসর মত আলাপ করা যাবে। আচ্ছা ওই যে বললেন পতা, এর মানে কি?
রাশেদ সাহেবের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।
-আরে পতা মানে জানেন না? সেহরি, সেহরি, বুঝলেন?
-হ্যাঁ এখন বুঝলাম। আচ্ছা কাল কখন ডিউটি?
-কাল সকালে সাড়ে এগারটায় নামবেন।
-তাহলে ভাই আমি আসি কিছু মনে করবেন না ভীষণ টায়ার্ড লাগছে।
-না না মনে করার কিছু নাই আজকে যান তবে সবসময় একা থাকবেন না তাহলে খারাপ লাগবে।

10 thoughts on “নক্ষত্রের গোধূলি-৪১

  1. দেরী হলো বলে ভাববেন না /// পড়িনি। আমি পড়েছি। (রান্না ঘরে কে, আমি কলা খাইনি এমন না) :)

  2. যেভাবেই হোক এর মধ্যেই সব গুছিয়ে নিতে হবে। আর তো কোন বিকল্প নেই। রাশেদ সাহেবের ধৈর্য এবং সহ্য একেবারে খারাপ নয়। হুম। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।