পেট্রোলিনা ছুটি কাটিয়ে কাল এসেছে ! এখানে একটি এজেন্সিকে প্রতিনিধিত্ব করে। আজ দেখা করতে এসে সে কিছু জরুরি কথা বলতে চেয়েছিলো ! শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিলোনা ! আমার পেটে তখন ভাজ করা পরোটা আর আলুর দমের গভীর দাবি ! তাই প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই শিশুরা কেঁদে উঠে কেনো? পেট্রোলিনাকে প্রশ্ন করলাম।
সে রিপ্রোডাক্টিভ হেল্থ নিয়ে কাজ করে; আমার মনোভাব বুঝতে পেরেছিলো হয়তো।
-তুমি ডিফারেন্ট কিছু জানতে চাইছো, পেট্রোলিনা বললো –
-চোখ খুলেই প্রতিটা শিশু অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর একটা নোটিশ পেয়ে যায় ! সেখানে মৃত্যুর দিন ক্ষণ উল্লেখ থাকে; সে পরে তা ভুলে যায় ! “মৃত্যু” জীবনের সবচে বড় এবং প্রথম সত্য ! এই সত্যটা এক সেকেন্ড বয়সী শিশুও জানে; তাই কাঁদে ! আমি মুচকি হেসে বললাম!
-দ্বিতীয় সত্য কি? পেট্রোলিনা জানতে চাইলো –
-আমার মাতৃ ভাষায় সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কবির নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি দারুণ ছোট গল্প লিখতেন! তার একটা গল্পে দুটো চরিত্র আছে! একজন পোস্টমাস্টার; অন্যজন বালিকা রতন ! এ দুজনের মধ্যে রোদ-ছায়ার মতো এক ধরনের বন্ধন তৈরি হয় ! পোস্টমাস্টারের চলে যাওয়ার সময় আসে ! সেদিন ঘাটে নৌকা ছিলো ! পোস্টমাস্টার রওনা হবেন; পাল উঠলো ! বালিকা রতনের মনেও যেনো কষ্টের পাল নিঃশব্দে উড়তে থাকলো! তখন নদীটা সম্মুখে নয় তার চোখের কোণ ছুঁয়ে বয়ে যাচ্ছিলো! নদীর ভাঙ্গা পাড় পোস্টমাস্টারের অন্তর অতিক্রম করলো ! চোখ জলে ছলছল হলো ! সে রতনের কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ বোধ করলো! পরক্ষণেই ভাবলো, “ফিরিয়া লাভ কী? এই পৃথিবীতে কে কাহার?” এটিই হলো জীবনের দ্বিতীয় সত্য!
-তৃতীয় সত্য কি? আগ্রহ নিয়ে পেট্রোলিনা জানতে চাইলো –
-“মায়া” যা দ্বিতীয় সত্যের সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক; কিন্তু সত্য ! ঘরের মায়া, পরের মায়া, পথের মায়া-সব কিছুতেই মায়া ! আমি দেখছি তোমার চোখের কোণ এখন জলে ছলছল করছে! ঐ জলের উৎস কোন ঝর্ণা নয়; মায়া! বলতে পারো সত্য মায়া; বলতে পারো মিথ্যে মায়া; বলতে পারো পাঁচমিশালী মায়া ! জবাবে বললাম।
-চতুর্থ?
-আমাদের দেশে বিশেষ একধরনের আচরনের মানুষ আছে আমরা তাদেরকে বাউল বলি ! তারা দার্শনিক; তারা ঘরকে পর করে; কিন্তু পরকে আপন করেনা ! তুমি আমি এই যে ঠেলা গাড়ি ঠেলছি; রাজ্যের ক্লান্তি নেমে এসেছে তবু ঠেলছি ! ওরা এসবকে তুচ্ছ করে ! ওরা দেহতত্বে বিশ্বাসী – শরীর ও মনকে খুব গুরুত্ব দেয়! কোন কিছুই যে সাথে যাবেনা এটা ওরা শুধু বিশ্বাসই করেনা-অনুসরণও করে ! এই ঠেলাগাড়ি ঠেলাকে ওরা মোহ বলে ! আমরা মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও মোহমুক্ত হতে পারিনা ! সবই ভুল; এবং এই ভুলের বৃত্তে আজীবন বন্দি থাকার কারণ হলো মোহ; এটাই চতুর্থ সত্য!
-পঞ্চম?
-তুমি যখন কিশোরী ছিলে তখন কি চাইতে? সহজেই কী পাইতে সেসব? তখন তোমার মাথার ওপর “না” বলার শত কারণ ছিলো! মাঝপথ তো পেরিয়ে এসেছো ! মন যা চায় এখন কী তার সব কিছু করতে পারো?! তুমি কতোটা স্বাধীন? কতোটা পরাধীন? নিজের কাছে; পরিজনের কাছে?
আমি বলে দেই, তুমি চাইলেই সব পারোনা ! তুমি যদি বলো, পারিনা কারণ অনেক গুলো কণ্ঠ একসাথে “না” বলে ! সেটা আসল সত্য নয় ! পারোনা তুমি অতোটা শক্তশালী নও বলে ! তুমি সীমিত, তুমি নিজের কাছে বন্দি, তুমি সংকুচিত, তুমি তুচ্ছ ! সবার জন্য এটাই পঞ্চম সত্য!
-ষষ্ঠ?
-জানিনা ! তবে এই পাঁচটা সত্যকে একসাথে সাজাও: দুটোকে দুইপা, আর দুটোকে দুই হাত শরীরসহ, বাকিটাকে মাথা ! কী দাঁড়ালো?
-মানুষ ! পেট্রোলিনা জবাব দিলো!
সে মানুষ একজন তুমি, একজন আমি, একজন সে; তাঁর বসত পৃথিবীর আরেক কোণে
তার দূরত্বটাও কী জানি? হয়তো তিন ঘন্টার সূর্য দূরত্বে বসে সে মিছে কারো স্বপ্ন বুনে!
——————————————–
(কিছুটা সত্য; বাকিটুকুতে মনের রঙ লাগানো। পুরোটা পেট্রোলিনাকে অনুবাদ করে শুনিয়েছি)
শ্রদ্ধেয় ছদ্মনামের ডেজারট দাদা, আপনার লেখায় যা লিখেছেন; তা সবই সত্য, চিরসত্য। দারুণ লিখেছেন শ্রদ্ধেয় দাদা। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ ।
আপনার কথার আন্তরিকতা সবগুলি শব্দে টের পেয়েছি। খুব আনন্দিত হয়েছি।
অশেষ ধন্যবাদ !
পেট্রোলিনার সাথে সাথে আমরাও জানলাম। যেভাবে আপনি ব্যাখ্যা করেছেন; সত্য গুলোন আমাদের অনেকের জানা, কিন্তু প্রকাশ থাকেনা… না না প্রকাশ নয়; এখানে কথাটা অন্য হবে। সঠিক শব্দ মনে করতে পারছি না।
আমার কাছে আপনার মতো অতো সুন্দর পরিপাটি ব্যাখ্যা না থাকলেও "বুঝ' ছিলো। আজ আপনার লিখায় সত্যিকারার্থে একটি নিশ্চিতে এসে দাঁড়াতে পারলাম। কৃতজ্ঞতা জানবেন মি. মিড ডে ডেজারট। অলমোস্ট ইউ আর এ জিনিয়াস।
অন্তর গলিয়ে লেখা মন্তব্য।
কমপ্লিমেন্টে আমি ভীষণ অভিভূত।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মিঃ মুরুব্বী!
ব্যাখ্যাতীত একটি লিখা পড়লাম। আপনি অসাধারণ মিড দা।
অসাধারণ মন্তব্য এবং কমপ্লিমেন্টে ভীষণ আনন্দিত।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি !
ইডিওলজিক্যালী আপনার লিখাটিতে যথেষ্ঠ লজিক পরিলক্ষিত হলো। সপ্তম থেকে শুরু করতে পারেন। যদিও আপনার এই লেখায় পূর্ণতা রয়েছে। ধন্যবাদ।
দারুণ পরামর্শ দিয়েছেছেন; "সপ্তম থেকে শুরু করতে"।
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কথোপকথন ভালো লেগেছে ভাই।
আন্তরিক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।
* অসাধারণ…
নাটকীয় গুণ সম্পন্ন রচনা। যা আপনার লেখায় ভিন্নমাত্রা এনেছে।
শুভরাত্রি।
আপনার অসাধারণ মন্তব্যে মন ভরে গেলো।
কমপ্লিমেন্ট পেয়ে অভিভূত।
অশেষ ধন্যবাদ!
এই লেখাটাকে "বিশেষ নির্বাচনে" জায়গা দেয়ার জন্য শব্দনীড় এবং সঞ্চালককে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বেস্ট পোস্ট অব দ্য ডে … আপনাকে সম্মানিত করায় শব্দনীড় নিজেও সম্মানিত।