সবাই সবই বুঝে তবুও নির্বোধ থাকে অনন্তকাল

তিনি চুলে মেহেদি লাগাতেন; ঠোঁটে কড়া লাল লিপষ্টিক। সাধারণত অষ্টাদশির জন্য মানানসই সালোয়ার-কামিজ তিনি পরতেন। বসন্তের শাড়িতেও তাঁকে দেখেছি; সাথে খোঁপায় ফুলের মালা এবং হাতে নানান রঙের চুড়ি। সুখের একটা সংজ্ঞা তাঁর কাছ থেকে জেনেছি। তাঁর বয়স চার কুড়ির মতো ছিলো; গলির শেষ মাথায় ঘর। এখন আর তাঁকে দেখিনা।

মাজহার ইসলাম; আমার খুব কাছের বন্ধু। শিক্ষকতা করে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে বদলি হয়েছে। বেশ কবছর আগে ওদের একতলা বাড়িটা দৃষ্টিনন্দন বহুতলে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশে এসেছি মাজহার খবর পেয়েছে। সে মেসেজে জানালো, ওর পিতা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তিন বন্ধু তাঁকে দেখতে গেলাম। তখন বাতাসের অক্সিজেন উনার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। একইদিন অন্য একটা হাসপাতালে গেলাম; আরেক জনকে দেখতে। তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

পাঁচ তারিখ রাতে মাজহারের পিতা চলে গেলেন!

বিভিন্ন দেশে নানান ঘটনার কারণে মাঝে মধ্যে মনে হতো আমার নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়; আমি ভালো নেই। বাসস্থান নিয়েও আমার এবং বন্ধুদের কারো কারো কিছু স্বপ্ন ছিলো । অনেকেরই ডুপ্লেক্স বাড়ি পছন্দ; আমারও । কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বন্ধু রাশেদ তার পুরান বাড়ির পাশে আরেকটা ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছে; নিখাঁদ ডুপ্লেক্স। আমিও একটা ডুপ্লেক্স করেছি; তবে খাঁদহীন নয়। সামর্থ অসামর্থের মিশেলে একটা সখের ডুপ্লেক্স।

চার কুড়ির প্রিয়দর্শিনীকে আর দেখিনা; জায়গাটাতে শুধু তাঁর একটা ছবি অবশিষ্ট আছে। তিনি অন্যকোথাও সাড়ে তিনহাতে ঘুমিয়ে আছেন ।

মাজহার ওদের ঢাকার সুখবাড়ি থেকে কাল ভোরে ওর পিতাকে সিরাজগঞ্জে নিয়ে গিয়েছে। ওখানে এক নিরালায় উনার শেষ ঠিকানা হয়েছে! বাতাসের অক্সিজেন উনাকে নিরাপত্তা দেয়নি! এটা সবারই হয়; একদিন আমারও হবে! বিভিন্ন দেশে আমার অনিরাপত্তার অসন্তুষ্টি তাই অর্থহীন মনে হয়।শ্বাস-প্রশ্বাস মানেই তো জীবনের নিরাপত্তা !

বেশি কিছু তো নয়; বন্দুক-নিরাপত্তা নয়, ডুপ্লেক্স ঘরও নয় ।
স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারলেই সব মানুষের বলার যোগ্যতা থাকা জরুরি, ভালো আছি।

হাত ভরা রঙিন চুড়িই সুখের বিশাল কারণ হতে পারে।
আল্টিমেটলি সেইতো সাড়ে তিন হাত…
সবাই সবই বুঝে; তবুও নির্বোধ থাকে অনন্তকাল!

14 thoughts on “সবাই সবই বুঝে তবুও নির্বোধ থাকে অনন্তকাল

  1. চির সত্যের উপলোব্ধি দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে আপনার লেখায়।

    শুভরাত্রী প্রিয় লেখক মিঃ মিড ডে ডেজারটhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  2. সবই বুঝে তবুও নির্বোধ থাকে অনন্তকাল। আমাদের গিরিগিটি জীবন। :(

    1. হাহাহাহা, দ্বিতীয় লাইনটা দারুণ লেগেছে!

      আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!  

  3. আসাযাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন। যাবার বেলায় দেব কারে বুকের কাছে বাজল যে বীন।। সুরগুলি তার নানা ভাগে রেখে যাব পুষ্পরাগে, মীড়গুলি তার মেঘের রেখায় স্বর্ণলেখায় করব বিল।।

    1. কাব্যে  কাব্যে মনকাড়া মন্তব্য। দারুণ!

      আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!  

  4. হাত ভরা রঙিন চুড়িই সুখের বিশাল কারণ হতে পারে।
    আল্টিমেটলি সেইতো সাড়ে তিন হাত…
    সবাই সবই বুঝে; তবুও নির্বোধ থাকে অনন্তকাল!

     

    * বাস্তবতার নিরিখে উপাখ্যান। শুভকামনা সবসময়। 

  5. একটা সময় মুখের ভাষাও ব্ল্যাকআউট হয়ে যায়। কোন যুক্তি কোন বিশ্লেষণ সেখানে আর থাকে না। থাকে কর্ম থাকে আর তার কর্মের প্রতিফলন।

    আল্টিমেটলি সেই তো সাড়ে তিন হাত…

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।