অণুগল্পঃ মায়ানীল মেয়েটির হাত ধরে চলে গেলো

বেশ লম্বা সময় পর আহমেদ হোসেন দেশে ফিরছে। আগে ঘন ঘন ফিরতো। এয়ারপোর্টে তখন কেউ না কেউ তাকে রিসিভ করতে আসতো। এসব অনেক আগের কথা। শেষ ক’বার এয়ারপোর্টে কেউ আসেনি। বয়স বেড়েছে কিন্তু আহমেদ হোসেনের ইচ্ছের বয়স বাড়েনি। মুখে বলেনা; কিন্তু এখনো মন চায় সন্ধ্যে-বাতি জ্বালিয়ে পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে তার জন্য কেউ একজন অপেক্ষায় থাকুক।

শেষ ফ্লাইটটা এমিরেটস। আহমেদ হোসেন সব সময়ই চেষ্টা করে জোন “এ”-র প্রথম রো-তে আসন নিতে। এবারও ব্যাতিক্রম হয়নি। প্রথম যাত্রি হিসেবে সে এয়ার বাস থেকে নামলো। ডিপ্লোমেটিক সুবিধা নিয়ে সে চার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব ফরমালিটিজ শেষ করে ফেললো। লাগেজে প্রায়োরিটি ট্যাগ লাগানো থাকায় খুব তাড়াতাড়ি লাগেজ দুটোও পেয়ে গেলো।

সব কিছুই তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো। কিন্তু আহমেদ হোসেনের কোন তাড়া নেই। মোবাইলের সিমটা পরিবর্তন করে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। যদি কোন কল আসে; বলে, “তুমি নেমেছো? আমি ১ নং গেটে দাঁড়িয়ে আছি”। তার মোবাইলটা বেজে ওঠলো; অপরিচিত নাম্বার। সে আগ্রহ নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।

“গুড মর্নিং স্যার। রফিক ফ্রম … ডিপার্টমেন্ট অব ……সিকিউরিটি…….”।

আহমেদ হোসেন আশাহত হলো। মন খারাপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। সিদ্ধান্ত নিলো বন্ধুদের কল দিয়ে বলবে, তোরা এসে আমাকে নিয়ে যা।

আহমেদ হোসেন তার নিজের মনের এমন অদ্ভূত আচরণে কিছুটা অবাক হলো। সেতো নিজেই বহুবার মানুষকে বলেছে, কারো কাছ থেকে কিছু আশা করোনা; এমনকি মায়ের কাছেও। তবুও বন্ধুদেরকে কল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। অন্যপ্রান্ত থেকে প্রিয় বন্ধুর কণ্ঠ ভেসে এলো। আহমেদ বললো, তোকে একটু পরে আবার কল দেবো রে।

আসলে মায়ানীলের মতো কাউকে সে দেখেছে; তাই বন্ধুর সাথে কথা কন্টিনিঊ করেনি। তার জন্য বড় মায়া এই মানবীর। আহমেদ হোসেনের বুকটাকে নীলরঙ নদ বানিয়ে তাতে সে অষ্টপ্রহর চোখের জল ঢালে। সে আরো একটু এগিয়ে গেলো। মানবী মোবাইলে কথা বলছে। মায়ানীলেরই কণ্ঠ। দেশে আসার খবর সে জানে। তাইলে কী মায়ানীল তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে ? এতো মায়া যার বুকে সে আসতেই পারে ! আরো একটু এগিয়ে গেলো আহমেদ হোসেন। তখনই প্রায় সাতাশ-আটাশ বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে মায়ানীলকে জড়িয়ে ধরলো।

যে পাখি “জীবনের সব লেনদেন মেটাতে” পারেনা সে একটু আঁধারেই ঘরে ফিরে! মায়ানীল আড়চোখে আহমেদ হোসেনকে দেখলো। আলো-আঁধারের আহমেদ হোসেনকে আসলে কী সে দেখতে পেলো?

নীলরঙ শাড়ি পরা মায়ানীল মেয়েটির হাত ধরে চলে গেলো!

9 thoughts on “অণুগল্পঃ মায়ানীল মেয়েটির হাত ধরে চলে গেলো

  1. ভ্রমন আর স্মৃতিকথা পড়তে আমার বেশ লাগে। আপনি ভালো লেখেন।

    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ !

      মন্তব্যে আনন্দিত হয়েছি !

  2. নীলরঙ শাড়ি পরা মায়ানীল মেয়েটির কথা ভাবলাম কিছুক্ষণ।

    আহমেদ হোসেন এর মতো কখনও কখনও আমারও এমন হয় মি. মিড ডে। ধন্যবাদ।

    1. হাহাহা।

      মন্তব্যে আনন্দিত হয়েছি মিঃ মুরুব্বী !

  3. যে পাখি “জীবনের সব লেনদেন মেটাতে” পারেনা সে একটু আঁধারেই ঘরে ফিরে!

    * বেশ সুন্দর একটি শৈল্পিক রচনা। মুগ্ধতা রেখে গেলাম। শুভরাত্রি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  4. মন্তব্যে মুগ্ধ হয়েছি !

    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ !

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।