আমার নাবলা কথা এবং ফেবু মেমোরি থেকে একটা পোষ্ট

Ben এর সাথে এক দশকের মধ্যে আমার তিনবার দেখা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ এর প্রথম দিকে। তিনবারই আফ্রিকায়; তিনটা ভিন্ন দেশে। সে আমার অনেক সিনিয়র এবং হেডকোয়ার্টারে একজন বিগশট। শেষবার খাবার টেবিলে সে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল, “সব কথা কী পরিবারের সাথে শেয়ার করেছো?” জবাবে বলেছিলাম, তাঁরা কিছু তো জানেই; ফেইস বুকেও শেয়ার করেছি”। তবে কিছু কথা বলা হয়নি। যুদ্ধের সময়ের কিছু দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।

আসলে কিছু কথা বলার ইচ্ছে হয়নি। কিছুদিন আগ পর্যন্তও এই ইচ্ছেটা জাগেনি। কিন্তু গত দু’ তিনদিন ধরে কেন জানি সেইসব নাবলা কথা লিখে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ থেকেই লিখবো ভাবছিলাম। ফেবু ওপেন করে দেখি, মেমোরিতে দুটি পোস্ট। একটা আমার ফেবু ওয়ালে অনলি মি-তে (১৫ নভেম্বর ২০১৭) লেখা একটা কবিতা বইয়ের ড্রাফট রিভিউ। দ্বিতীয়টা পাকিস্তানে এক সন্ধ্যায় সিন্ধ নদ অতিক্রম করার সময় আমার অনুভূতি নিয়ে একটা পোস্ট (১৫ নভেম্বর ২০১২)।

এখন খুব সংক্ষেপে এই সিন্ধ পাড়ে প্রাচীন সভ্যতা, রিসেন্ট ইতিহাস এবং আমার অপূর্ণ ইচ্ছার কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে। আফ্রিকার যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার নাবলা বিষয়গুলি আজ তাই পেন্ডিং রেখে দিলাম।

আমি ইতিহাস খুব কম জানি। কিন্তু প্রাচীনতম ইতিহাসগুলি জানার আমার ভীষণ আগ্রহ রয়েছে। তবে পড়ে পড়ে নয়; দেখে দেখে জানার আগ্রহ। যদি সিন্ধু সভ্যতার কিছু চিহ্ন দেখতে পাই তাই সিন্ধ নদের পাড় ঘেষে গড়ে ওঠা শহরগুলিতে আমি গিয়েছি।

ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য সিন্ধ পাড়ে লারকানা এবং ঠাট্টা উল্লেখযোগ্য ছিল। মহেঞ্জোদারোর কথা তো সবাই জানে। ওটা লারকানা জেলা শহরের কাছে (প্রায় ২০ কিলো দূরে)। দেশটাতে কয়েক বছর ছিলাম। বেশ কবার এটেম্পট নিয়েও লারকানা বা মহেঞ্জোদারোতে যাওয়া হয়নি। এই না যেতে পারার আফসোস আমি এখনো অনুভব করি। তবে ঠাট্টায় গিয়েছি।

করাচী থেকে ঠাট্টায় যাওয়ার কথা বলি। পথে বামপাশে ঝিরক হাসপাতাল। ওখানে নামলাম। আমার আগ্রহের কারণে ওরা আমাকে কায়েদে আযম এর গ্রামে নিয়ে গেল। যতদূর মনে পড়ে ৭-৮ মিনিটের ড্রাইভ। উনার জন্মস্থান নিয়ে দুটি মত থাকলেও ওখানকার গ্রামবাসীরা দৃঢ়তার সাথে জানালো, ওটাই কায়েদে আযম এর জন্মস্থান। তারা আমাকে সিন্ধ নদের একটা ঘাটে নিয়ে গেল যেখানে তিনি (কায়েদে আযম) বাল্যকালে খেলতেন; সাঁতার কাটতেন। সিন্ধের ঐ অংশটা শুকিয়ে একেবারে খালের মতো সরু হয়ে গেছে। উজানে বাঁধের কারণে। ঘাটটায় কিছুক্ষণ বসে থাকলাম এবং ভিন্ন একটা অনুভূতি টের পেলাম।

ঝিরক থেকে ঠাট্টা প্রায় ৪৫ মিনিটের ড্রাইভ। কুড়ি মিনিট ড্রাইভ করার পর পাথরের একটা ঘর দেখলাম। কথিত আছে প্রায় হাজার বারশো বছর আগে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক অন্ধ লোক ঘরটা বানিয়েছিলেন। এলাকার লোকদের কাছে ওটা একটা বিস্ময়। ভিতরে যেতে চাইলাম। সবাই মানা করল। কিন্তু কেন? বুঝা গেলোনা।

ঠাট্টা সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে ডিসি এবং জেলা এক্সেকিউটিভ হেলথ অফিসারের সাথে দেখা করি। একইদিন শহর প্রান্তে মাক্লি নামক জায়গায় ওয়ার্ল্ড বিগেস্ট সিমেট্রিতে (কবরস্থান) গেলাম। ঠিক মনে নেই, সম্ভবত হাজার বছরের পুরান এই সিমেট্রি। রাজা মহারাজাদের পরিবারের সদস্যদের সাড়ে তিন হাত মাপের ঘর। অসাধারণ দেখতে প্রতিটা কবর। বহুক্ষণ ধরে দেখছিলাম কিন্তু আগ্রহ কমেনি। ওখানে যারা শুয়ে আছেন তাঁদের অনেকেই ইতিহাসখ্যাত। অসাধারণ সব কারুকাজময় হাজার হাজার সমাধি। তাঁদের কেউই সাধারণ ছিলেন না; সবাই পরাক্রমশালী। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, “পরাক্রমশালী লোকগুলির সাথে ঐ সময়ের চাষামজুরদের এখন পার্থক্য কি? মাটি!

এসব দেখে একই পথে ফিরছিলাম। হায়দারাবাদ শহরে রাত্রি যাপন করব। যখন সিন্ধ নদ অতিক্রম করছিলাম তখন সন্ধ্যা নামে নামে। তখনই এই পোস্টের কথাগুলি আমার অনুভূতিতে আসে। হায়দারাবাদে হোটেলে ওঠে এই ছবি সহ পোস্টটা দিয়েছিলাম। আজ কেন জানি এখানে শেয়ার দিতে ইচ্ছে হল। কেউ “ক্ষণিক আমাকে ভাবে” এই কথাটা পোস্টে লিখেছি; কিন্তু কে সে জানতামনা। অদ্ভূত হিউম্যান সাইকোলজি; যা মানুষ নিজেও নিজেরটা জানেনা!

মেমোরি থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১২ র পোস্টঃ
“আজ যখন সিন্ধু নদি অতিক্রম করছিলাম তখন সন্ধ্যা নামে নামে। কিছু পাখি সিন্ধুর জাগা-চরে বসেছিল; আর কিছু ঘরে ফিরছিল। তখন মনে
হয়েছিল আমার একটা নদি আছে-সেখানেও সন্ধ্যা নামে। সেখানে হয়তো কেউ সন্ধ্যাবাতি জ্বালাতে গিয়ে ক্ষণিক আমাকে ভাবে”!

4 thoughts on “আমার নাবলা কথা এবং ফেবু মেমোরি থেকে একটা পোষ্ট

  1. দুটি মেমোরি নিয়ে জলদি জলদি বিস্তারিত ভ্রমন বা দেখা অভিজ্ঞতার পোস্ট চাই ডেজারট ভাই। নিয়ে আসুন। :)

    শুভেচ্ছা বর্তমান শুভেচ্ছা অগ্রিম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. সেই না বলা কথা গুলো সময় নিয়ে যতটা বলা সম্ভব জানতে চাই মিড দা। :)

  3. যুদ্ধের সময়ের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই মি. মিড ডে ডেজারট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

  4. সেখানে হয়তো কেউ সন্ধ্যাবাতি জ্বালাতে গিয়ে ক্ষণিক আমাকে ভাবে”!

     

    * অনেক সুন্দর প্রকাশ… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।