অণুগল্প : নীরা

nari-5

নীরার সাথে আমার ঘর বাঁধার শখটা দীর্ঘদিনের। যখন তুমি এবং আমি সম্বন্ধটা বুঝতে পারি তখন থেকে এই চিন্তাটা মাথায় ঢুকে যায়। সম্পর্কে তেমন কিছু না হলেও ও ছিল আমার বছর দুয়েক বড়। প্রায়ই প্রতিদিনই আমাদের দেখা হতো। দূরত্বটা এবাড়ি ও বাড়ির। প্রথম যখন নীরার সাথে দেখা তখন তারা নতুন এসেছে আমাদের পাড়ায়। আকাশটা কালো হলেও সেদিন কোন বৃষ্টি হয়নি। এমনি এক কালো মেঘের নিচে দাঁড়িয়ে তার সাথে আমার প্রথম আলাপ-পরিচয়। তারপর পানি অনেকদূর গড়িয়েছে। আমি শহরে এসেছি। চাকরী করছি। মাঝেমধ্যে কথাও হয়। প্রতিটা কথাতে স্বপ্ন লেগে থাকে।

সেদিনের আকাশটা বেশ পরিষ্কারই ছিল। কোথাও কোন রকম কালো মেঘের দেখা পাইনি। আমাদের অফিসে চা-নাস্তার আয়োজনটা হয় ছাদে। ভাবলাম বিকেলের মিষ্টি রোদে একটু চা পান করে আসি। টেবিলে বসে আকাশের দিকে তাকিয়েছি মাত্র। এমন সময় নীরার ফোন। জরুরী তলব। এক্ষুনি গ্রামে ফিরতে হবে।

সারারাত জার্নি করে বাড়ি আসতে আসতে সকাল আট টা। দরজা খুলেই দুঃসংবাদ দিল ছোটবোন রোজী। ’ভাইয়া, নীরা আপুকে না কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ গতকাল রাতে কই যেন চলে গেছে।

ঝুপ শব্দে হাতে রাখা ব্যাগটা পড়ে গেলে রোজী সেটা তুলে নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল। আমি বাইরে বের হয়ে আসি। শ্যাওড়া গাছটি যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমনি আছে। মাটি থেকে বের হওয়া যে শিকড়ে দুজন বসতাম। সেখানে ময়লার আস্তর। হাত দিয়ে ঝেড়ে বসে পড়ি। দৃষ্টিটা মেলে দেই আকাশে। আজও আকাশে মেঘ করেছে কিন্তু বৃষ্টি নেই। মেঘে মেঘে কথা হচ্ছে চমৎকার। যেন তারা জানান দিচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি। হঠাৎ মাথার চুলে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ঘুরে দেখি নীরা। দাঁড়িয়ে আছে অশ্রুসজল চোখে। আর কোন কথা হয় না আমাদের মধ্যে। নীরাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরি। বৃষ্টি নামে। অঝোর ধারায়। মেঘেরাও মেয়েদের মন বোঝে।

4 thoughts on “অণুগল্প : নীরা

  1. অভিভূত হলাম অণুগল্পটি পড়ে। অভিনন্দন প্রিয় কবি মোকসেদুল ইসলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।