শূন্য

shunno সে ছিলো আমার চাচাতো বোন। মনে পড়ে সে সময়ের কথা। আমি তখন ক্লাস থৃ-র ছাত্র। আমিই প্রথম তাকে স্কুলে নিয়ে গেলাম। ভর্তি করালাম। সঙ্গে চাচাও ছিলেন। আমার এসএসসি পর্যন্ত তাকে আমি সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যেতাম। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সব সময়ই ভালো থাকতো। একটু- আধটু মন কষাকষি হতো না এমনটা নয়। তবে তা ক্ষণিকের। যেমন বৌচি খেলতে গেলে লাগতো। গোল্লাছুট, আরো অনেক খেলা বাড়ির পিছনে মাঠে গিয়ে আমরা খেলতাম। তখনই খেলার মাঝে ঝগড়া লাগতো। আমরা তখন সকল ছেলেমেয়েরা প্রায় সকল ধরণের খেলা একই সঙ্গে খেলতাম। তবে সে বেশ চিকন ছিলো। তাই ভালো দৌড় দিতে পারতো। আমি ছুঁই ছুঁই করেও তাকে ধরতে বা ছুঁতে পারতাম না।

যাই হোক, অনেক দিন গেলো। অনেক রাত গেলো। বৃটিশ গেলো পাকিস্তান এলো। পাকিস্তান গেলো বাংলাদেশ এলো। জাপানে নাগাসাকি আর হিরোশিমা-র বর্বরোচিত হত্যার ইতিহাস হলো। আমাদের জীবন থেকেও অনেক বছর চলে গেলো। কলেজে পড়ার জন্য বাড়ি থেকে চলে এলাম। কলেজের পাশেই কলেজ হলে থাকতাম। কলেজে পড়তে এসেই নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করলাম। তাকে না দেখলে যেন ভালো লাগে না। সে ছাড়া আমি যেন বড় একা।

কতো রাত তার কথা ভাবতে ভাবতে শেষ হয়েছে তা আজও অজানা। বাড়িতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হলে কেমন লাগতো তা বুঝতে পারতাম না। চিন্তা করলাম, তাহলে কি আমি তাকে … !!

না। কোন উত্তর পেলাম না। চারদিকে শুধু শূন্যতাই দেখলাম। আমার প্রতি তার দূরত্ব অনেক কম অনুভব করলাম। এভাবে আরো অনেক দিন কেটে গেলো। আমি বিএ ক্লাসে উঠলাম।

তাকে দেখতে এখন আর আগের মতো মনে হয় না। সে যেন এখন একটু অসাধারণ, যেন একটু দূরের, একটু ভিন্ন। তার দেহের প্রতিটি অঙ্গই যেন আলাদা সৌন্দর্য প্রকাশ করছে। প্রতিটি অঙ্গেরই যেন আলাদা ব্যাখ্যা রয়েছে। তার চোখের দিকে আগের মতন তাকানো যায় না। তখন কেন যেন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। মনে হয় আমি যেন এক লক্ষ্যহীন নাবিক। কোন ক্রনোমিটার ছাড়াই যেন সাগরে পাল তুলেছি। জীবনতরী যেন অচেনা পথেই ছুটছে। কূলে ফেরার কোনোই সম্ভাবনা নেই।

তার বিয়ের কথা চলছে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। কিছুই বলতে পারছি না। সে একদিন বললো, আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না। আমার ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও পালিয়ে যাই।

বললাম, কাউকে পছন্দ করে রেখেছিস কি না ?
তার মুখ থেকে কোনো জবাব আসেনি শুধু এক পলক দৃষ্টি ছাড়া। সে দৃষ্টি, সে চাহনীর ব্যাখ্যা করতে পারিনি। তার চোখের জটিল চাহনীর সূত্র বের করতে পারিনি। তাই তো অংক মেলাতে পারিনি। জীবনে হায়ার ম্যাথমেটিকস এ আমি প্রথমেই শূন্য পেলাম।

তার বিয়ে হচ্ছে। তার বিয়েতে ছবি তোলার দায়িত্ব আমার ওপরই পড়েছে। তুললাম। মনের মাধুরী দিয়ে আমার ক্যামেরার বাটনে একটার পর একটা টিপ দিয়ে অনেক ছবিই তুললাম। সে ছবির ভিড়ে আমার মনের মধ্যে একটা ছবি খুঁজে পেলাম। এবং সেখানে কোনো এক মানবীর চেহারা খুঁজে পেলাম। কিন্তু সে মানবীর পাশে আমি কাকে দেখতে পাচ্ছি ? সে তো অন্য কেউ। অন্য একজন তাহলে কি সেখানে আমার থাকার কথা ছিলো ? মনে পড়ে, সেদিন যখন তাকে বিদায় দিচ্ছিলাম তখন সকলেই কাঁদছে, সকলের চোখেই পানি। আমার দুটো চোখকে সিক্ত অনুভব করলাম। তাই পরিস্থিতি সামলে নেয়ার জন্য কৌতুকের ছলে বললাম, দেখি কার কার চোখে জল।
তখন তার এক বান্ধবী বললো, আপনি অনেক দুষ্টু।

আমি এর জবাব দিতে পারলাম না। কারণ তখন আমার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল। পালকির বেয়ারাগুলো তাকে নিয়ে ছুটছে। তাদের হই হই বল হইয়া শব্দের নিচে চাপা পড়ে গেলো আমার বুকফাটা নিঃশ্বাস।

ww

প্রিয় পাঠক। এই ছ্যাঁকা গল্পটি আমার জীবন থেকে নেয়া নয়। এটা হচ্ছে অলস ভাবনার সৌখিন কল্পনা। ত্রুটি হলে ক্ষমাপ্রার্থী। পড়েছেন তাতেই ধন্য।

নিন এবার রেটিং করুন। রেটিং চর্চা অব্যহত রাখুন। ধন্যবাদ।

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter