যুবক রবি অন্য রবি ছিন্নপত্রে শেষ পর্ব … আলতাফ হোসেন


যুবক রবি অন্য রবি ছিন্নপত্রে ১ম এবং ২য় পর্বের পর…
যুবক রবি শান্তি পেয়েছিলেন। বারবার তাই বলেছেন উদার- উন্মুক্ত প্রকৃতির কথা, নদী ও মেঘের কথা, সন্ধ্যাবেলার বাতাস ও স্তব্ধতার কথা। নির্জন- নিঃসঙ্গ মানুষের সঙ্গে আদিগন্ত ধূ ধূ প্রান্তর- ধান ক্ষেতের মুখোমুখি বসে থাকার মহত্ত্বপূর্ণ শান্তির কথা। তবে এই শান্তি স্বভাবতই ছিল না নিরবচ্ছিন্ন বা কেবল ইতিরই কোমলতায় আচ্ছাদিত। নিরর্থকতা, অসারতার অভিজ্ঞতার কথা আগেই বলা হয়েছে। নিঃসঙ্গতা থেকে কোথায় পৌঁছে গিয়েছে তাঁর উপলব্ধি আমরা এখানটায় দেখতে পাই:

“যার সঙ্গে দুটো কথা কয়ে প্রাণসঞ্চয় করা যায় এমন মানুষ দশ-বিশ ক্রোশের মধ্যে একটি পাওয়া যায় না। কেউ চিন্তা করে না, অনুভব করে না, কাজ করে না, বৃহৎ কার্যের, যথার্থ জীবনের কোনও অভিজ্ঞতা কারও নেই, বেশ একটি পরিণত মনুষ্যত্ব কোথাও পাওয়া যায় না। সমস্ত মানুষগুলো যেন উপচ্ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে আপিস যাচ্ছে, ঘুমচ্ছে, তামাক টানছে, আর নিতান্ত নির্বোধের মতো বকর বকর করছে।

যথার্থ মানুষের সংশ্রব পাবার জন্য মানুষের মনে ভারি একটা তৃষ্ণা থাকে। কিন্তু সত্যিকার রক্তমাংসের মানুষ তো নেই। সমস্ত উপচ্ছায়া, পৃথিবীর সঙ্গে অসংলগ্নভাবে বাষ্পের মতো ভাসছে।”

কতখানি ক্ষুব্ধ, অশান্ত হলে, অপরিতৃপ্ত বোধ করলে কেউ এমনভাবে লিখতে পারেন? আঁরি বারবুসের ‘নরক’ বইটির নায়ক ছিলেন এমন একাকী, অতৃপ্ত। কাফকার দুই ‘কে’, কামুর মার্সো, সার্ত্রের রক্যাতাঁ যা বলতে পারতো, এভাবে না বললেও বলেছে অন্যভাবে, বা, বুঝিয়ে দিয়েছে যা আচরণে, রবীন্দ্রনাথের এই উচ্চারণ তারই কাছাকাছি: “রক্তমাংসের মানুষ তো নেই। সমস্ত উপচ্ছায়া, পৃথিবীর সঙ্গে অসংলগ্নভাবে বাষ্পের মতো ভাসছে।”

কখন লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ এমন কথা? আজি হতে শতবর্ষেরও আগে। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে।

“কারো কারো এমন একটি অকৃত্রিম স্বভাব আছে যে, অন্যের ভিতরকার সত্যটিকে সে অত্যন্ত সহজেই টেনে নিতে পারে। সে তার নিজের গুণে। যদি কোনো লেখকের সবচেয়ে অন্তরের কথা তার চিঠিতে প্রকাশ পাচ্ছে তাহলে এই বুঝতে হবে যে, যাকে চিঠি লেখা হচ্ছে তারও একটি চিঠি লেখাবার ক্ষমতা আছে।”

এ কথার আগে লিখেছেন-

“নিজের যা সর্বোৎকৃষ্ট, ক’জনই বা তা নিজে ধরতে বা পৃথিবীতে রেখে যেতে পেরেছে! আমরাঃ ইচ্ছা করলে, চেষ্টা করলে প্রকাশিত হতে পারিনে। চব্বিশ ঘন্টা যাদের কাছে থাকি তাদের কাছেও আপনাকে ব্যক্ত করা সাধ্যের অতীত।”

‘সহজে সত্য আকর্ষণ করার ক্ষমতাটি’ যে ইন্দিরার আছে সে কথা বিশদ করে অন্য একটি চিঠিতে বলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘যে শোনে এবং যে বলে এই দুজনে মিলে তবে রচনা হয়।। তটের বুকে লাগে জলের ঢেউ, তবে সে কলতান উঠে/বাতাসে বনসভা শিহরি কাঁপে, তবে সে মর্মর ফুটে।’

জয় হোক ইন্দিরার, ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর হোক জয়। বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড়ো এবং বিশ্বসাহিত্যের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক রবীন্দ্রনাথ যে আজ থেকে একশো বছরেরও আগে এত গভীর ও অগ্রসর চিন্তার তথা আভঁ-গার্দের ধারক হতে পেরেছিলেন তার পেছনে লেখকের তরুণ বয়সের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু ইন্দিরার ভূমিকা অনেক অনেকখানি।

bvc
কৃতজ্ঞতায়ঃ আলতাফ হোসেন।
অবাক বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্য। পদ্মা পাড়ের মানুষ ব্লগ থেকে সবিনয়ে শেয়ার করা হলো।

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter