১২.
নেডা – নামে যে ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষক আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন – ভদ্রমহিলার বয়েস মিনিমাম ৭৫ হবে। ছয় ফিট লম্বা প্রায় -স্লিম। শরীর শক্ত পোক্ত হলেও প্রায় বাঁকা হয়ে গেছেন মহিলা। কিন্তু খুব উদ্যমী। ওরা এন্থোয়াসিয়াসটিক শব্দটাকে খুব গুরুত্ব দেয়। কাজ যাই করা হোক কাজ সেটা কাজই। শতভাগ এফোর্ট এতে দিতেই হবে। নইলে যে কাজ কাজই করা হোক না কেন সে কাজ সে বেশি দিন কন্টিনিউ করতে পারবেনা। তার মানে হলো কাজে এতোটুকু খুঁত থাকলে চাকরী থাকবে না।
আট ঘন্টা চাকরীর টাইম হলে আট ঘন্টার মাঝখানে আধা ঘন্টা ব্রেক এবং বাকী সাড়ে সাত ঘন্টা তাকে কাজ করতে হবে। এইসময় কোনো বিরাম নেই। ইন্টারভিউতে তাই জিজ্ঞেস করা হয় তার ভারী কাজ করতে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনা বা ফিজিকাল কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটাও জেনে নেয়া হয়। তাই প্রতিটা জবের পাশে এই উদ্যম শব্দটা খুবই আবশ্যিক ভাবে থাকে।
উনি লেকচারের মাঝখানে প্রায় নিজের ফ্যামিলি, ছেলেমেয়ের গল্প করেন। তার মেয়ে আইটি প্রফেশনাল। কথায় কথায় এখানে ধনী, গরীব এবং মধ্যবিত্তের একটা ফারাকের কথা বলেন। ধনীদের এটা সেটা, মধ্যবিত্তের এই প্রবলেম সেই প্রবলেম ইত্যাদি। গর্বের সাথে জানালেন ওনার মেয়েকে কোনো প্রাইভেট স্কুল বা কলেজে পড়াননি। সরকারী স্কুল কলেজে আর দশজনের মতো পড়িয়েছেন। বুঝলাম যে এখানেও বাংলাদেশের মতো ধনী গরীবের স্কুল আছে। কিন্তু ধনীর স্কুল কেমন গরীবের স্কুল কেমন খুব জানতে ইচ্ছে করছে। তবে প্রতিটা স্কুলের সামনেই বড় মাঠ আছে। ঘন সবুজ সে মাঠ দেখলে আপনাতেই মন ভালো হয়ে যায়। মাঠে বাচ্চারা হইচই করে খেলে। ফুলের মতো বাচ্চাদের এই আনন্দ দেখতে ভালোই লাগে।
প্রতিদিন ঘর থেকে বেরুলে মুল অস্ট্রেলিয়ানদের চাইতেও বেশী চোখে পড়ে আরবদের। মাঝে মাঝে মনে হয় মধ্যপ্রাচ্যে আছি। এখানে আরবী ভাষা জানলে চাকরি কনফার্ম। বড় ছোট সব চাকুরীর বেতন একই। তবে অড জবে সেলারী সবচাইতে বেশি। নীচে একটা ক্লিনার জবের বিজ্ঞপ্তি দেখলে বোঝা যাবে ক্লিনার হতেও এদেশে যোগ্যতা লাগে।
সেখানেও অভিজ্ঞতা তো লাগেই আবার ইংলিশ ফ্লুয়েন্ট স্পিকার হতে হবে।
Cleaner – Full time
SEGS
Waterloo NSW
Apply Now
$22 – $30 an hour
Part-time, Temporary, Contract, Commission, Volunteer, Casual, Subcontract, Permanent.
We are looking for someone who can immediate start. We are seeking a Cleaner with C1 EXPERIENCE in the Sydney Metropolitan area.
Applicants MUST
– Have at least 2 YEARS cleaning experience and 1 YEAR C1 experience
– Must have good personal hygiene
– Punctual and reliable
– Attention to detail
– Must be fluent in English
Duties include
– Cleaning floors with Paroling, Scrubber, cleaning toilets, windows and other duties
– Experience using scrubbing machines highly desirable
– Following a daily schedule
– Training and inducting cleaner/s
– Insuring site is to standard
– Liaising with Management
– Rectifying issues on site
অস্ট্রেলিয়া গড়ে উঠেছিলো কয়েদিদের দিয়ে। আঠারো শতকে লন্ডনের একদল অপরাধী যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলো, দেশের কারাগারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল এই নির্জন এলাকায় এবং সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়নি। তাদের বলা হয়েছিল এখানেই এই নতুন জায়গায় তাদের নিজেদের উদ্যেগেই বসতি তৈরী করতে হবে। তখন ছিলো এখানে শুধু অস্ট্রেলিয়ান কিছু আদিবাসী। স্বাভাবিক ভাবেই অবরিজিন এবং এই নতুন বসতি স্থাপনকারী কয়েদিদের সাথে বিরোধ হলেও অবশেষে কয়েদিরা মিলেই যে রাষ্ট্র তৈরী করে সেটি অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু খুব অল্প সময়েই এতো চমৎকার উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী দেশে কিভাবে পরিণত হলো সে বিষ্ময়।
এখনো অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র ২৫ মিলিয়ন (আনুমানিক) মানুষ এবং যেহেতু এখনো অস্ট্রেলিয়ায় নিজেরা খুব বেশী সংখ্যক না তাই এখানে ভিন দেশীয়দের স্কিল মাইগ্রেশন এবং বিভিন্ন ভাবে মাইগ্রেশন দেয়া হয়। স্টুডেন্ট হয়ে একবার আসতে পারলে এবং রেজাল্ট ভালো করলে সিটিজেনশিপ পাওয়াটা কঠিন না। আবার রিফিউজিদের আশ্রয় দিচ্ছে এই দেশ। রিফিউজিদের সুন্দর বাসা দেয়া হয়, প্রতি সপ্তাহে সেন্ট্রাল লিঙ্ক থেকেও ভালো একটা এমাউন্ট দেয়া হয়। তাই সিরিয়ান রিফ্যুজিদের এখানে অভায়রণ্য, রোহিংগা প্রচুর। একসময় রোহিঙ্গারা এখানে বোটে করে এসেছে। এখন অবশ্য আর সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তবে যারা এসেছে তারা বেশ ভালো আছে। তাদের দুই বেডরুমের বাসা, টিভি সহ দেয়া হয় প্লাস প্রতি সপ্তাহে তাদের চলার মতো টাকা তো দেয়াই হয় এবং ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল ফ্রী। এবং তাদের ভরনপোষনের জন্যেও একটা এমাউন্ট দেয়া হয়। এটা অনন্তকাল দেয়া হবে না।সেজন্য সরকার তাদের ফ্রী ইংলিশ কোর্স অফার করে এবং এরপরে চাকরি পেলে সেন্ট্রাল লিংকের টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ওরা সেন্ট্রাল লিংকের টাকা নেয় এবং ক্যাশ জব করে। ক্যাশ জব করলে সেটা ব্যাংকে যাবে না ফলে সে সেন্ট্রাল লিংকের টাকাও পেতে থাকবে আর ক্যাশেও ইনকাম করতে থাকবে। এই কাজটা রোহিংগারাই বেশী করে।
এখানে আছে প্রচুর লেবানিজ। পাঞ্চবোল, লাকেম্বা, ব্যাঙ্কসটাউন ওয়েলিপার্কে প্রচুর লেবানিজ। লেবানিজদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের কারণে তাদের নিজেদের কম্যুনিটির লোকদের জব পাওয়াটা অনেকটাই সহজ। তবে তারা এখানে এসে পড়াশোনা করছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও সব সিস্টেমেই তারা পড়ছে। বিত্তশালী হয়েছে। পাঞ্চবোল লাকেম্বা, ব্যাঙ্কসটাউন সাবার্বে লেবানিজদের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্য। তবে আরবদের অধিক বিয়ে এবং প্রচুর সন্তান নেয়ার বিষয়টা যেনো অনেকটা ইনভেস্টের মত। প্রতি বাচ্চার জন্য সেন্টার লিঙ্ক থেকে প্রতি সপ্তাহে একটা ভালো এমাউন্ট পাওয়া যায়। সব পাওয়ার পরেও হতাশা, যন্ত্রনা থাকে।
আমার এক সিরিয়ান মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হলো। খুব সরল মেয়েটা জানালো সে তিনবার সুসাইডের এটেম্পট নিয়েছিল। কিন্তু তিনবারই বিফল হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম এতো মরতে চায় কেন সে ?
প্রেম আছে নাকি ? সে জানালো প্রেম না। সংসারে অশান্তি তাদের। ওরা নয় ভাইবোন। বড় তিন ভাই বিয়ে করেছে। তাদের বউ বাচ্চা মিলে বড় সংসার। যদিও দুই ভাই তাদের সাথে থাকে না। কিন্তু বাকী ভাইবোন তো আছে। সে বলে যে এতো বড় পরিবার। প্রতিদিন নতুন নতুন নাটক সংসারে। ওর বোন একজন ডিভোর্সড। জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা ? সে উত্তর করলো ওর হাজব্যান্ড গায়ে হাত তোলে। অত্যাচারের মাত্রা বেশী হলে সে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছে। সিরিয়ান এই মেয়েটার নাম শাইমা। ওর বোনের নাম ইসরা ইয়াতিম। শাইমা বললো – জানো আমাদের আরব পুরুষরা খুব এরোগেন্ট। কথায় কথায় গায়ে হাত তুলে। বললাম তোমার কি ইচ্ছে আছে ভিন্ন কমিউনিটিতে বিয়ে করার ? সে জানালো না সে ইচ্ছে নেই।
আমাদের ক্লাসে আছে এক কোরিয়ান মেয়ে। ওর নাম জেনি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম তোমার দেশ কোথায় – সে এমনভাবে কোরিয়া শব্দটাকে বললো আমি শুনলাম ক্রিয়া – ওরে বার বার জিজ্ঞেস করলেও সে একই ভাবে ক্রিয়া বলল। মনে মনে এই ক্রিয়া দেশ কোথায় আছে সেটা ভাবছিলাম। এরপর বললো সে এসেছে তার পার্টনারের কাছে। তার পার্টনারও কোরিয়ান। কিন্তু সে তার মা-বাবার সাথে অস্ট্রেলিয়ায় আগেই মাইগ্রেন্ট হয়ে এসেছে। ফেসবুকে প্রেম হয়েছে তার সাথে। সেই এপ্লাই করে তাকে নিয়ে এসেছে। স্ত্রীকে আনার যে প্রক্রিয়া একই প্রক্রিয়া পার্টনার আনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সে তার পার্টনারের বাসায় পার্টনারের মা-বাবার সাথে থাকে। পার্টনারের মায়ের আবার আগের হাজব্যান্ডের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এখনের হাজব্যান্ড তার চাইতে দশ বছরের ছোট এবং আগের ঘরের ছেলে পরের ঘরের আর একটা মেয়ে, ছেলের গার্লফ্রেন্ড এবং স্বামী সহ চমৎকারভাবে মিলে মিশে আছেন।
জেনিকে জিজ্ঞস করলাম ‘জেনি এই যে তুমি এখানে চলে এসেছ তোমার বাবা মা কি টেনশন করেন অথবা তোমার কোনো খরচ পাঠান না ? সে বললো – নো, নেভার – আই এম ওল্ড। আর একদিন জেনিকে জিজ্ঞেস করলাম – জেনি তুমি কি তোমার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে ? সে উত্তর করলো – নো –
কেন জিজ্ঞেস করলে সে বললো – নো মিন্স নো –
আমি চুপ করে গেলাম – বাংলাদেশের কাদামাটি লেগে আছে গায়ে – ভাবনার চেঞ্জ আনতে হবে ভাবছিলাম।
১৩
আজ ট্রেনে সামনে বসলো চরম সুন্দরী এক অস্ট্রেলিয়ান মেয়ে। অবশ্য ওরা অনেকেই ভীষন সুন্দর। লালচে সোনালী চুলের মিশেলে মেয়েটার হাত পা সবকিছু এতো সুন্দর। চোখে পড়েছে সিলভার কালারের চশমা। ওর ওভারকোট, ব্যাগের রং জুতোর রং সব এক। আমি ওর দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছি আর ভাবছি ওর মা নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী। আশ্চর্য যে, ওর পাশেই বসেছে এক ঘন কৃষ্ণবর্ণের মেয়ে। সাথে ওর বাচ্চা। দুজনই এতো কালো যে কালোর যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
ওরা দুজন পাশাপাশি বসাতে আমি দুজনের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম ওদের দুজনের মনের মধ্যেকার ভাবনা চিন্তা না জানি কেমন ! রং যাই হোক মানুষের ভেতরে তো রক্ত একই রকম। একই রকম অরগান শরীরে। আমি এখানে কোনো কালো মেয়েকে খুব উচ্ছ্বল হয়ে হাসতে দেখিনি। খুব যেন মন খারাপ। কারো দিকে তাকায় না। শুধু নিজস্ব ঘরানার মানুষজনের সাথেই কথা বলে। আচ্ছা ওরা হাসে না কেন ? ওরা কি অন্যদের মনের ভাষা বোঝে ? হয়তো আমার ধারনা ভুলও হতে পারে।
মানুষ তো আসলেও রেসিস্ট। রেসিসিজম থেকে মুক্তি নেই। আমি কালো মেয়ের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ওর বয়েস মাত্র একবছর বা তার বেশি কিছু হতে পারে। আশ্চর্য এটুকু বাচ্চা আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো। নিশ্চয়ই এই ছেলে জিনিয়াস হবে। মানুষের চোখের ভাষা মনের ভাষা বোঝার ক্ষমতা তো বড়দেরই হয় না। আর শিশু !!
আর একদিন ট্রেনে বসেছি অপেরা হাউস যাবো। আমাদের পেছনে বসেছে এক জাপানী / চাইনিজ মেয়ে (জাপানী, চাইনিজ, ফিলিপিনি, ইন্দোনেশিয়ান, ভিয়েতনাম সবার চেহারা প্রায় একই রকম)।
মোটা সোটা ফরসা চেহেরার মেয়েটা ফোনে অনবরত কথা বলছিল তার নিজের ভাষায়। শব্দগুলো অচেনা হলে শুধু যেনো শব্দই হয়। তাৎপর্য নেই কোনো শব্দের। সমস্যা সেটা নয়। কিন্তু সে কথার মাঝখানে তিনবার মিয়াও মিয়াও বললো। আবার কয়েকটা শব্দের পরেও সে মিয়াও মিয়াও করলো।
মিয়াও মানে কি -তার ভাষায় কে জানে !
সেদিন নেভিটাসে আমাদের ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাসে লিসেনিং শোনানো হলে এক আরব মেয়েকে রেচেল জিজ্ঞেস করলেন বলতে পারো সে কি বলেছে ? ওয়াও ওয়াও ছাড়া তো কিছু বুঝলাম না – মেয়েটা উত্তর করলো –
ক্লাস ভর্তি হাসির ফোয়ারায় দুলে উঠলো রুম –
নেভিটাসের শিক্ষক বললেন প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেন্টরা যখন আসে এই সময়টা হলো হানিমুন পিরিয়ড। হানিমুন পিরিয়ডে কোনো টেনশন থাকে না। আনন্দের ঘোরে সময় যায়। কিন্তু জবে ঢোকার পরে ব্যস্ত হলে তখন হানিমুন পিরিয়ড কেটে যায় – টানা আট ঘন্টা কাজের সময়টা খুবই কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। সে সময় হানিমুনকাল স্বপ্নই মনে হয়। হয়তো ওনার কথাই সত্যি।
আমি জীবনকে ভ্রমন মনে করি সে সুখে যাক আর দুঃখেই যাক। জীবনের এই জার্নিকে এঞ্জয় করি –
“লাইফ ইজ রিয়েলি বিউটিফুল”
১৪
মিশেল আমাদের সুইম ইন্সট্রাকটর। আবার একই সাথে নেভিটাসের ল্যাংগুয়েজ শিক্ষক। অত্যন্ত হাসিখুসী মিশেল খুব বন্ধুবৎসল এবং স্টুডেন্টদের প্রিয় শিক্ষক। শেখানোর প্রতিটা ক্ষেত্রে সে খুব সিরিয়াস এবং ধৈর্যশীল। আমি সাঁতারের ক্ষেত্রে একটু হুড়োহুড়ি করি। মিশেল আমাকে বলে শুনো তুমি হাত মুভ করবে স্লোলি – ভেরি স্লো। ডোন্ট হারি।
আমাদের সাথে প্রচুর আরব মেয়ে আছে। ওরা তাড়াতাড়ি শব্দটাকে বলে ইয়াল্লা – আমরা যখন সাঁতারের জন্য সবাই একসাথে রওনা দিলে মিশেল হাসতে হাসতে বলে – হেই গাইজ – ইয়াল্লা – লেটস মুভ –
সুইমিং পুলে যাবার আগে ক্লাসে কিছুক্ষণ সাঁতার সম্পর্কিত বেশ কিছু ধারণা দেয় মিশেল। সাঁতার শেখা হবে বলে সরাসরি সুইমিং পুলে নেয়া হয় না। মিশেলকে বলতে ইচ্ছে করে মিশেল ক্লাসে সাঁতার না শিখলে কি হয় ?কিন্তু মিশেল নাছোরবান্দা। সে ক্লাসেই অর্ধেক সাঁতার শিখিয়ে ছাড়বে। কিন্তু সুইমিংপুলে যখন সাঁতার শিখতে গেলাম তখন বুঝলাম এই ক্লাসে প্রাথমিক লেসনটাও দরকার আছে আসলে।
সে যাই হোক ল্যাপটপে সাঁতার সম্পর্কিত বিভিন্ন টপিক দেখছিলাম। সেখানে কুইজ, সাঁতারের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি লেখালেখি করছিলাম। আমি মিশেলকে ডেকে বললাম মিশেল আমি পরের মডিউলে যেতে পারছিনা। তুমি কি একটু হেল্প করবে ? মিশেল আমার পাশে চেয়ার না থাকাতে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে আমাকে দেখিয়ে দিলো। এখানের শিক্ষকদের এই উদার মানবিক বন্ধুসুলভ দিকটা আমাকে খুব আপ্লুত করে। শিক্ষকরা ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে এতোটাই বন্ধুসুলভ যে কে উপরে বসলো কে নীচে বসলো তাতে শিক্ষকের সম্মান হানি হয়ে গেলো অথবা ছাত্র শিক্ষকের দূরত্ব কতটুকু থাকা উচিত কতটুকু থাকা উচিত না সেটা নিয়ে টেনশন থাকার চাইতেও যে বিষয়টাতে গুরুত্ব দেয়া হয় সে হলো স্টুডেন্ট আসলে কতটুকু শিখলো। ভিকারুননেসা নুন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রর জন্য দুঃখ হল। আহা এইসব দেশে থাকলে এইরকম তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যেত না।
আমাদের ভাতিজা হাবিব খান আর তার স্ত্রী জোহরা ক্যনবেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা ক্যানবেরাতেই থাকে।ওদের ছেলের নাম হিলমি। সে এখানে একটি সরকারী স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। মজার কথা হলো স্কুলে কোনো পরীক্ষা নেই। বিভিন্ন রকমের ক্লাস টেস্ট হয়। সে টেস্টের মার্ক একে অন্যেরটা দেখবে না। কেন প্রশ্ন করা হলে জানা গেলো এতে যে কম নাম্বার পেয়েছে তার মন খারাপ হবে।
বাচ্চারা যা পড়াশোনা করবে সবটাই স্কুলে। বাসায় কোনো পড়াশোনা নেই। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা নিয়ে চাপ নেই। বাচ্চারা তাই বাসায় পড়েই না। আমার মনে পড়লো দেশের বাচ্চাদের কথা। এই সময় বাচ্চারা স্কুলে তো পড়েই। বাসায় এসে আবার তিন থেকে চারজন শিক্ষকের কাছে পড়ে। নইলে কোচিং করে। মা বাবা বাচ্চা সবাই শুধু পড়াশোনা আর স্কুল নিয়ে হয়রান। কিসের খেলাধুলা কিসের কি। তার উপর তাদের জন্য খেলার মাঠ নেই। ওরা জন্ম থেকেই হচ্ছে রোবট। সেই বাচ্চারাই বড় হচ্ছে নানান ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে। সত্যিই দুঃখ হয় আমাদের দেশের বাচ্চাদের জন্য। আমাদের শিশুদের জন্য সত্যিকার শৈশব দেয়া আদৌ কি সম্ভব হবে? কে জানে ?
"প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেন্টরা যখন আসে এই সময়টা হলো হানিমুন পিরিয়ড। হানিমুন পিরিয়ডে কোনো টেনশন থাকে না। আনন্দের ঘোরে সময় যায়। কিন্তু জবে ঢোকার পরে ব্যস্ত হলে তখন হানিমুন পিরিয়ড কেটে যায় – টানা আট ঘন্টা কাজের সময়টা খুবই কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। সে সময় হানিমুনকাল স্বপ্নই মনে হয়। হয়তো ওনার কথাই সত্যি।
আমি জীবনকে ভ্রমন মনে করি সে সুখে যাক আর দুঃখেই যাক।
জীবনের এই জার্নিকে এঞ্জয় করি –
লাইফ ইজ রিয়েলি বিউটিফুল !!"
লাইফ আসলেই একটা জার্নি । ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ আপা।
অসাধারণ আপনার অভিজ্ঞতা বোন নাজমুন নাহার। এমন বর্ণনা যেন কাছে থেকে দেখছি।
ধন্যবাদ সৌমিত্র । ভালো থাকবেন ।
আপনার এই সিরিজটি বেশ কিছদিন বন্ধ ছিল দিদি ভাই। রেগুলার থাকলে আরও বেশী কিছু পাওয়া যেত। জানা যেত। এখন নিয়মিত করুন। জানবো দেশ বিদেশ এর ডায়েরি।
ধন্যবাদ রিয়া । চেষ্টা করবো রেগুলার করার । ভালো থাকবে ।