তারপর পাগলা জায়েদ যখন পুরো গ্রামে লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করে এলো এবং সবাইকে বলে বেড়ালো সে এই গ্রামের সবচাইতে সুন্দরী বিলকিসকে বিয়ে করবে সবাই হাসলো। বাচ্চারা তার দিকে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো।
শুধু বিলকিস লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারলো না। গ্রামের সবাই এসে বলতে লাগলো বিলকিসকে ঘটনাটা। এতে যে বিলকিস লজ্জা পেতে পারে অপমানিত বোধ করতে পারে এটা কেউ কেউ বুঝলেও বেশীরভাগই বুঝলো না। যারা বুঝলো তারা বিলকিসকে লজ্জা দেয়ার জন্য আরো বেশী করে রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগলো –
এমনিতে বিলকিস অসামান্যা সুন্দরী বলে এলাকার অন্য মেয়েরা ঈর্ষায় ভোগে। বিলকিসের এই নাজেহাল অবস্থায় তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দে আমোদিত হবার সুযোগ পেলো –
পাগলা জায়েদ ঘরে এলো। তার বয়স ৪৫ এর চাইতে কিছু বেশী। কাঁচাপাকা দাড়ি আর ভাংগাচোরা চেহারার কারণে তার বয়স আরো বেশী মনে হয়। জায়েদের বউ বললো শোনেন আফনে যে পাগল না সেইটা সবাই না বুঝলেও আমি বুঝি। আফনে বিয়াইতা মানুষ, বিলকিসের লাইগা পাগল অইছেন কেরে ? জায়েদ ঘরের মধ্যে দুইটা বড় করে লাফ দিল। এরপর বউয়ের কাছে এসে এভাবে সেভাবে হাত ঘুরালো, নাচানাচি করলো যাতে তাকে আরো বেশী পাগল মনে হয়।
তার বউ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। তার ছেলেটা মাকে জিজ্ঞেস করলো – মা বাপজান কি হাছাই পাগল হইছে না শয়তানি করে ?
জায়েদ তার বউ কে বললো বউ ক্ষিধা পাইছে। ভাত দেও।
তার বউ রাগ করে ভাত না দিলে সে নিজেই ভাত খেয়ে নিলো।
মনে মনে ভাবতে লাগলো আচ্ছা এত সুন্দরী বিলকিসকে সে কি আসলেই বিয়ে করতে পারবে ? যদি না করতে পার তাহলে তার এত পরিশ্রম সব বৃথা। এই যে পাগল হয়ে থাকা এটা কম কষ্টের না। তার উপর পোলাপাইন গুলোন এত্ত শয়তান। যেদিন থেকে পাগলের অভিনয় শুরু করেছে এরপর থেকে বাহির হইলেই ইটা মারা শুরু করে। এ গুলানের জ্বালায় একটু শান্তিতে থাকা যায় না।
বিলকিসের বাবা স্থানীয় হাই স্কুলের হেডমাস্টার। তার স্কুলের দপ্তরী এই জায়েদ। এত্ত বড় সাহস তার, ভাবতে কষ্ট লাগছে। এলাকায় মুখ দেখানো কষ্ট হয়ে পড়ছে। ঘর থেকে বের হতেই লজ্জা লাগে। তার এত ছাত্র, অভিভাবক, গ্রামের মানুষ।
ঘরে এসে স্ত্রীর সাথে আলাপ করলেন কি করা যায়। বিলকিসের মা বললেন “কই কি ওরে আপনে ওর খালার বাড়িতে দিয়া আসেন। সে আপাতত ওইখানে থাকুক। জায়েইদ্দা হারামজাদারে ভালা কইরা একটা মাইর দেয়ার ব্যবস্থা করেন। মাইরের উফরে ওশুধ নাই।”
পরের দিন রাতের অন্ধকারে বিলকিসকে চুপিচুপি তার খালার বাড়িতে রেখে আসা হলো। জায়েদ কে শায়েস্তা করার জন্য এলাকার বড় ছেলেরা এক হলো। এর মধ্যে বিলকিসের প্রেমিক রুমিও ছিলো। সে জায়েদের এই বেয়াদবি সহ্য করতে পারছিল না।
জায়েদের মন আজ বড়ই বিষণ্ন। বিলকিসকে নাকি পার করে দেওয়া হইছে। তারে যেখানে পার করা হইছে খোঁজ করতে হবে। এরপর আবার সেখানে যাইয়া কাজে নামতে হবে। বিলকিসকে প্রথম যেদিন দেখেছে সে বিশ্বাস করতে পারে নাই মানুষ এত সুন্দর হইতে পারে।
অন্ধকার হয়ে আসছে।
জায়েদ বিষণ্ন মনে হাঁটতে লাগল গাঙ এর পাড় দিয়ে – সন্ধ্যার আধো আলো আধো অন্ধকারে এই গাঙকে লাগছে চিকন ফিতার মতো – সে ভাবলো তার সাথে যদি বিলকিসের প্রেম হয় তবে ভরা বর্ষায় সে আর বিলকিস এখানে বসে গল্প করবে – বিলকিসের হাতের উপর তার হাত – এটা কল্পনায় আসতেই সে পুলক অনুভব করলো – কিন্তু
হঠাৎই আক্রমন —
একদল মানুষ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো – জায়েদ দৌড় দেবারও সময় পেলো না।
পাগলা জায়েদ ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। দারুণ চিত্রায়িত হয়েছে। পরিণতি দুঃখজনক।
পরিণতি দুঃখজনক না । এটাই তার পাওয়া উচিত । তাই না মুরুব্বী ?
পরিণতি দুঃখজনক বলেছি ভদ্র ভাষায়। যদি বলতাম ঠিক হয়েছে উচিৎ হয়েছে তাহলে বিষয়টি আমার নিজের কাছে অমানবিক মনে হতো। ব্যালান্সিং।
যে অন্যের জীবনে সমস্যা তৈরী করে তাকে এভাবেই বলা উচিত । ব্যালান্সিং কইরেন না ।

অণুগল্পটি পড়লাম। আমার কাছে ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ রিয়া । ভালো থেকো বন্ধু ।
"মনে মনে ভাবতে লাগলো আচ্ছা এত সুন্দরী বিলকিসকে সে কি আসলেই বিয়ে করতে পারবে ? যদি না করতে পার তাহলে তার এত পরিশ্রম সব বৃথা। এই যে পাগল হয়ে থাকা এটা কম কষ্টের না।"
জায়েদ পাগল নয়; বরং ধূর্ত। গল্পটি অণু না হয়ে যদি বড় হতো আমার মতো অনেক পাঠক খুশি হতেন।
ধন্যবাদ সুমন আহমেদ । মনে রইলো । বাড়ালেও মন্দ হয় না । ভালো থাকবেন ।
সচরাচর এমন অণুগল্প চোখে পড়ে না কবি নাজমুন নাহার।
ধন্যবাদ সৌমত্র । ভালো থাকবেন ।
ভালো লিখেছো।
ধন্যবাদ তুবা । ভালো থেকো বন্ধু ।
বেশ লেখা
ভালো লেগেছে
ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
জায়েদ পাগল নয়; বরং ধূর্ত। গল্পটি অণু না হয়ে যদি বড় হতো আমার মতো অনেক পাঠক খুশি হতেন।
সুমন ভাইয়ের মত আমিও তাই মনে করি।
আমিও তো ধূর্ত বলি । হা হা । নইলে কি আর মাইর খাওয়াই !!
ভালো থাকবেন ।