চলে যাবার ঠিক আগে
মনে হচ্ছে আচমকা কোথাও চলে যাবো। যেতে হবে।
প্রবল জ্বরের পায়ের কাছে শুয়ে আছে প্রাণঘাতি ভাইপার।
মাত্র একটি ছোঁবলেই তুলে নেবে সমস্ত উত্তাপ, আর
উজাড় ঢেলে দেবে বিষথলির সম্পূর্ণ গরল।
চেনা-জানা পাখিদের চঞ্চুগুলো খুব আদরে মুখর
সবুজপাতায় অবিরল ঢেলে দিচ্ছে সোহাগঅমৃত।
গোধূলিতে– নীড়ের কোটরে ঢুকার আগেই
মাধবীর গোলাপিঘ্রাণ ঠোঁটে মেখে নেবে ; এবং মধুরঙ সুধা।
আমাদের মাতাল ঘোড়াগুলো
খুব অবজ্ঞায় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে সব খানাখন্দ,
স্ফিত নাসারন্দ্র এবং মুখে শ্রান্তির ফেনা তুলেও
তুমুল ছুটে যাচ্ছে চিরহরিৎ উপত্যকার দিকে।
তাদের পায়ের নীচের ঘাসগুলো কেঁপে ওঠে বিস্ময়ের ত্রাসে ;
এ কেমন উন্মত্ত ছুটে চলা!
আরো তীব্র ছুটে যাক।
আরো।
আরো।
হ্রেষার ভেতরে বাজুক প্রচন্ড তূর্যনাদ, আরো দুরন্ত হোক খট খটা খট
খুরধ্বণি ; থেঁতলে যাক তৃণগুচ্ছের আড়ালে লুকোনো বিষধরগুলো।
দুমড়েমুচড়ে যাক স্বপ্নপ্রাঙ্গণের পথে সমস্ত আগাছা।
আসলে এমন করে যাবার কথা ভাবিনি কখনো
যেতে হবে—
ভাবতেই কালো চাদরের মতো এক আকাশ বিষাদ নেমে আসে।
যেন ভোরের নীলিমা চিরে এক ঝাঁক পরিযায়ি পাখির
যুথবদ্ধ আর্তনাদের কোলাহল তোলে অনিচ্ছুক ফিরে যাওয়া।
ক্রমশঃ প্রিয় হয়ে ওঠা ব্যালকনি ;
রেলিং জড়িয়ে ধরা গোল্ডেনশাওয়ারের ঝাড়,
টবে ফোটা মল্লিকা, গোলাপ——————
এদের দীর্ঘশ্বাস সাথে নিয়ে, যেতে চাইনি কোথাও।
অদূর মাঠের অন্যপাশ থেকে জারুল-শিরিষের হিমনিঃশ্বাস ভেসে আসে ;
তারাও যে খুব আপন ; রঙের ঘোরলাগা বিকেলের সাথী।
তবু চলে যেতে হবে। সারাক্ষণ পায়ে পায়ে ঘুরছে এক বিষাক্ত সরীসৃপ।
যেতে হবে।
তবে
এভাবে আচমকা কোথাও চলে যেতে হলে
বিষপিঁপড়ার কৌটাতে এক চামচ মধু ঢেলে দিয়ে যাবো।
_____________________________
বাংলামেইল ( ইংল্যান্ড) ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত।
পবিত্র ঈদে প্রকাশিত অন্যতম সেরা একটি লিখা। অন্তত আমার দৃষ্টিতে।

অভিনন্দন আপা।
তবে
এভাবে আচমকা কোথাও চলে যেতে হলে
বিষপিঁপড়ার কৌটাতে এক চামচ মধু ঢেলে দিয়ে যাবো।
*খুব মধুর অথচ বিষাদময় এ চলে যাওয়া । যেতে যেমন মন চায়না, তেমনি কেউ চলে গেলে বলতে ইচ্ছে করে, এইভাবে চলে যেতে নেই ! কিন্তু থাকা এবং এই চলে যাওয়ার ব্যাবধান এত বেশী যে, আক্ষেপ পৌছায়না ততোদূর ! শুভ কামনা কবি !
অতুলণীয় উপমার সমাহার।
মুগ্ধতা রইল অশেষ।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।