৬.
যে বিষয়টি আমার কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার নাবিল কখনো সিনিগ্ধার সামনে দাঁড়াতে পারবেনা। এতদিন যে বিন্দুমাত্র প্রেম তো দূরের কথা বলার সাহস দেখাতে পারেনি তাকে নিয়ে কীসের ভয়! দীর্ঘদিন প্রান্তিকের বাসায় থাকতে থাকতে এলাকার পাতি নেতা, বড় নেতা সবার সাথে ইতোমধ্যে কিছুটা সখ্যতাও হয়েছে। সময় মতো কাজে লাগানো যাবে। আর ভয় পেলে কি চলে!
সিনিগ্ধাঃ নাবিলের সাথে কি তোর আর দেখা হয়েছিলো?
– কেন, দেখা হবেনা? সে তো আমার বাসায় গিয়েছিল?
– মানে?
– মানে, আর কী?
– তোর সাথে কি খারাপ আচরণ করেছে?
– না, তেমন কিছু না। একটু ভয় দেখিয়ে কাবু করতে চেয়েছিল। তুই তো জানিস, আদিত্য কাউকে ভয় পায়না।
– আহ রে, আমার ভীর পুরুষ! তবে একটু সাবধানে থাকিস। আমার জন্য তুই অনেক বিপদে পড়েছিস।
– এ তো সামান্য। আমি তো আরও বিপদে পড়তে চাই।
– মানে?
– অতো মানে বুঝার দরকার নাই। চল, পুরো ক্যাম্পাসটা একবার চক্কর দিয়ে আসি।
– জানিস, নাবিলের বাবা কিন্তু ইউনিভার্সিটির টিচার। সেও কিন্তু একসময় ভালো ছাত্র ছিল।
– দেখছি, তুই তো তার অনেক খবর রাখিস!
– সে তো আমাদের ক্যাম্পাস স্কুলেই পড়তো। কিছু বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে তার এই হাল। স্যার, পরে বাধ্য হয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এইতো কিছুদিন আগে দেশে এসেছে। বিকেল হলে আমাদের বাসার চারপাশে ঘোরাঘুরি করে তবে বাসায় আসার সাহস নাই।
– বাসার আসার সাহস থাকলে কি সমাদর করতি!
– দূর, বোকা। তার সাথে কিছু হওয়ার থাকলে তো অনেক আগেই হতো। আদিত্য, পরীক্ষা যত ঘনিয়ে আসছে তত দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কিছু একটা করতে হবে।
– একটা কাজ করলে ক্যামন হয়? আড্ডাও হল পড়াও হল। চল, আমরা রুটিন করে অন্তত প্রতিদিন একঘন্টা করে লাইব্রেরিতে বসি।
– আমার যে পড়তে ইচ্ছে করেনা। আর তুই সাথে থাকলে পড়া হবে!
– কেন হবেনা? ওই এক ঘণ্টা আমরা কোন কথা বলব না।
– দেখা যাক, কাল থেকে কিছু একটা করতে হবে। শর্মিরা আজ ক্লাস শেষে আমাদের বাসায় যাচ্ছে, ইচ্ছে করলে তুইও আসতে পারিস। সবাই নানুর বাসায় গেছে, অনেক মজা হবে, চল।
ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেইট দিয়ে একটু সামনে গেলেই সিনিগ্ধাদের বাসা, পায়ে হাঁটার পথ। শর্মি, শান্তা, রাহা আমি একমাত্র ছেলে বন্ধু। শর্মির সাথে আগে থেকেই ঘনিষ্টতা থাকলে রাহা আর শান্তার সাথে আরও দুই একবার কথা হয়েছে। ওরা সিনিগ্ধার বেশ ভালো বন্ধু। ছোট্ট বেশ সাজানো গোছানো পরিপাটি বাসা, যা রুচিশীলতার পরিচায়ক।
অনেকক্ষণ কথা হল গল্প হল, খাওয়া দাওয়া হল। এবার ফিরে আসার পালা। তার এলবাম থেকে চুরি করে নিলাম। অবশ্য এটাকে চুরি বললে ভুল হবে। না জিজ্ঞেস করে নিয়েছি, এইটুকু । তখন সিনিগ্ধা বলল, শুন তোদের একটা গান শুনাই। সে টেপ রেকর্ডারে একটা গান ছেড়ে দিলঃ “ আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রেখো, আমায় পড়বে মনে, কাছে দূরে যেখানেই থাকো।”
গানের সুরে আন্দোলিত হতে হতে বাসায় ফিরে এলাম। এইদিনটি আমার জীবনে অক্ষয় হয়ে রইলো। তাদের বাসার স্বল্প সময়ের সুখ স্মৃতি আমাকে কচি কিশলয়ের মত বার বার অনুরণিত করতে লাগলো। এইদিনটা যেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কেন জানি, রবীন্দ্রনাথের মত বার বার বলতে ইচ্ছে করছে, “ আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম। সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ।”
(চলবে)
লিখার থিম শক্ত পোক্ত না হলেও এটা যে আপনার লিখক জীবনের প্রথম দিকের ভাবনা বিশেষ সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না প্রিয় কবি। কেননা এখন যে ধারার লিখা আপনি লিখে চলেছেন সেই লিখাগুলোন এই গল্পের চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। …. তারপরও আপনার উপহার বলে কথা। পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম স্যার। শুভ সকাল।
* প্রিয় প্রেরণাদাতা মুরুব্বী, আদিত্যের জীবন খুব কাছে থেকে দেখা, বাস্তব জীবন আর সাহিত্যে রূপ দিতে গিয়ে সাহিত্যিক মান বজায় রাখতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য…
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা ।
* ধন্যবাদ সুপ্রিয়…
এই পর্ব তো পড়লাম কবি দা।
এখন ভীষণ অপেক্ষায় থাকলাম পরের ঘটনার জন্য।
* প্রিয় কবি দি, অনেক অনেক ধন্যবাদ…
“আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম। সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ।”
যে বয়সের অনুভব এখানে উঠে এসেছে এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক কবি হুসাইন ভাই। বেটার নেক্সট টাইম।
* প্রিয় কবি দাদা, কী পেয়েছে তার চেয়ে বেশি পুলকিত হয়েছে গ্রাম থেকে উঠে আসা আদিত্য নামের চরিত্রটি!
ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য…
প্রতিটা পর্ব নেক্সট পর্বের চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে!
এগিয়ে যান!
* বিমোহিত হলাম সুপ্রিয়…
আগামী পর্বের অপেক্ষায় থাকতে হলো। আশা করি অতি শীঘ্রয় শব্দনীড় ব্লগের পাতায় ৭ম পর্বটা চোখে পড়বে। আমার শ্রদ্ধেয় মোঃ খালিদ উমর দাদাকে মনস্কার।
*

