আমার কিছু প্রশ্ন, কিছু যুক্তি
প্রিয় ফেসবুক বন্ধুগণ, আপনারা কেমন আছেন? আশা করি দয়াময়ের অশেষ কৃপায় ভালো আছেন! আপনাদের সকলের আশীর্বাদে আমিও ভালো আছি। বন্ধুগণ, বর্তমানে আমরা ছোটবড় অনেকেই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করছি। ফেসবুক হলো, বিশ্ব-সামাজিক আন্তযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েব সাইট। যা ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সম্মানিত মার্ক জাকারবার্গ। জানা যায় বর্তমানে এর মালিক হলো ফেসবুক ইনক। ফেসবুকে বিনামূল্যে সদস্য হওয়া যায়। এবং ব্যবহারকারী বন্ধু সংযোজন, বার্তা প্রেরণ এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী হালনাগাদ ও আদান প্রদান করতে পারেন। বর্তমানে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চল-ভিত্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারছেন।
এবার আসল কথায় আসা যাক! কথা হলো, বর্তমানে আমরা যারা ফেসবুকে বিনামূল্যে একটা আইডি খুলে ব্যবহার করছি, তা কি যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য ব্যবহার করছি? না-কি ছবি, ভিডিও পোস্ট আপলোড করার জন্য এই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক ব্যবহার করছি? আমার মনে হয় অনেকে তা-ই করছে! সম্মানিত মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক তৈরি করেছেন শুধু একে অপরের কাছে মেসেজ (বার্তা) আদান-প্রদানের জন্য। মানুষের চাওয়া আর চাহিদা মেটানোর জন্য তা আস্তেআস্তে উন্নতকরণ করা হলো। ছবি আদানপ্রদান করার সিস্টেম তৈরি হলো। ছবি পছন্দ হয়েছে কি-না, সে ভাব প্রকাশের জন্য তৈরি হলো লাইক। যেই লাইক এখন অনেকের কাছে দিল্লিকা লাড্ডু। আজ ফেসবুকের একটা লাইকের জন্য অনেকে ভিক্ষাও করে থাকে। অনেকের পোস্টে লেখা থাকে, “ভাইয়া একটা লাইক দিবা?”। তা কি ঠিক? লাইক দিয়ে কি আলু পটল কেনা যায়? নাকি সংসার চালানো যায়? তবু কেন এতো লাইকের জন্য পাড়াপাড়ি মারামারি?
আবার একটা লাইক পাবার আশায় কতরকম অভিনব কায়দা কৌশল অবলম্বন করে, তা অনেকসময় ভাবিয়ে তোলে। এখন আবার সেই লাইকের সাথে ফেসবুক যুক্ত করে দিলো, লাল লাইক, সবুজ লাইক, ইমেজি লাইক। তাই মানুষ এখন লাল রঙা লাভ মার্কা লাইকের দিকেই বেশি খেয়ালি। আর ইমেজি লাইক তো আছে মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক অন্যতম আবিষ্কার। কিন্তু দুঃখের কথা আক্ষেপ করে বলতে হয়, সম্মানিত মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকে কেন আনলাইক সিস্টেম চালু করলো না? এই আনলাইক সিস্টেমস যদি ফেসবুকে থাকতো, তাহলে দেখা যেত কত স্বাদের লাইক, আর কত অপছন্দের আনলাইক! একটা ছবিতে আনলাইক-এর সংখ্যা বেশি হলে ব্যবহারকারীর মনখারাপ হয়ে যাবে বলেই, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই আনলাইক সিস্টেম হয়তো চালু করেনি। এটা আমার একপ্রকার আফসোস! তা শুধু থেকেই গেল!
এরপর ফেসবুক সুবিধা করে দিলো গ্রুপ সিস্টেম। যা কয়েকজন বন্ধু একত্রিত হয়ে দল বেধে থাকা। যাকে বলে পেইজ। এখন আমাদের দেশীয় ফেসবুকে কয়েক লক্ষাধিক গ্রুপ বা পেইজ। গ্রুপের অভাব অনটন আর নেই, শুধু গ্রুপ আর গ্রুপ। এখন ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই গ্রুপে যুক্ত করে ফেলে। তারপর মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়ে ব্যবহারকারীকে অবগত আর অনুরোধ করা হয়, কিছু দক্ষিণা দেওয়ার জন্য। মানে, কিছু ছবি, কিছু লেখা পোস্ট সহ যুক্ত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ। এটা কি ঠিক?
আবার একসময় শুরু হলো ভিডিও আদান-প্রদান, শেয়ারিং সিস্টেম। এখন অনেকেই নিজ ঘরের সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবারের ভিডিও আপলোড করা শুরু করেছে বা করছে। কোনও ভ্রমণে, দাওয়াতে, বিয়ে-সাদির অনুষ্ঠানে গেলে, সেসব অনুষ্ঠানের ভিডিও সাথে সাথে ফেসবুকে শেয়ার করতে থাকে। কেউ আবার একসাথে ৪০ থেকে ৫০ জনকে তা ট্যাগ করে। (ট্যাগ) বাংলায় যার অর্থ শিকল। একজনের পাপ, আরেকজনের ঘাড়ে চাপানো। এগুলো কি ঠিক?
আবার কেউ কেউ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পোস্টের পর পোস্ট করতেই থাকে। আচ্ছা, একজন ব্যবহারকারী একদিনে কয়টা পোস্ট করা উচিৎ? আমার মনে হয় একটা পোস্টেই তো যথেষ্ট! নাহয় দুটো? এমনও দেখা যায়, একজন ব্যবহারকারী লাগাতার পোস্ট আপলোড আর শেয়ার করতেই থাকে। একটা পোস্ট করলে, সেই পোস্টের উপর পোস্টদাতার বন্ধুরা কে কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো, সেদিকে খেয়াল না করে, শুধু পোস্ট আর পোস্ট! এটা কি ঠিক?
আবার হলো নিজের মা-বাবার রাখা নাম লুকিয়ে রেখে ছদ্মনামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করা। প্রোফাইল ছবিও থাকে বনজঙ্গলের। যেমন- মাছের ছবি। বাঘের ছবি। পোস্টারের ছবি। কেউ কেউ দেবদেবীর ছবিও ব্যবহার করে থাকে। সেসব ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটা গুনও আছে। তাঁরা আবার ভালো জ্ঞানী। ভালো ভালো জ্ঞানের কথা লিখে পোস্ট শেয়ার করে। অথচ নিজের নামের কোনও হাদিস নেই। তাঁরা লোকচক্ষুর আড়ালে আবডালে। এরা কি জ্ঞানী? না-কি বীরপুরুষ?
আমার কথা হলো, আমি যখন এই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থার অন্যতম ফেসবুক ব্যবহারই করবো, তাহলে লুকাচুরি করে ব্যবহার করবো কেন? আমি আমার বল্টু মার্কা চেহারার নিজের ছবি দিয়েই ফেসবুক ব্যবহার করবো। দিনে একটা পোস্টি যথেষ্ট বলে মনে করি। বর্তমানে ফেসবুকে আমার বন্ধু সংখ্যা মনে হয় (৪০০০) চার হাজারের মতন। আমি একা। ক’জনের কয়টা পোস্টের দিকে খেয়াল রাখা যায়? কার পোস্টে লাইক দিব, আর কার পোস্টে কমেন্ট করবো? যদি বন্ধুদের পোস্ট সীমিত থাকে, তাহলে যতক্ষণ সময় ফেসবুকে থাকি, সেসময়ের মধ্যে অনেকজনের পোস্ট দেখা যায়, লাইক দেওয়া যায়, কমেন্ট করা যায়। কিন্তু না, তা আর হচ্ছে না। পোস্টের অচাব নেই! তাই আর সকল বন্ধুদের পোস্টে লাইক/কমেন্ট করা যায় না। দুঃখ শুধ থেকেই যায়।
আবার অনেকে ভালো মনে করে ফ্রেড রিকুয়েস্ট করে। কিন্তু দেখি যে, ছদ্মনাম। ছবিও বনজঙ্গলের ছবি। তাই আর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করা হয় না। তাঁরা হয় তো মনে কষ্ট পায়। কিন্তু আমি বান্দা ছদ্মনাম আর নকল ছবিওয়া কাউকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে রাজি নই। থাকতে হয় তো আসল পরিচয়ে বীরের মতন থাকুন। নাহয় আস্তে করে সরে পড়ুন, প্লিজ! আমার এই মনোভাবের জন্য কেউ যদি মনঃক্ষুণ্ণ হন বা মনঃকষ্ট পেয়ে থাকেন, তো দয়া করে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিবেন। আশা করি আমরা সবাই সঠিকভাবে ন্যায়নীতি বজায় রেখে এই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করবো।
প্রযুক্তির সৎব্যবহার ভালো মনে করি; কিন্তু অসৎ অপব্যবহারে আমি নিজেও বিরক্ত হই। পরিমিতি বোধ মানুষকে খাটো করে না। করে বরং সম্মানিত।
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ মি. নিতাই বাবু।
সমসময় এসব খুবই খারাপ লাগে শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। তাই মনের ক্ষোভ লেখায় মেটালাম । আশা করি ভালো থাকবেন সবসময় ।
আজ ফেসবুকের একটা লাইকের জন্য অনেকে ভিক্ষাও করে থাকে। অনেকের পোস্টে লেখা থাকে, “ভাইয়া একটা লাইক দিবা?”। তা কি ঠিক? লাইক দিয়ে কি আলু পটল কেনা যায়? নাকি সংসার চালানো যায়? তবু কেন এতো লাইকেত জন্য পাড়াপাড়ি মারামারি? ভীষণ সত্য বলেছেন নিতাই বাবু। আমরা যাহা ধরি সহজে ছাড়িনা।
বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের মতন ফেসবুকও এই পৃথিবী নামক গ্রহটিতে স্থায়ী হয়ে গেছে। এই দুটোর মতো আরও অনেক সাইটই স্থায়িত্ব লাভ করবে। তাই ফেসবুকে ছেলেখেলারমত যা ইচ্ছে তা-ই করা যায় না। এটা আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিৎ।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র দাদা।
আমিও আশা করি আমরা সবাই যেন সঠিকভাবে ন্যায়নীতি বজায় রেখে এই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করি।
শুভেচ্ছা নিতাই দা।