২০১৯ সালের শেষদিকে প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস যখন গণচীনে আবির্ভূত হয়েছিল, তখনো এ-দেশের কোটি মানুষের মতো আমিও ছিলাম নির্ভয়ে। ভয়টা বেড়ে গিয়েছিল, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে। সে-সময় নিজের সহধর্মিণী জ্বর-সর্দি- কাশিতে ভুগতে ছিল। এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার, এটা-ওটা করতে করতে কেটে গেলো, দিনেক ৭ দিনের মতো। তারপরও যখন সহধর্মিণীর শরীরের জ্বর-সর্দি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না, তখন আমি রীতিমতো আমার সহধর্মিণীর আশা ছেড়ে দিয়ে নীরবে কাঁদতে লাগলাম। কারণ, সে-সময় গণচীনের করোনা ভাইরাস গণচীন থেকে উড়তে- উড়তে পৃথিবীর অনেক দেশে বিরাজ করছিল। কিন্তু আমাদের দেশে তখনো করোনা ভাইরাসের আগমনের খবর ছিলো না।
যদিও তখন আমাদের দেশে ঘাতক করোনা ভাইরাসের আগমন ঘটেনি, তবুও সহধর্মিণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে আমার মনে শুধু করোনা ভাইরাসের করুণ সুর বাজতে ছিলো। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, হয়তো আমার সহধর্মিণীকে গণচীনের করোনা ভাইরাসে আক্রমণ করেছে। নিজের মনে এইরকম ভাবনা থেকে আমি নিজেও একরকম কাহিল হয়ে পড়লাম। কিন্তু নিজের চেনা-জানা ছাড়া অন্য কারোর সাথে এব্যাপারে কোনও কথা বলতাম না। না বলার কারণ ছিলো করোনা ভাইরাস। মনে মনে ভাবতাম! যদি কারোর কাছে সহধর্মিণীর জ্বর-সর্দির কথা বলি, তাহলে মানুষ মনে করবে আমার সহধর্মিণী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সেই ভয়ে আমি মহল্লার অপরিচিত কারোর কাছেই এ-বিষয়ে কোনও আলাপ করতাম না।
একদিন পরিচিত এক ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “দাদা, দিদি কেমন আছে?” উত্তরে আমি বললাম, ‘বেশি ভালো না, দাদা।’ আমার কথা শুনে পরিচিত ব্যক্তি জানতে চাইলো, “দিদির কী এমন সমস্যা হয়েছে?” তখন পরিচিত ব্যক্তির কাছে সবকিছু খুলে বললাম। উনি আমাকে উনারই পরিচিত একজন বিজ্ঞ ডাক্তারের ঠিকানা দিলেন এবং খুব তাড়াতাড়ি সেই ডাক্তারের কাছে আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে যেতে বললেন। উনার কথা শুনে আমি সেদিন সে-সময়ই ফোনের মাধ্যমে সিরিয়াল লিস্টে নাম লেখালাম। পরদিন বিকালে আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে ওই বিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তারের চেম্বারে আরও আরও রুগীদের সাথে কিছুক্ষণ বসে থাকার পরই আমার সহধর্মিণীর নাম ডাক পড়লো। ডাক্তার সাহেব রুগীর মুখে বিস্তারিত শুনে তিনটে পরীক্ষা-সহ কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। এক-এক করে পরীক্ষাগুলো করানো হলো। রিপোর্ট বের হবে এর পরদিন।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরুলাম। ঔষধের দোকান থেকে তিনবেলার ঔষধ কিনলাম। বাসায় এসে রাতে এক-এক করে দুই-তিন পদের ঔষধ খাওয়ালাম। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখন কেমন লাগছে?’ বলল, “কই, আগের মতনই তো!” কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি গতকালের চেয়ে আমার সহধর্মিণী চেহারা- সুরত একটু ভালো। মনে মনে প্রভুকে ডাকতে লাগলাম! সকালেও এক ডোজ ঔষধ খাওয়ালাম। দুপুরবেলাও খাওয়ালাম। বিকালবেলা আবার সহধর্মিণীকে বিজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে নিয়ে গেলাম। ডাক্তারের দেওয়া শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো সংগ্রহ করে ডাক্তারের কাছে গেলাম।
ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে আবার ৭ দিনের ঔষধ লিখে দিয়ে বললো, “এই ঔষধগুলো ঠিকমত সেবন করে ৭দিন পর যেতে। প্রথমবারের ভিজিটের অর্ধেক মূল্য ভিজিট দিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরুলাম। ৭ দিনের ঔষধ কিনে বাসায় ফিরলাম। রাতে ঔষধ খাওয়াল। পরদিন সকালবেলা দেখি আমার সহধর্মিণীর শারীরিক অবস্থা গত দুইদিনের চেয়ে অনেক ভালো। চলতে থাকলো ঔষধ। আস্তে-আস্তে সহধর্মিণীও সুস্থ হতে লাগলো। ৭ দিন গত না হতেই আবার বিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলাম। বিজ্ঞ চিকিৎসক আবার কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। কিছু ১৫ দিনের, কিছু ১ মাসের। ঔষধ কিনে বাসায় আসলাম। দিন যতো গত হতে লাগলো, সহধর্মিণীও সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করলো। কেটে গেলো ফেব্রুয়ারি মাস।
একসময় মার্চ মাসের আগমণ ঘটলো। করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের চারদিকে শোরগোল শুরু হয়ে হলো। মার্চ ২০২০ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রুগী সনাক্ত হলো। মার্চের শেষদিকে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু ঘটলো। সরকার রেডিও, টেলিভিশনে ও জাতীয় পত্রপত্রিকায় করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে দেশের জনগণকে সতর্কতা অবলম্বন করে চলা-ফেরা করতে বললো। পাশাপাশি বিশ্ব রোগ বিশেষজ্ঞ ও দেশের রোগ বিশেষজ্ঞরাও নানারকম পরামর্শ দিতে শুরু করলো। তাতেও যখন করোনা ভাইরাসের উপদ্রব কমানো যাচ্ছিল না, তখনই শুরু হলো লকডাউনের চিন্তা। একসময় সারা দেশই লকডাউনের আওতায় নেওয়া হলো। ঐ লকডাউনের ফলে ধর্মীয় উপসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বানিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। এমনকি সরকার দূরপাল্লার যানবাহন-সহ লোকাল যাত্রি পরিবহন ও বহির্বিশ্বের সাথে বিমান চলাচলও বন্ধ করে দিলো। মানুষের রুটিরুজির সংগ্রাম একেবারে থেমে গেলো।
তখন একদিকে শুরু হলো গরিব মানুষের হাহাকার ও ক্ষুধার্তের কান্না। অন্যদিকে বাড়তে লাগলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার। তখন দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনগণ হয়ে পড়লো একরকম কর্মহীন ঘরবন্দী। জনগণের মনে বিরাজ করতে লাগলো করোনা ভাইরাসের ভয়! আর রাত পোহালে খাবারের চিন্তা। সাথে ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো দেশের সর্বত্র।
তখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দেশের মানুষ এমন ভীত হয়ে পড়লো যে, কারোর সাধারণ সর্দি-জ্বর হলে, ওই সর্দি-জ্বরের রুগীর পরিবারের সাথে সমাজের আরও দশটা পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যেতো। বুড়ো মা-বাবাকেও রাস্তায় ফেলে দেওয়া হতো, যদি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হতো। দাদা-দাদি, ভাই-বোন কারোর জ্বর হলেই হতো সর্বনাশ। কোনোকোনো সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ফাটল ধরতে শুরু করছিল। তখন একদিকে মানুষের ছিলো না কাজকর্ম। অন্যদিকে ছিলো করোনা ভাইরাসের ভয় আর কর্মহীন মানুষের ক্ষুধার চিৎকার।
এমতাবস্থায় দেশে গণমানুষের সরকার সিংহভাগ কর্মহীন দরিদ্র জনগণ ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে ঘোষণা দিলো হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। ওইসব প্রণোদনার মধ্যে ছিলো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সুদ বিহীন ঋণ। গরিব সাধারণ মানুষের জন্য ছিলো রিলিফ-সহ নগদ অর্থের যোগান ও বিনামূল্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। যা এখনো দেশে কোথাও-না-কোথাও সেই কার্যক্রম চালু আছে। একসময় ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়া জনজীবনের সবকিছু আবার সচল হতে শুরু করলো। জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসতে লাগলো। করোনা ভাইরাসের আক্রমণও কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করলো। মৃত্যুর হারও কমতে লাগলো।
পরিবর্তন ঘটতে শুরু হলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস। যেমন- মুখে মাস্ক পড়া। নিয়মিত হাত ধোয়া। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাতে গরম গরম লাল বা রং চা সেবন করা। ঘরের বাহির না হওয়া। দিনে অত্যন্ত দুই একবার ব্যায়াম করা। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা-সহ আরও অনেক নিয়মকানুন। করোনা ভাইরাস থেকে দেশের জনগণকে বাঁচতে এসব নিয়ম দিক নির্দেশনাগুলো ছিলো দেশের বিজ্ঞ চিকিৎসকদের। এছাড়াও নির্দেশ ছিলো, কারোর সামান্য সর্দি-কাশি হলে সাথে সাথে নিকটস্থ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া। অমুক নাম্বারে কল করে যোগাযোগ করা। তমুক নাম্বার থেকে সাজেশন নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। করোনা ভাইরাস আক্রমণের ভয়ে দেশের জনগণও বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে থাকলো সবাই। একসময় মার্চমাস পেরিয়ে এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগষ্ট গত হতে লাগলো।
এরমধ্যেই শুরু হলো আমার বাম হাতের অনামিকা আঙুলে ব্যথা। প্রচণ্ড ব্যথা। মাঝেমধ্যে আঙুলের ব্যথায় পুরো হাতই অবস হয়ে যেতো। এভাবে দিন যায়, সপ্তাহ গড়ায়, কিন্তু আঙুলের ব্যথা নিরাময় হচ্ছিল না। বরং দিন-দিন বেড়েই চলছিল। তারপর নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ব্যথার ঔষধ কিনে সেবন করতে লাগলাম। কিন্তু তাতেও যখন কোনও উপকার পাচ্ছিলাম না, তখন পরিচিত এক ব্যক্তির সাথে নিজের হাতের আঙুলের সমস্যার কথা বললাম। উনি নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চাকরি করতেন। উনি আমাকে হারের (অর্থোপেডিক্স) ডাক্তার দেখাতে বললেন। কিন্তু হারের ডাক্তার সম্বন্ধে আমার তেমন ধারণা ছিলো না বলে, আমি উনার মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থাকা এক হারের ডাক্তারের কাছে গেলাম। ওই ডাক্তারের ভিজিটি ছিলো ৮০০/= টাকা।
সিরিয়ালে নাম ডাক পড়লে আমি-সহ পরিচিত ব্যক্তি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম। করোনা কালে বিজ্ঞ হারের ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে মনে হচ্ছিল যে, আমি যেন চাঁদের দেশে অবস্থান করছি। আর বিজ্ঞ ডাক্তার সাহেবকেও দেখা যাচ্ছিল চাঁদের নভোচারী। ডাক্তারের শরীরে ধপধপে সাদা প্লাস্টিকের জামা। যেটাকে বলা হয় পিপি। হাতে ডাবল গ্লাভস। মুখে ডাবল মাস্ক। চোখে বড় আকারের চাঁদের দেশে যাওয়া নভোচারীদের মতো চশমা। সামনে দাঁড়ানো আছে ডাক্তারকে সাহায্যকারী পিয়ন বা উনার কর্মচারী। আমি সত্যি ভয় পেলাম! অবাকও হলাম। কিন্তু এ-বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ না থাকায়, কিছুই বললাম না, জিজ্ঞেসও করলাম না। শুধু আমাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া পরিচিত লোকটাকে কানে-কানে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ডাক্তার সাহেবের এ-অবস্থা কেন?’ জবাবে উনি বললো, “ডাক্তার সাহেব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো। গত একমাস আগে ডাক্তার সাহেব ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে ভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। তাই উনার এই পোশাক, এই ড্রেস। উনি এখনও করোনা ভাইরাসের ভয়ে ভয়ে আছেন।” শুনলাম সব কথা। বুঝলাম অনেককিছু।
আমি ডাক্তার সাহেবের সামনা-সামনি বসলাম। আমার সামনে দেখতে পেলাম সাদা চকচকা কাঁচের গ্লাসের বাক্স। দেখতে হুবহু সিনেমা হলের টিকেট কাউন্টারের বুকিং এর মতো। বসার উপরিভাগে হাত ঢুকানোর জন্য বড় আকারের ছিদ্র আছে। ডাক্তার সাহেব আমার সমস্যা জানতে চাইলে, আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। উনি আমাকে হাতের আঙুল দেখাতে বললেন। আমি গ্লাস বক্সের সেই ছিদ্র দিয়ে নিজের হাত ঢুকাতেই ডাক্তার সাহেবের কর্মচারী আমাকে সরাসরি হাত ঢুকাতে বারণ করলেন। আমি আর হাত ঢোকালাম না। চুপচাপ বসে আছি। ডাক্তার সাহেবের কর্মচারী একটা বড় স্যানিটাইজারের বোতল আমার সামনে এনে আমাকে হাত বাড়াতে বললো। আমি হাত বাড়াতেই আমার বাম হাতে স্প্রে করা শুরু করলো। দুই-তিন বার স্প্রে করার পর হাত ঢুকানোর অনুমতি দিলো। আমি গ্লাসের ছিদ্র দিয়ে বামহাত ঢোকালাম। ডাক্তার সাহেব আমার বাম হাতের ব্যথাযুক্ত আঙুলটা টেনে-টুনে, আর নেড়ে-চেড়ে দেখলো। যেই আঙুলটা ব্যথা, সেই আঙুলে সিপ্টিপিন দিয়ে গাঁই মেরে বললো, আমি টের পাচ্ছি কি-না। আমি বললাম, ‘টের পাচ্ছি এবং ব্যথাও পাচ্ছি!’ আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব উনার কর্মচারীকে উনার হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে স্প্রে করতে বললো।
কর্মচারী সাথে সাথে স্যানিটাইজারের বড় বোতল এনে প্যাঁচপ্যাঁচ করে ডাক্তার সাহেবের হাতে দুই-তিন বার স্প্রে করলো। এরপর ডাক্তার সাহেব উনার প্রেসক্রিপশন লেখার পেইড টেনে কলম দিয়ে লিখতে লাগলো। ডেসক্রিপশন লিখছে, আমি তাকিয়ে আছি। উনি বাম সাইটে দুই-তিনটে ঔষধ লিখে ডান সাইটে কী কী পরীক্ষা করতে হবে, তা লিখলেন। প্রেসক্রিপশন আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে সাথে যাওয়া লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী কী পরীক্ষা করতে হবে?’ সাথে যাওয়া লোকটি প্রেসক্রিপশন দেখে বললো, “প্রথমে করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। তারপর হাত ও আঙুলের রগের দুইটা পরীক্ষা করতে হবে।” সাথে যাওয়া লোকটিকে বললাম, ‘আমি করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করবো না। এতে আমার মরণ হলেও না। মোটকথা চিকিৎসার দরকারই নেই।’ আমার কথাগুলো ডাক্তার সাহেব শুনছিলেন, কিন্তু কিছুই বললো না। সাথে যাওয়া লোকটি আমার কথা শুনে একরকম অবাকই হলেন।
ডাক্তারের ভিজিট ৮০০/= টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বাইরে এলাম। দুইজনে চা-সিগারেট পান করলাম। আমি আমার সাথে যাওয়া লোকটিকে বললাম, ‘দাদা, আপনি দয়া করে আবার একটু ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন, করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেওয়া যায় কি-না।’ উনি আমার কথা শুনে ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরে এসে বললো, “না দাদা, করোনা নমুনা পরীক্ষা করা ছাড়া উনি চিকিৎসা করবেন না।” সাথে যাওয়া লোকটির কথা শুনে আমি আর কিছুই বললাম না, সোজা বাসায় ফিরে এলাম।
এর দুইদিন পর পরিচিত লোকটার সাথে দেখা। জিজ্ঞেস করলো, “দাদা হাতের ব্যথার চিকিৎসার কী খবর? পরীক্ষা কবে করাবেন?” আমি বললাম, ‘না দাদা, আমি করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করতে নারাজ! লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “কেন?” বললাম, ‘যেই দেশে ঘাতক করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সর্বত্র দুর্নীতি আর তেলেসমাতি চলছে, সেই দেশে এই জটিল পরীক্ষার কী এমন গ্যারান্টি আছে? দেখতেই পারছেন প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই সবার চোখে পড়ে নমুনা পরীক্ষার তেলেসমাতির খবর। আর আমি নাহয় পরীক্ষা করালাম, দাদা। কিন্তু পরীক্ষা করার পর যদি ভুল রিপোর্টে আমার পজেটিভ আসে, তাহলে আমার গরিবের সংসার-সহ ভাড়াটিয়া বাড়ির সবাইকে লকডাউনে ফেলে রাখা হবে। তাই আর নমুনা পরীক্ষা অন্তত আমি করবো না। এতে আমার কিছু হলে হোক।’ আমার কথা শুনে লোকটা আর কিছুই বললো না, সোজা উনার কাজে উনি চলে গেলো। আমিও আমার সিদ্ধান্তের মাঝেই রয়ে গেলাম। ভাবেই গত হয়ে গেলো বেশ কয়েক মাস।
কিন্তু আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আমার সহধর্মিণীও ভালো আছে। জানি না সামনের দিনগুলোতে কী হয়! আশা করি সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও যখন করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তখন সামনের দিনগুলো ভালোভাবেই অতিবাহিত হবে। রোগ আসে। রোগ নিরাময়ের ঔষধও আবিস্কার হয়। দিন মাস বছর গত হয়। ফেলে আসা দিনগুলো শুধু ইতিহাস হয়ে রয়। এটাও আমাদের জীবনেরই একটা ইতিহাস। যার শিরোনাম করোনা কালের ইতিহাস।
করোনা কালের ইতিহাস আমাদের অনেকের জীবনে প্রায় অভিন্ন। আপনার সময় কাল পড়লাম প্রিয় লিখক মি. নিতাই বাবু। ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে এই শুভেচ্ছা।
শারীরিক দিক দিয়ে আগের চেয়ে বর্তমানে খুবই ভালো আছি, দাদা। জানি না, একটু পরে কী হয়! আশা করি আপনাদের সকলের আশীর্বাদে ভালোই থাকবো।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।
করোনাকাল আমাদের কাউকে তেমন স্বস্তি দেয়নি দাদা। একই ছিলাম
ঠিকই বলেছেন, শ্রদ্ধেয়া কবি দিদি। শুভকামনা থাকলো।
এ সময়ের ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মুখে আর পাঠ্য বইতে ঝুলবে।
হ্যাঁ, দাদা। আপনি যথার্থই বলেছেন। শুভকামনা থাকলো, শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।