হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নামের পূর্বে শ্রী ব্যবহারের মর্মার্থ

index

“শ্রী” একটি বিশেষ্য পদ। ‘শ্রী’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ। ভারত উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ করে সনাতন ধর্মে নামের পূর্বে ‘শ্রী’ লিখে থাকেন। তা নারীপুরুষ সকলের নামের সাথেই শ্রী যুক্ত করা হয়। যেমন: পুরুষের নামে পূবে ব্যবহার করা হয়, “শ্রী লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস” আর একজন বিবাহিত নারীর নামের পূর্বে “শ্রী মতি কল্পনা রাণী দাস” এভাবেই ‘শ্রী’ শব্দটির ব্যবহার। তবে আধুনিক সমাজে অনেকেই মনে করে থাকে এটি জনাব- জানাবা’র বিকল্প ব্যবহার। আসলে কিন্তু তা নয়। এটি সনাতন ধর্ম সৃষ্টিলগ্ন থেকেই। যেমন: সনাতন ধর্মের ৩৩ প্রকারের দেবদেবীর নামের পূর্বেও ‘শ্রী’ শব্দটি অন্তত দুইবার “শ্রীশ্রী” ব্যবহার করা হয়। ‘শ্রী’ শব্দটি তিনটি অক্ষরে গঠিত। এটি সংস্কৃত ভাষার সবচেয়ে ছোট শ্লোক।

আবার হিন্দু ধর্মমতে বিশেষভাবে লক্ষীদেবী এবং সরস্বতী দেবীকে ‘শ্রী’ সম্মোধন করা হয়। এছাড়াও বাংলাতে ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, সৌন্দর্য এবং রূপ-লাবণ্যকেও ‘শ্রী’ বলে। অর্থাৎ নামের আগে ‘শ্রী’ লেখার অর্থ আপনি উপরোক্ত বিশেষণে ভূষিত। ‘শ্রী’ সম্মানের প্রতীক। ‘শ্রী’ সুন্দরের প্রতীক। অন্যার্থে আপনি উপরোক্ত অর্থে শ্রীযুক্ত হোন বলে আশীর্বাদ। শ্রদ্ধা এবং ভক্তি প্রকাশের জন্যও নামের পূর্বে ‘শ্রী’ যুক্ত করা হয়।

তবে অনেক বিখ্যাত পণ্ডিতগণ মনে করে থাকেন যে, ‘শ্রী’ লেখা কোনও শাস্ত্রীয় বিধান নয়। ধর্ম চিহ্নও নয়। বরং দেবদেবীদের নামের পূর্বে “শ্রীশ্রী” থেকে প্রাচীন যুগ থেকেই হিন্দু সমাজে এই ‘শ্রী’ ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করে থাকেন সংস্কৃত থেকে আগত বলেই ‘শ্রী’ শব্দটি হিন্দু সমাজে ব্যবহৃত।

অভিধান ঘেঁটে দেখা যায়, নামের আগে ব্যবহৃত ‘শ্রী’ মূলত ‘শ্রীযুক্ত, শ্রীযুত, শ্রীল এগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেমন: “শ্রীযুক্ত, শ্রীযুত-বিণ. সৌভাগ্যযুক্ত, মহাশয় (মান্য পুরুষের নামের পূর্বে প্রযুক্ত)। শ্রী-বিণ. সৌভাগ্যবান, লক্ষ্মীমন্ত (বিশেষত মান্য পুরুষের নামের পূর্বে প্রযুক্ত)। শ্রীমান-বিণ. 1 সুন্দর, ক্লান্তিময়; 2 সৌভাগ্যশালী; 3 লক্ষ্মীমন্ত”। এতেই বোঝা যায় যে নামের পূর্বে ‘শ্রী’ মানে সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলেই শোভিত হোন। সৌভাগ্যবান হোন।

এজন্যই সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলে নিজ নামের পূর্বে সম্মানসূচক সম্মোধন বিশেষ ‘শ্রী’ ব্যবহার কর থাকে।নিজের নাম স্বাক্ষরের পূর্বে ‘শ্রী’ লেখা সঙ্গত। কারণ ‘শ্রী’ কেবল জীবিত ব্যক্তির নামের পূর্বেই বসে। যে ব্যক্তি নিজেই স্বাক্ষর করবে, সে তার নামের জীবদ্দশায় সহি করেছে এটা তার প্রমাণ হবে।

সর্বে ভবস্ত্ সুখিনঃ সর্বে সন্ত নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্ত, মা কশ্চিদ দুঃখভাগ্ ভবেৎ।।

সকলেই সুখী হোক, সকলেই নিরাময় থাকুক।
সকলের মঙ্গল হোক, কেউ যেন দুঃখ ভোগ না করে।

সোর্স: উইকিপিডিয়া ও বাংলা পঞ্জিকা নিবেদিত। ইষত পরিমার্জিত সংশোধিত।

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

2 thoughts on “হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নামের পূর্বে শ্রী ব্যবহারের মর্মার্থ

  1. বেশ ভালকিছু জানলাম প্রিয় কবি নিতাই দা

  2. সকলেই সুখী হোক, সকলেই নিরাময় থাকুক।
    সকলে শুভ হোক, কেউ যেন দুঃখ ভোগ না করে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।