বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ রয়েছে। ৮টি বিভাগে রয়েছে ৬৮ হাজার গ্রাম। এই ৬৮ গ্রামের মানুষ কিন্তু শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলে না। শুদ্ধ বাংলা ভাষা যে বলতে পারে না, তা কিন্তু নয়। অনেকেই শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। তারপরও যে যেই অঞ্চলের, সে সেই অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলতে বেশি পছন্দ করে।
কারণ মাটির টার আর মাতৃত্বের টান তো সবারই থাকে। যেমন; যাদের জন্ম চট্টগ্রাম, তারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলতে পছন্দ করে। এমনই নোয়াখালীর মানুষ নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। বরিশাল অঞ্চলের মানুষ বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষ। তাই আমি নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করি।
তো আমি বাংলাদেশের গুটিকয়েক অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা জানি এবং কথাও বলতে পারি। অন্য অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা জানলেও, আমি অন্য অঞ্চলের ভাষা নিয়ে কিছু লিখছি না। আমি নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তো আসুন, দেরি না করে শুরু করা যাক!
শুদ্ধ শব্দ – আঞ্চলিক শব্দ
নারায়ণগঞ্জ=নানগঞ্জ
এখানে=এনো
ওখানে=হেনো
এদিক=এন্দা
এদিক দিয়ে=এদিকদা
আসেন=আহেন
ওইদিকে=ঐদিকদা বা হেন্দা
কোনদিক দিয়ে=কোন্দা
কাঁঠাল=কাডাল
শোনেন=হুনেন
শুনছেন=হুনছেন
শুনবেন=হুনবেন
যাচ্ছি=যাইতাছি
যাবো=যামু
যাবো একসময়=যামুনে একসুম
যেতে হবে=যাওন লাগবো
একসময়=একসুম
কখন=কোনসুম
কখন থেকে=কোনসুম তে
যেসময়=যেসুম
আসবো=আমু
আসবো একদিন=আমুনে একদিন
নদীর পাড় দিয়ে=নদীর পাড়দা
নদী=নদী বা গাঙ
পাড় হবো=পাড় ওমু
হবো=ওমু
খাবো=খামু
হতাম=ওইতাম
দেখাতাম=দেখাইতাম
দেখবো=দেখমু
দেখাবো=দেখামু
দিবো=দিমু
বুঝেছি=বুঝছি
বোঝাবো=বুঝামু
বুঝেছেন=বুঝছেন
খেয়েছেন=খাইছেন
গিয়েছেন=গেছেন
এসেছেন=আইছেন
গেয়েছে=গাইছে
গাইবে=গাইবো
গাইবো=গামু
খাবে=খাইবো
রান্না=পাক
রান্না করা=পাক করা
রান্নার কাজ=পাকের কাম
কাজ=কাম
কাজকর্ম=কামকাইজ
কেটেকুটে=কাইট্টাকুট্টা
খেটেখুটে=খাইট্টাখুট্টা
কোনরকম=কোনোমতে
ভালো লাগে না=ভাল্লাগে না
ভালো লাগে=ভাল্লাগে
বিয়ে=বিয়া
বিয়েবাড়ি=বিয়াবাড়ি
হেলেদুলে=হেইল্লাডুইল্লা
মোটামুটি=মোডামুডি
ঘামাবো=ঘুমামু
ঘুমাও=ঘুমা
ঘুম আসে না=ঘুম আহে না
যেভাবে=যেম্নে
এভাবে=এম্নে
ওইভাবে=হেম্নে
কীভাবে=কেম্নে
পারবো না=পারতাম না
পারবো=পারুম
বলবো না=কইতাম না
চাবো না=চাইতাম না
খাবো না=খাইতাম না
শোবো না=হুইতাম না।
শুনবো না=হুনতাম না
মরবো না=মরতাম না
মরবো=মরুম
মারবো=মারুম
করবো=করুম
করাবো=করামু
ধরবো=ধরুম
ধরাবো=ধরামু
পড়বো=পড়ুম
আজকে এ-পর্যন্ত। এখানেই শেষ!
বি:দ্র: এর আগেও আমি শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এ নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ এবং নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দের দুই-তিনটা পোস্ট করেছিলাম। ভাগ্যগুণে শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এর অ্যাডমিন সেগুলো উনার ব্যক্তিগত ব্লগে চিরস্থায়ী করে রেখে দিয়েছেন। কারণ একই দেশের ভাষা অনেকরকম থাকলেও সেসব ভাষা সম্বন্ধে একই দেশের সবারই জানা দরকার মনে করে সেই পোস্টগুলো ব্লগে রেখেছেন। সেজন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ।
তো আজকে শুধু আমাদের নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কিছু শব্দ এখানে দেখালাম। তারজন্য দয়া করে কেউ কিছু মনে করবেন না। যদি ভুল করে থাকি, তাহলে মন্তব্যের ঘরে অথবা ইনবক্সে জানালে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাবো।
আমি মনে করি … আমাদের দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আমাদের যে নিজস্বতা রয়েছে সেটাকে উপভোগ করাই শ্রেয়। আমি উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করি, আমার কাছে আমার এলাকার আঞ্চলিকতা হয়তো আমার ভালো লাগে আবার কখনও কখনও লাগে না।
নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষাকে আমার কখনই দূরের ভাষা মনে হয়নি। ছোটবেলা থেকে ঢাকা বা আশেপাশের ভাষাজ্ঞানের সাথে আমরা -পাঠক কিন্তু অনেকেই বেশ পরিচিত। সাহিত্য গান চলচ্চিত্র নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিকতাকে আমাদের আপন করে তুলেছে।
গুড লাক মি. নিতাই বাবু। 