একটা দেশের রাষ্ট্রনায়ক মানেই অনেক অনেক ক্ষমতার অধিকারী। এককথায় বলতে গেলে রাষ্ট্রনায়ক হলেন গোটা একটা দেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এতো এতো ক্ষমতার অধিকারী হওয়া স্বত্ত্বেও কখনও-কখনও তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন আততায়ীর কাছে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও কিছুই করার থাকে না ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নায়কদের।
তো এই পৃথিবীতে সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে এ যাবত কাল পর্যন্ত যেসব রাষ্ট্রনায়ক আততায়ীর কাছে হার মেনেছিল, সে সকল রাষ্ট্রনায়কদের একটা ছোট তালিকা দেখানো হলো।
১.
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে কিছু উশৃংখল সেনাবাহিনীর সদস্যরা সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে।
২.
বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি ছিলেন, জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল অফিসার কর্তৃক তিনি নিহত হন।
৩.
ভারতের জাতির পিতা ছিলেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারিতে রাজধানী দিল্লির এক সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁকে পর পর তিনটি গুলি করে হত্যা করেন, এক হিন্দুত্ববাদী।
৪.
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তাঁর সফদরজং রোডের বাসভবনের বাগানে হাঁটছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা। বাড়ি থেকে এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে তাঁর আকবর রোডের অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক সেই সময়েই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান তাঁর রক্ষীরা।
৫.
আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট। তাঁকে ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, একটি থিয়েটারে মাথার পিছন থেকে গুলি করে খুন করেন আততায়ী। সন্ধে ৬টা নাগাদ লিঙ্কনের উপর হামলা হয়। পরের দিন সকাল ৭টায় মৃত্যু হয় তাঁর।
৬.
১৮৯৪ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মারি ফ্রাসোঁয়া সাদি কার্নটকে ছুরি মেরে খুন করা হয়। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট কার্নট তখনও সাত বছর পূর্ণ করেননি। অথচ এরই মধ্যে জনতার বিপদে-আপদে তাঁর যথা সময়ের উপস্থিতি তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। লোকের মুখে মুখে কার্নটের সততা, নীতিপরায়ণতার কথা। সেই সময়েই একটি জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে খুন হন কার্নট।
৭.
পাকিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। মাঝে প্রায় ন’বছর আড়ালে থেকে আবার ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন ভুট্টো। ঠিক করেন নির্বাচনে লড়বেন। প্রচারও শুরু করে দেন। কিন্তু ভোটের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে একটি জনসভায় হত্যা করা হয় ভুট্টোকে।
৮.
রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ছিলেন প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছেলে। তিনি রাজীব গান্ধী ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁকে হত্যা করা হয় ১৯৯১ সালের ২১ মে। রাজীব তখন ভোটের প্রচারে দক্ষিণ ভারতে। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে একটি জনসভা ছিল। সভাস্থলে পৌঁছে বুলেটপ্রুফ গাড়ি থেকে নেমে ডায়াসের দিকে এগোচ্ছিলেন রাজীব। একের পর এক শুভার্থীরা মালা পরিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁক। শুভেচ্ছা জানিয়ে পা ছোঁওয়ার পরই কোমরে বাঁধা আরডিএক্স বেল্টে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান। ঠিক ১০টা বেজে ১০ মিনিটে। সাথে সাথেই প্রাণ হারায় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।
৯.
আমেরিকার ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয় ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর ডালাসে। হুড খোলা গাড়িতে সওয়ারি ছিলেন সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট। তাঁর হন্তক লি হার্ভে ওসওয়াল্ড রাস্তার ধারের একটি বাড়ির ছ’তলা থেকে প্রেসিডেন্টের মাথা লক্ষ্য করে তিনটি গুলি চালান।
লেনিনের ভাবশিষ্য ছিলেন মার্কসবাদী বিপ্লবী লিওন ট্রটস্কি। তিনি ছিলেন রুশ বিপ্লবের প্রথম সারির নেতা। ১৯৪০ সালের ২১ অগস্ট তাঁকে হত্যা করা হয়।
১০.
মার্টিন লুথার কিং ছিলেন আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার গণআন্দোলনের নেতা ছিলেন মার্টিন। ভারতের মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে মার্টিনকে সামনে থেকে গুলি করে খুন করা হয়।
১১.
আধুনিক বিশ্বে সর্বশেষ রাষ্ট্রনায়ক হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয় জাপানে। ২০২২ সালের ৮ জুলাই জাপানের প্রাক্তন এবং দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর শিনজো আবেরও সম্ভবত তা-ই হল। শিনজোকে হত্যা করলেন টেটসুয়া ইয়ামাগামি। যিনি নিজের বয়ানে জানিয়েছেন, শিনজোর কাজে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই তাঁকে হত্যা করা হয়।
এতেই বোঝা যায় যে, এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই অনিশ্চিত! কেবল জীবের মৃত্যুর নিশ্চিত।
এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই অনিশ্চিত! কেবল জীবের মৃত্যুর নিশ্চিত।
কিছুদিন আগে যেনো কোথায় এই প্রবন্ধ পড়েছি