স্বাধীন বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার আধা কিঃমিঃ দূরে খট্টেশ্বর গ্রাম। পাল রাজবংশের কোন প্রতাপশালী জমিদার সম্ভবত খ্রিঃ ১০\১১ শতাব্দী থেকে এই অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। এই সমস্ত জমিদারের জমিদারী অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বংশের কোন জমিদারের নাম অনুসারে নবাবী আমলে এই পরগনার নাম হয় খট্টেশ্বর পরগনা।অনেকের মতে উক্ত খট্টেশ্বর রাজ বংশের কোন রানী প্ররাক্রমাশালিনী ছিলেন বলে গ্রামের নাম রাণীনগর হয়েছে তা মনে করা সমীচীন নয়। কারণ আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে রাণীনগর নামে কোন পরগনার উল্লেখ নাই।
নবাব মীর জাফর রেভিনিউ উজির থাকা কালীন পরগনা, চাকলা ও মৌজায় বিভক্ত হয় গ্রামগুলি। ঐ সময় এই অঞ্চল কে খট্টেশ্বর পরগণা বলে উল্লেখ করা হয়। সম্ভবত এক থেকে দেড় মাইল বিস্তৃত ছিল খট্টেশ্বর রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ী চারি পাশ পরিখা দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বর্তমান খট্টেশ্বরের মসজিদ তলায় ছিল মন্দির ও পূজা ঘর। শাহ্ পাড়া, খান পাড়া, ফকির পাড়া, কসরত সরদারের বাড়ী, কুমার পাড়া, ও যোগীপাড়া পর্যন্ত L আকারে পরিখা ছিল। যা এখন বড় দিঘী ও ছোট দিঘী বলে পরিচিত। রাজবাড়ীতে ছিল রং মহল, অন্দর মহল,রানীদের গোসল করার জন্য দিঘী, কাচারী, বিচারালয়, জেলখানা, ফাসিঘর, অমর্ত্যবর্গ ও সেপাইদের থাকার জন্য বাসস্থান। সেই সময় খট্টেশ্বর কে ছোট শহর বলে মনে করা হত।পরবর্তীতে একদা রানীভবানী নাটোর রাজবাড়ী থেকে পিতৃগৃহে যাওয়ার সময় রাণীনগর হাটে (বর্তমানে খট্টেশ্বর হাট খোলা নামে ডাকা হয়। এই হাট পরবর্তীতে কালীবাড়ী নামক স্থানে স্থানান্তর করা হয়।) কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার কারনে তখন থেকে এই গ্রামের নামের সাথে রানীনগর যুক্ত করা হয়। ইংরেজ রাজত্ব কালে প্রথম সেটেলমেন্টের সময় পরগনার নাম খট্টেশ্বর ও মৌজা রানীনগর নামে রেকর্ড করা হয়। তুলনামূলক ভাবে রাণীনগর নাম টি বেশী প্রাচীন নয়। যাই হোক খট্টেশ্বর রানীনগর একদা প্রাচীন স্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে গন্য হত। এই গ্রাম টি অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বলিত গ্রাম। অতঃপর ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ বৃটিশ শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে কয়েক ক্রোশ দূরে দূরে থানা স্থাপন করেন।
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে নওগাঁ মহকুমা স্থাপিত হলে বান্দাইখাড়া থেকে থানা সদর নওগাতে স্থানান্তর হয়। রাজশাহী সদর মহকুমা থেকে মান্দা ও ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কোন এক সময় সিংড়া ও অন্যান্য থানা থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে পাচু পুর থানা যাত্রা শুরু করে। উক্ত তিন থানা (মান্দা, নওগাঁ ও পাচুপুর) নিয়ে নওগাঁ মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে নর্দান বেঙ্গল রেলপথ চালু হলে। জমিদার গিড়িশ চন্দ্র লাহিড়ী চেস্টায় রানীনগর মৌজায় একটি রেলস্টেশন চালু হয়। তখনও যমুনা নদীর পূর্বতীরবর্তী সুলতানপুর পার নওগাঁ থেকে রঘুনাথ পুর(বর্তমানে সাহাগোলা) পর্যন্ত এলাকা বগুড়া জেলার অধীনে ছিল। ১৯১১/১২ সালে নওগাঁ, পাচুপুর ও আদমদিঘীর অংশ বিশেষ নিয়ে নতুন থানা রানীনগর গঠিত হয়। রানীনগর থানা নতুন করে নওগাঁ মহকুমায় যুক্ত করা হয়।
তথ্য সুত্রঃ ১।নওগাঁ মহকুমার ইতিহাস(খান মোহাম্মদ আফজাল)
২। www.naogaon.gov.bd
৩। নওগাঁ ইতিহাস ও ঐতিয্য(সরদার মোশারফ হোসেন)
প্রথমত শব্দনীড় এ আপনাকে সুস্বাগতম মি. পাভেল রহমান।
পোস্টে আলোচিত শহরের ইতিহাস আমার পার্শ্ববর্তী জেলার হওয়ায়, স্বাভাবিক কারণেই আগ্রহটি একটু বেশী ছিলো। শেয়ার করে বেশ করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ মুরুব্বী ভাই ।আপনাদের প্রেরণাই আমার আগামী লেখার মূল মন্ত্র।
নিশ্চয়ই মি. পাভেল রহমান। আপনি লিখুন। সবাই আপনার পাশে।
শব্দনীড় এ স্বাগতম পাভেল রহমান ভাই । ভালো লাগলো আপনার ইতিহাস ও ঐতিয্য বিষয়ক লেখা !
ধন্যবাদ আনিসুর রহমান ভাই । ভুল ত্রুটি শুধরিয়ে আমাকে সামনে এগিয়ে নেবেন ভাই ।