পাভেল রহমান এর সকল পোস্ট

পাভেল রহমান সম্পর্কে

সমালোচক,কবি, রাজনিতীবিদ। নতুন্বত্বের সন্ধানে হারিয়ে যাওয়া পথিক।

ছায়ামূর্তি

১.
প্রচন্ড মশা আর আবর্জনার দুর্গন্ধ। চারপাশে লোকের সমাগম। কত লোক যাচ্ছে আর আসছে। ট্রেনের ঘন্টা এখন ও পড়ে নি। ভুল হল আজকাল ট্রেনের ঘন্টা আর পড়ে না। আধুনিক যুগে সাউন্ড বক্স- এ বলা হয়। কখন ট্রেন যাবে আর কখন আসবে। শুনেছি টিকিটটাও অনলাইনে কাটা যায়। আজব হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীটা। যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। কত রকম মানুষ আছে এই পৃথিবীতে। কারও মন লাল আবার কারও মন নীল। কেউ ধনী আবার কেউ গরীব। কেউ কষ্টে অর্জিত টাকায় খাবার কিনে ফেলে দেয় আবার সেই খাবার কেউ কুড়িয়ে খায়। সব কিছু নিয়তি। কমলাপুর রেল স্টেশনে বসে কথা গুলো ভাবছে অনিদ্র। ময়লা টি- শার্ট আর ব্লু জিন্স পরার অভ্যাস টা আজও আছে। চাদর টা গায়ে জরিয়ে আলুথালু ভাবে তাকাচ্ছে চারিপাশে। রাত ৯ টাই ট্রেন ছাড়বে। লালমনি এক্সপ্রেস। গরীবের ট্রেন। নন-এসির ট্রেনে আজ কাল ফিট ফাট বাবুরা যায় না। অনিদ্র পকেটে হাত বাড়াল ৫০ টাকাই তার পুঁজি। সান্তাহার থেকে রাণীনগর আরও দশ কিলো। হিসাবটা কষে নিল অনিদ্র। এক টা চা আর সিগারেট খাওয়া যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। বাড়িতে যেয়ে থাকা যাবে কিনা এখনও বলা যাচ্ছে না। অনিদ্র একটা ডার্বি সিগারেট ধরালো। চারিপাশে তাকিয়ে এক চা-অয়ালাকে ডাকল।

-এই এক কাপ চা দাও তো।
চা অয়ালা চা দিয়ে জিগ্যেস করল
-বাবা কই যাইবেন?
-ক্যান চাচা কি হইছে?
(খুব বিরক্তির সাথে অনিদ্র প্রশ্নটা ছুড়ল।)
-না এমনে কলাম।
-সান্তাহার যাব। নাম শুনেছেন?
-শুনমুনা ক্যা? হামার গাও লগা সাপুর(সাহাপুর)। অনেক আগে গেছনু আর যাই না। তো বাবা তোমার বাড়ি কুন্টি?
-রাণীনগর। তো চাচা আপনার চা টা ভাল হইছে।
-হ বাবা দ্যাশের লোক পাইলে ভাল লাগে। আর এক কাপ চা খাও বাবা। টাকা লাগবো না। তুমি আমার দ্যাশের লোক।
-কি কোন চাচা। তাই কি হয়।
-কি কও বাবা তুমি দ্যাশের লোক এটাই বড় কতা।

অনিদ্র চা টা দ্রুত শেষ করল। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিল। যতদূর দেখা যায় চা-অয়ালা অনিদ্রের পথের দিকে চেয়ে থাকল। পৃথিবীর মানুষগুলো খুব অদ্ভুত। নিজের গ্রামের প্রতি মানুষের ভালবাসা আর নাই। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো কেমন যেন আলাদা হয়। নিজের দেশ বলতে এরা পাগল।

গত সপ্তাহে শরীফের সাথে দেখা। সরকারী দপ্তরের কেরানি। ভালই টাকা করেছে। শোনা যায় ঢাকার সাভারে ফ্লাট ও কিনেছে। কিন্তু অনিদ্র কে দেখে চিনতে পারল না। অনিদ্রই এগিয়ে যেয়ে পরিচয় দিল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল -কি করিস এখন। কাজ টাজ কিছু করিস।। না পার্টিই নিয়ে আছিস।
-এই তো কিছু একটা করছি।
-তাই। তো ভালতো।পার্টি করে কি পাশ জানি না। আজ কাল কি কেও বিরোধী দল করে। দেখ না আমাকে সরকারী দল করি বলে চাকুরীটা হয়েছে। তুই ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলি। অথচ চাকুরী নাই তোর। যাই হোক সরকারী দল কর কিছু একটা হবে। তো যাই মিটিং আছে। চায়ের বিল দিয়ে গেলাম চা খেয়ে নিস।

(চলবে)

ছেড়ে দে হারামজাদা

আর কত রক্ত খাবি –
আর কত চিরবি আমাকে
খুবলে খেয়েও মিটছে না সাধ
আমার এই ছোট্ট যৌনটাকে।

কামুক তুই বুঝলাম আমি
আছে অনেক পল্লী
তারা থাকতে আমার উপড়
হাতটা কেন ফেললি।

স্বপ্ন তো দেখি আমি
তোরই মেয়ের মত
তবু কেন করলি আমার
এই শরীরটা ক্ষত।

এতই যখন সাধ তোর
গেলিনা কেন মা”র কাছে।
তোকে জন্ম দিয়ে
মাতৃত্বটাই তার মিছে।

মানুষ তো নয় তুই
পশু হবি বটে।
তোর মত হারামজাদার
লিঙ্গটা দিব কেটে।

কত বলব তোকে আমি
ছেড়ে দে হারামজাদা
এই পৃথিবীতে বাচার অধিকার
আমারও আছে আধা।

বোবা জাতি

হাজার আর্তনাদ আজ
আমাদের কানে আসে না।
মটরযানের ভয়ংকর শব্দগুলো
আমাদের কান্নার রোল তোলে না।

আজ আমরা বোবা
হাড্ডিসার মানূষগুলো দেখি।
বলার ভাষা আমাদের নেই
আমরা জাতি যার লজ্জা নেই।

বাবা হারা সন্তান রাস্তায় দারিয়ে
চেয়ে থাকে অদূর পানে।
ফিরে আসবে হয়ত বা
কোন সন্ধ্যায় কোন রাত্রীক্ষনে।

আমরা দেখি বলার ভাষা আমাদের নেই
আমরা বোবা
আমরা কান্না করি শব্দ নেই
আজ আমরা জাতি বিধবা।

আমরা বন্দি কিন্তু কারাগারে নই
আমরা বন্দি বিবেকের কাছে।
আমরা বন্দি আত্মসম্মানবোধের কাছে।

স্মৃতি

আজ ৫ টি বছর
তুমি নেই আমার পাশে।
কিছু বিষন্ন স্মৃতি
আকড়ে ধরে আছে।
জানি আমাকে কখন ও তুমি
হয়ত বা মনে করবে না।
কিন্তু তোমার অস্তিত্ব থেকে
কখন ও আমাকে ছাড়তে পারবে না।

হাসছো, পাগল আমি
না, আমি পাগল নই।
বাস্তবতার নিরিখে অস্তিত্বহীন
আমি ধূলো পড়া স্মৃতির বই।
একবার বুকে হাত দিয়ে বলতো
ভুলতে কি পেরেছো আমাকে আজো।
না, পারনি আমাকে ভুলতে।
পারবে না আমার স্মৃতি গুলো ছাড়তে।

মৃত্যু পর্যন্ত তোমাকে ভাবতে হবে
আমার আবছা মুখ ।
সারা জীবন কাঁদবে তুমি
দেখবে না কোন সুখ।

ভালবাসী

তোকে শাড়ীতে ভাল লাগে
হাত জোড়া চুড়ি, কপালে টিপ
শ্যামলা বরণে মনের কোনে
প্রেম টি আবার জাগে।

পায়ে আলতা, হাতে মেহেদী
তোর মুখে দুষ্টু হাসি
হলুদ সবুজ শাড়ীতে তোরে
আমি যে বড্ড ভালবাসি।

মাথায় তোর চুলের খোপা
তোর কালো জোড়া আখি।
মনের কোনে তোকে নিয়ে
কতই স্বপ্ন আঁকি।
তুই যে আমার হীরামন পাখি

অতৃপ্ত

কতকাল তোকে ছুই নি।
গভীর রাতে বিনিদ্রতায়,
তোকে আমি পাই নি।

তোর গোলাপ স্পর্শ ঠোট
স্বর্গীয়তুল্য গাল,কতকাল স্পর্শ করি নি।
চাঁদনী রাতে তোকে পাশে রেখে –
কতকাল জ্যোৎস্না দেখি নি ।

কতদিন চলে গেল–
তোকে পাশে নিয়ে বৃষ্টি তে ভিজি নি।
কত রৌদ্র তপ্ত দুপুর চলে গেল
তোর বুকে মাথা রেখে আমি ঘুমাই নি ।

কতকাল তোর ভালবাসা টুকু –
আমি পাই নি।।

রাণীনগর রায়বাহাদুর এস্টেট (কাশিমপুর জমিদার বাড়ী) এর ইতিবৃত্তঃ

নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার ৩ কিঃমিঃ দূরে কাশিম পুর গ্রাম অবস্থিত। গ্রামের নামের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় যে সম্রাট আকবরের সময় কাশিম খা নামক এক পাঠান জায়গীরদার বাস করতেন। তার নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম হয় কাশিমপুর। মহারাজা মানসিংহ কাশিম খার জায়গীর বাজেয়াপ্ত করে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ এর নিকট পত্তন দেন। এই ব্যক্তি ই চৌধুরী জমিদার গনের পূর্বপুরুষ। এই এলাকায় রায় বাহাদুর এস্টেট ই ছিল প্রধান জমিদারী। এই এস্টেট এর পূর্বপুরুষ গিরিশচন্দ্র লাহিড়ীর আমলে জমিদারির শ্রীবৃদ্ধি হয়। গিরিশ চন্দ্র লাহিড়ী ছিলেন বিনয়ী, তেজস্বী ও পরোপকারী। তিনি ১৮৭৪ সালে কাশিম পুরে একটি মাধ্যম ইংরেজী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

খ্যাতনামা বাংলা ব্যাকরণ প্রণেতা তারিনী চরন স্যানাল এই স্কুলের হেড পণ্ডিত ছিলেন। ১৮৮২ সালে একটি প্রথম শ্রেনীর ডিসপেনসারি স্থাপিত করেন। যা বর্তমান এ ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গিরিশ চন্দ্রের পুত্র কেদার প্রসন্ন লাহিড়ী রায়বাহাদুর উপাধি পান। তাহার সময় হতে এই এস্টেট রায়বাহাদুর এস্টেট নামে পরিচিতি লাভ করে। রায় বাহাদুর এর পুত্র অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী একজন বিদ্যান ব্যক্তি। তাহার নিজস্ব লাইব্রেরী তে এনসাইক্লোপিডিয়া বৃটানিকার সকল খণ্ড সংগৃহীত ছিল।

শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী ছিলেন এই কাশিমপুর জমিদারির শেষ জমিদার। তার ৪ পুত্র ও ১ কন্যা ছিল।১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজবংশের সকলেই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। শুধু ছোট জমিদার শ্রী শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কাশিমপুর রাজবাড়িতেই বসবাস করতেন। সময়ের বিবর্তনে তিনিও একসময় কিছুটা চুপিসারে জমিদার বাড়ির স্টেটের অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান।

সুত্রঃ- নওগাঁ মহকুমার ইতিহাস। (খান সাহেব মোহাম্মদ আফজাল)

খঃ রানীনগর রাজবাড়ী ও রাণীনগর থানা নামকরনের ইতিহাস

স্বাধীন বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার আধা কিঃমিঃ দূরে খট্টেশ্বর গ্রাম। পাল রাজবংশের কোন প্রতাপশালী জমিদার সম্ভবত খ্রিঃ ১০\১১ শতাব্দী থেকে এই অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। এই সমস্ত জমিদারের জমিদারী অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বংশের কোন জমিদারের নাম অনুসারে নবাবী আমলে এই পরগনার নাম হয় খট্টেশ্বর পরগনা।অনেকের মতে উক্ত খট্টেশ্বর রাজ বংশের কোন রানী প্ররাক্রমাশালিনী ছিলেন বলে গ্রামের নাম রাণীনগর হয়েছে তা মনে করা সমীচীন নয়। কারণ আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে রাণীনগর নামে কোন পরগনার উল্লেখ নাই।

নবাব মীর জাফর রেভিনিউ উজির থাকা কালীন পরগনা, চাকলা ও মৌজায় বিভক্ত হয় গ্রামগুলি। ঐ সময় এই অঞ্চল কে খট্টেশ্বর পরগণা বলে উল্লেখ করা হয়। সম্ভবত এক থেকে দেড় মাইল বিস্তৃত ছিল খট্টেশ্বর রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ী চারি পাশ পরিখা দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বর্তমান খট্টেশ্বরের মসজিদ তলায় ছিল মন্দির ও পূজা ঘর। শাহ্‌ পাড়া, খান পাড়া, ফকির পাড়া, কসরত সরদারের বাড়ী, কুমার পাড়া, ও যোগীপাড়া পর্যন্ত L আকারে পরিখা ছিল। যা এখন বড় দিঘী ও ছোট দিঘী বলে পরিচিত। রাজবাড়ীতে ছিল রং মহল, অন্দর মহল,রানীদের গোসল করার জন্য দিঘী, কাচারী, বিচারালয়, জেলখানা, ফাসিঘর, অমর্ত্যবর্গ ও সেপাইদের থাকার জন্য বাসস্থান। সেই সময় খট্টেশ্বর কে ছোট শহর বলে মনে করা হত।পরবর্তীতে একদা রানীভবানী নাটোর রাজবাড়ী থেকে পিতৃগৃহে যাওয়ার সময় রাণীনগর হাটে (বর্তমানে খট্টেশ্বর হাট খোলা নামে ডাকা হয়। এই হাট পরবর্তীতে কালীবাড়ী নামক স্থানে স্থানান্তর করা হয়।) কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার কারনে তখন থেকে এই গ্রামের নামের সাথে রানীনগর যুক্ত করা হয়। ইংরেজ রাজত্ব কালে প্রথম সেটেলমেন্টের সময় পরগনার নাম খট্টেশ্বর ও মৌজা রানীনগর নামে রেকর্ড করা হয়। তুলনামূলক ভাবে রাণীনগর নাম টি বেশী প্রাচীন নয়। যাই হোক খট্টেশ্বর রানীনগর একদা প্রাচীন স্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে গন্য হত। এই গ্রাম টি অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বলিত গ্রাম। অতঃপর ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ বৃটিশ শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে কয়েক ক্রোশ দূরে দূরে থানা স্থাপন করেন।

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে নওগাঁ মহকুমা স্থাপিত হলে বান্দাইখাড়া থেকে থানা সদর নওগাতে স্থানান্তর হয়। রাজশাহী সদর মহকুমা থেকে মান্দা ও ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কোন এক সময় সিংড়া ও অন্যান্য থানা থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে পাচু পুর থানা যাত্রা শুরু করে। উক্ত তিন থানা (মান্দা, নওগাঁ ও পাচুপুর) নিয়ে নওগাঁ মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে নর্দান বেঙ্গল রেলপথ চালু হলে। জমিদার গিড়িশ চন্দ্র লাহিড়ী চেস্টায় রানীনগর মৌজায় একটি রেলস্টেশন চালু হয়। তখনও যমুনা নদীর পূর্বতীরবর্তী সুলতানপুর পার নওগাঁ থেকে রঘুনাথ পুর(বর্তমানে সাহাগোলা) পর্যন্ত এলাকা বগুড়া জেলার অধীনে ছিল। ১৯১১/১২ সালে নওগাঁ, পাচুপুর ও আদমদিঘীর অংশ বিশেষ নিয়ে নতুন থানা রানীনগর গঠিত হয়। রানীনগর থানা নতুন করে নওগাঁ মহকুমায় যুক্ত করা হয়।

তথ্য সুত্রঃ ১।নওগাঁ মহকুমার ইতিহাস(খান মোহাম্মদ আফজাল)
২। www.naogaon.gov.bd
৩। নওগাঁ ইতিহাস ও ঐতিয্য(সরদার মোশারফ হোসেন)