জলসূত্র

#০১
ঝরা পাতার কার্পেট রেখেছি পেতে- এবার এসো জল
রাত্রিদিন ক্লান্তিহীন চৈতন্যে দিয়ে যাও অস্থির দোলা
বেড়ে ওঠে রকমারি বৃক্ষ-তরুলতা ভেতরে ভেতরে
নিস্তব্ধ দিঘীর জলে হঠাৎ অবাধ্য বালকের ঢিল
নেই, কিছু নেই- তবু রক্তের ভেতরে শিশিরের ঘ্রাণ
মাঝরাতে আকাশে অলিখিত ব্যর্থ মেঘপঙ্‌তিমালা
কুমার বাড়িতে তৈরী হয় অনিন্দ্য সৌন্দর্যের প্রতিমা!
সত্যি যদি যাবে জল, ভালবেসো আলোকবর্ষ দূরত্ব
যদি দেখি ভুলে পেরিয়ে এসেছি অবগাহনের কাল
তবে শুরূ হোক আমাদের রাত্রির নক্ষত্র আলাপন।

#০২
অভিঘাত থেকে বুঝেছি আত্ম-কথপোকথন কতটা
জরুরী, কেবল জ্যোৎস্নারঙা জোনাকি বলেনি একথা-
শত অলোকবর্ষ দূরে থেকেও মানুষ নক্ষত্রপ্রেমী।
এখানে অন্ধকার; এখানে যে কোনদিন জ্বালেনি সন্ধ্যা
প্রদীপ- তার উঠোনে কাল বিকেলে উড়ে আসুক, ঝরে
পড়ুক আমাদের কৈশরের দোরঙা স্বপ্নময় ঘুড়ি।

#০৩
অতটা কাছে নয় জল, সামান্য দৃশ্যের নিকটবর্তী হও
কৈশরের ফেলে আসা কুয়াশা ঢাকা বালিকা হয়ে এসো জল
যদি জেনেই থাকো, আমাদের আদি মাতা ও মাতৃভূমি জল
কেন তবে দূরত্বের সুত্র ভুলে সমান্তরাল এ রেলপথ
আজন্ম জানু পেতে আছি আঘাত দেবে তো দাও, হে প্রজাপতি
পুঁড়ে গেলে স্বর্ণমন্দির শুধু নষ্ট হয় পুরোনো কারুকার্য
দেখো, নিভৃত এক স্বর্ণককামার কিভাবে চালিয়ে যায় হাত
একাগ্র হাতুড়ি-বাটাল ঠুকে ঠুকে গড়ে তোলে কাব্যপ্রতিমা!

প্রবাল মালো সম্পর্কে

ক্রমশ অবচেতনে বেড়ে যায় জয় আর পরাজয়ের বোঝা, ক্লান্ত আমি- নিজেকে লুকোই বালকের প্রথম প্রেমের চিহ্নের মতো। কোনো অর্জন নেই আমার- কেবলই অবক্ষয়-ধ্বংস-মৃত্যু, জয়ের আনন্দে বিহ্বলতা নেই- আছে গোপন কান্না, প্রতিটি প্রাপ্তির পেছনে উপলব্ধি ঘৃণার-সংশয় বোধের, প্রকৃতির নীরবতা-নম্রতার পেছনে হিংস্রতার প্রেতছায়া, মৃত্তিকার অগভীরে শেকড়ের ভয়ংকর নগ্নতার ছাপ, নদীর ঢেউয়ের গোপনীয়তা থেকে দোয়েলের সুমিষ্ট শিসের ঘ্রাণ, ঘাসের বেড়ে ওঠা নীরবে- কিছুই তো অজানা নয় মানুষগুলোর, তবু কেন এই অশনি সংকেত! ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে স্বীকারোক্তি দেবে কে? তোমার স্মৃতিগুলোতো ক্রমে অস্পষ্ট, তবুও তোমার দেহের ভঙ্গিমা সবচেয়ে সুখকর- সরল জীবনের মতো, সে-জীবন খোঁজে কবি, কবিতা, প্রেমিক, ঘাস, হৃদয়; তবু কেন মানুষ নয়!

3 thoughts on “জলসূত্র

  1. “আজন্ম জানু পেতে আছি আঘাত দেবে তো দাও, হে প্রজাপতি
    পুঁড়ে গেলে স্বর্ণমন্দির শুধু নষ্ট হয় পুরোনো কারুকার্য
    দেখো, নিভৃত এক স্বর্ণককামার কিভাবে চালিয়ে যায় হাত
    একাগ্র হাতুড়ি-বাটাল ঠুকে ঠুকে গড়ে তোলে কাব্যপ্রতিমা!”

    তিনটি অংশই পড়লাম। আমার কাছে সিম্পলি বেস্ট মনে হয়েছে। অভিনন্দন মি. প্রবাল। শেষের উল্লেখিত চারটি লাইন মনের মধ্যে ঈ-কো তৈরী গেলো। কানে বেজে চলেছে। ___ এভাবেই শব্দনীড় এর পাশে থাকুন। আমাদের ভালো লাগবে। স্বাগতম। :)

  2. পুঁড়ে গেলে স্বর্ণমন্দির শুধু নষ্ট হয় পুরোনো কারুকার্য
    দেখো, নিভৃত এক স্বর্ণককামার কিভাবে চালিয়ে যায় হাত
    একাগ্র হাতুড়ি-বাটাল ঠুকে ঠুকে গড়ে তোলে কাব্যপ্রতিমা!

    // শব্দনীড়ে স্বাগতম হে প্রেম ও প্রকৃতির কবি ! আপনার প্রথম কবিতাতেই মুগ্ধ হলাম ! আশা করি সাথেই পাবো নিয়মিত ! শুভকামনা অফুরান কবি !

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।