চিলেকোঠায় মৃত্যু

ঘর না হয় না-ই বাঁধবো- পাখিদের জন্য একটি ঘর বানাবো,
মস্ত একটা বাড়ি বানাবো চড়ুই টিয়া শালিখ ময়নার জন্য।

নিজস্ব কিছুই থাকবে না আমার-
যা কিছু আমার তার সবই হবে পাখিদের।
খেটে-খুঁটে বালিকা পড়িয়ে মাস শেষে যে পয়সা পাবো
তা দিয়ে পাখিদের জন্য কিনবো ধান গম কাউন,
আর তার বিনিময়ে পাখিরা যদি সন্তুষ্ট হয়ে
মাথা গুঁজবার একটা ঠাঁই দেয় তাদের
বাড়ির চিলেকোঠায়- তবেই আমি খুশি;
একা একা চিলেকোঠায় সমস্ত দিন
একা একা চিলেকোঠায় সমস্ত রাত
অনধিকার চর্চা করে শুনে নেব পাখিদের ব্যক্তিগত
আলাপন, ওদের ঘর সংসার সন্তান-সন্ততির খবরাখবর।

একদিন সন্ধ্যায় সব পাখি ঘরে ফিরবে ঘরের টানে
একদিন জ্যোৎস্নারাতে চিলেকোঠায় একাকিত্বে আমার মৃত্যু হবে
জানবে না কেউ, কেউ জানবে না- কেবল পাখিরা কানাকানি করবে…

প্রবাল মালো সম্পর্কে

ক্রমশ অবচেতনে বেড়ে যায় জয় আর পরাজয়ের বোঝা, ক্লান্ত আমি- নিজেকে লুকোই বালকের প্রথম প্রেমের চিহ্নের মতো। কোনো অর্জন নেই আমার- কেবলই অবক্ষয়-ধ্বংস-মৃত্যু, জয়ের আনন্দে বিহ্বলতা নেই- আছে গোপন কান্না, প্রতিটি প্রাপ্তির পেছনে উপলব্ধি ঘৃণার-সংশয় বোধের, প্রকৃতির নীরবতা-নম্রতার পেছনে হিংস্রতার প্রেতছায়া, মৃত্তিকার অগভীরে শেকড়ের ভয়ংকর নগ্নতার ছাপ, নদীর ঢেউয়ের গোপনীয়তা থেকে দোয়েলের সুমিষ্ট শিসের ঘ্রাণ, ঘাসের বেড়ে ওঠা নীরবে- কিছুই তো অজানা নয় মানুষগুলোর, তবু কেন এই অশনি সংকেত! ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে স্বীকারোক্তি দেবে কে? তোমার স্মৃতিগুলোতো ক্রমে অস্পষ্ট, তবুও তোমার দেহের ভঙ্গিমা সবচেয়ে সুখকর- সরল জীবনের মতো, সে-জীবন খোঁজে কবি, কবিতা, প্রেমিক, ঘাস, হৃদয়; তবু কেন মানুষ নয়!

3 thoughts on “চিলেকোঠায় মৃত্যু

  1. চিলেকোঠায় মৃত্যু। নিঃসন্দেহে পরিপক্ক এবং নিখুঁত গাঁথুনির লিখা।
    দ্বিতীয় প্রকাশনার অভিনন্দন মি. প্রবাল মালো। :)

  2. একদিন সন্ধ্যায় সব পাখি ঘরে ফিরবে ঘরের টানে
    একদিন জ্যোৎস্নারাতে চিলেকোঠায় একাকিত্বে আমার মৃত্যু হবে
    জানবে না কেউ, কেউ জানবে না- কেবল পাখিরা কানাকানি করবে…
    //অসাধারণ লিখেছেন কবি !

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।