কিশ- মিশ-ডে

সেবার ১৩ই ফেব্রুয়ারি এ্যডিলেডে আছি।

সপ্তাহান্তিক কেনাকাটায় শাশুড়ি – বৌমা গেছি। সেদিন একটু তাড়া ছিল। তাই মৌমা (ওর নাম মৌ) আমাকে ড্রাইফ্রুটস্, বিস্কিটস্, দুধ এর দিকে পাঠিয়ে নিজে আনাজ, ফল, মাছ, মাংসের দিকটায় গেল। উদ্দেশ্য, সময় সংক্ষেপ।

নতুন তো নই। মাস তিন-চার তো এই কাজ করছি। সানন্দে। এবারে কিন্তু মৌমার হাজারটা জিনিষ নেওয়া হয়ে গেলেও বিলিং কাউন্টারে আমাকে না পেয়ে, খুঁজতে চলে এলো, – কি গো, এ্যতো দেরি?
আমি আমার বোঝাই ট্রলি দেখিয়ে বললাম,
– আর বোলোনা, সবই তো পেলাম, কিন্তু কিশমিশ কই?
– সে কিগো, পেলেনা?
– তবে আর বলছি কি! নিজে পেলাম না বলে তো ওদের হেল্প চাইলাম। ক- ত্তো করে বুঝিয়ে বললাম,- রেইজিন, ক্যারান্ট্, ড্রায়েড গ্রেপস্, – বোঝে আর না। হাবার মতো খালি এপাশ-ওপাশ ঘাড় হেলায়।
অবাক হলো মৌমা, – ওসব কেন বলতে গেলে? বলবে তো, ‘সুলতানা’। বলেই একটা প্যাকেট তুলে এনে দেখালো,- এই দ্যাখো ছবি, আর সঙ্গে কি লেখা।
– ওমা! কিশমিশ হঠাৎ ‘সুলতানা’ কেন?
মৌমা মুখে হাসি টেনে বললো, – ও: মা। বুঝে দেখো, এসব রাজা- রানী, সুলতান- সুলতানাদের জন্যেই তৈরি যে!
-সে যাহোক, ইংরিজিই যদি না বলবে, তবে আমাদের কিশমিশ কি দোষ করলো?

এবার হাসিতে ফেটে পড়ে মৌমা ( শাশুড়ি বলে একটু রাখঢাকও নেই) – আরে তুমি যে কিছু চোখে চেয়েও দেখছো না। আসতে- যেতে, রাস্তায়-ঘাটে, পার্কে- মাঠে, ব্যাঙ্কে- হসপিট্যালে যার যখন ‘কিশি’ পাচ্ছে, তক্ষুনি জোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশের মতো যত্রতত্র হিসি না করলেই হলো। কিশি অলওয়েজ এন্ড্ এভরিহোয়্যার স্পনটেনিয়াসলি এ্যলাউড। তা, এ্যতো যে ‘কিশ’ – এর চাষ, এর একটাও কিন্তু মিশ্ হয়না মা, সব একেবারে ঠিকঠিক জায়গায় গিয়ে পড়ে। এদেশে তুমি কিশমিশ কোথায় খুঁজে পাবে বলো?

_______________
© রত্না রশীদ ব্যানার্জী।

8 thoughts on “কিশ- মিশ-ডে

  1. ফ্যান্টাস্টিক কথোপকথন বন্ধু। ওপার বাংলার ভাষা আর উচ্চারণ আমার কাছে দারুণ লাগে। দারুণ হয়েছে উপস্থাপনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

     

    1. ধন্যবাদ জানাই।

      আমার বাবার বাড়ি কিন্তু ঢাকা ।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_dance.gif       

    2. এই জন্যই ভাবি অনেক শব্দ এবং কোন কোন বাক্যের গঠন এতো পরিচিত কেন মনে হয়। স্বাগতম বন্ধু। :)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।