চকবন্দি চরাচর (নির্বাচিত অংশ)

…… বামুনবাড়ির মরাশোক দশদিনে কেটে যায়— তবে এতো তুচ্ছের মরা নয় —- তার চেয়ে কয়েক কাঠি ওপোরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন চরিত্রের বিভিন্ন মানুষ জন যেচে প্রেসক্রিপশন গুঁজে দিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে এই মহাপাতক থেকে শাস্ত্রসম্মত ভাবে সবংশে রেহাই পেতে পারে।

বিচিত্র মানুষ জনের বিচিত্র ভঙ্গিমা। বাইরের গেট থেকেই কেউ হাঁউ- মাঁউ করে কাঁদতে কাঁদতে ঢুকছে, ছদ্মআকুলতায় তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকছে তার স্বামী বা পুত্র। এদের এই সংসারেই এখন কে কাকে সান্ত্বনা দেয়! তবু নিজেদের শোক শিকেয় তুলে এগোতেই হয় পরমাত্মীয়ের কুম্ভীরাশ্রু মুছিয়ে দিতে। একদল বিস্তর কান্নাকাটি সেরে বায়না ধরলেন, যে করে হোক মেয়েটাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতেই হবে। এতবড় একটা অনাচার চলতে দেওয়া চলেনা।
সবাই তো সেটাই চায়। তার জন্যই উতলা। কিন্তু, কিভাবে?
— কেন, পুলিশে ডাইরি করো….

–নিজের বাড়ির মেয়ের বিরুদ্ধে নিজেরা পুলিশে যাবো?
— মেয়ের বিরুদ্ধে কেন গো! ডাইরি করো সেই অজাত- কুজাত মোছলমানটার নামে গো!
— তা ওর তো নাম- ঠিকানা – বাপের নাম কিচ্ছুটি জানিনা। কি করে কি হবে?

— ওই যে গো, ওই বড়দির ছেলে প্রতীম– ওই হারামজাদাই তো এই কাণ্ডের মূল। ওকে ডেকে শুধোলেই তো স- ব পেয়ে যাবে।। — পরকে দোষ দিয়ে কী লাভ! আমার ভাগ্যে ছিল লেখা। নইলে অমন বুঝমান মেয়ে আমার! — ডুকরে ওঠেন রমা।
— আলোচনা গতি বাড়িয়ে ক্রমশঃ ষড়যন্ত্রে রূপ পেতে চলেছে…. পুলিশকে বললেই হবে আমাদের নাবালিকা মেয়েকে বিদেশ চালান করার জন্য ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে… বলবো মেলা টাকা- গয়না সরিয়ে নিয়ে গেছে,… বলবো..বলবো….
শলাপরামর্শের মাঝে শলাকা র প্রাধান্য ক্রমশঃই গায়ে গতরে বাড়ছে…ও রমা, তুই রাজি থাকিস তো বল্ আমার ছোট শালার বন্ধু এই হালে হালে এখানে সেকেন্ড অ ফিসার হয়ে এসেছে। একবার কমপ্লেনটি করলেই হলো। তারপর বাছাধনের পিঠের ছালচামড়া তুলে নুনলঙ্কা ভরে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে….

কাঁদতে কাঁদতে আঁতকে ওঠেন রমা এদের এমন নির্মম কথাবার্তা শুনে।…হা ঈশ্বর! যার সম্বন্ধে কথাগুলো বলছ, আমার মেয়েটা যে রয়েছে তারই বুকে…

রমা মেটেই সায় দেয়না ওদের কথায়,.. দেখি,ওর বাবা অফিস থেকে ফিরুন….

গিরিবালা সটান এসে দাঁড়িয়ে যান মেয়ে রমার পাশে,… শোন, এইযে তোমাদের বলছি। খবরদার যেন জামাই বাবাজীবনের কানে এমন নোংরা কথাবার্তা না ওঠে। তোমরা চেনোনা আমার জামাইকে? সে এমন পাইকেরে প্যাঁচে পা ফেলবে? এসব কথাবার্তা একদম বলবেনা এবাড়িতে। আমার জামাই এর অমন পুলিশ বন্ধু কি কম আছে?

… তবে কি জীবনভোর মেয়েটা ওই মুসলমানটার খপ্পরে পড়ে থাকবে? এখনো তল্লাটে আছে… এরপর কেথায় হওয়া করে দেবে কেজানে? যা করার তড়িঘড়ি করতে হবে।

কিসের তড়িঘড়ি? আর ওসব প্যাঁচ- পয়জার কষে কিছু লাভ হবেনা। বুকে করে মানুষ করেছি, আমি চিনি আমার নাতনিকে। ওর আপনজনের যদি কোন অসম্মান করো, আবারও একবার দক্ষযজ্ঞ দেখতে পাবে তোমরা। তোমাদের চোখের ওপোরেই ও আত্মহাত্যা করবে…. শক্ত গিরিবালা যন্ত্রনায় গ’ লে গ’ লে হাপুষ কান্না কাঁদতে থাকলেন,… ততক্ষনে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছেন রমা।
খানিক বিনিপয়সার সিনেমা দেখেপাততাড়ি গোটাতে থাকে পরামর্শদাতারা…এখন এবাড়িতে খাওয়া দাওয়ারও পরিপাটি যে নেই বিশেষ…..হাঁড়ি – হেঁশেল রমার জা – ননদের জিম্মাতে।

( আরও যাবে)

8 thoughts on “চকবন্দি চরাচর (নির্বাচিত অংশ)

  1. সাবলীল লিখা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় বন্ধু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. * চলুক, আমরা সাথে আছি…

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।