বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফিরি

গত কয়েকদিন ধরেই মেজাজটা বেশ ফুরফুরে আছে। সক্কাল সক্কাল উঠে কাজের সাথে গান মিশিয়ে, ছোটো বড় সব্বাইকে একধার দিয়ে জ্ঞান বিতরন করে, প্রিয় মানুষদের সাথে খুনসুটি করে আর আড্ডা মেরে দিনগুলো এক্কেবারে ঝাক্কাস কেটে যাচ্ছে, বিনা রক্তপাতেই কাটছে কিন্তু। মনের মধ্যে বেশ একটা ফুত্তি ফুত্তি ভাব।

এতো ফুত্তি! কি জানি খাঁড়া টাঁড়া ঝুলেছে কিনা কোথাও হয়তো যেকোন সময় ঘ্যাচাং করে বলি টলি হয়ে যাব কিনা। বলি হওয়াটাও কেমন যেন বেশ ফুরফুরে, কুড়কুড়ে ব্যাপার মনে হচ্ছে।এধারে আবার গত কদিন ধরে শীতও প্রায় টাটা করেছে। বেশ গরম গরম ভাব। সূর্যদার চোখ রাঙানিও শুরু। আজ বাড়ীর সামনে মরনফাঁদ পাতার মতো করে জলের নতুন পাইপের জন্য এ দেশ ও দেশ ভাগ হয়েছে, তা ও বাড়ীর সামনেই। তাও যে কি করে এত ফুত্তি টুত্তি আসে বুজিনা বাপু। আর এও জানি আমার ফুত্তি ওপরওলার কোনদিন সহ্য হয় না। সে ব্যাক্তির সঙ্গে আমার প্রায় ফাটাফাটি রকমের দঙ্গল চলে রোজ।

এই তো কিছু ক্ষন আগে ওই মহাকুস্তিগীর ভগবানের সঙ্গে দঙ্গল হয়ে গেলো এক রাউন্ড। হঠাৎই চোখ গেল জানলা থেকে দ্যাখা যায় ওই দূরের গাছের দিকে, মানে জানলার বাইরে। এতে আমার কিন্তু কোন দোষ নেই ওই জানলাটা কিন্তু বেজায় দুষ্টু, ভালো খারাপ সব দেখায়। কোথায় খারাপ টারাপ গুলো ঢাকা-চাপা দিয়ে রাখবি তা নয়। তো চোখ যখন গেছে তখন দেখতেই হয়। প্রমিস ডে তে পাশের বাড়ির দুই ছাদে প্রমিস চলছে।

আজ বাড়ি ফেরার সময় সূর্যদাও বেশ ফুত্তির সাথেই রোদ দিচ্ছেন, বেশ ঝলমলে ব্যাপার প্রকৃতিতেও। হুড়মুড় করে বাইকে করে লোকেরা যাচ্ছে এক্কেবারে ফিলিমের হিরো মনে করছে নিজেদের। আবার হেলমেট পরেনি কেউ কেউ। বুঝবে, যেদিন নারকেলের মতো ফট করে ফাটবে সেইদিন বুঝবে! আবার কেউ কেউ ছাতা মাথায় হন হন করে চলেছে বেশ। একজন হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে, বড্ড স্লো মোশনে চলছে। ওকি আবার দাঁড়িয়ে গেল যে, আকাশের দিকেই বা তাকাচ্ছে কেন? মনে হয় পেলেন টেলেন ল্যন্ড করবে মাথায়। যাইহোক বাড়ি ফিরলাম প্রায় বিকেল।

ঘরে ঢুকতেই চারিদিক কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো আর আমি সেই অন্ধকারে বসে রইলাম। আর ওই মহা কুস্তিগীরের কাণ্ডটা বোঝাগেলো ,আমার ফুত্তি তো সইলো না তাই লোডশেডিং। ঘেমে গেছি, পাখাও চালাতে দিলো না!কিরম এক নম্বরের হিংসুটে। তাই উপায় না দেখে জানলা খুলেই দিলাম। জানলার বাইরে যা কিছু সে সব তো তাঁরই বানানো। নাকি? প্রশংসাও বোঝে না! একদম বুদ্ধুরাম টাইপ।

আরেকটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছিলাম, ওই যে তখন বললাম না যে বাড়ীর সামনে দেশ ভাগাভাগি চলছে, তো হল কি কপ্পরেশন তো আমাদের আরও উন্নত জল দেবে বলে উঠে পরে লেগেছে।এই যাদবপুর, টালিগঞ্জ এলাকায় জলের সমস্যা খুব। এক একদিনে এক একটা লম্বা লম্বা নালা খুঁড়ছে আর পাইপ বসিয়ে আবার নালাগুলো মাটি দিয়ে ভরে দিচ্ছে। আজ তো দুর্দান্ত রকমের উন্নত জল পেয়েছি, যেই না জল ভরার জন্য বালতি বসিয়েছি কলের তলায় আর যাবে কোথায় সে কি স্পিডে জল পড়ছে আমি তো দেখেই অবাক! তবে আরও একটা সুখবর আছে, এখন তো সব জায়গাতেও বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রিরি। তো কপ্পরশন ও আমাদের ওপরে খুব খুশি হয়ে জলের সাথে আয়রন ফিরি দিচ্ছে। উফ! কি যে আনন্দ পেয়েছি কি বলবো। একেই তো এতো উন্নত মানের জল ফিরি, তার ওপর আয়রন ফিরি। একেবারে ফিরির ওপরে ফিরি।

এখন শুধুই আরেকটা আনন্দের জন্য অপেক্ষা, ওই যে ইলেক্টিরির সাথে যে কি ফিরি পাঠায় সেটাই দেখার। বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছি কয়েকদিন।

8 thoughts on “বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফিরি

  1. জীবন ভিত্তিক লিখা, কবিতা বা প্রবন্ধ পড়েছি। এমন স্বতন্ত্র লিখা সম্ভবত প্রথম পড়লাম।
    লিখকের লিখায় ভেরিয়েশন থাকা জরুরী। নইলে লিখক একক হয়ে পড়েন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. ও! এই কথা!
    আপনার কপ্পরেশন উইঠা পইরা লাগছে বুশুদ্ধ জল খাওয়াবার জন্য আর আমাগো কপ্পোরেশ লাগছে বড় রাস্তায় চলাচলের জন্য। আশে পাশের রাস্তার পাড়ের সমস্ত বাড়ি ভাইঙ্গা নাস্তা নাবুদ। রাস্তার পাড়ের সব দোকান ভাঙ্গুনিতে পইড়া বন্ধ। তয় ভাগ্য ভালো যে আমাগো বাড়ি ভাঙ্গুনিতে পড়ে নাই আমরা এক বাড়ি গলির ভিতরের মানুষ।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।