সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স এ ভোগা এক ধরনের রোগ
নিজেকে everything ভাবাটা একটা সাইকোলজিকাল সমস্যা। সবকিছুতে নিজের পান্ডিত্য জাহির করা, নিজেকে মনে করা আমিই সেরা, আমার ধারের কাছে কেউ নেই, এটাই হচ্ছে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। সমস্যা হচ্ছে নিজেকে এভ্রিথিং ভাবা এই মানুষ গুলো বাস্তব জীবন এ হয়ত কিছু সম্মান পায় নিজের ঢাক নিজেই পিটিয়ে, কিংবা তাদের যোগ্যতার কারণে। কিন্তু এই মানুষ গুলো কখনওই আরেকটা মানুষ এর ভালোবাসা পায় না এই সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়।
আবার এভাবেও বলা যায়, সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স হচ্ছে যখন কেউ নিজেকে আশেপাশের সবার থেকে বড় ও সুন্দর মনে করে। যদি আপনার এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এই মানসিকতা পরিবর্তন করুন। এই পৃথিবীর কেউই পারফেক্ট নয়। অনেক বড় বড় মানুষেরও বিভিন্ন খুঁত বা সমস্যা থেকে থাকে। তাছাড়া এই সমস্যা থেকে অহংকার ও হিংসার সৃষ্টি হয় একটি কথা মাথায় রাখবেন, এই পৃথিবীর সবাই তাদের নিজস্ব ভঙ্গিতে সুন্দর। নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। এটা কেবলই মনের ব্যাপার।
কিছু সমাধানের চেষ্টা :
১. নিজেকে প্রকাশ করুনঃ-
আপনি যা তাই প্রকাশ করুন বা দেখান। অন্যের কাছে ভালো হওয়ার জন্য বা নিজেকে পছন্দ করানোর জন্য আপনি যা নয় তা হওয়ার বা দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এতে করে মন থেকে কখনোই শান্তি পাবেন না। নিজের মত থাকুন, আপনি যেমন তেমনটাই প্রকাশ করুন। এতে করে কমপক্ষে দিন শেষে একটা শান্তির ঘুম দিতে পারবেন এই ভেবে যে কিছু মানুষ অন্তত আপনি যা তার জন্যই আপনাকে ভালোবাসে।
২. অন্যদের সম্মান দিনঃ-
এই পৃথিবীতে নানান রকমের মানুষ রয়েছে। কারো সাথে কারোর মিল নেই। আপনি যেভাবে চিন্তা করবেন অন্যরা সেভাবে চিন্তা নাও করতে পারে। কারো সাথে আপনার মনোভাব না মিললেও তাদের হেয় করবেন না। সবসময় অন্যের ব্যক্তিত্বকে সম্মান দিন। তাহলেই আপনি সম্মান পাবেন।
৩. নিজের বুদ্ধিমত্তা বাড়িয়ে তুলুনঃ-
সময়ের সাথে সাথে চেহারার সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে কিন্তু এই বুদ্ধিমত্তা সবসময় থাকবে আপনার সাথে। এই ইন্টারনেটের যুগে যেখানে সবকিছুই আপনার হাতের নাগালে সেখানে পুরো বিশ্বের ব্যাপারে নিজেকে আপডেটেড না রাখা একেবারেই বোকামি। সারাদিন ঘরে শুধু শুধু বসে না থেকে অবসরে পছন্দের লেখকের বই পড়ুন, খবর দেখুন, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন, নতুন নতুন রান্না করুন, গান শুনুন। যেসব কাজ করে আপনি আনন্দ পাবেন সেগুলো করুন। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। এতে করে আপনার সময় যেমন খুব ভালো মতো কেটে যাবে সাথে সাথে জ্ঞানও বাড়বে।
৪. মন খুলে হাসুনঃ-
হাসির ব্যাপারে কখনোই কৃপণতা করবেন না। সবসময় মন খুলে হাসুন। এতে করে আপনার চেহারায় যেমন উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে ঠিক তেমনি অন্যরাও আপনার হাসিতে মুগ্ধ হবে।
৫. ঈর্ষাপরায়ণতা/ হিংসা থেকে দুরে থাকুনঃ-
মনের অনেক বড় বড় কিছু সমস্যার মধ্যে এটি হল একটি। মুখে যতই অস্বীকার করি না কেন ভিতরে সবাই কমবেশি ঈর্ষা পোষণ করে থাকি। এটি আমাদের ভিতরের সৌন্দর্যকে তিলে তিলে নষ্ট করে ফেলে। আপনার থেকে সুন্দর বা ধনী কাউকে দেখে আপনার মনে হতাশা থেকেই শুরু হয় ঈর্ষা। এটিকে একদম প্রশ্রয় দিবেন না। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সবকিছু দেন না। হয়তো দেখা যাবে আপনার যা আছে অন্যদের সেটা নেই এবং তারা সেটা দেখে আফসোস করে। আসলে দুনিয়ার নিয়মই হল এমন, নদীর ওপারের ঘাস সবসময়ই বেশি সবুজ মনে হয়। নিজের যা আছে তাই নিয়ে খুশি থাকুন, আপনার আশে পাশের মানুষদের যা আছে তা ভিতর থেকে মেনে নিতে শিখুন এবং খুশি থাকুন। ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্যের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লাগবেন না। নিজের মনকে কন্ট্রোল করা শিখুন। আপনার যা ই থাকুক না কেন তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকুন এবং বিনিময়ে আপনি আরও অনেক কিছুই পেতে পারেন। নিজেকে ঈর্ষার হাত থেকে বাঁচান, দেখবেন আপনি নিজেই ভিতর থেকে শান্তি অনুভব করবেন যার সৌন্দর্য বাইরে থেকে ফুটে উঠবে আপনার চেহারায়।
** একটি ঘটনা বলি :-
_______________
১. এক বন্ধু কাম দিদির সাথে সেদিন আড্ডা হচ্ছিলো। উনি খুব সিনিয়র একজন ডাক্তার। ব্যস্ততা সাঙ্ঘাতিক।সেইদিন রাত্রেই হঠাৎই আমার অন্য এক বন্ধুর স্বামীর পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা। বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না এরকম অবস্থা। অনেক রাত তখন, ডাক্তার পাওয়া পাওয়া দূরূহ। বন্ধুর পরিচিত একজন ডাক্তার ছিলো। কোন উপায় না দেখে, বন্ধুটি সেই ডাক্তার ফোন করলো এবং শুধু জানতে চাইলো, এ মূহুর্তে কি করবে?সেই ডাক্তার উত্তর দিলো, সে এখন কিছু বলতে পারবে না, তার পক্ষে আসা সম্ভব না।এইভাবে রাত দুপরে তাকে যেনো ফোন না করে। বন্ধু তার এহেন আচরণে বেশ দুঃখ পেলো।কারণ পারিবারিক ডাক্তার সে। তারপর আমায় ফোন করলে আমি আমার ডাক্তার বন্ধুটির নম্বর দিই। উপায়ন্তর না দেখে বন্ধু, সেই ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করলো। রাত তখন অনেক। সিনিয়র ডাক্তার। যদিও আমি তাকে দিদি বলেই ডাকি। প্রথমে ফোন ধরতে পারেননি। পরে ফোন দেখে সেই রাত কল ব্যাক করেন। এবং সব সমস্যা শুনে, তিনি সেই রাতে আমার বন্ধুর স্বামীকে দেখতে যান।
এই গল্প এজন্যই বললাম, আমার বন্ধু কাম দিদির জন্য সেদিন আমার গর্ব হয়েছিল, আজ এতদিন পরেও আমি এর কথা আমি তার কথা বলছি, যে তিনি কতটা ভালো মানুষ। কিন্তু সেই ডাক্তার ,যিনি আমার সেই অসুস্থ বন্ধুর পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন। যার সাথে এত ভালো সম্পর্ক কিন্তু যখন অসুস্থ হলো বন্ধুর স্বামী, তখন এমনভাব দেখালো, যে সে তাদের চেনেই না। এবং তিনি নিজের প্রশংসা নিজে করতে পারদর্শী। নিজের ঢাক নিজেই পেটায়। মানে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স এ ভোগা একজন মানুষ। এইসব মানুষরা নিজের ঢাক নিজে পেটানোর জন্য হয়তো সম্মান পায়, কিন্তু রিয়েল ভালোবাসা পাওয়াটা মনে হয় অর্জন এর বিষয়। এদের সেই ক্ষমতা থাকে না।
সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স অনেকের ভেতর আছে তবে যারা বিজ্ঞান নিয়ে থাকে বা ফ্যাসিনেশান আছে তাদের ভেতর এটা কম দেখা যায় আমার মতে। কারণ বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত তাদের দেখিয়ে দেয় যে তুমি কত কম জানো। আর সেজন্য তারা নিজেরা যা জানে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকে, আর তার জন্য, তাকে এসব ব্যাপার সবার বোঝার উপযুক্ত করে তুলতে হয় আর তা শুধুমাত্র সহজ উপায়েই করা সম্ভব। কিন্তু তাদেরকে দল থেকে বাদ দিলে যারা থাকে,তারা প্রত্যেকে মনে করে একটা বিশাল কিছু তারা জানে বা বোঝে বা তারা আলাদা কিছু, কেউ কেউ ভাবে,”আমি নিজে কষ্ট করে এতটা পথ এসেছি, আর তুমি এতো সহজে এসে যাবে! এভাবে বিভিন্ন জটিলতা বা কুটিলতা থেকেই এই সুপিরিয়র কমপ্লেক্সিটির জন্ম হয় এবং তা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে।
** পরিশেষে একটা কথাই বলি :-
আমাদের মুখ হল মনের আয়না। মন জটিল হলে তা মুখেই ফুটে ওঠে। আর চোখ হল মনের জানলা। আপনার চাহনিই বলে দেবে আপনার মন স্বচ্ছ নাকি কলুষিত। বাইরে থেকে সুন্দর দেখানোর জন্য কত কিছু প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করা হয়।বাইরের নয়, মনের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তুলুন। তবেই আপনি হয়ে উঠবেন সবচেয়ে সুন্দর, সর্বোপরি একজন সুন্দর মনের মানুষ। সুন্দর মনের মানুষ হতে চেষ্টা করুন।
পৃথিবীর সবাই তাদের নিজস্ব ভঙ্গিতে সুন্দর। নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। তবে এটাও কেবল মনের ব্যাপার। বাইরের নয়, মনের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তুলতে হবে।
… আমরা হয়ে উঠতে পারি সবচেয়ে সুন্দর, সর্বোপরি একজন সুন্দর মনের মানুষ।
সাইকোলজিকাল সমস্যা এবং তার বিকল্প … আলোচনাটি পাঠকের উপকারে আসবে।
অনুপ্রাণিত হই আপনার কথায় প্রিয় বন্ধু।
খুবি ভাল লেখেছেন দিদি
এটাই হয়া উছিদ————-
ধন্যবাদ কবিবাবু।
সুপেরিয়র কমপ্লেক্স কখনোই ভালো কিছু নয়। কিন্তু যারা প্রকতই ইনফেরিয়র- ব্যাক্তিত্বে, স্বভাবে, রুচিবোধে তাদেরকে ইনফেরিয়র না ভাবার কোন যুক্তিও নাই। দেয়ালে দুটো টিকটিকির সুখ দেখে যে কবি তার লেখায় চিৎকার করে ওঠে, "আহা কতো দিন আমি টিকটিকি দুটোর মতো সুখ পাইনাই" সেই কবি, সেই কাব্যকে আমি সুপেরিয়র ভাবতে পারিনা (জাস্ট একটা উদাহরণ)।
তবে সবাইকে সমান গুরুত্ব দেখার গুরুত্ব অসীম। যারা প্রকৃতই সুপেরিয়র তারা সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়।
খুব মনে ধরেছে লেখাটা!
শ্রম সার্থক হলো আপনার মন্তব্যে প্রিয় মিড দা।
আপনার লেখার প্রতি দিন দিন প্রেমে বাড়িয়ে চলছে ….. অনেক কিছু ধারণ করতে পারলাম। ধন্যবাদ।
স্বাগতম সালজার রহমান সাবু দা।
সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স একটা রোগ। এর ফলে আশেপাশের মানুষেরও পীড়ার কারণ হয়। আমার মতে সফল নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এটা বড় একটা বাধা। আমি আরেকটা জিনিস যোগ করতে চাইঃ
EGO = Evil Going On
খুবই দরকারী একটা বিষয়ে আলোকপাত করলেন।
অনেক ধন্যবা, আপু।
EGO = Evil Going On. গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন আনু আনোয়ার দা।
খুব ভাল
ধন্যবাদ কবি।
বিবিধ ঘরানার লিখেন জন্য আপনার লিখা গুলোনকে আমি সমীগের দৃষ্টিতে দেখি কবি রিয়া রিয়া।
আপনার সমীহ প্রাপ্তি আমার জন্য অনেক সম্মানের কবি সুমন আহমেদ দা।
সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স….এ একটা রোগ। রিয়া দি''ভাই আপনার এই লেখাটা গভীর মনোযোগ সহকারে পড়লাম। খুব উপকারী একটি পোস্ট এটা। পাঠান্তে ভীষণ ভাল লাগল । অনেক কিছুই শিখলাম,জানলাম। শুভ কামনা।
অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রিয় কবি রানু দি।
শিক্ষার উপকরণ এবং পরামর্শে মুগ্ধ হলাম কবি রিয়া রিয়া।
শুভেচ্ছা কবি শাকিলা তুবা দি।
আপনি যা তাই প্রকাশ করুন বা দেখান। অন্যের কাছে ভালো হওয়ার জন্য বা নিজেকে পছন্দ করানোর জন্য আপনি যা নয় তা হওয়ার বা দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এতে করে মন থেকে কখনোই শান্তি পাবেন না। নিজের মত থাকুন, আপনি যেমন তেমনটাই প্রকাশ করুন। এতে করে কমপক্ষে দিন শেষে একটা শান্তির ঘুম দিতে পারবেন এই ভেবে যে কিছু মানুষ অন্তত আপনি যা তার জন্যই আপনাকে ভালোবাসে।
তৃপ্ত হলাম পাঠে। সর্বোপরি সুন্দর লিখেছেন।
শুভেচ্ছা জানবেন শ্রদ্ধেয় ।
খুশি হলাম কবি পথিক সুজন দা।
পুরোই শার্লক হোমস টাইপের লেখা
ধন্যবাদ আপনাকে।