বৈশাখ আমার, বৈশাখ আমাদের।
বৈশাখ প্রাণের, বৈশাখ ত্রাণের।
বৈশাখ কবিতার- বৈশাখ ‘রবি’দার।
রবীন্দ্রনাথের বৈশাখ মানেই বাংলার বৈশাখ, বাঙালির বৈশাখ। ‘এসো হে বৈশাখ’ এর লালিত্য উচ্চারণে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার নববর্ষকে এক ভিন্ন মাত্রা দান করেছেন, উৎসবে আনন্দে প্রাণের বন্যায় আমাদের হৃদয়ে ঝড় তোলে তাঁর কবিতা। তিনি বলেন:
“হে ভৈরব হে রূদ্র বৈশাখে,
ধুলায় ধুসর রুক্ষ্ম উজ্জীন পিচ্ছল জটাজাল,
তপঃকিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষান ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ?’…
‘দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুৎকার ক্ষুব্ধ ধুলাসম উড়ুক গগনে
ভরে দিক নিকুঞ্চের স্বলিত ফুলের গন্ধ সনে।
আকুল আকাশ
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ.”
বৈশাখ আসতে না আসতেই বিরুপ প্রকৃতি এসে হানা দেয় বাংলার আঙিনায়। রোদের তীব্র তেজে ঝলসে ওঠে মাঠ, ঘাট, প্রান্তর, ছাদ, আঙিনা, ফুলের বাগান। নদীনালা শুকিয়ে জলের তীব্র সংকট শুরু হয়। মাটি ফেটে চৌঁচির। রুদ্রের বাঁশি বাজিয়ে বিশুস্ক মাটিকে ভিজিয়ে আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি, প্রলয়ংকারী ঝড়কে সাথে নিয়ে আসে কাল বৈশাখী ঝড়। ধ্বংসের বিজয় কেতন ওড়ে। কবির কন্ঠে বাজে আত্মপ্রত্যয়ের সুর-
“তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
ঐ নতুনের কেতন ওড়ে-
কাল বৈশাখীর ঝড়”।
রুদ্রের কাছে কাঠিন্যের দীক্ষা নিয়েই শুরু হয় বর্ষবরণ। সত্য যে কঠিন, তাই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম- এই কঠিনকে ঘিরেই চলে আমাদের জীবন সাধনা। নিষ্ঠুর প্রকৃতির বৈরিতাকে উপেক্ষা করে ফুল ফল ফসলের ডালি সাজিয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার।তাই বৈশাখ বরণের ।
আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। তবু সব বাঁধা কাটিয়ে আলো ফুটিয়ে ম্যাজিকের মত জনজীবনে শান্তি নেমে আসুক-স্বস্তি স্থায়ী হোক, নতুন বছরে আমরা এতটুকু আশা করতেই পারি। আশাহত স্বপ্নাহত মানুষগুলো আশাবাদী ও স্বপ্নচারী হোক, পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করুক, জয় হোক মানবের, জয় হোক মানবতার, জয় হোক সমগ্র অনিয়মের উপর নিয়মের-সবলের উপর দুর্বলের- অশিক্ষার উপর শিক্ষার-নিরানন্দের উপর আনন্দের।
“হে ভৈরব হে রূদ্র বৈশাখে,
ধুলায় ধুসর রুক্ষ্ম উজ্জীন পিচ্ছল জটাজাল,
তপঃকিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষান ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ?’
বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা প্রিয় কবিবন্ধু রিয়া রিয়া।
ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু। আপনাকেয়ো শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন।